04/10/2025
হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সদ্যজাত কন্যাশিশুকে নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে এক মামা ও নানী। বাচ্চাটা তারস্বরে চিৎকার করছে, তাঁর অনেক ক্ষুধা লেগেছে। সে পৃথিবীতে এসেছে মাত্র কয়েক ঘন্টা, তাঁর মা সিজারিয়ান অপারেশনের ধাক্কায় প্রায় অচেতন, স্যালাইন চলছে; এইদিকে অন্তত সাতদিন বাচ্চাকে মায়ের দুধ খেতে হবে!
শিশুটি এত কাঁদছে যে তাঁর খিচুনি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। শিশুটির সাথে তাঁর মামা ও নানি কাঁদছে, তবে নিরবে।
তাঁরা শিশুটিকে কোলে নিয়ে সদ্য মা হওয়া মায়েদের কাছে এক চামচ দুধ, দুই চামচ দুধ চাইতেছে। অথবা বাটিতে একটুখানি দুধ দেওয়ার জন্য মিনতি করতেছে যাতে বাচ্চাটার গলা ভিজে,একটুখানি খাদ্য পেতো।
মামা ও নানি তাঁদের সর্বোচ্চ বিনয়ে, কাতর মিনতিতে সদ্য মা হওয়া কারো মন ভেজাতে পারছে না।
নানি বলছে, মা গো এর মায়ের বুকে দুধ নাই,সে অচেতন শুয়ে আছে। এর জান বাঁচানোর জন্য একটু দুধ দেন গো অথবা বুকের একটু খাইয়ে দেন।
এক মা বলছে,আমার বুকের দুধ আমার বাচ্চা খেয়ে শেষ করতে পারবে না কিন্তু একটা সমস্যা আছে।
নানি বলতেছে,কি সমস্যা!
মা বলতেছে,স্বামীর অনুমতি লাগবিনে, তাঁর অনুমতি ছাড়া দিতে পারছি না। মেয়ের স্বামী বাইরে আছে।
শিশুটির মামা বলতেছে,এইটা একটা শিশুর প্রাণ বাঁচানোর ব্যাপার, এতে কোন দোষ হওয়ার কথা না।
মা বলতেছে, কথা বাড়ায়েন না,আমি দেতে পারব না। আপনারা যান।
বাচ্চাটা আরও তীক্ষ্ণ চিৎকারে হসপিটাল প্রাঙ্গণ হাহাকারে ভরিয়ে তুলতেছে। সাততলা শিশু হাসপাতালের তিন তলা পর্যন্ত সবার কাছে চাওয়া শেষ, একটুখানি দুধ ভিক্ষা দিতে কেউ রাজি হয়নি। অনেক নারী করুণ চোখে তাকিয়েছে, ভেতর হয়তো আর্দ্র হয়েছে কিন্তু প্রথা, নিয়মের কারণে তাঁরা দিতে পারেনি, নিয়মটি হচ্ছে;স্বামীর অনুমতি ছাড়া অন্য বাচ্চাকে দুধ দেওয়ার নিয়ম নেই। বলা বাহুল্য অধিকাংশ স্বামী অনুমতি দেয়নি। হিন্দু,মুসলিম সব নারী নির্বিশেষে এই ব্যাপারে একটাই অজুহাত দেখিয়েছে। কেউ কেউ দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে।
একটা ভিন্ন চিত্র দেখা গিয়েছে, কেউ হয়তো রাজি হয়েছে কিন্তু অন্য নারীরা বাধ সেধেছে, কর্তৃপক্ষের মতো প্রশ্ন করেছে, স্বামীর অনুমতি নিছেন, না নিলে এটা আমরা করতে দিতে পারি না।
অবশেষে একজন রুগ্ন ও অভাবে পোড় খাওয়া নারী এগিয়ে এসেছেন, তিনিও বলেছেন,একটু জিজ্ঞেস করা লাগতো। একটু দ্বিধা ছিল, দোনোমোনো করতে করতেই তাঁর রিকসাওয়ালা স্বামীটি খাবার নিয়ে আসছেন স্ত্রীর জন্য, তিনি সব শুনে বললেন, যেখানে জীবনের প্রয়োজন সেইখানে আবার ধর্ম কি,জীবন বাঁচানোই তখন ধর্ম;দিয়া দে,যত লাগে, যতবার লাগে।
বাচ্চাটি তখন সেই মায়ের কোলে, দাঁতহীন মাড়ি দিয়ে কামড়ে ধরেছে করুণাধারা,শিশুটির মুখে প্রশান্তি নেমেছে । সেই মা যতবার শিশুটির দুধ প্রয়োজন হয়েছে ততবার তিনি প্রকৃতির উদারতায় শিশুটিকে দুধ দিয়েছেন।
শিশুটির মামা ও নানি উভয়ে নিরবে গাইছে,আনন্দধারা বহিছে ভুবনে...
এক কুকুর অন্য কুকুরের বাচ্চাকে স্তন পান করাতে দ্বিধা বোধ করে না,মানুষ এমন ক্যান!
আমরা মানুষ হয়ে জন্ম নিয়েও মানুষ হয়ে উঠতে পারলাম না
©