23/01/2025
'দ্য পার্ডিশন অব সেদনায়া' : সেদনায়ার নরক
সিরিয়ার ধূলি ঢাকা পথে যখন সূর্য অস্ত যায়, তখন সেদনায়ার কারাগারের অন্ধকার কোণে শুরু হয় এক ভিন্ন পৃথিবীর গল্প। নিস্তব্ধ রাতের নির্জনতাকে ছিন্ন করে বন্দিদের কান্না, চিৎকার, আর আর্তনাদ। সেই বন্দিদের একজন ছিল এক কিশোরী, যার জীবনের পাতাগুলো বিবর্ণ- মলিন হয়ে গিয়েছিল সেদনায়ার বিভীষিকাময় প্রাচীরের ভেতর।
সে জানতো না, তার অপরাধ কী। হয়তো শুধুই বেঁচে থাকা, কিংবা একটি নির্দোষ হাসি। তার চোখে ছিল এক অনন্ত শূন্যতা, যেন প্রতিটি ক্ষণ তার মন থেকে আশা মুছে দিচ্ছিল। অন্ধকারের মাঝেই সে দেখতে পেত এক অব্যক্ত নরক, যেখানে মৃত্যুও ছিল অপেক্ষার চেয়ে সহজ। দিন পেরিয়ে রাত আর রাত পেরিয়ে দিন, সেদনায়া তাকে শিখিয়েছিল যন্ত্রণা ও সহ্যশক্তির ভাষা। কিন্তু মানবতার প্রতি তার বিশ্বাস হারিয়ে যায়নি। যন্ত্রণার মাঝেই সে খুঁজে পেয়েছিল নিজের এক ছোট্ট পৃথিবী, যেখানে সাহস ছিল তার একমাত্র বন্ধু।
একদিন, কারাগারের অন্ধকারে আলোর এক ক্ষীণ ঝলক দেখা দিল। মুক্তি হয়তো তাকে ডাকছিল। কিন্তু তার হৃদয়ে ছিল না উল্লাস, ছিল কেবল শূন্যতা। কারণ, সেদনায়ার দেয়ালগুলো তার শৈশব, স্বপ্ন, আর স্নেহের সমস্ত স্মৃতি চুরি করে নিয়েছিল।
এই কিশোরীর কণ্ঠে উঠে আসে এক করুণ প্রতিজ্ঞা- যে নরকের অভিজ্ঞতা সে পেয়েছে, তা যেন আর কোনো মানবসন্তানের জীবনে না আসে। তার স্বীকারোক্তি হয়ে উঠলো এক মানবতার চিৎকার, যেখানে পৃথিবী শুনতে পেল এক অব্যক্ত আর্তনাদ।
সেদনায়ার নরক কেবল একটি গল্প নয়; এটি এক নীরব বিপ্লব, যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়- কীভাবে মানুষ সবচেয়ে অন্ধকার সময়েও আশার একটি ক্ষীণ আলো খুঁজে নিতে পারে। সেদনায়া আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যতই বিভীষিকা আসুক, মানবতা কখনো হারিয়ে যায় না, বরং তা প্রতিটি আঘাতের মাঝেও আরো দৃঢ় হয়ে জ্বলে উঠে, অন্ধকারকে বিদীর্ণ করে আলোর পথ দেখায়।
বই : ‘দ্য পার্ডিশন অব সেদনায়’ (প্রকাশিতব্য)
লিখক : আসাদ জিবরিল
পৃষ্ঠা : ২১৬