R.R media

R.R media Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from R.R media, Digital creator, Dhaka.

হৃদয় জয়ে প্রয়োজন সুন্দর আচরণ,,, R.R media তার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ,,, আপনাদের গল্প ও বিনোদন, সাংস্কৃতিক তে মাতিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের
ধন্যবাদান্তে
নাসিম উদ্দিন রিফাত
পরিচালক R.R media

 #বুকের_ভেতর_বৃষ্টি (৩) #শারমিন_প্রিয়া ভাই, আব্বু আর আমার ছোট্ট সংসার সুন্দরভাবে চলতে লাগল। রান্নাবান্না তেমন একটা পারি ...
28/10/2025

#বুকের_ভেতর_বৃষ্টি (৩)
#শারমিন_প্রিয়া

ভাই, আব্বু আর আমার ছোট্ট সংসার সুন্দরভাবে চলতে লাগল। রান্নাবান্না তেমন একটা পারি না আমি। আব্বু অফিস যাওয়ার সময় রান্না করবেন, আবার ফিরে এসেও রান্না করবেন। এটা খারাপ দেখায়। আমি জোর করে টুকটাক রান্না করি, অনেক সময় হাত-পা পুড়িয়ে ফেলি। যখন যা পারি না, ইউটিউবের সাহায্য নেই। এসব করতে করতে মোটামুটি হাতের মুঠোয় চলে আসে রান্না।

তায়েফ নতুন স্কুলে ভর্তি হয়েছে। আমিও একই কলেজে। আজকাল কলেজে যেতে লজ্জা করে আমার, শুধু এই পোড়া মুখটার জন্য। যখন না গেলে উপায় থাকে না, তখন যাই, তাও মুখ ঢেকে। মাঝেমধ্যে ভাবি, অনেকে সস্তা ডায়লগ দেয়, “চেহারা দিয়ে কিছু হয় না, মনের মিল’ই আসল।” আসলে এটা শুধু সান্ত্বনামূলক কথা। চেহারা ভালো না থাকলে সবাই ইগনোর করে। ভালোবাসার মানুষটাও ফেলে যেতে দুবার ভাবে না। আমি তারই জ্বলন্ত উদাহরণ।

বয়স বাড়ছে আমার। এখন আর ভুলেও বিয়ের প্রস্তাব আসে না। এসব নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগি আমি। তায়েফ ছাড়া সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কেউ নেই। বাবা কম কথা বলেন। আম্মু থাকলে হয়তো ভরসার হাত পেতাম। জানি না আম্মু কেমন আছেন, উনার কি আমাদের কথা মনে পড়ে? কে জানে, হয়তো পড়ে, নয়তো না। শুনেছি, চাকরি সূত্রে আম্মু অন্য বিভাগে গিয়েছেন। কোথায় গেছেন, কে জানে?

আম্মুর মুখটা দেখতে ভীষণ ইচ্ছে করে আমার। হাত বুলাতে ইচ্ছে করে। ছোটবেলায় আম্মু তায়েফ আর আমাকে দুপাশে রেখে ঘুমপাড়ানি গান গেয়ে ঘুম পাড়াতেন। আমরা চুপটি করে আম্মুর বুকে শুয়ে থাকতাম। ইদানীং মন খারাপের রাতগুলোতে ছোটবেলার মতো আম্মুর বুকে চুপটি করে মুখ গুঁজে শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।

আশপাশের মানুষ এখন নানা কথা বলে। “এই মেয়ের আর বিয়ে হবে না! এই মুখ দেখে কেইবা বিয়ে করবে!” তাদের কথা শুনতে শুনতে আমার মাইগ্রেন হয়েছে, তাও তারা মুখ বন্ধ করে না। দেখলেই এসব বলে। কান্না চলে আসে আমার। ফিরে কিছু বলার সাহস হয় না। তায়েফ এসব শুনলে মারামারি লাগবে একশো পার্সেন্ট।

একদিন আব্বু আমাদের নিয়ে গ্রামের বাড়ি গেলেন। রাতে দেখি কয়েকজন মহিলা আর একজন পুরুষ এসেছেন। নতুন মা বললেন, আমাকে নাকি তারা দেখতে এসেছে। আমি অবাক হলাম, আমাকেও কেউ দেখতে এসেছে? আমারও সত্যি বিয়ে হবে?

নতুন মা জানালেন, যারা দেখতে এসেছে তারা উনার আত্মীয়। যে ছেলেটা এসেছে, তার আগের পক্ষের স্ত্রী আছেন— সেই স্ত্রী সাথেই এসেছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “স্ত্রী থাকা স্বত্ত্বেও বিয়ে কেন করবেন?”
বললেন, “দশ বছর হয়ে গেছে বিয়ের, বাচ্চা-কাচ্চা নাই। পুরনো জমিদার বংশধর। বংশের হাল কে ধরবে?” যতটা খুশি হয়েছিলাম, ততটাই নিভে গেলাম। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার জন্যই তাহলে বিয়ে করবে। আমার কপালে এ ছাড়া আর কিইবা থাকতে পারে!

আমাকে শাড়ি পরিয়ে তাদের সামনে নেওয়া হলো। নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। পোড়া মুখ নিয়ে তাকাতে অস্বস্তি হচ্ছিল। কেউ একজন বলল, “তাকাও আমাদের দিকে।” আমি তাকালাম।
একজন হাসিমুখে বলল, “পছন্দ হয়েছে, এই মেয়েই ফাইনাল।”
পাশ থেকে আরেকজন আমাকে বলে দিল, “এই হচ্ছে তোমার বরের আগের পক্ষের স্ত্রী, নাম রহমা।”

রহমা! উনিই নাকি আমাকে পছন্দ করেছেন, আর সবাইকে বলেও দিয়েছেন। উনি নিশ্চয়ই বেশ চালাক আর জেলাসি টাইপের হবেন। বরের জন্য খুঁজে খুঁজে এসিডে পোড়া মেয়েটাকেই চয়েস করেছেন। তার কারণ, আমার প্রতি তার স্বামীর আকর্ষণের কোনো কারণ নেই। কোনো পুরুষই আমাকে দেখে ক্রাশ খাবে না।

আমি রহমাকে আড়চোখে দেখলাম, উনি হাসছেন ঠিকই, কিন্তু চাপা কষ্ট উনার চোখেমুখে লুকিয়ে আছে। পাশে উনার স্বামী গম্ভীর মুখে বসে আছেন। উনি আমার দিকে একবারও তাকাননি। রহমা যা বলবে, সেটাই হয়তো ফাইনাল।
আমার বিয়ে ফাইনাল হলো। পরের সপ্তাহেই বিয়ে। তায়েফকে বললাম, “যাবি না আমার সাথে।”
সে একগাল হেসে বলল, “তখন ছোট ছিলাম, বুঝিনি। বোনের শ্বশুরবাড়িতে থাকাটা কেমন যেন দেখায়। মন চাইলে তোমাকে দেখে আসব। সাবধানে থাকবে তুমি, নিজের যত্ন নিও। আর আমি তো আছিই।” তায়েফ এমনভাবে কথা বলে যে মন ভালো হয়ে যায়।

বিয়ে হয়ে শ্বশুরবাড়িতে পা দিলাম। আমার স্বামী রাহাত। উনি পুরো রাস্তায় বা বাড়িতে এসেও একবারও কথা বলেননি আমার সাথে। আমাকে আমার ঘরে রাখা হলো। দীর্ঘসময় পর রাহাত ঘরে এলেন। গুমড়ো মুখে হাঁটাহাঁটি করছিলেন ঘরে। আমিও চুপচাপ বসে আছি। আধঘণ্টা পর উনি খাটে বসে বললেন,
“তুমি নিশ্চয়ই জানো এই বিয়ের কারণ। আসলে আমি বিয়ে করতে চাইনি। মা জোর করে বিয়ে দিয়েছেন, বাচ্চার জন্য। নিরুপায় হয়ে করেছি।”
আমাদের মধ্যে মিলন হলো। মাস দুই পার হয়ে গেল, কনসিভ করিনি আমি। শাশুড়ি বকাবকি শুরু করলেন। নানা রকম কথা শুনতে হয়। তখন রহমা খুব সাপোর্ট করতেন আমাকে, শাশুড়িকে বুঝাতেন যেন বকাবকি না করেন।

