
17/02/2025
মধ্যবিত্ত, নিঃশব্দ কষ্ট!
রমজান শুধু রোজা রাখার মাস নয়, এটি আত্মশুদ্ধির, ত্যাগের, ভালোবাসার, দানশীলতার, দয়া ও করুণার এক পরম সুযোগ।
আমাদের ইফতার টেবিলে যখন বাহারি খাবারের আয়োজন থাকে, তখন একবার ভাবুন সেই অসহায় মুখগুলোর কথা, যাদের ঘরে এক টুকরো শুকনো রুটি জোটানোও কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা ইফতারের পর পরই ঠান্ডা শরবত পান করে প্রশান্তি পাই, কিন্তু সেই মা-বাবার কথা ভাবুন, যারা তাদের ক্ষুধার্ত সন্তানকে খালি পেটে ঘুম পাড়ানোর জন্য রাতভর আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করছে।
আমরা যারা ভাগ্যবান, তারা ইচ্ছেমতো বাজার করতে পারি। গরিবরা হয়তো মানুষের দয়ার উপর নির্ভরশীল হয়ে কিছুটা সাহায্য পায়। কিন্তু মধ্যবিত্ত?
এই সমাজের সবচেয়ে নিঃশব্দ কষ্ট সহ্য করা শ্রেণি হলো মধ্যবিত্ত পরিবার।
তারা কারো কাছে কিছু চাইতে পারে না, কারণ তাদের আত্মসম্মানবোধ আছে।
তারা না খেয়েও হাসে, যেন সব ঠিক আছে! কিন্তু সত্যিই কি সব ঠিক আছে?
কত শত মা সারারাত না খেয়ে থাকেন, শুধু সন্তান যেন একটুখানি পেট ভরে খেতে পারে।
কত বাবা দিনের পর দিন নিজের জন্য নতুন জামা কেনে না, শুধু সন্তানটাকে ঈদের দিনে নতুন কাপড় পরাতে পারে।
কত সন্তানেরা বুঝতে পারে না কেন তাদের মা-বাবার চোখে কান্না লুকিয়ে রাখা!
কত অসহায় মা-বাবা সারারাত আল্লাহকে ডেকে ডেকে বলেন, “হে আল্লাহ! আমাদের সন্তানদের যেন মানুষের কাছে হাত পাততে না হয়!”
* কিন্তু আমরা কি তাদের জন্য কিছু করছি?
* আসুন, এবার একটু আলাদা কিছু করি!
এই রমজান শুধু নিজের জন্য নয়, বরং সেই মানুষগুলোর জন্য যারা এক চিলতে হাসির জন্য প্রতিদিন সংগ্রাম করে যাচ্ছে।
যারা মানুষের কাছে কিছু চাইতে পারে না, কিন্তু ক্ষুধার যন্ত্রণায় সারারাত ঘুমাতে পারে না।
যারা হয়তো আমাদেরই পরিচিত, শুধু তাদের কষ্টের কথা আমরা জানতে চাই না!
আমরা কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
১. রাতের আঁধারে গোপনে সাহায্য করুন
• এক ব্যাগ চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, আলু, দুধ, খেজুর নিয়ে তাদের দরজার সামনে রেখে আসুন।
• কেউ দেখবে না, শুধু আল্লাহ দেখবেন!
• যে হাত গোপনে দান করে, কিয়ামতের দিন সেই হাত নূরের মতো উজ্জ্বল হবে!
একবার ভাবুন:
আপনার দেওয়া এক ব্যাগ খাবার যখন এক মা হাতে পাবে, তখন সে হয়তো চিৎকার করে কাঁদবে আর আল্লাহকে শুকরিয়া জানাবে!
একজন বাবা যখন রাতের অন্ধকারে সেই খাবার দেখে সন্তানের মুখে হাসি দেখবে, তখন হয়তো আল্লাহর দরবারে আপনার জন্য অজান্তেই হাত তুলে দোয়া করবে!
