Sajjan Jibon Das

Sajjan Jibon Das Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Sajjan Jibon Das, Digital creator, Fulbaria.
(1)

শ্রীমদ্ভাগবত, স্কন্ধ-৫, অধ্যায়-২৬, শ্লোক: ৩৮-৪০শ্রী শ্রীমৎ ভক্তিপ্রেম স্বামী গুরুমহারাজ তারিখ: ০২.০৮.২০২৫ শনিবার।১) মুক্...
03/08/2025

শ্রীমদ্ভাগবত,
স্কন্ধ-৫, অধ্যায়-২৬, শ্লোক: ৩৮-৪০
শ্রী শ্রীমৎ ভক্তিপ্রেম স্বামী গুরুমহারাজ
তারিখ: ০২.০৮.২০২৫ শনিবার।

১) মুক্তি লাভ করতে হলে, সাধুসঙ্গ করতে হবে। এই প্রসঙ্গে শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুর বলেছেন
"বৈষ্ণব সঙ্গেতে মন আনন্দিত অনুক্ষণ
সদা হয় কৃষ্ণ পরসঙ্গ।"

২) সমুদ্রে ভাসমান ছোট ছোট ভূখণ্ডগুলিকে দ্বীপ বলা হয়। তেমনই গ্রহগুলিও নভোমন্ডলে ভাসমান অবস্থায় আছে বলে তাদেরও দ্বীপ বলা হয়।

৩) শ্রীমদ্ভাগবতের বাণী শ্রবণ করার ফলে আমাদের চেতনার বিকাশ ঘটে।

৪) তাৎপর্য পাঠ করার সময় কখনও কখনও কঠিন মনে হতে পারে। কারণ তখনকার বাংলা ভাষা শুদ্ধ এবং কঠিন ছিল। তখন কেবলমাত্র পণ্ডিতরাই তা বুঝতে পারতেন। কিন্তু শ্রীল প্রভুপাদ এতই কৃপাময় যে, তিনি আমাদের জন্য সেই কঠিন ভাষাকেও সহজ করে দিয়েছেন।

"(জয়) শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু-নিত্যানন্দ।
শ্রীঅদ্বৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌরভক্তবৃন্দ।"

"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।"

শ্রীমদ্ভাগবত,  স্কন্ধ-৫, অধ্যায়-২৬, শ্লোক:২৭-৩৭শ্রী শ্রীমৎ ভক্তিপ্রেম স্বামী গুরুমহারাজ তারিখ: ০১.০৮.২০২৫ শুক্রবার।১."অব...
03/08/2025

শ্রীমদ্ভাগবত,
স্কন্ধ-৫, অধ্যায়-২৬, শ্লোক:২৭-৩৭
শ্রী শ্রীমৎ ভক্তিপ্রেম স্বামী গুরুমহারাজ
তারিখ: ০১.০৮.২০২৫ শুক্রবার।

১."অবীচিমৎ" মানে জলহীন।এই নরকে কোন জল না থাকায় এমন নামকরণ করা হয়েছে।

২."অয়ঃ" মানে লোহা।যারা ব্রাহ্মণ হয়েও মদ পান করে তাদের অয়ঃপান নামক নরকে গরম গলিত লোহা জোর করে পান করানো হয়।

৩.যে যে গুণে মানুষ জ্যেষ্ঠ হয়- জন্ম, তপস্যা, বিদ্যা,আচার,বর্ণ এবং আশ্রম।যারা আমাদের চেয়ে জ্যেষ্ঠ তাদের সম্মান করতে হবে। আমি ব্রাহ্মণ ঘরে জন্ম নিয়েছি কিন্তু ব্রাহ্মণের গুণ নেই, কিন্তু একজন শুদ্র ঘরে জন্মগ্রহণ করেও যদি ব্রাহ্মণের গুণ থাকে- তাহলে তাকে আমার সম্মান করা কর্তব্য।

৪.শূলপ্রোত নামক নরকে পাপীদের যখন যন্ত্রণা দেওয়া হয় তারা তাদের পূর্বের পাপের কথা স্মরণ করে, কিন্তু তখন আর স্মরণ করে কি হবে?

৫.সকৃৎ মানে একবার, অসকৃৎ মানে বারবার।পর্যাবর্তন নামক নরকে শকুন,বক আদি পক্ষীরা বারবার পাপীদের চক্ষু উৎপাটন করে।

৬.গৃহে যদি শত্রুও আসে তবুও তার সাথে এমনভাবে আচরণ করা উচিত যেন সে ভুলে যায় সে তার শত্রুর বাড়িতে এসেছে।

৭.যদিও এখানে ২৮টি নরকের বর্ণনা করা হয়েছে কিন্তু পাপকর্ম অনুসারে আরো শত সহস্র নরক রয়েছে। এখানে মুখ্য কতগুলো নরকের কথা বলা হলো।

৮.ভগবদ্গীতার প্রথম শিক্ষা জন্মান্তরবাদ, এখানেও সেটি বলা হয়েছে (তথা দেহান্তরপ্রাপ্তিঃ)।

৯.স্বর্গ হচ্ছে বিলাসবহুল হোটেলের মতো, টাকা শেষ হলে যেমন হোটেল থেকে বের করে দেওয়া হয়, পুণ্য শেষ হলে তেমনি স্বর্গে থাকার মেয়াদও শেষ হয়ে যায়।

"(জয়) শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু-নিত্যানন্দ।
শ্রীঅদ্বৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌরভক্তবৃন্দ।"

"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।"

''আপনি যদি বৃন্দাবন ধামকে উপলব্ধি করতে চান তাহলে ইন্দ্রিয়তর্পণ ত্যাগ করতে হবে। বিষয় ছাড়িয়া কবে শুদ্ধ হবে মন।”শ্রীল সুভগ ...
03/08/2025

''আপনি যদি বৃন্দাবন ধামকে উপলব্ধি করতে চান তাহলে ইন্দ্রিয়তর্পণ ত্যাগ করতে হবে। বিষয় ছাড়িয়া কবে শুদ্ধ হবে মন।”

শ্রীল সুভগ স্বামী গুরুমহারাজ
(বৃন্দাবন, ০৩/০২/২০১৫)

শ্রীল সুভগ স্বামী গুরুমহারাজের বাণী, "আপনি যদি বৃন্দাবন ধামকে উপলব্ধি করতে চান তাহলে ইন্দ্রিয়তর্পণ ত্যাগ করতে হবে। বিষয় ছাড়িয়া কবে শুদ্ধ হবে মন,” এটি বৈষ্ণব দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিকে তুলে ধরে। এটি কেবল বৃন্দাবন নামের একটি ভৌগোলিক স্থান নয়, বরং একটি আধ্যাত্মিক অবস্থা। এই বাণীর মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, বৃন্দাবনের প্রকৃত মাধুর্য বা ভগবৎ প্রেম উপলব্ধি করতে হলে আমাদের মন ও ইন্দ্রিয়কে জাগতিক ভোগ-বাসনা থেকে মুক্ত করতে হবে।

