
18/05/2025
জড়তা: আমাদের জীবনের অদৃশ্য শত্রু
কখনো কি ভেবেছেন, আপনি অনেক কিছু করতে চান — কিন্তু করেন না?
কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেলে মনে হয়, "আরও একটু দেখি", "এখন না, পরে করব", অথবা "আমি পারব না" — এই যে ভিতরের টানাপোড়েন, এই যে স্থবিরতা… এটাই ‘জড়তা’ (inner inertia)।
জড়তা কী?
জড়তা হলো মন ও আত্মার সেই অবস্থান, যেখানে মানুষ নিজের সম্ভাবনাকে চিনতে পারে না, অথবা চিনেও সাহস করে সামনে এগোতে পারে না। এটি এমন এক অবচেতন বাধা, যা আমাদের চিন্তা, ইচ্ছা, এবং কর্মক্ষমতাকে রুদ্ধ করে রাখে।
জড়তার মানসিক উপসর্গ:
১. অনির্ণয়তা (indecisiveness)
২. আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি
৩. একধরনের ভয়, যা যুক্তিহীন
৪. কাজ পেছানো (procrastination)
৫. অতীতের ভুলকে মনে রেখে ভবিষ্যৎকে ভয় পাওয়া
৬. নিজেকে বারবার ছোট ভাবা
জড়তা কীভাবে ক্ষতি করে আমাদের জীবনে?
১. সময় নষ্ট হয়:
সময় চলে যায়, কিন্তু আমরা দাঁড়িয়ে থাকি — ভাবি, করি না। এইভাবে জীবন আমাদের ছাড়িয়ে যায়।
২. প্রতিভা অপচয় হয়:
অনেকের ভেতরে অসাধারণ প্রতিভা থাকে, কিন্তু জড়তা সে প্রতিভাকে দমিয়ে রাখে। ফলাফল — অপূর্ণতা ও অতৃপ্তি।
৩. সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি হয়:
জড়তা আমাদের খোলামেলা হতে দেয় না, ভালোবাসা প্রকাশ করতে দেয় না, বা ক্ষমা চাইতেও বাঁধা দেয়।
৪. আত্মশক্তি ক্ষয়ে যায়:
একসময় আমরা নিজেকেই বিশ্বাস করা ছেড়ে দিই। আত্মসম্মান কমে যায়, আত্মা বিষণ্ণ হয়ে পড়ে।
৫. মানসিক রোগের ঝুঁকি বাড়ে:
দীর্ঘস্থায়ী জড়তা বিষণ্ণতা (depression), উদ্বেগ (anxiety), এমনকি শারীরিক অসুস্থতার কারণও হতে পারে।
সুফি সাধকরা বলেন,
“তুমি যে ভয় করছো, সেটাই তোমার নফসের তৈরি করা জাল।”
আসলে আমাদের ভিতরের জড়তা তৈরি হয় আত্মা ও নফসের দ্বন্দ্ব থেকে।
আত্মা চায় মুক্তি, নফস চায় স্বাচ্ছন্দ্য ও স্থবিরতা।
রুমি বলেন:
"Don’t you know yet? It is your Light that lights the worlds."
তুমি নিজে জানো না — তোমার ভিতরের আলো দিয়ে পুরো জগৎকে আলোকিত করা যায়। কিন্তু জড়তা সেই আলোকে ঢেকে রাখে।
কীভাবে মুক্তি পাবো এই জড়তা থেকে?
১. সচেতন স্বীকৃতি:
নিজে নিজেকে বলুন — “আমি ভিতরে ভিতরে বাঁধা পড়ে আছি। কিন্তু আমি বদলাতে চাই।”
২. ছোট পদক্ষেপ নিন:
জড়তার প্রতিষেধক হলো ক্ষুদ্র, ধারাবাহিক কাজ। আজ এক পৃষ্ঠা লেখুন, আজ ৫ মিনিট হাঁটুন।
৩. নিজেকে প্রশ্ন করুন:
“আমি এই কাজটি না করার পেছনে কী ভয় কাজ করছে?” — উত্তর পেলে ভয় কমে।
4. দোয়া ও ধ্যান:
ভোরে বা রাতে ৫ মিনিট নিঃশ্বাসের দিকে মন দিন।
বলুন — “ইয়া আল্লাহ, আমার ভিতরের আলোকে জাগিয়ে দাও।”
৫. উদ্দেশ্য নির্ধারণ করুন:
আপনি কেন বাঁচছেন, কিসের জন্য জেগে উঠবেন — এই প্রশ্নই জড়তা ভাঙার চাবিকাঠি।
শেষ কথায়…
জীবন আপনাকে ডাকছে।
জড়তা আপনাকে থামাতে চায়।
এই দ্বন্দ্বে আপনি কাকে জয়ী করবেন?
আপনার ভিতরের আলোর প্রতি বিশ্বাস রাখুন। জড়তা শুধু একটি ছায়া — আপনি এগিয়ে গেলেই সে সরে যাবে।