05/08/2025
জুলাই ২০২৪: ছাত্র আন্দোলনের সূর্যোদয় ও নতুন বাংলাদেশের পথচলা
২০২৪ সালের জুলাই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বেদনার্ত কিন্তু গর্বিত অধ্যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে শুরু হয়ে পুরো দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল এক আগুনঝরা আন্দোলনের নাম—বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার জাগরণ। সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা ও বছরের পর বছর ধরে চলা নিপীড়নের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল দেশের তরুণ প্রজন্ম।
রংপুরে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন এক সাহসী ছাত্র, আবু সাইদ। তার রক্ত যেন আগুন হয়ে ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসে, প্রতিটি পাড়ায়-মহল্লায়। মুগ্ধা, কুষ্টিয়ার তরুণ রিয়াজ, কিংবা চট্টগ্রামের মেধাবী শিক্ষার্থী আব্রার — একের পর এক তরুণ প্রাণের আত্মত্যাগে দেশের মানুষ বুঝে যায়, এ লড়াই শুধুই কোটা বাতিলের জন্য নয়, এ লড়াই একটি নতুন, সমানাধিকারের, মুক্ত বাংলাদেশের জন্য।
শেখ হাসিনা সরকার, যিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার মঞ্চে স্বৈরাচার কায়েম করেছিলেন, শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার তীব্র প্রতিরোধে পালাতে বাধ্য হন। ৫ আগস্ট ২০২৪ — বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন, যেদিন একনায়কতন্ত্র ভেঙে পড়ে এবং শুরু হয় একটি অন্তর্বর্তীকালীন নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়।
সেনাবাহিনীর সহায়তায় গঠিত হয় একটি সর্বদলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার নেতৃত্ব গ্রহণ করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গণতন্ত্র, জবাবদিহিতা ও মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এই সরকারের অধীনে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন আবার জেগে ওঠে।
আজকের বাংলাদেশ, জুলাই ২০২৪-এর সেই ছাত্র আন্দোলনেরই ফসল। এখনকার তরুণরা রাজনীতি মানে শুধু দল নয়, রাজনীতি মানে জনগণের পাশে দাঁড়ানো। তারা জানে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারলেই পরিবর্তন সম্ভব।
আমরা এখন এক আশার বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে আছি—যেখানে গুম-খুন নয়, থাকবে গণতান্ত্রিক আলোচনা; যেখানে দলীয় নিয়োগ নয়, হবে মেধার মূল্যায়ন; যেখানে তরুণদের স্বপ্ন আর সাহসই হবে জাতির সবচেয়ে বড় শক্তি।
বিলু জোয়ার্দার