বৃন্দাবন ধামের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য:
বৃন্দাবন শুধু তীর্থস্থান নয়, এটি শ্রীকৃষ্ণের লীলাভূমি এবং নিত্যধাম গোলক বৃন্দাবনেরই একটি জাগতিক প্রকাশ। এই ধামের পবিত্রতা ও মাধুর্য শুধুমাত্র বাহ্যিক দর্শন দিয়ে উপলব্ধি করা যায় না। এর প্রকৃত সৌন্দর্য অনুভবের জন্য প্রয়োজন শুদ্ধ মন এবং ইন্দ্রিয়।

ইন্দ্রিয়তর্পণ ত্যাগ:
"ইন্দ্রিয়তর্পণ" বলতে ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে পার্থিব সুখ ও ভোগ-বাসনাকে বোঝানো হয়েছে। যেমন—চক্ষু দিয়ে রূপ, কর্ণ দিয়ে শব্দ, জিহ্বা দিয়ে স্বাদ ইত্যাদির প্রতি আসক্তি। গুরুমহারাজ বোঝাতে চাইছেন যে, এই ইন্দ্রিয়গত সুখের পেছনে ছুটে বেড়ালে আমাদের মন বিক্ষিপ্ত থাকে এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি ব্যাহত হয়।

মন শুদ্ধিকরণ:
ইন্দ্রিয়গত সুখ ত্যাগ করার মাধ্যমে মনকে শুদ্ধ করা সম্ভব। একটি অপরিষ্কার বা ভোগে আসক্ত মন কৃষ্ণপ্রেমে নিমগ্ন হতে পারে না। মনকে শুদ্ধ করার একমাত্র উপায় হলো ভগবানের সেবা এবং তার নাম-গুণ কীর্তন করা। যখন মন শুদ্ধ হয়, তখন তা বৃন্দাবনের দিব্য পরিবেশের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।

শাস্ত্রীয় উপমা সহ আলোচনাঃ
উপমা ১:
আয়না ও ধুলো আমাদের মন একটি পরিষ্কার আয়নার মতো, যা ভগবানের প্রেমময় রূপকে প্রতিফলিত করতে পারে। কিন্তু ইন্দ্রিয়তর্পণ বা ভোগ-বাসনা সেই আয়নার উপর জমে থাকা ধুলোর মতো। যতক্ষণ পর্যন্ত এই ধুলো পরিষ্কার না করা হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আয়নাটি কোনো ছবি সঠিকভাবে দেখাতে পারবে না। একইভাবে, ইন্দ্রিয়তর্পণ ত্যাগ করে মনকে শুদ্ধ করলে তবেই আমরা বৃন্দাবনের চিন্ময় স্বরূপ বা ভগবানের মাধুর্য উপলব্ধি করতে পারব।

উপমা ২:
জাহাজ ও নোঙর আমাদের জীবনকে যদি একটি জাহাজের সাথে তুলনা করা হয়, তবে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো হলো সেই জাহাজের নোঙর। যদি এই নোঙরগুলো জাগতিক বিষয়ে (বিষয়) শক্তভাবে আটকে থাকে, তাহলে জাহাজটি ভগবানের দিকে যাত্রা করতে পারে না। বৃন্দাবন ধাম উপলব্ধি করার জন্য, আমাদের এই নোঙরগুলোকে তুলে ফেলতে হবে এবং ভগবানের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। ইন্দ্রিয়তর্পণ ত্যাগই হলো সেই নোঙর তুলে ফেলার প্রক্রিয়া।

উপমা ৩:
জল ও কাদা একটি পরিষ্কার জলপূর্ণ পুকুরে যদি কাদা মিশিয়ে দেওয়া হয়, তবে জল ঘোলাটে হয়ে যায় এবং আমরা এর তলদেশের সৌন্দর্য দেখতে পাই না। আমাদের মন সেই স্বচ্ছ জলের মতো, আর ইন্দ্রিয়তর্পণ সেই কাদার মতো, যা মনকে ঘোলাটে করে দেয়। মনকে শুদ্ধ করতে হলে কাদা দূর করতে হবে, অর্থাৎ ইন্দ্রিয়তর্পণ ত্যাগ করতে হবে। মন শুদ্ধ হলে আমরা বৃন্দাবনের আধ্যাত্মিক গভীরতা দেখতে পাব।

সারসংক্ষেপঃ
শ্রীল সুভগ স্বামী গুরুমহারাজের বাণীর সারসংক্ষেপ হলো: বৃন্দাবন ধামের প্রকৃত উপলব্ধি কেবল বাইরে থেকে দেখে নয়, বরং অভ্যন্তরীণ শুদ্ধির মাধ্যমেই সম্ভব। জাগতিক ভোগ-বাসনা বা ইন্দ্রিয়তর্পণ ত্যাগ করে যখন মন সম্পূর্ণরূপে ভগবানের দিকে নিবিষ্ট হয়, তখনই একজন ভক্ত বৃন্দাবনের চিন্ময় ভাব অনুভব করতে পারেন। এই পবিত্র স্থানে প্রবেশাধিকার পেতে হলে প্রথমে নিজের মনকে বিষয়ের আকর্ষণ থেকে মুক্ত করতে হবে।

এই বাণীর মাধ্যমে গুরুমহারাজ আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, আধ্যাত্মিক উন্নতির পথ কোনো বাহ্যিক পরিবর্তন নয়, বরং তা হলো আত্ম-শুদ্ধি ও আত্ম-নিয়ন্ত্রণের একটি যাত্রা।

"মহাপ্রভু সকলের প্রতি যত্নপরায়ণ ছিলেন" মহাপ্রভু কোনকিছু বিচার না করে কৃপা বিতরণ করেছিলেন। তিনি স্নেহ-যত্ন করতেন, সবাইকে ...
03/08/2025

"মহাপ্রভু সকলের প্রতি যত্নপরায়ণ ছিলেন" মহাপ্রভু কোনকিছু বিচার না করে কৃপা বিতরণ করেছিলেন। তিনি স্নেহ-যত্ন করতেন, সবাইকে প্রসাদ ও কৃপা বিতরণ করতেন। যারা সন্ন্যাসী ও অতিথিদের হয়রান করে নিজেদেরকে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অনুসারী বলে দাবি করে তাহলে আমরা বুঝতে পারি যে তারা প্রকৃতপক্ষে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অনুসারী নয়।

শ্রীল জয়পতাকা স্বামী গুরুমহারাজ
চৈতন্যলীলা ক্লাস, আগস্ট ০৩, ২০১৬, শ্রীধাম মায়াপুর, ভারত

শ্রীল জয়পতাকা স্বামী গুরুমহারাজের উক্তিটি থেকে বোঝা যায় যে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কৃপা ছিল শর্তহীন। তিনি কাউকে বিচার না করে সকলের প্রতি সমানভাবে কৃপা বিতরণ করেছেন। এর থেকে তিনি মহাপ্রভুর অনুসারীদের জন্য একটি স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন: প্রকৃত অনুসারীরা মহাপ্রভুর মতো যত্নশীল ও করুণাময় হবে, এবং সন্ন্যাসী ও অতিথিদের হয়রানি করবে না।

