
02/07/2024
ইন্দুভূষণ ভাত খেতে পারে না। দুহাতে গাছের আঠার বিষে বিষাক্ত দগদগে ঘা । জেলর কে কাতর স্বরে অনুরোধ করে বলল ঘা'র জন্য আমি ভাত খেতে পারি না,অন্য কোনও একটা কাজ দিন। হৃদয়হীন জেলর ইন্দুর হাতের দিকে একটি বারের জন্য না তাকিয়ে বলল- বাঁ হাত দিয়ে খাও। ইন্দু বলল স্যার আমার দুহাতে ঘা,আমাকে অন্য কোনও একটা কাজ দিন যদ্দিন ঘা না সারে। ইন্দু সদ্য তরুণ, দেশের জন্য আবেগ ,হৃদয় সমর্পিত। পরাধীন দেশ স্বাধীন করার আবেগ নিয়ে সাগরপাড়ের আন্দামানে জেল খাটছেন।
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে
হৃদয়হীন জেলরকে ইন্দু ভাল করে চিনতেই পারিনি। জেলর ইন্দুকে বলেছিল হ্যাঁ অন্য কাজ দেবে । কাল থেকে তুমি ঘানি টানবে। ইন্দু শিউরে উঠল,সে কিভাবে ঘানি টানবে! তাঁর দু-হাতে দগদগে বিষাক্ত ঘা,সে দুমুঠো ভাত পর্যন্ত খেতে পারছে না। আর জেলর বলছে ঘানি টানার কথা! ইন্দুর চোখে অশ্রু,যন্ত্রণায় হাত দুটো টানটান করছে। তাঁর আকুতি ঘানি টানা নয় অন্য যেকোনও কাজ অন্তত যতদিন ঘা না সারে।
হৃদয়হীন জেলর সেই আকুতিতে কর্ণপাত করেনি, কিছু শুনতে কিছু বুঝতেও চায়নি। তাঁর হুকুম হুকুম। তবু ইন্দু আরও একবার বোঝানোর চেষ্টা করল,ঘানি টানতে গেলে সে মরেই যাবে। গেলে যাবে জেলরের শরীরী ভাষার উত্তরে মাত্র আঠারো বছরের সদ্য তরুণ ভাবছেন মানুষ এত হৃদয়হীন এত অমানুষ হতে পারে!
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে
আলিপুর বোমার মামলায় সাজা পেয়ে আন্দামানে এসেছেন ইন্দুভূষণ রায়। নির্দয় জেলর তাঁকে জেলের বাইরে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে কাজে লাগিয়েছে। একটা আন্দামানি গাছ,তার ছাল ছাড়িয়ে আঁশ বের করার কাজ। গাছের আঠার বিষে ইন্দুর আঙুলে ঘা হয়,তবু রেহাই নেই। রুক্ষ জমাদারকে বললে সবার মতন আমাকে জেলের মধ্যে কাজ দাওনা।
ইন্দুর হাতে-পায়ে বেড়ি পরানো হল,যাও এবার জেলের মধ্যে কাজ করো। তাই ভাল, জেলের মধ্যে চেনা মুখ আছে,চোখে তাদের সমাবেদনার স্নিগ্ধতা। না দুদিন পরে আবার হুকুম জঙ্গলে যেতে হবে। ঘাড় নেড়ে ইন্দু বলে যাব না। ব্রিট্রিশের জেলে এত সাহস পায় কোথা থেকে, জেল শৃঙ্খলা ভাঙার অপরাধে ইন্দুকে আবার জঙ্গলে যেতে হবে, আরও বেশি গাছের ছাল ছাড়িয়ে আঁশ বের করতে হবে।
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে
ইন্দু ভেবেছিল তাঁর হাতের অবস্থা দেখে জেলর নিশ্চয়ই একটা সহজ কাজ দেবে। তাই সে জেলরের কাছে কাতর আর্তি জানিয়ে বলেছিল আমার দুহাতে ঘা,আমাকে অন্য কোনও একটা কাজ দিন স্যার।
হৃদয়হীন জেলর দিল ঘানি টানার কাজ। ইন্দু মুখ ফুটে কেবল বলেছিল কিভাবে সে হাতের ঘা নিয়ে ঘানি টানবে। এত অত্যাচার,এত বর্বরতা,এত হৃদয়হীনতা! ভাবা যায়। ইন্দু সেলে যায়। নিজের গায়ের কুর্তাটা ছিঁড়ল। ফালি -ফালি করল। সেটা দড়ি পাকাল। সেই দড়ি গলায় বেঁধে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হল। ইন্দু বাঁচাতে চেয়েছিল, তাঁকে বাঁচতে দেওয়া হয় নি।
ইন্দুভূষণ রায় অনেকেই আপনার নাম জানে না! ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসের পাতায় আপনার নাম নাও থাকতে পারে। আপনি আনস্যাঙ হিরো। আপনার এই বলিদান আমরা মনে রেখেছি, মনে রাখবো। আপনাকে আমাদের স্যালুট। তারাদের দেশে আপনি ভাল থাকুন স্যার।
সংকলনে ✍🏻 অরুণাভ সেন।।
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে