22/10/2022
বিএমডিসি আইন এবং একটি মিথ্যাচার
___________________________________
আমাদেরও দেশের বিএমডিসি রেজিস্ট্রারড চিকিৎসকগণের একটি অংশ কিছু বিষয়ে আদিম কাল থেকেই চরম গোঁড়ামি করে আসছেন। তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে নিজেদের ক্ষেত্রে "মেডিকেল চিকিৎসক" শব্দটা ব্যবহার না করে শুধুমাত্র "চিকিৎসক" শব্দটা ব্যবহার করা। আপনি বলতে পারেন, তারা তো চিকিৎসকই, তাহলে "চিকিৎসক" শব্দ ব্যবহার করবে না কেনো?
তারা নিজেদের ক্ষেত্রে অবশ্যই "চিকিৎসক" শব্দ ব্যবহার করবে, তবে "বিএমডিসি আইন-২০১০" তাদেরকে যেই নাম দিছে ঐ নাম ব্যবহার করবে। বিএমডিসি শুধুমাত্র দুইধরণের চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তারা হলেন "মেডিকেল চিকিৎসক" এবং "ডেন্টাল চিকিৎসক"।
"বিএমডিসি আইন-২০১০" অনুযায়ী এমবিবিএস (যেটা আসলে "বিএমএস" হয়) ডিগ্রিধারীগণ "মেডিকেল চিকিৎসক"। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক সত্য হচ্ছে তারা নিজেদেরকে "মেডিকেল চিকিৎসক" হিসেবে পরিচয় না দিয়ে শুধুমাত্র "চিকিৎসক" হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। এর কারণ হচ্ছে নিজেদেরকে "মেডিকেল চিকিৎসক" হিসেবে পরিচয় দিলে তারা একটা নির্দিষ্ট বাউন্ডারির মধ্যে চলে আসেন। কিন্তু শুধুমাত্র "চিকিৎসক" শব্দ ব্যবহার করলে যেকোনো চিকিৎসা পেশার উপরই নিজেদের বিস্তার জাহির করা যায়। দিন-রাত ওনারা যেই বিএমডিসি আইনের হাতি দেখিয়ে অন্য চিকিৎসা পেশাজীবীদেরকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেন, নিজেদের সুবিধার ক্ষেত্রে নিজেরাই ঐ আইনকে বেমালুম ভুলে বসে থাকেন। আজব হলেও সত্য যে ওনারাই ২০১০ সালে আইন সংশোধন হওয়ার আগ পর্যন্ত দাবি করতেন, কেউ ডেন্টাল চিকিৎসা নিতে হলেও আগে তাদের রেফারেল হয়ে যেতে হবে। এমনিভাবে তারা নিজেদের আসল পরিচয় ভুলে গিয়ে চিকিৎসাক্ষেত্রের প্রতিটা জায়গায় তাদের আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। রোগীর যতই ক্ষতি হোক, রোগীকে এমবিবিএস বা বিডিএস ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়া অন্য ডিসিপ্লিনের কারো কাছে রেফার করা যাবে না। এতে দেশের সাধারণ রোগীরা সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে ক্ষোভ বুকে নিয়ে পাড়ি জমান ভারতে।
আলহামদুলিল্লাহ এই বিষয়ে এখন ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। দেশের মেডিকেল প্রাকটিশনারগণের অনেকেই এখন রেফারেল সিস্টেম ফলো করছেন। মানুষজনও এখন শিক্ষিত হচ্ছেন, আস্তে আস্তে সবকিছু বুঝতেছেন। এখন সরাসরিই বিশেষায়িত চিকিৎসকদের কাছে রোগী আসছেন। তথ্য-সন্ত্রাস করে অন্তত এই যুগে আর কোনো সত্য ঢেকে রাখার উপায় নাই।
মেডিকেল চিকিৎসকরা দেশের স্বাস্থ্যসেবা প্রাণ, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তাদের প্রতি আমাদের চাওয়া তারা নিজ নামে পরিচিত হোন। এতে অন্যান্য চিকিৎসকরাও তাদের নিজ নামে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবে৷ যতদিন তারা এই কনসেপ্টে থাকবেন যে, চিকিৎসা-ব্যবস্থায় আমরাই একমাত্র অপরিহার্য এবং আমরাই একমাত্র চিকিৎসক ততদিন বাকি ডিসিপ্লিনের লোকও ম্যালপ্রাকটিস ছাড়বে না। পার্থক্য হবে এতটুকুই যে মেডিকেল চিকিৎসকগণ নিজেদের সুবিধামতো ইন্টারন্যাশনাল সব গাইডলাইনকে অমান্য করে আইন বানিয়ে ম্যালপ্রাকটিস করবে আর বাকিরা সবাই সবকিছু অমান্য করে ম্যালপ্রাকটিস করবে।