শর্তহীন কৃপা:
মহাপ্রভু সকলের প্রতি যত্নশীল ছিলেন এবং কোনো বিচার ছাড়াই কৃপা বিতরণ করতেন। এই বিষয়টি একটি উপমার মাধ্যমে বোঝা যায়: সূর্যের আলো যেমন ধনী-গরিব, ভালো-মন্দ নির্বিশেষে সবার উপর সমানভাবে পড়ে, ঠিক তেমনি মহাপ্রভুর কৃপা কোনো ভেদাভেদ না করে সকল জীবকে আলোকিত করে। তাঁর কাছে উচ্চবর্ণ বা নিম্নবর্ণ, ধার্মিক বা পাপি—সকলেই সমান ছিল। তিনি জগাই-মাধাইয়ের মতো মহাপাপীকেও প্রেমভক্তি দান করেছিলেন, যা তাঁর শর্তহীন করুণার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

স্নেহ এবং যত্ন:
মহাপ্রভু সকলকে স্নেহ করতেন এবং যত্ন নিতেন। এর উপমা হলো একটি মাতৃমূর্তি। একজন মা যেমন তার সন্তানের ভালো-মন্দ দিক বিচার না করে কেবল ভালোবাসার টানে তার যত্ন নেন, মহাপ্রভুও ঠিক তেমনি তাঁর ভক্তদের এবং সকল জীবের প্রতি পরম স্নেহে ভরা ছিলেন। তিনি শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক ছিলেন না, বরং এক পরম পিতা বা মায়ের মতো সকলকে আশ্রয় দিয়েছিলেন।

প্রকৃত বৈষ্ণবের পরিচয়:
গুরুমহারাজ স্পষ্ট করে বলেছেন যে যারা সন্ন্যাসী বা অতিথিদের হয়রানি করে, তারা কখনোই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর প্রকৃত অনুসারী হতে পারে না। এই বিষয়টি একটি উপমার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায়: একজন ডাক্তার যদি রোগীকে ওষুধ না দিয়ে আরও কষ্ট দেয়, তবে সে যেমন প্রকৃত ডাক্তার নয়, তেমনি একজন ব্যক্তি যদি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অনুসারী হওয়ার দাবি করে অথচ সন্ন্যাসী ও অতিথিদের প্রতি দয়া দেখায় না, তবে সে প্রকৃতপক্ষে তাঁর শিক্ষা অনুসরণ করছে না। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষা হলো অহিংসা, বিনয়, এবং সর্বজীবের প্রতি করুণা। একজন প্রকৃত বৈষ্ণব তাই কখনো কারো প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করতে পারে না।

শাস্ত্রীয় প্রমাণ এবং উপমা সহ আলোচনাঃ
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা: শ্রীকৃষ্ণ ভগবদ্গীতার (৯/২৯) শ্লোকে বলেছেন,
"সমোহহং সর্বভূতেষু ন মে দ্বেষ্যোঽস্তি ন প্রিয়ঃ।
যে ভজন্তি তু মাং ভক্ত্যা ময়ি তে তেষু চাপ্যহম্।।"

এর অর্থ হলো, আমি সকল জীবের প্রতি সমভাবাপন্ন, আমার কেউ বিদ্বেষের পাত্র নয় বা প্রিয়ও নয়। কিন্তু যারা ভক্তি সহকারে আমার উপাসনা করে, তারা আমাতে থাকে এবং আমিও তাদের মধ্যে থাকি।

এই শ্লোকটি মহাপ্রভুর শর্তহীন কৃপার ধারণাকে সমর্থন করে। মহাপ্রভু কৃষ্ণেরই করুণা-অবতার, তাই তাঁর আচরণ কৃষ্ণেরই সমান। তিনি সব জীবের প্রতি সমান দৃষ্টি রাখলেও, যারা তাঁর প্রতি ভক্তি দেখায়, তাদের প্রতি তিনি বিশেষ কৃপা বর্ষণ করেন। এটি একটি উপমার মাধ্যমে বোঝা যায়: একটি পুকুরের পানি সবার জন্য উন্মুক্ত হলেও, যে ব্যক্তি পুকুরে নেমে স্নান করে, সে-ই তার শীতলতা উপভোগ করতে পারে।

শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত:
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো জগাই-মাধাইকে উদ্ধার করা। তারা দুই ভাই ছিল অত্যন্ত পাপি ও দুশ্চরিত্র। একসময় তারা নিত্যানন্দ প্রভুকে আঘাত করলে, মহাপ্রভু ক্রোধে সুদর্শন চক্র আহ্বান করেন। কিন্তু নিত্যানন্দ প্রভু তাদের পক্ষ নিয়ে মহাপ্রভুর কাছে করুণা ভিক্ষা করেন। মহাপ্রভু তখন শান্ত হয়ে তাদের প্রতি কৃপা করেন। এই লীলা থেকে বোঝা যায় যে মহাপ্রভু পাপীকে ঘৃণা করেন না, বরং পাপকে ঘৃণা করেন এবং সঠিক পথে ফিরে আসার সুযোগ দেন। এটি যেন এক বিশাল বটবৃক্ষের মতো, যা তার ছায়ায় আশ্রয় নেওয়া সকল পথিককে সমানভাবে শীতলতা দেয়।

তৃণাদপি সুনীচেন শ্লোক:
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বিখ্যাত 'শিক্ষাষ্টক'-এর একটি শ্লোক হলো:
"তৃণাদপি সুনীচেন তরোরপি সহিষ্ণুনা।
অমানীনা মানদেন কীর্তনীয়া সদা হরি।।"

অর্থাৎ, যে ব্যক্তি তৃণ থেকেও নীচ, তরুর চেয়েও সহিষ্ণু, নিজেকে মানহীন মনে করে এবং অন্যকে সম্মান দেয়, সেই ব্যক্তিই সর্বদা হরিনাম করতে পারে।

এই শ্লোকটি গুরুমহারাজের উক্তির সারসংক্ষেপ। একজন প্রকৃত বৈষ্ণব এই গুণের অধিকারী হয় এবং কখনো সন্ন্যাসী বা অতিথিদের হয়রানি করতে পারে না, বরং সকলের প্রতি বিনয় ও সম্মান প্রদর্শন করে।

বাণীর সারসংক্ষেপঃ
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর করুণা ছিল সার্বজনীন এবং শর্তহীন। তিনি কোনো বিচার ছাড়াই সকল জীবের প্রতি স্নেহ ও কৃপা বিতরণ করতেন। তাই তাঁর প্রকৃত অনুসারী তারাই, যারা মহাপ্রভুর এই করুণা ও যত্নশীলতার আদর্শকে নিজেদের জীবনে ধারণ করে। যারা সন্ন্যাসী, অতিথি বা যেকোনো জীবের প্রতি হয়রানিমূলক আচরণ করে, তারা কখনোই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর প্রকৃত শিক্ষা অনুসরণ করে না। প্রকৃত অনুসারীর প্রধান লক্ষণ হলো বিনয়, করুণা এবং সকলের প্রতি সম্মান।

জাগতিক লোকের কাজ হচ্ছে, গাধার মত কঠোর পরিশ্রম করা এবং বানরের মত দায়িত্বহীনভাবে উপভোগ করা। এটাই হচ্ছে পশুসমাজের লক্ষণ। তা...
03/08/2025

জাগতিক লোকের কাজ হচ্ছে, গাধার মত কঠোর পরিশ্রম করা এবং বানরের মত দায়িত্বহীনভাবে উপভোগ করা। এটাই হচ্ছে পশুসমাজের লক্ষণ। তার ফলস্বরূপ তারা নিজেদের জন্য অপরিসীম দুঃখ-কষ্ট ডেকে আনে।

