19/10/2025
যে কাজগুলো করলে আপনি ঋণগ্রস্ত হবেন না 💰
আজকের দুনিয়ায় আয় বাড়ছে, কিন্তু ব্যয়ের লাগাম যেন ছুটে যাচ্ছে। অনেকে পরিকল্পনা না করে খরচ করতে গিয়ে ঋণের ফাঁদে পড়ে যান। গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের শহরাঞ্চলের প্রায় ৩৮% পরিবার কোনো না কোনোভাবে ঋণের ওপর নির্ভরশীল (সূত্র: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ২০২4)। অথচ কিছু সহজ সচেতনতা ও অভ্যাসই মানুষকে ঋণমুক্ত রাখতে পারে।
💡 ১. আয়ের তুলনায় খরচ কম রাখুন
সবচেয়ে সহজ কিন্তু কার্যকর নিয়ম হলো—যত আয় করেন, তার চেয়ে কম খরচ করুন। জীবনযাত্রার মান বাড়াতে গিয়ে অনেকেই অপ্রয়োজনীয় খরচ করেন, যা ধীরে ধীরে ঋণের দিকে ঠেলে দেয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা মাসে অন্তত ২০% সঞ্চয় করেন, তারা গড়ে ৫ বছরে ৮০% সময় ঋণমুক্ত থাকেন (Dhaka School of Economics, ২০২৩)।
📒 ২. মাসিক বাজেট তৈরি করুন
বাজেট হলো অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার মূলভিত্তি। প্রতি মাসে আয় ও ব্যয়ের তালিকা লিখে রাখুন। এতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় ধরা পড়ে সহজেই। গবেষণায় দেখা যায়, যারা নিয়মিত বাজেট রাখেন, তাদের ঋণ নেয়ার প্রবণতা ৬০% কম (World Bank Survey, ২০২২)।
🏦 ৩. অপ্রত্যাশিত ব্যয়ের জন্য জরুরি তহবিল রাখুন
জীবনে হঠাৎ অসুস্থতা, চাকরি হারানো বা দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। এজন্য ৩-৬ মাসের খরচের সমপরিমাণ অর্থ আলাদা রাখুন। এই তহবিলই আপনাকে ক্রেডিট কার্ড বা ধার না নিয়ে সমস্যার সময় বাঁচাবে।
🛍️ ৪. বিলাসিতার পেছনে না ছুটে প্রয়োজন মেটান
অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার আগেই ভাবুন—"এটা ছাড়া কি আমি চলতে পারি?" অনেকেই সামাজিক স্ট্যাটাস বা দেখানোর জন্য খরচ করে ঋণগ্রস্ত হয়। ২০২৩ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, তরুণ প্রজন্মের ৫৭% ঋণ এসেছে ‘লাইফস্টাইল খরচ’ থেকে (Bkash FinSurvey)।
📈 ৫. অতিরিক্ত আয়ের উৎস তৈরি করুন
একটি আয়ের ওপর নির্ভরশীল থাকা এখন ঝুঁকিপূর্ণ। অনলাইন কাজ, পরামর্শদান, বা ক্ষুদ্র বিনিয়োগের মাধ্যমে সাইড ইনকাম তৈরি করুন। এতে জরুরি মুহূর্তে ঋণ নয়, আপনার দ্বিতীয় আয়ই হবে ভরসা।
💳 ৬. ক্রেডিট কার্ডের ফাঁদ থেকে দূরে থাকুন
ক্রেডিট কার্ড সহজলভ্য হলেও এটি "চুপিসারে বাড়তে থাকা ঋণ" তৈরি করে। মাসে পূর্ণ বিল পরিশোধ না করলে সুদ জমে বিপদ ডেকে আনে। এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের ৪২% কোনো না কোনো সময় বিল পরিশোধে পিছিয়ে পড়েন (BB Annual Report, ২০২৩)।
🏘️ ৭. বাড়ি বা গাড়ি কেনার আগে হিসাব করুন
ঋণ নিয়ে বাড়ি বা গাড়ি কেনা অনেকের স্বপ্ন, কিন্তু হিসাব ছাড়া করলে তা দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। কিস্তি আপনার মাসিক আয়ের ২৫%–এর বেশি হলে ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই সম্পদ কিনুন, কিন্তু নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী।
👨👩👧 ৮. পরিবারে অর্থ ব্যবস্থাপনা শেখান
পরিবারের সবাই যদি সচেতন হয়, ব্যয় কমে যায়। সন্তান ও জীবনসঙ্গীকে অর্থের মূল্য শেখান। পরিবারে "অর্থ বিষয়ক আলাপ" চালু রাখলে খরচে নিয়ন্ত্রণ আসে, এবং ধার নেওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
🎓 ৯. আর্থিক জ্ঞান বাড়ান
অর্থ ব্যবস্থাপনা শেখা শুধু অর্থনীতিবিদদের কাজ নয়। অনলাইন কোর্স, বই, বা ইউটিউব ভিডিও থেকে শিখতে পারেন। বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের আর্থিক সাক্ষরতা বেশি, তাদের ঋণ নেয়ার সম্ভাবনা ৪৫% কম।
⏳ ১০. ‘আজ নয়, কাল’ মানসিকতা বাদ দিন
অনেকে মনে করেন, পরে ব্যবস্থা হবে, এখন ধার নিই—এই মানসিকতাই ঋণের মূল কারণ। ছোট সিদ্ধান্ত, যেমন সময়মতো বিল পরিশোধ বা খরচ কমানো, দীর্ঘমেয়াদে বিশাল প্রভাব ফেলে। শৃঙ্খলিত মানুষ কখনো ঋণে ডুবে না।
ঋণ অনেক সময় প্রয়োজনীয়, কিন্তু অভ্যাসে পরিণত হলে তা ধ্বংসাত্মক। আপনি যদি সামর্থ্য অনুযায়ী জীবনযাপন করেন, বাজেট মেনে চলেন, আর নিজের খরচে সচেতন হন—তাহলে ঋণ আপনাকে কখনো বেঁধে রাখতে পারবে না। 🕊️
তথ্যসূত্র:
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS), ২০২৪
Dhaka School of Economics Survey, ২০২৩
বিশ্বব্যাংক রিপোর্ট, ২০২২
বাংলাদেশ ব্যাংক বাৎসরিক প্রতিবেদন, ২০২৩
Bkash FinSurvey, ২০২৩