
20/05/2024
বিষয়ভিত্তিক পাঠ: কোরআন ভিত্তিক ইসলামে জন্মান্তরবাদ
#কোরআন
#ইসলামিক
#ইসলাম
#জন্মান্তরবাদ
শুক্রবিন্দু হতে আল্লাহ মানব সৃষ্টি করেন পরে তাকে পরিমিত বিকাশ সাধন করেন। (নং-৮০, আয়াত-১৯)। অতঃপর তার পথ সহজ করে দেন (নং-৮০, আয়াত-২০)। অতঃপর তার মৃত্যু ঘটান এবং তাকে কবরস্থ করেন। (নং-৮০, আয়াত-২১)। অতঃপর যখন ইচ্ছা তিনি তাকে সজীব (পুনঃজ্জীবিত) করেন। (নং-৮০, আয়াত-২২)। মৃত্যুর পরে এইভাবে পুনঃজীবিত করে (তাৎক্ষণিকভাবে অর্থাৎ মৃত্যুর পর পরই) প্রভুর কাছে প্রত্যানীত হবে (আনাম, আয়াত-৩৬, ৬২) (সেজদা, আয়াত-১১)। তখন তার পূর্বকর্ম পরীক্ষা করা হবে (সূরা-ইউনুস, আয়াত-৩০)। কর্মে কাহারা শ্রেষ্ঠ তা পরীক্ষা করা হয়। (সূরা-হুদ, আয়াত- ৭)। পূর্ব ইমান পরীক্ষা করা হয়। (সূরা-আনকাবুত, আয়াত-২)। অতঃপর তার কর্মফল অনুসারে প্রতিদান প্রদান করা হবে (সূরা-হুদ, আয়াত-১১১)। এই লক্ষে তাকে পুনরায় তাকে সৃষ্টিতে ফিরিয়ে আনা হবে, প্রথমবার যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছিল সেইভাবে। (সূরা-আরাফ, আয়াত-২৯) এই আয়াতে বাদা-য়া শব্দের অর্থ প্রকাশ পাওয়া বা ভ্রমণে বের হওয়া। (আরবী অভিধান পৃ. নং ৬৬৯) বাদা-য়া শব্দের অর্থ মরুভূমিতে অবস্থান করা। (আরবী অভিধান পৃ. নং ৬৬৮) আর কামা অর্থ এইভাবে আর আওয়াদাত শব্দের অর্থ দ্বিতীয় বার আসতে পারা। (আরবী অভিধান পৃ. নং ১৮১৩) আবদুল্লাহ ইউসুফ আলী (ভারত) এই আয়াতের বাংলা অনুবাদটি মা'আরেফুল কোরআন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন আল কুরআনুল কারীম, বঙ্গানুবাদ থেকে সমন্বয় করে নেয়া হয়েছে।] অর্থাৎ প্রথমবার সৃষ্টি হয়েছিল মৃত্তিকা হতে, পরে শুক্রবিন্দু হতে, তারপর আলাক হতে, তার পর মাতৃগর্ভ থেকে বাহির করা হয় শিশুরূপে। (সূরা-৪০ আয়াত-৬৭)। (সূরা-হজ, আয়াত-৫)। (সূরা-ফাতির, আয়াত-১১)। অর্থাৎ পুনরায় সৃষ্টিটা হবে মাতৃগর্ভে জন্মলাভ করার মাধ্যমে। এইভাবে তাকে পুনরায় সৃষ্টিতে ফিরিয়ে আনা হবে। এইভাবে যতবার সৃষ্টিতে ফিরিয়ে আনা হবে একই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থাৎ পুনরায় সৃষ্টি করা হবে প্রথমবার যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। এভাবে চক্রাকারে জীবন-মৃত্যু পুনঃজীবিত ও পুনঃ সৃষ্টির মাধ্যমে বার বার পুনরাবর্তন ঘটানো হবে। এভাবে চক্রাকারে, জীবন-মৃত্যু-কবর-পুনঃজীবিত-প্রভুর কাছে প্রত্যানয়ন-ইমান ও কর্মপরীক্ষা-কর্মফল