শ্রী শ্রীমদ্ ভক্তিচারু স্বামী গুরুমহারাজ
বলরাম জয়ন্তী, মায়াপুর, ৩রা আগস্ট ১৯৯৯

গুরুমহারাজ তাঁর এই উক্তির মাধ্যমে জাগতিক মানুষের একটি সাধারণ জীবনযাত্রার চিত্র তুলে ধরেছেন, যা তিনি পশু সমাজের লক্ষণের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, যখন মানুষ শুধুমাত্র জাগতিক সুখের পেছনে ছুটে, তখন তাদের জীবন আধ্যাত্মিক দিক থেকে শূন্য হয়ে পড়ে। এই ধরনের জীবনযাপন শেষ পর্যন্ত তাদের জন্য দুঃখ-কষ্ট ছাড়া আর কিছুই নিয়ে আসে না।

গাধার মতো কঠোর পরিশ্রম:
গাধা যেমন সারাদিন বোঝা টানে, তেমন জাগতিক মানুষেরাও সারাজীবন শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের জন্য নিরন্তর পরিশ্রম করে চলে। তারা ভাবে যে এই কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই জীবনে সুখ আসবে। কিন্তু যেমন গাধা কেবলই বোঝা বহন করে চলে তার নিজের কোনো সুখের জন্য নয়, ঠিক তেমনই মানুষও কেবল জাগতিক সম্পদ আর ক্ষমতার পেছনে ছুটে চলে, যার শেষ নেই। এই উপমাটি দিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, এই ধরনের পরিশ্রমের কোনো আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্য নেই, এটি কেবল একটি অন্তহীন চক্র।

বানরের মতো দায়িত্বহীনভাবে উপভোগ:
বানর যেমন এক মুহূর্তের জন্য এক জায়গায় স্থির থাকতে পারে না, লাফিয়ে বেড়ায়, তেমনই জাগতিক মানুষেরাও কোনো কিছুকে গভীরভাবে উপলব্ধি না করে ক্ষণস্থায়ী সুখের পেছনে ছুটে বেড়ায়। তারা যখন অর্থ উপার্জন করে, তখন তা দায়িত্বহীনভাবে ভোগ করে। এই ভোগের মধ্যে কোনো আধ্যাত্মিক সংযম বা উদ্দেশ্য থাকে না। এটি ঠিক যেমন একটি বানর যখন একটি ফল খায়, তখন তার মনে কোনো দীর্ঘস্থায়ী তৃপ্তি থাকে না। তেমনি জাগতিক ভোগবিলাসও মানুষের মনে কোনো স্থায়ী শান্তি বা আনন্দ দিতে পারে না।

শাস্ত্রীয় প্রমাণ ও উপমাঃ
ভগবদ্গীতা: শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার একটি শ্লোক এই উক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত:
ইন্দ্রিয়াণি পরাণ্যা হুরিন্দ্রিয়েভ্যঃ পরং মনঃ।
মনসস্তু পরা বুদ্ধির্ষো বুদ্ধেঃ পরতস্তু সঃ।।

এর অর্থ হলো, ইন্দ্রিয়গুলি মন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, মন বুদ্ধি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, আর আত্মা বুদ্ধি থেকেও শ্রেষ্ঠ। মানুষ যখন শুধুমাত্র ইন্দ্রিয়গুলোকে নিয়ে কাজ করে, তখন তারা পশুর মতো আচরণ করে। কিন্তু যখন মানুষ আধ্যাত্মিক জ্ঞান দিয়ে ইন্দ্রিয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে, তখনই তারা সত্যিকারের মানুষ হয়ে ওঠে।

গুরুমহারাজের উক্তিটি এই শ্লোকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, কারণ তিনি দেখিয়েছেন যে শুধুমাত্র ইন্দ্রিয় সুখের জন্য পরিশ্রম করা এবং ভোগ করা মানুষের দুঃখের কারণ।

উপমা: উপনিষদের একটি শ্লোকে জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে:
অসতো মা সদ্‌গময়।
তমসো মা জ্যোতির্গময়।
মৃত্যুর মা অমৃতং গময়।।

অর্থাৎ, আমাকে অসত্য থেকে সত্যে নিয়ে যাও, অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে যাও, মৃত্যু থেকে অমরত্বে নিয়ে যাও।

গুরুমহারাজের বাণী সেই পথই দেখায়, যেখানে মানুষ জাগতিক অসার জীবন (অসত্য, অন্ধকার) ছেড়ে আধ্যাত্মিক পথে (সত্য, আলো) আসে, যা তাকে দুঃখের পরিবর্তে অমরত্বের দিকে নিয়ে যায়। জাগতিক মানুষের জীবনকে এখানে অন্ধকারে ঘোরাঘুরি করার সঙ্গে তুলনা করা যায়, যেখানে প্রকৃত আলোর খোঁজ নেই।

বাণীর সারসংক্ষেপঃ
শ্রী শ্রীমদ্ ভক্তিচারু স্বামী গুরুমহারাজ তাঁর বাণীতে বলতে চেয়েছেন যে, জাগতিক জীবনযাত্রায় যখন মানুষ শুধুমাত্র কঠোর পরিশ্রম এবং ভোগবিলাসে মত্ত থাকে, তখন তাদের জীবন একটি পশুর জীবনের মতো হয়ে যায়। এই ধরনের জীবনযাত্রা মানুষকে নিজেদের আধ্যাত্মিক সত্তা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং এর ফলস্বরূপ তারা জীবনে কোনো প্রকৃত শান্তি বা আনন্দ খুঁজে পায় না, বরং দুঃখ-কষ্টের শিকার হয়। তাই, মানুষের উচিত কঠোর পরিশ্রম এবং ভোগের ঊর্ধ্বে উঠে আধ্যাত্মিক জীবনে মনোনিবেশ করা, যা তাদের প্রকৃত সুখ এবং শান্তি এনে দিতে পারে।

টাটকা যে কোন কিছু, ভিটামিনে পূর্ণ। টাটকা ফলাও। টাটকা গ্রহণ কর।শ্রীল প্রভুপাদ প্যারিস, আগষ্ট ৩, ১৯৭৩শ্রীল প্রভুপাদের এই উ...
03/08/2025

টাটকা যে কোন কিছু, ভিটামিনে পূর্ণ। টাটকা ফলাও। টাটকা গ্রহণ কর।

শ্রীল প্রভুপাদ
প্যারিস, আগষ্ট ৩, ১৯৭৩

শ্রীল প্রভুপাদের এই উক্তিটি খুবই গভীর এবং এর মাধ্যমে তিনি আমাদের জীবনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছেন: সজীবতা, পুষ্টি এবং গ্রহণ করার সঠিক মনোভাব।