আমি গর্ভবতী না হলেও রহমা হঠাৎ গর্ভবতী হয়ে গেলেন। তারা যে কী পরিমাণ খুশি হল, তাদের খুশি দেখে আমারও ভালো লাগল। নতুন মেহমান আসার আনন্দে গরু জবাই করে রাহাত আর তার পরিবার পুরো এলাকায় খাওয়ালো।
পরে রাহাত আমাকে ডিভোর্স দিতে চাইলেন। কারণ, আমি বাচ্চা দিতে পারিনি। “শুধু শুধু বউ হয়ে কেন থাকব” -তাদের মাথায় বোধহয় এটাই চলছিল। শাশুড়িও ভালো চোখে দেখেন না আমায়।

এই খবর শুনে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। এমনিতেই আমি কলঙ্কিনী, তার উপর বাচ্চা জন্ম দিতেও ব্যর্থ। এখন ডিভোর্স হলে কোথায় মুখ লুকাব আমি? এত পোড়া কপালী হয়ে কি বাঁচা যায়?
রহমার ব্যবহার সবসময় আমার প্রতি স্নেহপূর্ণ ছিল। উনি কখনো কিছু বলেননি। আমি উনার পায়ে পড়ে বললাম, “আমাকে তাড়িয়ে দিয়ো না দয়া করে। আমি স্বামীর সঙ্গ না পেলেও এই পরিচয়ে থাকতে চাই।”

রহমা আমাকে ধরে তুললেন, “ছিঃ, ছিঃ! তুমি আমার পায়ে পড়ছ কেন, মারিয়া? কে বলেছে তোমায় ডিভোর্স দেবে? আমি রাহাতকে বুঝাব, সে তোমায় ছাড়বে না। তুমি আজন্ম রাহাতের বউ হয়ে থাকবে এখানে। কান্নাকাটি বন্ধ করো।”

রহমার কথা রাহাত শুনলেন। তিনি আমাকে ডিভোর্স দিলেন না। তবে সম্পর্কও গড়ে উঠল না। তিনি থাকেন রহমার ঘরে, আমি আমার ঘরে।
শাশুড়ির চোখে আমি বিষ। কোনো ঝগড়া না করেও উনি আমাকে সহ্য করতে পারতেন না।

এভাবেই দিন যেতে লাগল। তায়েফরা সবাই ভাবে আমি খুব ভালো আছি। শুধু আমি জানি—স্বামী থাকা সত্ত্বেও স্বামীর সঙ্গ না পেয়ে ভেতরে ভেতরে কতটা মরে যাচ্ছি।
রহমা আপুর বাচ্চা হলো। সবার মতো আমিও খুশি। ছোট ছোট হাত-পা, নাড়লে ভীষণ কিউট লাগে। আমি বারবার তাকে কোলে নিই, রহমা আপু বারণ করেন না। কি আদুরে বাচ্চা! আলাদা একটা টান তৈরি হলো তার প্রতি।

বাবুর ছয় মাস যেতে না যেতেই রহমা আপু অসুস্থ হয়ে পড়লেন। গলায় প্রচণ্ড ব্যথা। ডাক্তার দেখিয়ে কোনো লাভ হলো না। অবশেষে ঢাকায় গিয়ে জানা গেল, রহমা আপুর গলায় ক্যান্সার।

এই খবর শুনে সবাই ভেঙে পড়ল। রাহাত তো আরও বেশি, পুরুষ হয়েও উনি শিশুর মতো কান্না করলেন।
এক রাতে আপু আমাকে একা ঘরে ডেকে নিয়ে হাত ধরে বললেন,
“আমি আমার স্বামীকে খুব ভালোবাসি। বাচ্চা না হওয়ায় শাশুড়ির যন্ত্রণা সহ্য হচ্ছিল না। তারা বলেছিল, বাচ্চা লাগবে, না হলে রাহাতকে বিয়ে দিবে। আমি রাজি হইনি। তোমার নতুন মা আমার দূর সম্পর্কের খালা। একদিন উনার কাছে তোমার কথা শুনি। আমি নিজে তোমাকে দেখতে যেতে চাই। আমি কোনো সুন্দরী মেয়ে আনতে চাইনি, কারণ ভয় ছিল রাহাত পাল্টে যাবে। তোমাকে আমার ভালো লেগেছিল কারণ তোমার মধ্যে সেই সৌন্দর্য নেই যা দেখে রাহাত গলবে। কিছু মনে করো না, মারিয়া, তবে এসব মন খুলে বলছি।”
মারিয়া এক সেকেন্ড থেমে আবার বলা শুরু করলেন, “তুমি এতদিন ধরে আমাদের সাথে আছো, খুব ভালো মেয়ে তুমি। তোমাকে আমি বোনের মতো দেখি। আমার ক্যান্সার হয়েছে, আমি বাঁচব না বেশিদিন। আমি শিওর, রাহাত ছাড়া একমাত্র তুমিই একজন, যে বাবুকে আদরে ভালোবাসায় রাখবে। আমার ছেলেকে তোমার হাতে দিলাম, নিজের ছেলের মতো রেখো।”
রহমা আপু কান্না করলেন, আমিও কান্না করলাম।

ধীরে ধীরে আপুর অবস্থা খারাপ হলো। হাসপাতালে ভর্তি হলেন। এক রাতে রাহাত আমি রহমা আপুর পাশে বসা। রহমা আপু রাহাতের হাত ধরে বিনয়ী কন্ঠে বললেন,
“শেষ একটা ইচ্ছে পূরণ করবে আমার?”
রাহাত বললেন, “কি?”
“টাকা-পয়সার তো অভাব নেই তোমার। আমি চাই, যত টাকা লাগে মারিয়ার মুখটা সার্জারি করাও, স্বাভাবিক করে দিও। আমি মারা যাওয়ার পর আর বিয়ে করো না, মারিয়ার সাথে সংসার করো। মারিয়া তোমাকে আর আমার মেয়েকে খুব ভালো রাখবে।”
রহমা আপু আরও শক্ত করে ধরলেন রাহাতের হাত, “প্লিজ, রাহাত, ফিরিয়ে দিয়ো না আমায়। আজই কথা বলো ডাক্তারের সাথে।”

রাহাত অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকলেন। চোখ টলটল করছিল। তারপর বললেন, “ঠিক আছে।”
রহমা আপু হাসপাতালে থাকা অবস্থায় আমার সার্জারি হলো। আমার আগের ছবি দেখে ডাক্তাররা যতটা সম্ভব আগের মতোই বানিয়েছেন। আয়নায় মুখ দেখে বহু বছর পর আমার মুখে স্বস্তির হাসি ফুটল। আমার সুন্দর চেহারা ফিরে পেয়েছি।

আমি রহমা আপুর হাত ধরে কৃতজ্ঞতার চুমু খেলাম, “তুমি না থাকলে এসব হতো না, আপু।”
রহমা আপু হাসার চেষ্টা করলেন। চিবুক ধরে বললেন, “তুই তো ভীষণ সুন্দর মেয়ে, মারিয়া। রাহাত আর দূরে থাকবে না। দেখিস, ঠিক তোকে পছন্দ করবে।”
আমি বললাম, “রাহাতকে আমার হাতে ছেড়ে দিচ্ছ, খারাপ লাগছে না আপু?”
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন রহমা আপু, “পরিস্থিতি এমন, কি আর করব! আমি মারা যাওয়ার পর তো এমনিতেই সে বিয়ে করত। একা মরা যায়, বাঁচা যায় না। অন্য কেউ আসার চেয়ে তুই থাকবি বউ হয়ে, আমার আত্মা শান্তি পাবে, আমার মেয়ে ভালো থাকবে।”

চলমান….! (পরের পর্বেই শেষ)
পরবর্তী অংশ সবার আগে পেতে ফলো করুন 👉R.R media

 #মিথ্যা_মায়াজাল  #ফৌজিয়া_কবির #পর্ব_০৬বাবার বাড়িতে গিয়ে পুষ্প কলিং বেল বাজায়। দরজা খুলে পুষ্পর মা ওকে একা দেখে জিজ্ঞেস ...
28/10/2025

#মিথ্যা_মায়াজাল
#ফৌজিয়া_কবির
#পর্ব_০৬

বাবার বাড়িতে গিয়ে পুষ্প কলিং বেল বাজায়। দরজা খুলে পুষ্পর মা ওকে একা দেখে জিজ্ঞেস করে

" কিরে একা এলি যে, জামাই কোথায়? "

পুষ্প ওর মায়ের কথায় কোনো জবাব দেয় না। ব্যাগ টানতে টানতে রুমে চলে যায়। রুমে ওর ছোট বোন পারহা ঘুমাচ্ছিলো, পুষ্পও হাত মুখ ধুয়ে কাথা জড়িয়ে শুয়ে পরে।
পুষ্পর মা ওর রুমে এসে দেখে ও শুয়ে পরেছে, তিনি ভেবেছেন পুষ্প হয়তো ক্লান্ত তাই ওকে আর ডাকে না।