অনুসারে পারিশ্রমিক প্রদান-পুনঃসৃষ্টির মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা-আবার জীবন-মৃত্যু-কবর-পুনঃজীবিত-প্রভুর কাছে প্রত্যানয়ন-ইমান ও কর্মপরীক্ষা-কর্মফল অনুসারে পারিশ্রমিক প্রদান-পুনঃসৃষ্টির মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা। এখানে উল্লেখ্য যে, এই জীবনচক্র আবর্তনের ফলে দেখা যাচ্ছে (মৃত্যু+মৃত্যু) দুইবার মৃত্যু, আবার (পুনঃজীবিত + পুনঃসৃষ্টি) দুই বার জীবন (প্রভুর কাছে প্রত্যানয়ন + পারিশ্রমিক প্রদান) দুই বার পারিশ্রমিক প্রদান। এমনই ভাবে এই জীবনচক্রে একটা গাণিতিক সূত্রের পরিচয় পাওয়া যায়। এই মর্মে আল্লাহ বলেন, তোমাদেরকে মৃত্যু থেকে জীবন্ত করিয়াছেন। আবার তোমাদেরকে মৃত্যু ঘটাবেন ও পুনরায় জীবন্ত করিবেন অতঃপর প্রভুর দিকে তোমাদিগকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা হবে। (সূরা বাকারা : ২৮) এখানে উল্লেখ্য যে, এ আয়াতে মৃত্যু শব্দ দুই বার এসেছে। (আমওয়াতান ও ছুম্মা উমিতুকুম) তোমাদেরকে দুইবার পারিশ্রমিক প্রদান করা হবে (সূরা-২৮, আয়াত-৫৪)। (সূরা-আহযাব, আয়াত-৩১)। দুইবার মৃত্যু ও দুইবার জীবন দানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। (সূরা-৪০, আয়াত-১১)। দুইবার শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং পরে মহাশাস্তির ব্যবস্থা আছে। (তওবা, আয়াত ১০১)। তবে চক্রাকারে জন্ম মৃত্যুর ঘটনায় কমপক্ষে দুইবার পারিশ্রমিক প্রদানের কথাটা উল্লেখ আসছে। তবে সার্বিক ক্ষেত্রে দুইবার কথাটাকে একাধিকবার অর্থে ব্যবহৃত হবে। কারণ, দুইবার কথার মধ্যে একাধিকবার কথাটা এসে যায়। তাই আল্লাহর সৃষ্টি জগতকে এইভাবে একাধিকবার সৃষ্টি ও মৃত্যুর মাধ্যমে একাধিকবার পারিশ্রমিক প্রদানের মাধ্যমে সৃষ্টিতে পুনরাবর্তন ঘটান। এই মর্মে আল্লাহ বলেন, "আল্লাহ ন্যায় বিচারের মাধ্যমে কর্মফল প্রদানের লক্ষ্যে পুনঃসৃষ্টির দ্বারা পুনরাবর্তন ঘটান।" (সূরা-ইউনুস, আয়াত-৪)। বরং তিনি তার পুনরাবৃত্তি ঘটান (সূরা-২৭, আয়াত-৬৪)। তিনি অস্তিত্ব দান করেন ও পুনরাবর্তন ঘটান (সূরা-৮৫, আয়াত-১৩)। এখানে উল্লেখ্য যে, পুনঃজীবিত বা পুনঃ সৃষ্টির বিষয়টি জীবন মৃত্যুর চক্রের প্রক্রিয়ার একটি অংশ। পক্ষান্তরে পুনরাবৃত্তি কথাটি দিয়ে জীবন মৃত্যুর ক্ষেত্রে সব কয়টি স্তরই পর্যায়ক্রমে ঘটানোকে বুঝায়। অর্থাৎ শুক্র বিন্দু থেকে আলাক, তার পর মাতৃগর্ভ থেকে শিশরূপে বাহির করা, পরে দুনিয়াতে জীবনযাপন করা, তারপর মৃত্যু, তারপর কবরস্থ, তারপর পুনঃর্জীবিত, তারপর প্রভুরকাছে প্রত্যানীত হওয়া, তারপর ইমান ও সৎকর্ম পরীক্ষা করা, তারপর কর্মফল অনুসারে পারিশ্রমিক প্রদানের লক্ষ্যে পুনঃ সৃষ্টির মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা। এইভাবে পুরো প্রক্রিয়াটিরই পুনরাবৃত্তি ঘটানো হবে। তাই (সূরা-ইউনুস, আয়াত-৪)। (সূরা-২৭, আয়াত-৬৪)। (সূরা-৮৫, আয়াত-১৩) এই সকল আয়াতে ইয়াদু শব্দ এসেছে, ইয়াদু শব্দের অর্থ পুনরাবৃত্তি বা পুনরাবর্তন ঘটানো। আরবি অভিধান পৃ.১৮১৯। এই সকল আয়াতে জীবন চক্রের প্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরেই বার বার ঘটানো কথা বলা হয়েছে, ফলে এই সকল আয়াত দিয়ে পুনঃজীবিত করা হবে কিংবা পুনঃসৃষ্টি করা হবে এটা বুঝানো হয় নি, বরং জীবন মৃত্যু কবর পুরো সৃষ্টি চক্রে অর্থাৎ জীবনচক্রের পুরো প্রক্রিয়াকে বার বার ঘটানো হবে এমনটি বুঝানো হয়েছে। এইভাবে তাদের কৃতকর্মের ফল প্রদান করা হয়। (সূরা-হুদ, আয়াত- ১১১)। কারণ প্রভু কাহারো উপরে জুলুম করেন না (সূরা-১৮, আয়াত-৪৯)। রবং তারা নিজেদের উপর নিজেরাই যুলুম করেছিল, (সূরা-হুদ, আয়াত-১০১)। আল্লাহ কাহারো উপর কোনো জুলুম করে নি, বরং তারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল। (সূরা-নহল, আয়াত-৩৩)। তাদের কর্মের ফল প্রদানের জন্য "তাদেরকে নতুন ভাবে সৃষ্টি করা হবে।" (সূরা-৩৪, আয়াত-৭)। সেইক্ষণে তাদের "কৃতকর্ম সম্পর্কে অবহিত করা হবে।" (সূরা-৬৪, আয়াত-৭)। তখন তারা অধোবদন হয়ে প্রভুর কাছে বলবে, "আমরা সব শুনলাম ও দেখলাম আমাদেরকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দাও, যাতে আমরা সৎ কর্ম করতে পারি" (সেজদা, আয়াত-১২)। তখন আল্লাহ বলবেন, "তোমরা তো এই কথাটা মৃত্যুর সময়ও বলেছিলে" (সূরা-২৩, আয়াত-৯৯)। কিন্তু না, ইহা হইবার নয়। ইহা একটা উক্তি মাত্র। (সূরা-২৩, আয়াত-১০০)। বরং তোমাদের পূর্ব জীবন এবং পরবর্তী সৃষ্ট নতুন জীবন এর মাঝখানে থাকবে এক অবেধ্য অন্তরাল, যাতে তোমরা আর কখনও পূর্ব জীবনের কোনো কিছু স্মৃতিতে আনয়ন করতে পারবে না। এই মর্মে আল্লাহ বলেন, "তাদের সম্মুখে থাকবে বারযখ বা অন্তরাল।" (সূরা-২৩, আয়াত-১০০)। এই বরযখের মাধ্যমে তাদেরকে শৃংখলিত রাখা হবে। (সূরা-১৩, আয়াত-৫)। তবে এই শৃংখল বা বরযখ থাকবে আবার মৃত্যুর পরে পুনঃজীবিত হওয়ার দিন পর্যন্ত। (সূরা-২৩, আয়াত-১০০)। কাজেই পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে না। বরং তোমরা থাকবে অন্তরালে পরবর্তী পুনঃজীবিত না হওয়া পর্যন্ত। এই আয়াতে প্রমাণিত হয় যে, শেষ বিচারের পূর্বে প্রভুর নিকট উপস্থিতির মাধ্যমে বিচার কার্য করতঃ ইমান ও সৎ কর্মের পরীক্ষা করতঃ পারিশ্রমিক প্রদান করা হবে। এইভাবে আবার তার কৃতকর্মের বিচার কার্য হবে, পুনরায় তাকে আবার কর্মের ফলাফল হিসেবে সৃষ্টি করা হবে তখন সে কোনো আকৃতি প্রাপ্ত হবে, এটা নির্ভর করছে তার কর্মের ফলাফলের উপর। অর্থাৎ কেউ যদি মানুষ হয়ে পশুর মত কর্ম করে তাহলে তাকে মানুষের স্তর থেকে পশুর স্তরে অর্থাৎ নিম্ন স্তরে নামিয়ে দেওয়া হবে। তখন সে আর মানব আকৃতি পাবে না। তাকে সৃষ্টি করা হবে পশু আকৃতিতে। এই মর্মে আল্লাহ বলেন, "তোমাকে সুন্দর আকৃতির অনুকরণে সৃষ্টি করেছি, কিন্তু কর্মফলে আবার তোমাকে হীনতাগ্রস্তদের হীনতায় পরিণত করি।" (সূরা-ত্বীন, আয়াত-৪ ও আয়াত-৫)। অর্থাৎ কর্মদোষে কেউ জীব আকৃতি প্রাপ্ত হয়। এই মর্মে আল্লাহ বলেন, "তোমরা ঘৃণিত বানর হও।" (সূরা-বাকারা, আয়াত-৬৫)। অর্থাৎ যারা নিষিদ্ধ কার্য করবে, তাদেরকে ঘৃণিত বানর করে সৃষ্টি করা হবে। (সূরা-আরাফ, আয়াত-১৬৬)। এমনই ভাবে তারা যে মানব রূপে ছিল, তারা হয়ত কর্মদোষে কেউবা পশু হবে আবার কেউবা তাদের স্থলে তাদের সাদৃশ্য মানব হবে অন্য আকৃতিতে। যা তাদের অজানা। এই মর্মে আল্লাহ বলেন, "তাদের স্থলে তাদের সাদৃশ্য আনয়ন করা হবে এবং তাদেরকে এমন আকৃতি দান করা হবে যা তাদের জানা নেই।" (সূরা-ওয়াকিয়া, আয়াত-৬১)। তারা শুধু জানবে প্রথমে তার যে আকৃতি ছিল। (সূরা-ওয়াকিয়া, আয়াত-৬২)। এই ভাবে জীবনচক্রের মাধ্যমে শেষ বিচারের কঠিন শাস্তির পূর্বে লঘু শাস্তির মাধ্যমে সংশোধন করার সুযোগ দিয়ে থাকে। (সেজদা, আয়াত-২১)। এইভাবে ধাপে ধাপে তাকে উন্নতির দিকে আহরণ করে। (সূরা-৮৪, আয়াত-১৯)। যাতে মানুষ ইমান ও সৎ কর্ম অর্জনের মাধ্যমে অপরাধ থেকে ফিরে আসতে পারে। এইভাবে প্রত্যেক জীবের মৃত্যু হবে এবং প্রত্যেক জীবই প্রভুর কাছে প্রত্যানীত হবে। (সূরা-আনকাবুত, আয়াত-৫৭)। এই মর্মে আল্লাহ বলেন, "আমি প্রত্যেক জীবকে মৃত্যু ঘটাই এবং ভাল মন্দ বিশেষভাবে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই নিকট পুনরায় প্রত্যানীত করি।" (সূরা-আম্বিয়া, আয়াত-৩৫)। এইভাবে মানুষের সৃষ্টি ও পুনঃজীবিতকরণ প্রক্রিয়া ও একটি জীবজন্তুর সৃষ্টি ও পুনঃজীবিতকরণ প্রক্রিয়া একই রকম। (সূরা-৩১, আয়াত-২৮)। আত্মীকরণের ক্ষেত্রে পশু এবং মানব আত্মার কোনো ভেদাভেদ নেই কারণ পশু আত্মা ও মানব আত্মার মধ্যে ভিন্নতা আছে মর্মে কোনো আয়াত পবিত্র কোরআনে আসে নি, কাজেই সকল জীবই এক আত্মা তথা সকল জীবেরই মৃত্যু হবে (সূরা-আনকাবুত, আয়াত-৫৭) এবং সকল জীবেই প্রভুসত্তা রুহুরূপে বিরাজমান। (সূরা-বনি ইসরাইল, আয়াত-৮৫)। তাই এক জীব থেকে অন্য জীবে জন্ম থেকে জন্মান্তরে কখনও-বা মানুষ কখনও-বা পশু কখনও অপূর্ণাঙ্গ মানুষÑ এই কবি নজরুল বলেছে 'মোরা আর জনমে হংস মিথুন ছিলাম' তিনি আরও বলেছে
""'কেমন করে ঘুরছে মানুষ, যুগান্তরে ঘুরণি পাকে'"
এমনই ভাবে জীবজগৎ পর্যায়ক্রমে আবর্তনের মাধ্যমে "সৃষ্টিতে এনে পুনরাবর্তন ঘটানো হচ্ছে।" (সূরা-ইউনুস, আয়াত-৪)। (সূরা-২৭, আয়াত-৬৪)। (সূরা-৮৫, আয়াত-১৩)। কারণ এজন্য পৃথিবীর কোনো কিছু আল্লাহ নিরর্থক সৃষ্টি করেন নি। (নং-১৪, আয়াত-৮৬)। তাই কর্ম অনুসারে শাস্তি বিধান রাখা হয়েছে। বিধায় কেউবা জন্মসূত্রে অন্ধ, কেউবা বোবা, কেউবা লেংড়া, কেউবা পঙ্গু, কেউবা রোগাগ্রস্ত, কেউবা হতদরিদ্র, কেউবা অভিশপ্ত। এই গুলি সবই তার পূর্ব কর্মের ফল সে এই জন্মে ভোগ করছে। এটাই তার পূর্ব কর্মের জন্য শাস্তি বা আজাব বা অগ্নি। এই মর্মে আল্লাহ বলেন, পৃথিবীতে তোমাদের উপর যে বিপর্যয় আসে পূর্বেই উহা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। (সূর হাদীদ : ২২) কারণ আল্লাহ কারো প্রতি যুলুম করেনা। (সূরা-১৮, আয়াত-৪৯)। আর তাই তারা পূর্ব জন্মের নিজ কর্মদোষেই তারা শাস্তি প্রাপ্য। এই মর্মে আল্লাহ বলেন, পৃথিবীতে যত বিপদ আপদ ঘটে তা তার কর্মের কারণেই ঘটে। (সূরা-৪২ শুরা, আয়াত-৩০)। মানুষের যত অকল্যাণ হয় তা তার নিজ কর্মের কারণেই হয়। (সূরা নেসা : ৭৯) এই সকল বিপদ আপদ ও শাস্তি তার জন্য জাহিম বা অগ্নিস্বরূপ। যা তার জন্য শৃঙ্খলস্বরূপ নির্দিষ্ট যা তার মৃত্যু পর্যন্ত, অর্থাৎ মৃত্যুর পরে পুনঃজীবিত হওয়া পর্যন্ত। এটাই আলমে বরযখ বলা হয়েছে। (সূরা-২৩, আয়াত-১০০)। এইভাবে জীবকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, এই দর্শনে যারা বিশ্বাসী তারা অবশ্যই জাহিম বা অগ্নির শাস্তি দেখতে পাবে। (সূরা-১০২, আয়াত-৬)। এই দেহের মাধ্যমে তাকে শৃঙ্খলিত করে কোনো এক সংকীর্ণ স্থানে তাকে নিক্ষেপ করা হবে। (সূরা-ফুরকান, আয়াত-১৩)। অপরাধীরা থাকিবে শৃঙ্খলিত অবস্থায় (সূরা-১৪, আয়াত-৪৯)। (সূরা-১৩, আয়াত-৫)। এই ভাবে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে মর্মে আল্লাহ বলেন, "তোমাদের হিসাব নিকাশের দিন আসন্ন।" (সূরা-আম্বিয়া, আয়াত-১)। জীব দেহ থেকে জীবকে সৃষ্টি করা হয়েছে, আবার তাকে মৃত্যুর পরে জীব দেহের মধ্য দিয়েই সৃষ্টিতে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে, আবার তাকে জীবদেহের মাধ্যমেই উঠানো হচ্ছে, এই মর্মে আল্লাহ বলেন, "তিনি তোমাকে মৃত্তিকা হতে (তথা জীবদেহ হতে) উদ্ভুত করেন।" (সূরা-৭১, আয়াত-১৭)। আবার তিনি তাতেই তোমাদেরকে প্রত্যানয়ন করবেন, অর্থাৎ জীবদেহের মাধ্যমে পুনরাবর্তন ঘটান। আবার উহা (অর্থাৎ জীবদেহ থেকেই সন্তান হিসেবে) বের করবেন। (সূরা-৭১, আয়াত-১৮)। এভাবে জন্ম থেকে জন্মান্তরে ইমান ও কর্মফল মুহূর্ত অনুসারে জীবন চক্র ঘটান। শেষ বিচারের দিন আগত হওয়ার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত। অর্থাৎ যখন প্রথমবার শিংগায় ফুৎকার দিবেন, আসমান ও যমিনের যা কিছু আছে সকলে মূর্ছা যাবে অর্থাৎ মৃত্যু হবে (সূরা-৩৯, আয়াত-৬৮) তখন সকল কিছু ধ্বংস হবে (সূরা-৬৯, আয়াত-১৪)। সকল কিছু ধ্বংস হবে একমাত্র প্রভু স্বত্তা ব্যতীত (সূরা-কাছাস, আয়াত-৮৮)। অর্থাৎ সকলের মৃত্যু হবে এবং মৃত্যুর পরই সকলেই কবরস্থ হবে (সূরা-৮০, আয়াত-২১)। দ্বিতীয়বার শিংগায় ফুৎকার দিলে সকলেই উঠে দাঁড়াবে (জুমার, আয়াত-৬৮)। দ্বিতীয়বার শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে তখন দেহে আত্মার সংযোজন করা হবে (তাকবীর, আয়াত-৭)। তাকে পুনরুজ্জীবিত করেন। (আবাসা, আয়াত-২২)। কবর উন্মোচিত করা হবে। (ইনফিতর, আয়াত-৪)। কবর থেকে উত্থিত হবে। (আদিয়াত, আয়াত-৯)। কবর থেকে বের হবে দ্রুত বেগে। (মাআরিজ, আয়াত-৪৩)। কবর থেকে বের হবে বিক্ষিপ্ত পঙ্গপালের ন্যায়। (কামার, আয়াত-৭)। তখন কবর থেকে উঠে প্রভুর দিকে ছুটতে থাকবে। (সূরা-হজ, আয়াত-৭)। (সূরা-৩৬, আয়াত-৫১)। এখানে কবর বলতে প্রথম শিংগায় ফুৎকার দেওয়ার পর থেকে দ্বিতীয় শিংগায় ফুৎকার দেওয়া পর্যন্ত এই নির্জীব অবস্থাকে বুঝানো হয়েছে। কারণ প্রথম শিংগায় ফুৎকার দিলে সকলের মৃত্যু হচ্ছে। আবার দ্বিতীয় শিংগায় ফুৎকার দিলে সকলে দ-ায়মান হচ্ছে (সুরা যুমার-৬৮)।
শেষ বিচারের মাধ্যমে কাউকে জান্নাত অথবা কাউকে জাহান্নাম দেয়া হবে। সেখানে তারা স্থায়ী হবে যতদিন পৃথিবী স্থায়ী থাকবে। কিংবা যতদিন প্রভু অন্যরূপ ইচ্ছা না করবে। (সূরা-হুদ, আয়াত-১০৬) এবং (সূরা-হুদ, আয়াত-১০৭)।
---স্ট্যাডি চলমান---