টাটকা যে কোনো কিছু, ভিটামিনে পূর্ণ:
এখানে 'টাটকা' বলতে শুধুমাত্র ফল বা সবজি নয়, বরং আধ্যাত্মিক জীবনকে বোঝানো হয়েছে। আমাদের ভক্তি জীবনেও সজীবতা প্রয়োজন। যখন আমরা প্রতিদিন নতুন উদ্দীপনা ও আগ্রহ নিয়ে শ্রীকৃষ্ণ বা ভগবানের সেবা করি, তখনই আমাদের ভক্তি টাটকা থাকে। উপমা হিসেবে বলা যায়, একটি সতেজ ফুল যেমন তার সুগন্ধ ও সৌন্দর্য দিয়ে সবার মন জয় করে, তেমনি সজীব ভক্তিও আমাদের জীবনকে সুবাসিত ও সুন্দর করে তোলে।

টাটকা ফলাও:
এখানে 'টাটকা ফলাও' বলতে আধ্যাত্মিক জীবনের ফলকে বোঝানো হয়েছে, যা সতেজ ভক্তির মাধ্যমে পাওয়া যায়। যেমন, টাটকা ফল আমাদের শরীরকে পুষ্টি জোগায়, তেমনি কৃষ্ণভক্তি রূপী টাটকা ফল আমাদের আত্মাকে পুষ্টি জোগায়। এই ফল হলো কৃষ্ণপ্রেম, আনন্দ ও শান্তি।

টাটকা গ্রহণ কর:
এটি আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই উক্তিটি দিয়ে শ্রীল প্রভুপাদ আমাদের বুঝিয়েছেন যে, আধ্যাত্মিক জীবনকে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আমাদের মন ও হৃদয় টাটকা বা সতেজ থাকতে হবে। যখন আমরা কোনো ভেজাল বা মলিনতা ছাড়াই ভগবানের প্রতি শুদ্ধ মন নিয়ে অগ্রসর হই, তখনই আমরা তাঁর কৃপা সম্পূর্ণরূপে লাভ করতে পারি।

শাস্ত্রীয় প্রমাণ সহ উপমা
শ্রীল প্রভুপাদের এই উক্তিটি মূলত ভগবদগীতার একটি শ্লোকের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। চতুর্থ অধ্যায়ের দশম শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন,

"বীতরাগভয়ক্রোধা মন্ময়া মামুপাশ্রিতাঃ।"

এই শ্লোকে বলা হয়েছে, যারা আসক্তি, ভয় ও ক্রোধ থেকে মুক্ত হয়ে সম্পূর্ণরূপে আমাকে আশ্রয় করে, তারা আমার প্রেমময় সেবা লাভ করতে পারে।

এই শ্লোকের সাথে প্রভুপাদের উক্তির তুলনা করা যায়:
* "টাটকা যে কোনো কিছু, ভিটামিনে পূর্ণ।": এখানে "টাটকা" বলতে বোঝানো হয়েছে আসক্তি, ভয় ও ক্রোধ মুক্ত এক সতেজ মন। এই মন যখন ভগবানে নিবেদিত হয়, তখন তা আধ্যাত্মিক পুষ্টি বা "ভিটামিনে" পরিপূর্ণ হয়।

* "টাটকা ফলাও।": এখানে "টাটকা ফল" বলতে বোঝানো হয়েছে ভগবানের নাম, রূপ, গুণ ও লীলা। এই সব নিত্য-নূতন এবং সতেজ। যখন আমরা এই সবকিছু শ্রবণ বা কীর্তন করি, তখন আমাদের মনে কোনো জড় আকর্ষণ বা অবসাদ থাকে না।

* "টাটকা গ্রহণ কর।": এটি বোঝায় যে, এই সব সতেজ ভক্তিপূর্ণ সেবা তখনই ফলপ্রসূ হয়, যখন আমরা সেগুলোকে আমাদের জীবনে গ্রহণ করি।

সারসংক্ষেপঃ
শ্রীল প্রভুপাদের এই উক্তির মূল সারসংক্ষেপ হলো, "সতেজতা, পবিত্রতা এবং গ্রহণযোগ্যতা"। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, আমাদের প্রতিটি কাজ, বিশেষত আধ্যাত্মিক সাধনা, অবশ্যই সতেজ এবং পবিত্র মন নিয়ে করতে হবে। টাটকা ফল যেমন শরীরকে পুষ্টি দেয়, তেমনি টাটকা ও বিশুদ্ধ ভক্তি আমাদের আত্মাকে পুষ্টি দেয়। এই জ্ঞানকে শুধুমাত্র শুনে বা জেনে রাখলে হবে না, বরং তা জীবনে গ্রহণ করে আচরণ করতে হবে। তবেই আমরা প্রকৃত আধ্যাত্মিক জীবনের সুফল লাভ করতে পারব।

02/08/2025

ভক্ত সঙ্গে জপ যজ্ঞ। প্রতিদিন ভোর ৫.০০ থেকে ৭.৩০ মিনিট পর্যন্ত। এই জপ যজ্ঞে অংশগ্রহণ করে আপনার দুর্লভ মনুষ্য জীবনকে সার্থক এবং সুন্দর করে তুলুন।

"কলিযুগ-ধর্ম হয় নাম-সংকীর্তন
চারিযুগে চারি ধর্ম জীবের কারণ।।
অতএব কলিযুগে নামযজ্ঞ সার।
আর কোন ধর্ম কৈলে নাহি হয় পার"।।
(শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর বাণী)

"হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন এবং সুখী হউন"।
(শ্রীল প্রভুপাদ)

Meeting ID: 358 632 2991
zoom Passcode : 123

জপ ক্লাসের লিংক : https://us06web.zoom.us/j/3586322991?pwd=heWqph2E7uD6vPd2rrPnox1T7wkQSi.1

আয়োজনেঃ
ইসকন, কুটিধাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

এই জড় জগতে প্রায় সকলেই নিদ্রিত, কেবলমাত্র কৃষ্ণভাবনামৃত সম্পন্ন ব্যক্তিরাই জাগ্রত।শ্রীল সুভস্ স্বামী গুরুমহারাজ, শ্রীধাম...
02/08/2025

এই জড় জগতে প্রায় সকলেই নিদ্রিত, কেবলমাত্র কৃষ্ণভাবনামৃত সম্পন্ন ব্যক্তিরাই জাগ্রত।

শ্রীল সুভস্ স্বামী গুরুমহারাজ,
শ্রীধাম মায়াপুর ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

শ্রীল সুভগ স্বামী গুরুমহারাজ তাঁর এই উক্তির মাধ্যমে জড় জগতের প্রতি আমাদের মোহ এবং আত্ম-উপলব্ধির অভাবকেই তুলে ধরেছেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, জড় জাগতিক সুখ-দুঃখের প্রতি আমাদের যে আসক্তি, তা আসলে এক গভীর নিদ্রার সামিল। আমরা জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে কেবল ইন্দ্রিয় তৃপ্তির পেছনে ছুটে চলি, যা প্রকৃতপক্ষে আমাদের আধ্যাত্মিক সত্তাকে ঢেকে রাখে। কেবল কৃষ্ণভাবনামৃত ব্যক্তিরাই এই মোহনিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে জীবনের প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করতে পারেন।

১. মোহনিদ্রা:
সাধারণ মানুষ তাদের জাগতিক চাওয়া-পাওয়া, যেমন টাকা, খ্যাতি, ক্ষমতা, এবং ইন্দ্রিয় সুখের পেছনে ছুটে চলে। এই মোহ তাদের এতটাই আচ্ছন্ন করে রাখে যে তারা জীবনের মূল লক্ষ্য, অর্থাৎ আত্ম-উপলব্ধি এবং ভগবানের প্রতি প্রেম ভুলে যায়। এই অবস্থাকেই মহারাজ 'নিদ্রা' বলে বর্ণনা করেছেন।

উপমা: একটি গাড়ির চালক যদি গন্তব্যের দিকে না গিয়ে কেবল গাড়ির সিটের আরাম বা মিউজিকের দিকে মনোযোগ দেয়, তাহলে সে কখনোই তার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে না। তেমনই, আমরা যদি জীবনের মূল উদ্দেশ্য ভুলে কেবল জাগতিক সুখের পেছনে ছুটি, তাহলে আমরা কখনও আমাদের প্রকৃত আত্মাকে উপলব্ধি করতে পারব না।

২. কৃষ্ণভাবনামৃত ব্যক্তির জাগরণ:
কৃষ্ণভাবনামৃত ব্যক্তিরা এই মোহনিদ্রা থেকে জাগ্রত। তারা বোঝেন যে জাগতিক সুখ ক্ষণস্থায়ী এবং প্রকৃত আনন্দ কেবল ভগবানের সেবায় পাওয়া যায়। তাই তারা তাদের সমস্ত কর্ম ভগবানের সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করেন। এই সচেতনতাই তাদের 'জাগ্রত' করে তোলে।

উপমা: যেমন রাতের অন্ধকারে একটি বাড়ির সব মানুষ যখন ঘুমে আচ্ছন্ন থাকে, তখন একজন পাহারাদার জেগে থেকে বাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। একইভাবে, যখন সবাই জাগতিক মোহে আচ্ছন্ন, তখন কৃষ্ণভাবনামৃত সম্পন্ন ব্যক্তিরা জেগে থেকে আধ্যাত্মিক জীবন যাপন করেন।

৩. জীবনের প্রকৃত লক্ষ্য:
এই উক্তির মাধ্যমে গুরুমহারাজ আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে আমাদের মানব জীবনের মূল লক্ষ্য হলো আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভ করা এবং ভগবানের সাথে আমাদের সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করা। এই সম্পর্ক পুনরুদ্ধার হলেই আমরা প্রকৃত শান্তি ও আনন্দ লাভ করতে পারি।

শাস্ত্রীয় উপমা সহ আলোচনাঃ
যা নিশা সর্বভূতানাং তস্যাং জাগর্তি সংযমী। যস্যাং জাগ্রতি ভূতানি সা নিশা পশ্যতো মুনেঃ।।

এর অর্থ হলো:
যা সকল জীবের জন্য রাত্রি, আত্মসংযমী ব্যক্তিগণ সেই রাত্রিতে জাগ্রত থাকেন। আর যেখানে সকল জীব জাগ্রত থাকে, আত্মদর্শী মুনিদের কাছে তা রাত্রি বলে মনে হয়।

এই শ্লোকের মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলছেন যে, সাধারণ মানুষের কাছে জাগতিক বিষয়গুলিই আসল, কিন্তু একজন জ্ঞানী ব্যক্তির কাছে তা কেবলই মিথ্যা মায়া। এর বিপরীতে, সাধারণ মানুষ যেখানে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলিকে অর্থহীন মনে করে (যাকে শ্লোকে 'রাত্রি' বলা হয়েছে), আত্মসংযমী ব্যক্তিগণ ঠিক সেই বিষয়েই সজাগ ও জাগ্রত থাকেন।

সাধারণ জীব:
জাগতিক বিষয় যেমন অর্থ, ক্ষমতা, ইন্দ্রিয় সুখ ইত্যাদিকেই জীবনের মূল লক্ষ্য মনে করে। তাদের কাছে আধ্যাত্মিক জীবন নিষ্প্রভ ও অনর্থক (যা শ্লোকে 'রাত্রি' হিসেবে বর্ণিত)।

কৃষ্ণভাবনামৃত সম্পন্ন ব্যক্তি:
তাঁরা জাগতিক বিষয়গুলিকে মায়া হিসেবে দেখেন। তাঁরা জানেন যে এই জগৎ ক্ষণস্থায়ী। তাই তাঁরা আধ্যাত্মিক জ্ঞান এবং ভগবানের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত রাখেন (যা শ্লোকে 'জাগ্রত' অবস্থা)।
আজকের বানীর সারসংক্ষেপঃ

শ্রীল সুভগ স্বামী গুরুমহারাজ আমাদের বোঝাতে চেয়েছেন যে, এই জড় জগতে ঘুমিয়ে থাকা মানে জাগতিক মায়ার গভীরে ডুবে থাকা, আর জেগে থাকা মানে সেই মায়া থেকে মুক্ত হয়ে কৃষ্ণভাবনায় স্থিত হওয়া।

'মহাসমুদ্র অতিক্রম করার উপযুক্ত তরুণী' কিভাবে এই মহাসমুদ্র থেকে মুক্ত হতে পারি? কিভাবে পুনরায় এই জন্ম-মৃত্যুর মহাসমুদ্র ...
02/08/2025

'মহাসমুদ্র অতিক্রম করার উপযুক্ত তরুণী' কিভাবে এই মহাসমুদ্র থেকে মুক্ত হতে পারি? কিভাবে পুনরায় এই জন্ম-মৃত্যুর মহাসমুদ্র অতিক্রম করতে পারি? সুতরাং উপযুক্ত জাহাজ হল ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মুরারীর প্রতি ভক্তিময় সেবার আশ্রয় নেওয়া। 'মুর' মানে হল 'মুর' নামক দৈত্য এবং 'অরি' মানে হল হত্যাকারী। জড়জগতে অনেক বাধা-বিপত্তি আছে যেগুলো আমাদের কাছে দৈত্যের মত। কিন্তু কৃষ্ণ আমাদের পথের সকল বাধা দূর করে সর্বোচ্চ মুক্তি, সর্বোচ্চ ধাম এবং জীবনের সর্বোচ্চ পরিপূর্ণতা দিতে পারেন।

শ্রীল জয়পতাকা স্বামী গুরুমহারাজ
প্রবচন, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, আগস্ট ০২, ১৯৮৭, পেনাং, মালয়েশিয়া

উক্তিটির মূল ভাবঃ
শ্রীল জয়পতাকা স্বামী গুরুমহারাজ তাঁর এই উক্তির মাধ্যমে জীবন ও আধ্যাত্মিক পথের একটি সুন্দর উপমা তুলে ধরেছেন। এখানে তিনি যা বোঝাতে চেয়েছেন:

মহাসমুদ্রের উপমা: এই জড়জগতকে তিনি এক বিশাল মহাসমুদ্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যেমন মহাসমুদ্র পার হওয়া একা বা সাধারণ উপায়ে অসম্ভব, ঠিক তেমনই এই জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি পাওয়া আমাদের নিজেদের চেষ্টায় প্রায় অসম্ভব। এই জগতে আছে দুঃখ, কষ্ট, লোভ, মোহ—এগুলো যেন মহাসমুদ্রের উত্তাল ঢেউ।

তরুণীর উপমা: আমাদের মতো মানুষেরা, যারা এই জগতে বাস করছি, তারা যেন এক তরুণী। এখানে তরুণী বলতে অপরিণত বা অনভিজ্ঞ অবস্থাকে বোঝানো হয়েছে। একজন তরুণী যেমন একা বিশাল সমুদ্র পার হতে পারে না, তেমনি আমরাও এই মায়ার জগতে অসহায়।

