12/10/2025
পাঠ-প্রতিক্রিয়া
আলহামদুলিল্লাহ "উম্মাহাতুর রাসুল" বইটি পড়ে শেষ করলাম। বইটি পড়ে দারুণ এক তৃপ্তি অনুভব করছি। এটি কোনো গল্পভাষ্য নয়; বরং নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মায়েদের নিয়ে তথ্যভিত্তিক জীবনী। অনেক কিছুই নতুন জানা হয়েছে। অনেক কিছু আগে ভাসাভাসা জানতাম, কিন্তু বইটি পড়ে আরও ভালোভাবে জানা হয়েছে। এখানে ৪জন মায়ের কথা আলোচনা করা হয়েছে। জন্মদায়িনী হিসেবে মা আমেনা, লালনপালনের দিক থেকে বারাকাহ উম্মে আয়মান রা., দুধ মা হিসেবে সুওয়াইবা ও হালিমা সাদিয়া রা.।
শেষ দুজন শেষপর্যন্ত ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন কি না, এ আলোচনায় যথেষ্ট বিতর্ক আছে। আমরা তো ধারণা করি এবং দিলের তামান্না তাঁরা ঈমানের ওপর থাকবেন। কিন্তু ইতিহাসে বা সিরাতের কিতাবাদিতে মনকে প্রশান্ত করার পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সম্ভবত নেই, তাই একটু হাহাকার অনুভব করছি!
দুই.
সিরাতের কমবেশি সব প্রসঙ্গেই বই-পুস্তক রচনা হয়েছে। কিন্তু নবীজির সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মায়েদের নিয়ে তথ্যভিত্তিক কোনো বই বাংলা ভাষায় সম্ভবত নেই, এমনকি অন্যভাষায়ও তেমন নেই। অথচ সকলের কাছেই সিরাতের এটি একটি মনোযোগ আকর্ষণকারী দিক। লেখক হাবিবুল্লাহ আখতার ইতিহাসের পাতায় ও সিরাতের গ্রন্থাদিতে ছড়ানো-ছিটানো তথ্যগুলোকে যাচাই-বাছাই পূর্বক একত্রিত করে পূর্ণাঙ্গ একটি বইয়ের রূপ দান করেছেন। এখানে আবেগনির্ভর কোনো বক্তব্য জায়গা দেননি। অহেতুক দীর্ঘতা এড়িয়ে তাহকিককৃত মূল কথাটিই বলার চেষ্টা করেছেন। বইটিতে নবীজির মায়েদের সম্পর্কে এবং প্রসঙ্গক্রমে মায়েদের স্বামীদের সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য আছে যা সহজে অন্যত্র পাওয়া দুষ্কর।
#যারা একটু অনুসন্ধানী পাঠক, যারা একটু যাচাই-বাছাই করে বই পড়েন এবং যারা বিষয়ভিত্তিক গভীরতায় পৌঁছতে ভালোবাসেন তাদের জন্য বেস্ট রিকমন্ডেড একটি বই "উম্মাহাতুল রাসুল" সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
তিন.
দুইটা তথ্য বিরোধপূর্ণ মনে হয়েছে।
১. ১৯ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়ে "নবীজির আপন কোনো মামা-খালা ছিলেন না। তবে ওয়াহবের (নবীজির নানা) অন্য এক স্ত্রীর গর্ভে আবদু ইয়াগুস ও উবায়েদ ইয়াগুস নামে নবীজির দুই সৎ মামা ছিলেন।"
২৩ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে "উহাইবের ভাই ওয়াহবের মেয়ে নবীজির মা আমিনা। তাঁর (আমিনার) ছিল বৈমাত্রেয় এক ভাই। নাম আবদু ইয়াগুস।" এখানে বৈমাত্রেয় দুই ভাইয়ের বিবরণ আসার কথা।
২. ৬৩-৬৪ নং পৃষ্ঠার আলোচনা : নবীজির মা স্বপ্নে মুহাম্মাদ ও আহমদ উভয় নাম রাখার ইশারা পেয়েছিলেন বলে বর্ণনা আছে। এখানে বলা হয়েছে, "নবীজির নামও প্রথমে তাঁর মা রেখেছিলেন। মা আহমদ নাম প্রস্তাব করেছিলেন। তবে দাদা নাম রাখেন মুহাম্মাদ।" একটু এগিয়ে বলা হয়েছে, "তবে প্রসিদ্ধ এটাই, নবীজির নাম মুহাম্মাদ রেখেছিলেন তাঁর দাদা।" এর সপক্ষে কয়েকটি বর্ণনা আনা হয়েছে। এরপর একেবারে শেষে গিয়ে বলা হয়েছে, "এখানে কেবল এ কথা বলাই উদ্দেশ্য যে, নবীজির নাম তাঁর মা রেখেছিলেন এবং তিনি তা গায়িবি ইশারার ভিত্তিতেই রেখেছিলেন।" অথচ পুরো আলোচনাটি পড়লে মুহাম্মাদ নামটি নবীজির মা রেখেছিলেন মনে হয় না, বরং প্রমাণিত হয় দাদা রেখেছিলেন।
চার.
বইটির বিন্যাস ভালো লেগেছে। পাঠ-গতি বাধাগ্রস্থ হয় নি। অনুবাদ যথেষ্ট সাবলীল ও ঝরঝরে। পাকা হাতের অনুবাদ যেকেউ বইটি পড়লে বুঝতে পারবেন। ভাষা-বানানে যথেষ্ট সতর্ক মনে হয়েছে। পুরো বইটিতে মাত্র দুটি প্রুপ মিসটেক চোখে পড়েছে। একটি "প্রভাবে" শব্দে এ-কার ছুটে গেছে। আরেকটি ৫৪ নং পৃষ্ঠায় "গর্ভকালীন সময়ে", এখানে কালীন ও সময়ে একসাথে এসে গেছে।
নাম : উম্মাহাতুর রাসুল
মূল লেখক : হাবিবুল্লাহ আখতার
অনুবাদক : আবদুর রশিদ তারাপাশী
প্রচ্ছদ : খন্দকার যুবাইর
প্রকাশনী : কালান্তর
দাম : ৪১০/-
✍️ Abdul Wadud Noman