01/08/2025
পারাবত এক্সপ্রেসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া
৯ বন্ধুর নৌকা ও নস্টালজির দিন
সকাল ৬:০০-কমলাপুরের কোলাহল, ছেলেবেলার উচ্ছ্বাস
সকালবেলা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের চিরচেনা কোলাহলে একটুখানি আলাদা উচ্ছ্বাস—আজ ৯ জন বন্ধু মিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাচ্ছে একদিনের ঘুরতে। ট্রেন ধরবে – পারাবত এক্সপ্রেস। ট্রিপের মূল প্ল্যান: তিতাস নদীতে নৌকা ভ্রমণ, বন্ধুদের আড্ডা, প্রকৃতির ছোঁয়া, আর স্মৃতির খেলা।
সুমন, মামুন, সজীব, রাশেদ, ফয়সাল, ইউসুফ এবং বাকিরা রেললাইনের পাশ দিয়ে হেঁটে নিজেদের সিট খুঁজে নেয়। ট্রেন ছাড়ার আগেই চলছে মজা, ঠাট্টা, আর প্ল্যান বানানো:
নদীতে ঝাঁপাবি তো?– আগে বেঁচে যাই, তারপর দেখা যাবে!
৬:২০ – পারাবত এক্সপ্রেসে চেপে বসে বন্ধুত্বের ট্রেন
ট্রেন ছাড়ল। জানালার ধারে বসে রাশেদ বলে উঠল, জানিস, এই রকম ছেলেদের ট্রিপ অনেক দিন পর হচ্ছে, কোনো প্রেমিকা নেই, কেউ রাগ করেনি, শুধু আমরা আর নদী।
ট্রেন চলতে থাকে। জানালার বাইরে ছুটে চলে সবুজ মাঠ, খাল, কাঁচা রাস্তা। ইউসুফ ফিসফিস করে গেয়ে ওঠে:
চল যাই নদীর ধারে,
তোর গল্পে মিশে থাকি…
বন্ধুরা তালি দেয়, সজীব গলার আওয়াজ ফাটিয়ে বলে, শালা, তোকে দিয়ে হবে না!
সকাল ৯টা – ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশন
ট্রেন পৌঁছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। স্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে এক মুহূর্ত চুপচাপ। সবার চোখে একই কথা: এই দিনটা স্মরণীয় হবে।
সকালের নাশতা শেষ করে রিকশা চড়ে যায় নদীর দিকে। পাশের দোকান থেকে কিনে নেয় চানাচুর, পানি, স্পিকার। তারপর শুরু হয় দিনের আসল মজা।
তিতাস নদীতে নৌকা – নদী, আকাশ আর অকৃত্রিম হাসি
একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করে তিতাস নদীতে ছুটে চলে বন্ধুত্বের অভিযান। নদীর বুকে হালকা ঢেউ, পাখির ডানায় বাতাস, আর বন্ধুদের গলায় পুরোনো গান। গানের তাল মেলে ফয়সালের গিটারে, আর মামুনের হাসিতে।
সুমন বলে,জীবনে তো অনেক কিছু মিস করছি, কিন্তু আজকের দিনটা যেন সব ভুলিয়ে দিলো।
ছোটখাটো হাসির গল্প:
সজীব হঠাৎ নৌকার কিনারে বসে ফেলে দিয়ে দেয় এক প্যাকেট চানাচুর, সঙ্গে নিজেও পড়ে পড়তে যায়!
ইউসুফ দারুণ নাটুকে ভঙ্গিতে গাইতে গিয়ে গলায় পানি ঢুকিয়ে বসে!
রাশেদ নদীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে: আমি ফ্রি... আমি প্রেমে নেই! বন্ধুরা হেসে গড়াগড়ি খায়।
বিকেলের ঘ্রাণ-চায়ের কাপ আর পুরোনো গল্প
নৌকা থেকে নেমে স্থানীয় এক দোকানে বসে চা, সিঙ্গারা আর পেঁয়াজু খাওয়া হয়। গল্পে উঠে আসে স্কুলের সময়ের খাতা ছেঁড়া, প্রথম প্রেমিকাকে চিঠি লেখা, কলেজে একসঙ্গে বাং মারার কথা।
সজীব বলে, দোস্ত, আমাদের জীবনে কিছু ভুল থাকলেও—এই বন্ধুত্ব ঠিকঠাক আছে।
সূর্য ডোবার আগে ফেরার ট্রেন
সন্ধ্যার আগেই সবাই আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে ফিরে আসে। ফেরার ট্রেনে কেউ গান গায়, কেউ জানালার বাইরে তাকিয়ে মন খারাপ করে, কেউ বলে, আবার আসবো রে, তবে তখন হয়তো কে কোথায় থাকবে কে জানে!