জাহাজের উপমা: এই মহাসমুদ্র পার হওয়ার জন্য আমাদের একটি উপযুক্ত জাহাজ দরকার। এই জাহাজ হলো ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তিময় সেবার আশ্রয় নেওয়া। ভক্তিময় সেবা একটি মজবুত ও নিরাপদ জাহাজের মতো, যা আমাদের জীবনের সব ঝড়-ঝাপটা থেকে রক্ষা করে।

মুরারীর উপমা: কৃষ্ণকে মুরারী বলার মাধ্যমে তিনি আরও একটি গভীর তাৎপর্য তুলে ধরেছেন। 'মুর' নামক এক ভয়ংকর দৈত্য ছিল, যাকে কৃষ্ণ হত্যা করেছিলেন। আমাদের জীবনেও অনেক বাধা-বিপত্তি, যেমন রাগ, অহংকার, কাম, লোভ—এগুলো যেন দৈত্যের মতো। কৃষ্ণ (মুরারী) আমাদের জীবনের এই অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সব বাধা-বিপত্তি দূর করতে পারেন, যেমন তিনি মুর নামক দৈত্যকে বধ করেছিলেন।

শাস্ত্রীয় প্রমাণ ও উপমাঃ
ভীষণ দুঃখের মহাসমুদ্র:
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার একটি শ্লোকে (৮.১৫) বলা হয়েছে,
"মামুপেত্য পুনর্জন্ম দুঃখালয়মশাশ্বতম"।

অর্থাৎ, যাঁরা আমাকে (কৃষ্ণকে) প্রাপ্ত হন, তাঁদের আর দুঃখপূর্ণ, অনিত্য জন্ম গ্রহণ করতে হয় না। এই শ্লোকে জীবনকে দুঃখের আলয় বা আবাস বলা হয়েছে, যা এক মহাসমুদ্রের মতোই। এই সমুদ্র পার হওয়ার একমাত্র পথ কৃষ্ণভক্তি।

ভক্তিই শ্রেষ্ঠ পন্থা:
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার (১২.৬-৭) শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ নিজেই বলেছেন,
"যে তু সর্বাণি কর্মাণি ময়ি সংন্যস্য মৎপরাঃ। ... তেষামহং সমুদ্ধর্তা মৃত্যুসংসারসাগরাৎ।"

অর্থাৎ, "যে সকল ভক্ত আমাতে মন সমর্পণ করে, তাঁদের আমি অতি দ্রুত এই জন্ম-মৃত্যুরূপ সংসার-সাগর থেকে উদ্ধার করি।" এখানে শ্রীকৃষ্ণ নিজেকে সেই উদ্ধারকারী বা জাহাজ হিসেবে চিহ্নিত করছেন, যা এই সংসার-সাগর পার হতে সাহায্য করে।

আজকের বাণীর সারসংক্ষেপঃ
আজকের বাণীর মূল সারসংক্ষেপ হলো, জড়জগত দুঃখ ও বাধাপূর্ণ একটি মহাসমুদ্রের মতো। এই মহাসমুদ্র থেকে একা বা নিজস্ব প্রচেষ্টায় পার হওয়া সম্ভব নয়। এই জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের একটি মজবুত অবলম্বন দরকার। সেই অবলম্বনটি হলো ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর প্রতি নিষ্কাম ভক্তিময় সেবা। তিনি আমাদের জীবনের সব বাধা-বিপত্তি (দৈত্য) দূর করে পরম শান্তি ও সর্বোচ্চ ধামে নিয়ে যেতে পারেন। তাই, এই সংসার-সাগরে ডুবতে না চাইলে আমাদের উচিত কৃষ্ণভক্তিরূপ জাহাজটির আশ্রয় নেওয়া।

যেহেতু আমাদের মন কলুষে পরিপূর্ণ, তাই আমরা আমাদের যথার্থ স্বরূপকে উপলব্ধি করতে পারি না। হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপের প্রথম সুফ...
02/08/2025

যেহেতু আমাদের মন কলুষে পরিপূর্ণ, তাই আমরা আমাদের যথার্থ স্বরূপকে উপলব্ধি করতে পারি না। হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপের প্রথম সুফল হল যে, এটা আমাদের মনকে মার্জন করে, যাতে আমরা আমাদের প্রকৃত পরিচয় জানতে পারি, একেই বলে আত্মোপলব্ধি।

শ্রী শ্রীমদ্ ভক্তিচারু স্বামী গুরুমহারাজ
শিক্ষাষ্টকম্-১, বেলজিয়াম, ২রা আগস্ট ২০১১

শ্রী শ্রীমদ্ ভক্তিচারু স্বামী গুরুমহারাজ তাঁর উক্তিটিতে আমাদের জীবনের এক গভীর সত্য তুলে ধরেছেন। সহজভাবে বলতে গেলে, তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে আমাদের মন বিভিন্ন কলুষ বা অপবিত্রতায় ভরা থাকার কারণে আমরা আমাদের প্রকৃত পরিচয় বা স্বরূপ জানতে পারি না।

কলুষিত মনের বাধা:
আমাদের মন নানা ধরনের অপবিত্রতা, যেমন– ক্রোধ, লোভ, হিংসা, মিথ্যা অহংকার, ইত্যাদি দ্বারা পূর্ণ। এই কলুষগুলো আমাদের মনকে ঢেকে রাখে, ঠিক যেমন মেঘ সূর্যকে ঢেকে রাখে। মেঘ থাকার কারণে আমরা সূর্যের উজ্জ্বলতা দেখতে পাই না, যদিও সূর্য সেখানেই আছে। তেমনি, মনের কলুষতার কারণে আমরা আমাদের প্রকৃত আত্মাকে উপলব্ধি করতে পারি না।

হরিনাম মহামন্ত্রের কার্যকারিতা:
তিনি বলেছেন যে হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করার প্রথম সুফলই হলো এই মনকে পরিষ্কার করা। এই মন্ত্র জপ করলে মনের ওপর জমে থাকা কলুষ ধীরে ধীরে দূর হয়। এটি অনেকটা একটি নোংরা কাঁচের আয়নাকে ঘষে পরিষ্কার করার মতো। যখন আয়নাটি পরিষ্কার হয়, তখন আমরা তাতে আমাদের আসল প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। একইভাবে, যখন মন পরিষ্কার হয়, তখন আমরা আমাদের প্রকৃত আত্মাকে উপলব্ধি করতে পারি।

আত্মোপলব্ধি:
মনের এই মার্জন বা পরিষ্কার হওয়ার ফলস্বরূপ আমরা আমাদের প্রকৃত পরিচয় জানতে পারি। এই অবস্থাকেই আত্মোপলব্ধি বলা হয়। আমরা তখন বুঝতে পারি যে আমরা এই নশ্বর শরীর নই, বরং চিন্ময় আত্মা, যিনি পরমেশ্বরের অংশ। এই উপলব্ধি আমাদের জীবনের সঠিক পথ দেখায় এবং এক নতুন অর্থ প্রদান করে।