রাতে পুষ্পর মা এসে ওকে খেতে ডাকে, পুষ্প ওর মায়ের কথা শুনেও না শুনার ভান করেন।
পুষ্পর মা হাফছা অবাক হন। তিনি পুষ্পর গা ছুঁয়ে জিজ্ঞেস করেন
" কিরে কি হয়েছে? এমব করছিস কেন? কোনো সমস্যা? "
পুষ্প ওর মায়ের হাতটা চিটকে দূরে সরিয়ে দিয়ে চেচিয়ে বলে

" আমার জীবনের সমস্যা থাকুক আর না থাকুক তাতে তোমাদের কিছু যায় আসে? সবাই মিলে আমার,জীবন টা নষ্ট করে দিয়েছো।"

" কি হয়েছে পুষ্প? মাকে বলবিনা? আমরা কি তোর ক্ষতি হবে এমন কিছু করেছি? "

" করোনি? খুঁজ খবর না নিয়ে আমাকে বিয়ে দিয়েছিলে কেন? "

" যথেষ্ট খুঁজ নিয়েছি,,একথা বলছিস কেন? তোদের ঝগড়া হয়েছে? "

" না মা তার থেকো বড় কিছু। "

হাফছা মেয়ের কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। মায়েক উষ্ণ ছোয়া পেয়ে পুষ্প গলে যায়, নিজের ভিতরের সব কষ্ট কান্নায় পরিবর্তন করে অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে মায়ের বুকে মাথা রেখে।
হাফছা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় কোনো প্রশ্ন করে না, পুষ্পকে কাঁদতে দেয়, কাঁদুক কাঁদলে মনটা হালকা হবে।

কান্নাকাটি শেষ হলে পুষ্প নিজের থেকেই সবটা খুলে বলে ওর মাকে। সবটা শুনে হাফছা বলে

" তোর কি মা বাবাকে এতোটাই নির্দয় মনে হয় পুষ্প? তুই কি ভেবেছিলি তুই চলে এলে আমরা তোকে ঠাই দিবো না? "

" তো কি? বাবা কি নিজের সম্মান ভূলে আমার কথা ভাবতো। "

" সব সময় সম্মান কে প্রাধান্য দিতে নেই মা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা বুঝা উচিত। এখন তুই কি সিদ্ধান্ত নিয়েছিস? তুই যদি চাস ওই সংসার ছেড়ে চলে আসতে তাহলে আমাকে পাশে পাবি, আর যদি সংসার করতে চাস তাতেও আমার আপত্তি নেই। জীবন তোর সিদ্ধান্তও তোর, আমি জোর করবো না, যতটুকু সম্ভব আমি তোকে সাহায্য করার চেষ্টা করবো। "

" একথা এখন বলছো? ক'টাদিন আগে বললে পারতে না? বিয়েটা আমার ইচ্ছেতে হয়েছে? তখন আমার জীবনের সিদ্ধান্ত তোমরা নিলে কেন? "

" আল্লাহ যা চেয়েছে তাই হয়েছে, আল্লাহর ইচ্ছে ছাড়া গাছের একটা পাতা নড়ে না, আর এটা তো বিয়ের মতো এতো বড় একটা কাজ। "

" আমাকে একা থাকতে দাও, চলে যাও এখান থেকে। "

হাফছা আর কিছু না বলে বেড়িয়ে যায়।
পুষ্পর বাবার সাথে এই বিষয়ে গিয়ে কথা বললে তিনি সবটা শুনে রেগে যান, বলেন

" এতো বড় জালিয়াতি? আমি ওই দুটোকেও পুলিশে দিবো, মিথ্যা বলে আমার মেয়েকে বিয়ে করার মজা বুঝিয়ে দিবো। "

" আহা, শান্ত হোন, তাড়াহুড়ো করে সব সময় সিদ্ধান্ত নেন দেখেই আজ এই অবস্থা। মেয়েটা গর্ভবতী। "

মুজিবুর কিছুটা শান্ত হন৷ রাগের বসে যা তা বললেই বাস্তবে এতোকিছু সম্ভব নয় তা তিনি জানেন। স্বামী স্ত্রী ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয় যে এখন আর পুষ্পর উপর কোনো কিছু চাপিয়ে দিবে না, পুষ্প সংসার না করে চলে আসতে চাইলে আসবে, ওকে অন্য জায়গায় বিয়ে দেওয়া যাবে৷

এভাবে একে একে সাত দিন চলে যায়, এর মধ্যে তেমন কোনো আলোচনা হয় না।

পুষ্প বিকেলে বারান্দায় বসে অন্যমনষ্ক হয়ে কি যেন ভাবছিলো। তখনি গেটের বাহিরে একটা গাড়ি এসে থামে পুষ্প সেদিকে তাকালে গাড়িটা চিনতে পারে। এটা ওদের গাড়ি, ওদের? হ্যাঁ ওকে ঠকিয়ে বিয়ে করা স্বামীর গাড়ি।

আয়াশ গাড়ি থেকে নেমে পুষ্পের বাড়িতে ঢুকে। আয়াশকে দেখে মুজিবুর রেগে যান, ওকে যা নয় তা বলতে শুরু করেন। রুম থেকে এসব শুনে পুষ্পের হাসি পাচ্ছে, কেন জানি বাবার এসব তার কাছে নাটক মনে হচ্ছে, সব মূল্যহীন। পুষ্প যখন বাবার পা জড়িয়ে কান্না করে বলেছিলো এখন বিয়ে দিও না বাব,তখন তার দরদ কোথায় ছিলো? একটা বার সুযোগ দেয়নি, বিয়ে দিয়ে দিয়েছে, একটু বিশ্বাস করতে পারেনি? পুষ্প জানে সে কোনোদিন বাবার নাক কাটতো না।

আয়াশ বার বার মুজিবুরকে অনুরোধ করে বলছে উনি যেন একটি বার পুষ্পর সাথে কথা বলতে দেন, পুষ্পর সাথে কথা বলেই ও চলে যাবে। শুধু একবার। মুজিবুর আয়াশের কথা শুনতে নারাজ।
এসবে পুষ্প বিরক্ত হয়ে বাহিরে বেরিয়ে এসে বলে

" উনাকে ভিতরে আসতে দাও বাবা। "

এই বলে পুষ্প রুমে চলে আসে।

আয়াশও রুমের ভিতরে ঢুকে। পুষ্প আয়াশকে বসতে বলে।
আয়াশ বিছানার এক পাশে বসে।

" কেমন আছো পুষ্প? "

" ভালো মন্দ খুঁজ খবর নিতে নিশ্চয়ই আসেন নি এখানে, যা বলতে এসেছেন তাড়াতাড়ি বলে বিদেয় হন। "

" সাবিনা আর এই দুনিয়ায় নেই পুষ্প, আল্লাহর ডাকে সারা দিয়ে আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে। "

" ইন্না-লিল্লাহী ওয়া ইন্না ইালাহী রাজিউন। তো বড় বউ মারা যাওয়ার পরে কি এখন আমার দরকার পরলো? মরতে না মরতেই আমার কাছে চলে এসেছেন? "

আয়াশ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে পুষ্পের দিকে, এ যেন এক নতুন পুষ্পকে দেখছে সে।

" না পুষ্প, তুমি যেদিন চলে এসেছো সাবিনা সেদিনই মারা গেছে। মরার আগে তোমাকে দেখার জন্য কতোই না মিনতি করেছিলো। কিন্তু তুমি তো ফোন বন্ধ করে রেখেছো, কীভাবে যোগাযোগ করবো। তোমাকে নিতে আসছিলাম তখনই সে মারা যায়, খুব কষ্ট পেয়ে মরেছে মানুষটা। "

আয়াশের চোখে পানি। পুষ্পের হৃদয় ভিজে উঠেছে তবে তা বাহিরে প্রকাশ পেতে দেয় না পুষ্প।

" তো এখন কেন এসেছেন "

" ক্ষমা চাইতে। আমাকে কি ক্ষমা করে দেওয়া যায় না পুষ্প?
আমি সাবিনাকে ভালোবাসি, কিন্তু তোমার প্রতি আমার অনুভূতি মিথ্যা না। তোমার শুন্যতা আমায় পীড়া দেয়।
বার বার নিজেকে অপরাধী মনে হয়, ভালোবাসার মানুষকে শান্তি দিতে গিয়ে নিষ্পাপ পুষ্পর সাথে আমি অন্যায় করেছি। "

" ঠিক আছে আপনাকে ক্ষমা করে দিবো। আপনি পারবেন আমার জীবনটা আগের মতো করে দিতে?"

আয়াশ মাথা নিচু করে রাখে। কিছু বলার মুখ নেই। মন থেকে আয়াশ সত্যি অনুতপ্ত, পুষ্পের প্রতি ওর ভালোবাসার অনুভূতিও মিথ্যা না, আর না সে সাবিনাকে ঠকাতে চায়, সাবিনার জায়গা আমৃত্যু ওর হৃদয়ে থেকে যাবে। 
আয়াশের ইচ্ছে করেছিলো সেদিনই পুষ্পকে আটকে দিতে কিন্তু লজ্জায় সে তা পারেনি, এই সাতটা দিন আয়াশ নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করেছে, শেষে ওর আবেগ জিতে যায়, আর না থাকতে পেরে আয়াশ ছুটে চলে এসেছে পুষ্পর কাছে।

" তোমাকে কিছু বলার মুখ নেই আবার। তবুও বলবো, ফিরে এসো, আমাদের বাচ্চার জন্য, একটা বার ভেবে দেখো। যা হওয়ার হয়ে গেছে, আমি জানি সবটা ঠিক করা অসম্ভব, তবে আমরা চাইলেই অতীথ ভূলে নতুন করে সংসার সাজাতে পারি।  "

" কোন মুখে একথা বলছেন? বেড়িয়ে যান এখান থেকে, ভেবেছেন বাচ্চার কথা বললেই আমি গলে যাবো? "

আয়াশের চোখ ছলছল করে, সে আর কিছু বলতে পারে না। বললেও কোনো লাভ হবে না। পুষ্প ওকে ঘৃণা করে।

আয়াশ বেড়িয়ে যায়।
পুরুষ মানুষ নাকি সহজে কাঁদে না, প্রচন্ড কষ্টে তাদের বুক ফেটে কান্না আসে। গাড়িতে উঠে বসে আয়াশ, ড্রাইভ করতে করতে কান্না করতে থাকে সে , বার বার চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিলো তার। চোখমুছে আবারও ড্রাইভে মনোযোগ দেয় সে।
কিন্তু হায়, হঠাৎ একটা বড় ট্রাক এসে ধাক্কা দেয় আয়াশের গাড়িকে।

পুষ্পর মনটা খুব খারাপ লাগছে, প্রচন্ড খারাপ। এতোদিনের সংসারে তারও আয়াশের প্রতি ভালোবাসার অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছিলো, পুষ্প তো সব ভূলে সংসার করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো তাহলে এখন? এখন কি হয়েছে? বাবা মা তার পাশে আছে বলে কি এখন তার আত্মসম্মান জেগে উঠেছে? নিরুপায় ছিলো বলেই কি আগে সব মেনে নিয়ে সংসার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো পুষ্প। নিজেকে কেমন সার্থপর মনে হচ্ছে পুষ্পর। বারবার মাহমুদের কথা মনে হচ্ছে তার, ওই নিষ্পাপ বাচ্চাটার তো কোনো দোষ নেই, ওর গর্ভের বাচ্চারও তো কোনো দোষ নেই।

মাহমুদের কথা ভেবে পুষ্প শান্তি পাচ্ছে না, বাচ্চাটা তাকে খুব ভালোবাসে, এভাবে মা ছাড়া কি জানি কি অবস্থায় আছে সে।

রাতের খাবার খেতে পারে না পুষ্প,তাই ওর মা ওর রুমে আসে।
পুষ্প তার মায়ের কাছে মনের কথা খুলে বলে। সবটা শুনে হাফছা বলে

" সব সময় যুক্তি দেয় জীবন চলে না পুষ্প, আমাদের আবেগ, অনুভূতি আছে বলেই আমরা মানুষ। সাবিনা তোর সাথে অন্যায় করেছে, কিন্তু কোনো মেয়ে কি শখের বশে স্বামীকে বিয়ে করায়? কতোটা মজবুর হলে একটা এই কাজ করতে পারে তা আমি বুজি। তোর জায়গা থেকে তুই ঠিক কিন্তু ,,,, যাই হোক তোর যা ভালো মনে হয়। "

" একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দাও না মা। "

পুষ্প হাফছার কোলে মাথা রাখে হাফছা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় আর বলে

" এই যে তুই সবসময় ভিতরে ভিতরে কষ্ট পাস, খাওয়া দাওয়া ঠিকঠাক মতো করিস না এতে তো তোর বাচ্চার ক্ষতি হবে ওর কি দোষ? ওকে শাস্তি দিচ্ছিস কেন? "

পুষ্প কথা বলে না, চুপচাপ শুনে যায়, হাফছা আরোও নীতি বাক্য শুনিয়ে যায়।

চলবে?

 #মেঘের_ওপারে_আলো #পর্ব_১৩  ---মোবাইলটা সাথে রেখো। মেঘালয় একটি মোবাইল ফোন আলোর সামনে বাড়িয়ে ধরল। আলো  অবাক হয়ে বলল, ...
28/10/2025

#মেঘের_ওপারে_আলো
#পর্ব_১৩


---মোবাইলটা সাথে রেখো।

মেঘালয় একটি মোবাইল ফোন আলোর সামনে বাড়িয়ে ধরল। আলো অবাক হয়ে বলল,

--আমি মোবাইল দিয়ে কি করব?

-- আমার সঙ্গে কথা বলবে। সিম, এমবি, মিনিট সবই আছে মোবাইলে।

সোজা সাপ্টা উত্তর দিলো মেঘালয়। আলো মোবাইল হাতে নিয়ে থতমত খেয়ে বলল,

-- আমি কি মোবাইল ইউজ করতে পারি?

--কেউই প্রথম প্রথম কিছুই পারে না, শিখে নিতে হয়। মোবাইল ফোনে কল লিস্টে স্মিতা নামের একটা মেয়ের নাম্বার সেভ করা আছে। মেয়েটা তোমাকে কল করবে।যখনই কল করবে তখনই তার দেয়া ঠিকানায় চলে যাবে।

--স্মিতা নামের মেয়েটা কে? আর সে কল করলে আমি যাব কেন?

--আপনি একা যাবেন কেন? ইতি ভাবি এবং তানিয়া ভাবি সঙ্গে যাবে। আপনাকে সাদা লেহেঙ্গা কিনে দিয়েছে কে ? মিস মিথ্যাবতী, বিয়েতে কেউ সাদা লেহেঙ্গা পরে?

মেঘালয়ের কথা শুনে আলো চুপসে গেল। সে তো লেহেঙ্গা পছন্দ করেনি। পছন্দ করেছে তানিয়া। এবং তার কথার ইঙ্গিতে যা বোঝা গেছে, সে বারবার বুঝাতে চেয়েছে যে আলোর গায়ে রঙ ময়লা। লাল রঙে তাকে হয়তো সুন্দর নাও লাগতে পারে। এই ভেবে তানিয়া সাদা লেহেঙ্গা কিনে ফেলে।

আলোর নীরবতা দেখে মেঘালয় বিরক্ত বোধ করল। এই মেয়েটার নির্লিপ্ততা আজ প্রথমবার মেঘালয় আবিস্কার করল। কেউ কিছু চাপিয়ে দিতে চায় বলেই কি নিতে হবে? আলো মুখে না বলুক কিন্তু মেঘালয় জানে কাজটা কার? মেঘালয় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

-- আপনি আমার সঙ্গে এখনই যাবেন।

---এত রাতে কোথায় যাব?

--- বিয়ের শাড়ি কিনব। তাড়াতাড়ি আসুন। আমার রাতে হসপিটালে ডিউটি আছে। সকালের ডিউটি কমপ্লিট না করে চলে এসেছি।

---সাদা লেহেঙ্গা আছে তো নাকি? লাগবে না বিয়ের শাড়ি।

কথাটি বলেই আলো পেছনে ঘুরে মেঘালয়কে উদ্দেশ্য করে বললো,

--আপনি এবার বাড়িতে যান। যা যা কেনা হয়েছে সবই আমার পছন্দ হয়েছে। সাদা লেহেঙ্গাতে আমার কোন সমস্যা নেই।

--আমি কি বলেছি আপনি শুনতে পাননি? এখনই আমার সাথে যাবেন। বিয়ে মানুষ জীবনে একবারই করে। তো বিয়ের সাজ একবারই হয়। নাকি আপনার চিন্তা আছে দ্বিতীয়বার এরকম কিছু করবেন?

মেঘালয়ের মুখ থেকে এমন কথা শুনে আলো হতবিহ্বল হয়ে গেল। পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো মেঘালয় চুলগুলো তার হাত দিয়ে পেছনের দিকে সরাচ্ছে। কিছু কঠিন কথা বলতে মন চাইল। কিন্তু, মানুষটাকে এভাবে দেখে আলোর কিছু বলার ইচ্ছে ফুস হয়ে গেছে।

প্রথমবার বিয়ে হচ্ছে তাও আবার মাহরীনের শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য। "দ্বিতীয়বার" শব্দটা কোন আক্কেলে ব্যবহার করল মানুষটা। লোকটা কেমন কেন? একবার মনে হয় সে সহজ সরল। তো আর একবার মনে হয় সে রসিকতা পছন্দ করে। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে সে একরোখা, জেদি একজন মানুষ।

--- তাহলে আপনি থাকুন। আমি যাই। আমার চয়েজ করা বিয়ের শাড়ি আপনি আমাদের বিয়ের দিন পরবেন। বউ সেজে আমার জন্য বসে থাকবেন, এনাফ ফর মি। আপনি থাকেন। গুড বায়।

মেঘালয় চলে গেল। আলো দাঁড়িয়ে রইলো ওভাবেই। নিজেই সব কথা বলল! আবার নিজে রেগে গেল! নিজেই চলে গেল!

মেঘালয় চলে গেল। আলো দরজা লাগিয়ে তার ঘরের ভেতরে গিয়ে দেখল আফসার সাহেব, সিতারা বেগম, আলোর নানি এবং আলোর দুই মামি মিলে আলোর জন্য করা বিয়ের কেনাকাটা দেখছিল। আলোকে দেখে আলোর নানি বলল,

--- অবশেষে তোর জীবনে সুখেরা হাতছানি দিয়ে ডাকছে রে আলো!

আলোর নানীর সঙ্গে উপস্থিত সবাই সহমত পোষণ করল। কিন্তু আলো কিছুই বলল না। কারণ, সে তো জানে। তার এবং মেঘালয়ের সম্পর্কের ভিত গড়ে উঠতে শুরু করেছে মাহরীনের জন্য। মাহরীনের শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য তারা দু'জন না চাইতেও একই সুতোয়ে বাঁধা পরেছে।

ধীরে ধীরে সবাই আলোর ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। আলো সবকিছু গুছিয়ে রাখল৷ তারপর মনে হলো পড়াশোনা করার দরকার। যেই ভাবা সেই কাজ। কিছুটা পড়াশোনা করল। আগামী কয়েকদিন যে পড়াশোনায় মন বসবে না।

পড়াশোনা শেষ করে বিছানায় এসে যখন ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিল আলো। ঠিক তখনি মোবাইলে টিং করে শব্দ হলো। আলো হাত বাড়িয়ে বালিশের পাশ থেকে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখল What's app থেকে নোটিফিকেশন এসেছে। নোটিফিকেশনে টাচ করার পর খুব সুন্দর একটা লাল শাড়ির ছবি স্ক্রীণে ভেসে উঠল। ছবির ওপরে কিছু লেখাও আছে।
আলো মনোযোগী হয় লেখাগুলোতে।

"লাল শাড়িতে নারী
লাল রঙ হচ্ছে আগুনের, আবেগের, ভালোবাসার প্রতীক।
কিন্তু, কনের বেলায় এই লাল রঙ যেন আরও গভীর অর্থ পায়।

মেয়েদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনে, যখন সে এক নতুন পরিচয়ে পা রাখে, লাল রঙটা তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে নীরব সাক্ষী হয়ে।
সেই লাল রঙে লুকিয়ে থাকে স্বপ্ন, ভয়, অনিশ্চয়তা, আবার নতুন জীবনের আলোও।

লাল শাড়িতে সে শুধু এক কনে নয়।
সে এক নবজন্ম পাওয়া নারী, যে জীবনের নতুন অধ্যায়ে নিজের রঙ ছড়িয়ে দিতে প্রস্তুত।"

আলোর ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠল। মেঘালয় কথাগুলো এত চমৎকার ভাবে লিখল! আলো ছোটবেলা থেকে জেনেবুঝে এসেছে বিয়ের দিন বাঙালি নারী লাল শাড়ি পরে। ব্যস এতটুকুই ছিল তারা জানার পরিধি৷ কিন্তু, মেঘালয়ের পাঠানো ক্ষুদে বার্তা যেন নতুন করে তাকে শেখালো লাল শাড়ির অর্থ।

ফোনের স্ক্রীনে ভেসে থাকা শাড়িটার দিকে তাকিয়ে আলো বলল,

--- মেঘালয়, আপনি কি এইসব মন থেকে করছেন? নাকি কেবল দায়িত্ব পালন?

----------------

পরদিন সকালে আলোদের বাড়িতে ধীরে ধীরে মেহমান আসার শুরু করল। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান পাশের কমিউনিটি সেন্টারের আয়োজন করা হয়েছে মেঘালয়দের পক্ষ থেকে। আলো ঘুম থেকে উঠে সিতারা বেগমের সঙ্গে কিছু কাজের সাহায্য করছিল। এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছিল।

সকালের নাস্তা খাওয়া শেষ হওয়ার পর আলো যখন ঘরে এসে এখানে বিশ্রাম নিচ্ছিল। ওই সময় তার মোবাইলে কল এলো। আলো মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো, স্মিতা নামের মেয়েটা কল করছে। আলো কল রিসিভ করল। ওপাশ থেকে একটা সুরেলা কন্ঠে ভেসে এলো।

--এটা কি মেঘালয় ভাইয়ের উড বি ওয়াইফের নাম্বার?

মেঘালয় ভাইয়ের "উড বি ওয়াইফ" শব্দটা শুনে আলোর হুট করে কেমন যেন লাগল! মনে হলো যেন, " সত্যি কি সে মেঘালয়ের স্ত্রী হতে যাচ্ছে?" যেই মানুষটার পাশে দাঁড়ানোর যোগ্যতা কখনো ছিল না। আজ বাদে কাল নাকি সেই মেঘালয়ের নাম জুড়ে তার নামটা লেপ্টে থাকবে? মানুষটার স্ত্রী সে হবার মতো সৌভাগ্য আলোর হলো কিভাবে?

---জি আমি, আলো বলছি। মেঘালয় ইমতিয়াজ আহমেদের উড বি ওয়াইফ।

--- কংগ্রাচুলেশন্স ভাবি। আমি মেঘালয় ভাইয়ার কাজিন বলছিলাম। আসলে,আমি একজন বিউটিশিয়ান। আপনার গায়ে হলুদ এবং ব্রাইডাল লুকের জন্য আমাকে হায়ার করেছে ভাইয়া। আমি ঠিকানা মেসেজ করে দিচ্ছি । আপনি চলে আসুন৷

স্মিতা নামের মেয়েটা কল কেটে দিলো। আলোর কেন যেন রাগ হলো। কে বলেছে তার জন্য বিউটিশিয়ান হায়ার করতে? নাকি মেঘালয় তার ভাবির মত আলোর গায়ের রং নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছে। এবং সেই কারণেই তার জন্য বিউটিশিয়ান হায়ার করেছে । আলোর মনে এক সমান পৃথিবী বিরক্তি ভর করল মেঘালয়ের ওপর।

দুই মিনিট পর আলোর মোবাইল থেকে মেসেজ এর শব্দ ভেসে এলো। মেসেজ সিন করলো আলো। ঠিকানাটা খুব বেশি দূরে নয়। আলো তার পরনের কাপড়-চোপড় বদলে ফেলল। অফ-ওয়াইট রঙের একটা কূর্তি পরে নিলে৷ চুলগুলো খোপায় বেঁধে, মাথায় ওড়না চাপিয়ে ঘর থেকে বের হলো আলো। আফসার সাহেবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এবার স্মিতা মেয়েটার দেয়া ঠিকানার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো আলো।

রিকশা থেকে নেমে রাস্তার অপজিটে থাকা দোতলা বিল্ডিং এর ওপর দৃষ্টি রাখল আলো। সঠিক জায়গায় এসেছে সে। রিকশা ভাড়া মিটিয়ে মোবাইল ফোন বের করে নাম্বারে কল কর আলো। স্মিতা যখন জানতে পারল, আলো এসেছে। সে তড়িঘড়ি করে নিচে নেমে এলো।

আলোকে সামনাসামনি দেখে স্মিতা মেয়েটার মুখটা কালো হয়ে গেল। মেঘালয় তাকে বলেছিল তার উড বি'র গায়ের রঙ সামান্য ময়লা মেয়েটা। কিন্তু মেয়েটা মেঘালয় ভাইয়ার বর্ণনার চেয়েও বেশি ডার্ক। মেঘালয় ভাইয়ার মত মানুষ মেয়েটাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে কেন? কথাগুলো ভাবতে ভাবতে স্মিতা নামের মেয়েটা বোকা বনে গেল।

মেয়েটার দৃষ্টি আলোকে যেন অপ্রস্তত অবস্থায় ফেলল। মেয়েটার চোখের দৃষ্টিতে তখন সম্মান নয় অন্য কোন কিছু ছিল। এবার স্মিতা নিজেকে সামলে ফেলল। ঠোটের কোণে মেকি হাসি ফুটিয়ে, আলোকে সঙ্গে নিয়ে দোতলার সেই বিল্ডিং এর উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

মেয়েটার বিউটি পার্লার খুব সুন্দর। সাজানো গোছানো চমৎকার একটা পার্লার। মাঝে মাঝে টেলিভিশনে যেমন পার্লার দেখায় ঠিক তেমন। আলোকে একটা চেয়ারে বসিয়ে স্মিতা চলে গেল। কিছুক্ষণ পর সে ফিরে এলো। তারপর শুরু হলো একে একে ফেসিয়াল,পেডিকিওর, মেনিকিওর, হেয়ার ট্রিটমেন্ট।

ফেসিয়াল ট্রিটমেন্টের সময় আলোর বিরক্ত লাগতে শুরু করল। এতক্ষণ কি বসে থাকা যায়? তানিয়া ভাবি আর ইতি ভাবিরা নাকি আসবে? কই এখন আসছে না কেন?