২. আত্মীয়দের আগে গুরুত্ব দিন
নবীজি (সাঃ) বলেছেন, “তোমার দান প্রথমে তোমার আত্মীয়ের প্রাপ্য।”
• আত্মীয়দের খোঁজ নিন, যদি তাদের কেউ কষ্টে থাকে, গোপনে সাহায্য করুন।
• তারপর প্রতিবেশীদের দিকে নজর দিন।
• এমন কাউকে খুঁজুন, যারা মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না।
একটু ভাবুন:
আপনার এক চাচা বা খালা বা মামা, কেউ হয়তো চরম কষ্টের মধ্যে আছেন, কিন্তু বলতে পারছেন না।
ঐ আত্মীয় যদি একদিন না খেয়ে ঘুমিয়ে যায়, আর আপনি সেই রাতে ইফতারে বিরিয়ানি খান, তাহলে আল্লাহর সামনে কী জবাব দেবেন?
৩. লজ্জা নিবারণের কৌশল অবলম্বন করুন
• যদি কেউ নিতে সংকোচবোধ করে, তাহলে বলুন: এটা তো সবাইকেই দেওয়া হচ্ছে, শুধু আপনাদের জন্য নয়!
• তাদের সম্মান রক্ষা করুন, যেন তারা কষ্ট না পান।
• ভালো কাজের জন্য একটু অভিনয় করলে ক্ষতি নেই, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ হবে।
একটু ভাবুন:
কোনো বাবা যদি আপনার সাহায্য নিতে সংকোচবোধ করেন, তাহলে তার সন্তানকে না খেয়ে থাকতে হবে!
আপনি কি পারবেন নিজের চোখের সামনে কাউকে ক্ষুধার্ত রেখে ইফতার করতে?
৪. বিলাসিতা কমিয়ে একটু দান করুন
• আমরা হাজার হাজার টাকা খরচ করি পোশাক, খাবার, মোবাইল বা অপ্রয়োজনীয় জিনিসে।
• শুধু এই এক মাস একটু কম খরচ করলে কি এমন ক্ষতি হবে?
• মনে রাখুন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে দান করে, সে তার দ্বিগুণ বা তার চেয়েও বেশি ফিরে পাবে!
একটু ভাবুন:
আপনার এক দিনের অপ্রয়োজনীয় খরচ হয়তো কারো পুরো রমজানের খাবারের ব্যবস্থা করতে পারে!
আপনার এক গ্লাস ঠান্ডা শরবতের দাম হয়তো কারো একদিনের সাহরি হতে পারে!
আমরা কি পারি না একটু কম খেয়ে, কম পরিধান করে, কম ব্যয় করে কারো মুখে হাসি ফোটাতে?
আল্লাহর প্রতিশ্রুতি: দান করলে তুমি হারাবে না, বরং আরও বেশি পাবে!
একবার কল্পনা করুন:
আপনি যখন রাতের অন্ধকারে কোনো দরজার সামনে খাবারের ব্যাগ রেখে আসবেন, তখন কেউ দেখবে না।
কিন্তু যখন সেই দরজা খুলবে, যখন সেই অসহায় মা খাবারের ব্যাগ হাতে নিয়ে অঝোরে কাঁদবে, তখন সেই অশ্রু আল্লাহর দরবারে আপনার জন্য রহমতের কারণ হবে!
* এই রমজান হোক আমাদের আত্মশুদ্ধির মাস,
* এই রমজান হোক গরিবের মুখে হাসি ফোটানোর মাস,
* এই রমজান হোক আল্লাহর রহমত পাওয়ার মাস।
আসুন, এবারের রমজান এমন কিছু করি, যা দেখে ফেরেশতারা বলে, “হে আল্লাহ! এই বান্দাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও!”
আসুন, এবারের রমজান নিঃশব্দে, নিঃস্বার্থে, শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য কিছু করি!