শাস্ত্রীয় প্রমাণ ও উপমাঃ
শাস্ত্রীয় প্রমাণ: চৈতন্য চরিতামৃত-এর আদি লীলাতে (৭/৯২-৯৩) বলা হয়েছে, "চেতোদর্পণমার্জনং"। এর অর্থ হলো, হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র মন-রূপ দর্পণকে মার্জন বা পরিষ্কার করে। এটি মনের ভেতর জমে থাকা কাম, ক্রোধ, লোভ ইত্যাদি ময়লা দূর করে এবং আত্মাকে তার প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।

উপমা: এই বিষয়ে একটি প্রচলিত উপমা হলো ময়লা আয়না ও মুখচ্ছবি-র উপমা। একটি নোংরা ও ধূলো জমা আয়নায় আমরা আমাদের মুখ দেখতে পাই না। এর কারণ এই নয় যে আমাদের মুখ নেই, বরং আয়নাটি অপরিষ্কার। যখন আমরা একটি কাপড় দিয়ে আয়নাটি মুছে ফেলি, তখন তাতে আমাদের মুখ পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। একইভাবে, আমাদের মন হলো সেই আয়না, যা কলুষ ও মায়ার ধূলোয় ঢেকে আছে। হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র হলো সেই পরিষ্কারক কাপড়, যা মনকে পরিষ্কার করে এবং আমাদের আত্ম-স্বরূপকে প্রকাশ করে।

আজকের বাণীর সারসংক্ষেপঃ
শ্রী শ্রীমদ্ ভক্তিচারু স্বামী গুরুমহারাজের আজকের বাণীর সারসংক্ষেপ হলো: আমাদের মন নানা অপবিত্রতায় আচ্ছন্ন থাকার কারণে আমরা নিজেদের আসল স্বরূপকে চিনতে পারি না। হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করলে মনের এই কলুষ দূর হয় এবং মন পরিষ্কার হয়। এর ফলে আমরা আমাদের প্রকৃত পরিচয় জানতে পারি, যা আত্মোপলব্ধি নামে পরিচিত। এটিই হলো আমাদের জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য।

মাছকে যখন ডাঙ্গায় রাখা হয়, এটি ছট্‌ফট্ করে বা মৃত্যু হয়। একইভাবে, যদি তুমি, স্থলের কোন প্রাণীকে, যদি তোমাকে জলের মধ্যে র...
02/08/2025

মাছকে যখন ডাঙ্গায় রাখা হয়, এটি ছট্‌ফট্ করে বা মৃত্যু হয়। একইভাবে, যদি তুমি, স্থলের কোন প্রাণীকে, যদি তোমাকে জলের মধ্যে রাখা হয়, তুমি কষ্ট পাবে এবং মৃত্যুবরণ করবে। তাই আমরা চিন্ময় প্রকৃতির অংশ হওয়ার কারণে যতদিন জড়া প্রকৃতির অধীনে থাকব, আমরা অবশ্যই অসুখী।

শ্রীল প্রভুপাদ শ
বৃন্দাবন, আগষ্ট ২, ১৯৭৪

শ্রীল প্রভুপাদ এই উক্তিটির মাধ্যমে একটি গভীর আধ্যাত্মিক সত্য বোঝাতে চেয়েছেন। তিনি মাছ এবং জল, ও স্থলপ্রাণী এবং স্থলের উপমা ব্যবহার করে দেখিয়েছেন যে প্রতিটি জীব তার স্বাভাবিক পরিবেশেই সুখী থাকতে পারে। যখন একটি জীবকে তার স্বাভাবিক পরিবেশ থেকে সরিয়ে ভিন্ন পরিবেশে রাখা হয়, তখন সে কষ্ট পায় এবং ultimately, মারা যায়।

উপমা ১: মাছের প্রাকৃতিক পরিবেশ হলো জল। যখন তাকে জল থেকে ডাঙ্গায় আনা হয়, তখন সে ছটফট করে এবং মারা যায়।

উপমা ২: একইভাবে, স্থলপ্রাণী, যার প্রাকৃতিক পরিবেশ হলো স্থল, তাকে যখন জলে রাখা হয়, তখন সে কষ্ট পায় এবং মারা যায়।

এই উপমাগুলোর মাধ্যমে শ্রীল প্রভুপাদ আমাদের প্রকৃত পরিচয় সম্পর্কে সচেতন করতে চেয়েছেন। আমরা, আত্মা হিসেবে, চিন্ময় প্রকৃতির (আধ্যাত্মিক জগতের) অংশ। আমাদের প্রকৃত বাসস্থান হলো চিন্ময় জগৎ, যেখানে আমরা ভগবানের সাথে নিত্য সম্পর্কযুক্ত। কিন্তু যখন আমরা এই জড় জগতে (ডাঙ্গা থেকে দূরে সরিয়ে রাখা মাছের মতো) আসি, তখন আমরা আমাদের স্বাভাবিক চিন্ময় পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। ফলস্বরূপ, আমরা এখানে কোনোদিনও প্রকৃত আনন্দ বা সুখ খুঁজে পাই না।

শাস্ত্রীয় প্রমাণ ও উপমাঃ
ভাগবত গীতার শিক্ষা:
শ্রীকৃষ্ণ ভাগবত গীতায় বলেছেন, "মমৈবাংশো জীবলোকে জীবভূতঃ সনাতনঃ।" (গীতা ১৫.৭)।

এর অর্থ হলো, সমস্ত জীব আমারই সনাতন অংশ। অর্থাৎ, আমরা ভগবানেরই অংশ, এবং আমাদের স্বাভাবিক পরিবেশ হলো চিন্ময় জগৎ, যেখানে ভগবান বিরাজমান। যেমন মাছ জলের অংশ এবং জলের মধ্যেই সে পূর্ণতা পায়, তেমনই আমরা ভগবানের অংশ এবং তাঁর সাথে যুক্ত হয়েই আমরা প্রকৃত আনন্দ পেতে পারি।

জল ও লবণের উপমা:
এই উপমাটি এই প্রসঙ্গে খুবই প্রাসঙ্গিক। জল ও লবণ একত্রে মিশে থাকে, কিন্তু যখন লবণকে জল থেকে আলাদা করা হয়, তখন তার লবণত্ব কমে যায়। একইভাবে, আমরা যখন ভগবান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জড় জগতে থাকি, তখন আমাদের চিন্ময় সত্তা, আনন্দ এবং শান্তি, ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যায়।

বাণীর সারসংক্ষেপঃ
আমাদের প্রকৃত পরিচয় হলো আমরা চিন্ময় প্রকৃতির অংশ, অর্থাৎ আমরা ভগবানের সনাতন সেবক। আমাদের প্রকৃত সুখ এবং আনন্দ কেবল তখনই সম্ভব, যখন আমরা আমাদের স্বাভাবিক পরিবেশ, অর্থাৎ চিন্ময় জগতে ফিরে যাই, অথবা এই জড় জগতেই ভগবানের সাথে আমাদের সম্পর্ককে পুনরায় স্থাপন করি। যতদিন আমরা জড় জগতের অধীনে থাকব, আমরা মাছের মতো ছটফট করতে থাকব এবং কোনোদিনও প্রকৃত আনন্দ বা সুখ খুঁজে পাব না।

Address

Fulbaria

Telephone

+8801682320449

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Sajjan Jibon Das posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share