এক ঘন্টা অতিক্রম হবার পর তানিয়া এবং ইতি এসে হাজির হলো। সঙ্গে নিয়ে এলো হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য শাড়ি, গহনা । আলোর পাশে দাঁড়িয়ে ইতি বলল,

--- নিশ্চয়ই একা একা বোর হচ্ছিলে?

ইতির কথার পিঠে জবাব না দিয়ে মুচকি হেসে ফেলল আলো। তানিয়ার মন খারাপ। আলোকে কিছু জিজ্ঞেসও করল না। যেন তারা অপরিচিত। আলো আগ বাড়িয়ে কিছু কথা জিজ্ঞেস করল তানিয়াকে। তানিয়া সেই কথাগুলো উত্তর না দিয়ে আলোকে বলল,,

--- বিয়ে এখনও হয়নি। কিন্তু এখনই শ্বাশুড়ি আর স্বামীকে হাত করে ফেললে?হাউ ইট'স পসিবল? মানলাম আমার শ্বাশুড়ি তোমার করা উপকার ভুলতে পারেন না তাই অতি মমতা করে তোমাকে। কিন্তু মেঘালয়? তাকে কি এমন জাদু টোনা করেছো?

তানিয়ার মুখ থেকে উচ্চারিত এক একটা শব্দ আলোর শরীরে বিষক্রিয়ার মত প্রয়োগ হচ্ছে। কিন্তু শেষ কথাটি শুনে আলো অবাক হয়ে যায়। মেঘালয়কে সে আবার জাদুটোনা করতে যাবে কেন?

তানিয়া আরও কিছু বলার আগে ইতি তানিয়াকে থামিয়ে আলোর দিকে ফিরে বলল,

--- আসলে হয়েছে কি? আজ সকালে তোমার বরের সাথে তানিয়া ভাবির তর্ক হয়েছে। তাও আবার কি নিয়ে জানো? তোমাদের বিয়ের শাড়ির রঙ নিয়ে! তানিয়া ভাবি বলেছে, তোমাকে সাদা লেহেঙ্গায় মানাবে। আর মেঘ সাহেব বলছিলেন, বিয়ের দিন কে সাদা রঙ পরে? তারা কি খ্রিস্ট্রান ধর্ম পালনকারি? নাকি তারা সেলিব্রিটি? বাংলাদেশের মানুষ তারা। বিয়ের কনে লাল শাড়ি না পরলে বউ বউ মনে হবে নাকি? ইত্যাদি ইত্যাদি। গতকাল রাতে তোমাকে তোমাদের বাসায় রেখে আসার পর নাকি সে শপিংমলে গিয়ে তোমার জন্য লাল বেনারসি কিনে নিয়ে এসেছে। এখন তুমি বলো আলো? আমরা তো তোমার ভালোর জন্য সাদা রঙের লেহেঙ্গা কিনলাম। যাতে তোমাকে দেখতে সুন্দর লাগে। কিন্তু, মেঘ সাহেবের কথা শুনে আজ আমরা দুই জা ভীষণ আপসেট হয়েছি ।

কথাগুলো বলার সময় সত্যি সত্যি ইতিকে আপসেট মনে হচ্ছিল। সবটা শোনার পর থেকে আলোর নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। বিয়েতে তাকে কি দিলো? কি দিলো না? এসব নিয়ে তার মাথা ব্যাথা নেই। কিন্তু, মেঘালয় এমন করছে কেন? এই যে এখন তানিয়া ভাবি এবং ইতি ভাবির মন খারাপ হলো। এটার দায়ভার কার?

সম্পূর্ণ ট্রিটমেন্ট শেষ হতে হতে বিকেল হলো। দুপুরের খাবার তারা স্মিতাকে সঙ্গে নিয়ে খেয়েছে। তবে খাবার ট্রিট করেছে ইতি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। এবার শুরু হলো আলোর হলুদের সাজ। সিম্পল লুক ক্রিয়েট করল স্মিতা, তাও আবার মেঘালয়ের দেয়া বর্ণনা অনুযায়ী।

আলোর লুক দেখে তানিয়া এবং ইতি দুজনেই সন্তুষ্ট হলো। মেয়েটার গায়ের রঙ সামান্য ময়লা হলেও ফেস কাট নিখুঁত। বড় বড় হরিণী চোখ তার। সরু নাকের ওপর স্বর্ণের নাকফুলটা জ্বলজ্বল করছে। পাতলা ঠোঁটে খুবই হালকা করে পিংক লিপস্টিকের ছাঁপ। লাল পাড়ের হলুদ শাড়ি, সূর্যমুখী ফুলের গহনায় যেন আজ আলোর আশপাশ আলোকিত হলো।

অবশেষে তানিয়া, ইতি এবং আলোর সাজসজ্জা সম্পূর্ণ হবার পর তারা ড্রাইভারকে কল করল গাড়ি নিয়ে আসার জন্য। কিছুক্ষণের মধ্যে ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে চলে এলো। তারা তিনজন পার্লার থেকে বেরিয়ে কমিউনিটি সেন্টারের দিকে রওনা হলো। যেখানে আজ মেঘালয় এবং আলোর গায়ে হলুদের প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হবে।

আলোর পরিবার এবং মেঘালয়ের পরিবার সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত। উপস্থিত নেই তানিয়া, ইতি, আলো এবং মেঘালয়। সবাই বারবার আলো এবং মেঘালয়ের কথা জিজ্ঞেস করছিল। আফসার সাহেব এবং মাহরিন সবাইকে অপেক্ষা করতে বলছিল।

মেঘালয়কে সঙ্গে নিয়ে এলো কাব্য এবং মাশফি। তিন ভাই এক রকমের দেখতে পাঞ্জাবি পরে এসেছে। এবার সবাই আলো, ইতি তানিয়ার জন্য অপেক্ষা শুরু করল।

"বউ এসেছে" "বউ এসেছে" বলেই হই হই শুরু করল বাচ্চারা। মেঘালয় তখন স্টেজে বসে ছিল। পাশে দাঁড়িয়ে ছিল কাব্য এবং মাশফি। ক্যামেরাম্যান ইতিমধ্যে আলোর দিকে দৌঁড়ে চলে গেলে কারণ পার্ফেক্ট ভিডিও শুট এবং ফটো শুটের প্রয়োজন আছে।

অবশেষে আলোর এন্ট্রি হলো ক্যামেরাম্যান এর দেয়া ইন্সট্রাকশন অনুযায়ী। স্টেজের সামনে আসার পর আলোকে থামিয়ে দিলো সবাই। কারণ, এবার বেশ নাটকীয়ভাবে আলো স্টেজে উঠবে তাও আবার মেঘালয়ের হাতে হাত রেখে।

ক্যামেরাম্যান যখন কথাগুলো বলছিল তখন আলো মাথা নীচু করে শুনছিল। তার বারবার বলতে ইচ্ছে করছিল, "আরে আমি নিজেই হেঁটে স্টেজে উঠব। কারো আমাকে টেনে তোলার দরকার নেই।" কিন্তু বলা হলো না।

প্ল্যান মোতাবেক আলো স্টেজে উঠবে এবং স্টেজের অভিমুখে দাঁড়িয়ে আলোর হাত ধরে ওয়েলকাম জানাবে মেঘালয়।

সবাই এমন একটা মূহুর্ত দেখার জন্য তৈরি। ক্যামেরাম্যান আলোকে বারবার অনুরোধ করছে।কিন্তু আলোর পা সামনের দিকে এগুচ্ছে না। ইতি এগিয়ে এসে আলোর কানে কানে বলল,

--সবাই দেখছে আলো। গো নাও। মেঘালয় ভাই কতক্ষণ হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে , বলো?

অবশেষে আলো হাত বাড়িয়ে ধরল মেঘালয়ের উদ্দেশ্য। মেঘালয় আলোর বাড়িয়ে দেয়া হাত ধরল শক্ত করে। আলো কেঁপে উঠল। মূহুর্তের মধ্যে পুরো হলরুমে হৈ হৈ রব। শিষ এবং করতালিতে ভরে উঠল।

আলো লজ্জায় মাথা উঁচু করতে পারল না। এদিকে মেঘালয় আলোর অবনত মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

--- যার নামে সেজেছেন, তাকে দেখেই যদি চেহারা নামিয়ে রাখেন, তাহলে এই সাজের মূল্য কি মিস. মিথ্যাবতী?

"মিথ্যাবতী" শব্দটা শুনে আলো মেঘালয়ের মুখের দিকে তাকালো সরাসরি। তারপর, কিছুটা রাগ মিশ্রিত সুরে বলল,

--- মিথ্যাবতী বলছেন কেন?

--- আপনি লাজলজ্জ্বা ভুলে, রেগেমেগে ফায়ার হয়ে যেন ঠিক এভাবে আমার দিকে তাকান, সেজন্যই "মিথ্যাবতী" বলেছি।

কথাটি বলেই মেঘালয় ঠোঁট চেপে হেসে ফেলল। আলো মেঘালয়ের কথার মানে বুঝতে পেরে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে হেসে ফেলল আনমনে৷ তারপরই, আবার ভেসে এলো মেঘালয়ের বলা দুইটা বাক্য।

--- হলুদের সাজে আপনাকে যেমন দেখতে চেয়েছিলাম, তারচেয়েও বেশি সুন্দর লাগছে , মিস মিথ্যাবতী।

চলবে....

ড্যাড কাজটা কি ঠিক করলে?এভাবে একটা ক্ষ্যাতকে তুমি আমার ঘারে চাপিয়ে দিতে পারো না।"দেখো মায়াঙ্ক, এবার কিন্তু তুমি লিমিট ছা...
27/10/2025

ড্যাড কাজটা কি ঠিক করলে?এভাবে একটা ক্ষ্যাতকে তুমি আমার ঘারে চাপিয়ে দিতে পারো না।

"দেখো মায়াঙ্ক, এবার কিন্তু তুমি লিমিট ছাড়িয়ে যাচ্ছো। লন্ডনে গিয়ে পড়াশোনা করে ভেবেছো খুব স্মার্ট হয়ে গিয়েছো?কি ভাবো নিজেকে?মানুষত্ব হারিয়ে ফেলেছো তুমি মায়াঙ্ক!

'অ্যানয়িং ড্যাড।'

"কিছুক্ষণ পর মায়াঙ্ককে ফোন কানে লাগেজ হাতে বেরোতে দেখা গেল।পেছন থেকে গভীর, কঠোর কণ্ঠে আইশান চৌধুরী ডেকে উঠলেন,লাগেজ নিয়ে কোথায় যাচ্ছো, মায়াঙ্ক?

"ড্যাড লন্ডনে।আইশান চৌধুরী কিছুটা রাগান্বিত স্বরে বললেন দু'দিন হলো লন্ডন থেকে এসেছো আবার চলে যাবে?

"আর কোনো উপায় দেখছি না ড্যাড। এখানে থাকলে তোমরা ওই ক্ষ্যাতকে আমার ঘারে চাপিয়ে দিবে “নেভার কন্টাক্ট মি অ্যাগেইন আ'ম লিভিং আন্ডারস্ট্যান্ড”?বলে হনহন করে বেরিয়ে যেতে লাগল মায়াঙ্ক।আদিত্য পেছন ডাকলেন,কাজটা ঠিক তুমি ঠিক করলে না মায়াঙ্ক,পরে পস্তাবে।ওর মতো লক্ষি একটা মেয়েকে এইভাবে ইগনুর করার রাইট নেই তোমার?

"ওহ আচ্ছা আর জোর করে আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়াটা কি তোমাদের কোনো রাইটে আছে ড্যাড?

"তুমি তো একবার রোজা মা'কে দেখতে পারতে।কত সরল মায়াবী ফুলের মতো ফুটফুটে একটা মেয়ে।তুমি ওর ফেস না দেখেই ওকে এইভাবে অপমান করতে পারো না মায়াঙ্ক।বাই ড্যাড আমার ফ্লাইট লেট হয়ে যাচ্ছে বলে বেড়িয়ে গেল মায়াঙ্ক। ছেলে চলে যাওয়া পানে অবিশ্বাস্য চাহনিতে তাকিয়ে রইলেন আইশান চৌধুরী।তার চোখ দু’টো যেন এখনও ছলছল করছে। মা–মরা ছেলেটাকে তিনি লালন করেছেন বুকের মমতায়। লন্ডনে পড়াশোনা করিয়েছেন। জীবনে কষ্ট কি সেটা এক মুহুর্তের জন্যও ছেলেকে তিনি অনুভব করতে দেননি। এমন কি ছেলেটার কষ্ট হবে ভেবে তিনি আর দ্বিতীয় কোনো সংসারও পাতেননি।মায়াঙ্ক বরাবরই রাগী, জেদি, কিন্তু বাবার কথা অমান্য করে এভাবে হঠাৎ চলে যাবে আইশান চৌধুরীর কাছে বিষয়টা ছিল একেবারেই অবিশ্বাস্য। ভারী চশমাটা খুলে তিনি গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন ছেলের চলে যাওয়া পথের দিকে। চোখের কোণে নিঃশব্দে জমে আছে অনুচ্চারিত এক শোক!এক বাবা ও এক ছেলের অদৃশ্য দূরত্বের নীরব প্রতিচ্ছবি।কিছুক্ষণ স্থির দাঁড়িয়ে রইলেন তিনি। মনে হলো, চোখের সামনে এখনো ভেসে বেড়াচ্ছে মায়াঙ্কের তার প্রতি অভিযোগে ভরা মুখটা। ধীরে ধীরে সোফায় গিয়ে বসলেন আইশান চৌধুরী। টেবিলের ওপর রাখা ছেলের ছবিটা তুলে নিয়ে বুকে চেপে ধরলেন।কম্পিত কন্ঠে বললেন,
“আমি কোনোদিন তোমার অকল্যাণ চাইনি, মায়াঙ্ক। তোমার মা মারা যাওয়ার পর এক মুহূর্তের জন্যও তোমার জীবনে কষ্ট আসতে দেইনি। একবার যদি আমাকে বিশ্বাস করে রোজা মা’কে গ্রহণ করতে পারতে?একবার যদি রোজা মায়ের সেই মায়াভরা মুখখানির দিকে তাকিয়ে দেখতে তাহলে ওকে এভাবে অবহেলা করে চলে যেতে পারতে না।

"বাহিরে আকাশ ছাপিয়ে প্রবল বর্ষন শুরু হয়েছে।জানালার কাঁচে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো ধীরে ধীরে গড়িয়ে পড়ছে, ঠিক যেমন করে আইশান চৌধুরীর অন্তরের ভারী শব্দহীন অশ্রুগুলো গড়িয়ে পড়ছে ভেতরের কোথাও। ঠিক সে মুহুর্তে পাশের ঘর থেকে মাহিমার এসে দাঁড়াল।তিনি এতোক্ষণ সবকিছুই দেখছিল।কিন্তু বাবা ছেলের মাঝখানে কথা বলতে চাইনি বিধায় এগিয়ে আসেন নি।মায়াঙ্কের এভাবে চলে যাওয়াটা তার কাছেও ছিল অবিশ্বাস্য।

"ভাইজান মায়াঙ্ক বাবা রাগ করে চলে গেল ওকে আটকালেন না কেন?আইশান চৌধুরী চোখ তুলে তাকালেন না। তার কম্পিত অধরদ্বয় দ্বারা বললেন,যে চলে যায় নিজের রাগে, তাকে থামানোর ক্ষমতা কারও থাকে না মাহিমা।

"আইশান আদিত্য চৌধুরী হলেন বাংলাদেশের একজন টপ বিজনেসম্যানদের মাধ্যে একজন।তার একমাত্র ছেলে 'মায়াঙ্ক'।নিজের নামের সঙ্গে মিল রেখে ছেলেকে নাম রাখা হয় 'আয়ুশমান চৌধুরী মায়াঙ্ক'। আইশান আদিত্য চৌধুরী তার সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেও একমাত্র ছেলেকে নিজ নিয়ন্ত্রে রাখতে পারেননি।ছেলেটা তৈরি হয়েছে অবাধ্য।ছোট বেলায় মায়ের ভালোবাসা পায়নি।ছোট থেকে লন্ডনেই তার বড় হওয়া।মায়াঙ্কের বয়স যখন ৪ ছিল, তখন তার মা মারা যায়।আর এরপরই তার মামার সাথে লন্ডনেই বড় হয়,একটি শীতল, কড়াকড়ি আর বিচ্ছিন্ন পরিবেশে।রোজা হলো আইশান চৌধুরীর আশ্রিত এক মেয়ে। বাবা মায়ের পরিচয়হীন মেয়েটা এতিমখানায় বড় হয়েছে।একদা একদিন এতিমখানায় কিছু দান বিতরন অনুষ্ঠানে রোজার সাথে সাক্ষাৎ হয় আইশান আদিত্য চৌধুরীর।তারপর এতিমখানার সেখান থেকে নিয়ে আসেন।আজকে এই ছোট্ট মেয়েটা কত বড় হয়ে গেলো। মায়াঙ্কের মা মারা যাওয়ার পর মায়াঙ্ক বিদেশে বড় হওয়ায় আইশান যখন একা সময় পার করতেন তখন রোজাকে নিজের মেয়ের মতো লালন পালন করে সাথে রাখেন। মেয়েটা যেমন রুপবতী,গুনবতী তেমনই লক্ষী।সেজন্য আইশান আদিত্য চৌধুরী ভেবে রেখেছিলেন ছেলের বউ করে ঘরের মেয়ে ঘরেই রেখে দিবেন। কিন্তু তার অবাধ্য ছেলেটা রাজি হলো না।রাগ করে দেশ ছাড়ল।

"মায়াঙ্কের বাবা চাচা দুইজন।রায়হান চৌধুরী আর আদিত্য চৌধুরী।আইশান চৌধুরীর ছোট ভাই রায়হান চৌধুরী বেশিরভাগই কাজের জন্য বাহিরে থাকেন। বর্তমানে তিনি জার্মানিতে আছেন। তার দুই মেয়ে আর সহধর্মিণী আলাদা থাকতেন। বর্তমানে রায়হান চৌধুরীর সহধর্মিণী তার দুই মেয়ে ফাইজা চৌধুরী সিমু আর রোমানা চৌধুরী দিনাকে নিয়ে আইশান চৌধুরীর বাসায় থাকেন। সিমু বড় আর দিনা ছোট।

____________

পাঁচ পছন্দ পর

"লন্ডনের এখন বসন্তের হাওয়া,একেবারেই মায়াময়। না শীতল, না উষ্ণ, এক অদ্ভুত মোলায়েম আবেশে শহরটা ঢেকে গেছে। মৃদু রোদে প্রতিটি কোণ যেন নতুন করে জেগে উঠেছে।বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে তাজা ফুলের গন্ধ আর হালকা ভালোবাসার ছোঁয়া।তখন দরজায় পড়ল কারও এক মলিন হাতের স্পর্শ।টক-টক শব্দ করতে করতে কেউ অপেক্ষা করছে। কনিংবেল বাজাল, তাতেও কোনো সাড়া মেলল না।আবার টোকা দিতে গেলে সে মুহূর্তে বিরক্তির ছাপ নিয়ে দরজা খুলল কেউ একজন।

"আচমকা, আইশান চৌধুরী উপস্থিত, পাথর ন্যায় স্থির মুখভঙ্গিতে তাকিয়ে রইল মায়াঙ্ক।

"ড্যা,,,ড্যাড তুমি?চোখ-মুখ কুঁচকাল তার।

"আইশান চৌধুরী কিছু বললো না নীরবে ভেতরে চলে গেলেন তিনি। ড্যা,,ড্যাড?

"ঘুমের রেশভারী চোখ নিয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে রইল মায়াঙ্ক। পেছন থেকে কেউ ডাকল মায়াঙ্ক!আচমকার শব্দে ঘুমের রেশভারী চোখ নিয়েই তাকাল মায়াঙ্ক।মা,,,মামুমি তুমি?তুমিও এসেছো?

"হ্যা কেমন আছিস বাবা?

"ভেতরে আসো মামনি।

"বিষন্নতা চক্ষু নিয়ে মাহিমা চৌধুরী মায়াঙ্কের চোখেমুখে হাত বুলিয়ে বললেন,,

"একি হাল করেছিস বাবা নিজের?একটুও কি যত্ন নিস না নিজের?

"ভেতরে আসো না মামনি, ভেতরে আসো। মুখে মৃদু মিষ্টি হাসি এঁটে কথাটা বললো মায়াঙ্ক।

"মাহিমার সঙ্গে সঙ্গে সিমু আর দিনা ভেতরে প্রবেশ করল। তাদের পেছনেই ঢুকল এক রূপবতী রমণী,মায়ামোহিনী এক অষ্টাদশী কন্যা। মায়াঙ্কের দৃষ্টি যেই মুহূর্তে সেই কন্যার দিকে যেতেই সঙ্গে সঙ্গে যেনো তার অকাল নিদ্রাটুকুও পালিয়ে গেল।

"মেয়েটির পরনে মেরুন রঙের কামিজ, মাথায় হালকা উড়না। যা পেছনের লম্বাটে চুলকে কোমর পর্যন্ত আলতো করে বেঁধে রেখেছে ।হাতে নিখুঁত রেশমি চুরি, পায়ে এক জোড়া নুপুর।এতো মায়াবী সৌন্দর্যের অধিকারিনী এই প্রথম মায়াঙ্কের দৃষ্টিগোচর হলো।লন্ডনের খাতায়-কলমে যত নারীর দেখা পেয়েছে, কই কাউকে তো ওর মতো লাগেনি!এই মায়ামোহিনী মেয়েটি কে?কেনো এতো অজানা আকর্ষণ টানছে তার প্রতি?মনে হলো,এই রূপের আহ্বান অপ্রতিরোধ্য, কোনো অদৃশ্য টানে বেঁধে রাখছে তাকে। একটা মেয়ে এতোটা নিখুঁত সৌন্দর্যের অধিকারিনী হয় কীভাবে?এতোটা মায়ামোহিনী হয় কীভাবে?ঠিক তখনই ভেতর থেকে আচমকা আইশান চৌধুরী ডাকলেন, রোজা মা ভেতরে আয়।যাওয়ার সময় মায়াঙ্কের সাথে এক চমকপ্রদ চোখাচোখি হওয়ায় রোজা চোখ নামিয়ে নীরব দৃষ্টিতে ভেতরে চলে যায়। একে একে ফাইজা আর দিনাও ভেতরে প্রবেশ করে।

-

"কিচেন থেকে এক মগ কফি নিয়ে গেলো রোজা, আইশান চৌধুরীর জন্য।মাথাটা ভীষণ ধরেছে তার। কফির মগটা হাতে নিয়ে দরজা টোকা দিল রোজা।

"কে?ওহহ রোজা মা?আয়, ভেতরে আয়।

"মিষ্টি হেঁসে ভেতরে প্রবেশ করল রোজা।এগিয়ে দিল আইশান চৌধুরীর দিকে কফির মগটা।আব্বুজান আমি কি আপনার পায়ে তেল মালিশ করে দিবো?

"মুচকি হাসলেন 'আইশান আদিত্য চৌধুরী'। এটা কি বিডি পেয়েছিস মা?এটা লন্ডন, এখানে এইসব কোথায় পাবি?

"আপনি শুধু একবার বলেন আব্বুজান বাকিটা আমি সামলে নিবো।বলে উঠতে নিলে আইশান চৌধুরী হাত টেনে বসায় রোজার।এখানে একটু বস তোর সাথে কথা আছে মা।

"হ্যাঁ আব্বুজান বলেন?মুখে মিষ্টি হাসি এঁটে কথাটা বললো রোজা।

"বলছিলাম কি তোকে আর সিমু,ফাইজাকেও এখানের ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দিবো কি বলিস?মুখটা যেনো ভারী হয়ে এলো রোজার।আব্বুজান আমি বিডিতেই পড়াশোনা করবো।অযথা এখানে টাকা খরচার দরকার নেই।

"এখানে ২ টা বছর থাক মা,সিমু আর ফাইজা তো আসছেই।তার পর না হয় ভালো না লাগলে আমরা বিডি তে ফিরে যাবো?কিন্তু আব্বুজান,,,,,

"আর একটা কথাও নয় মা। তুই এখানেই পড়াশোনা করবি। যোগ্য মেয়ে হয়ে দেখিয়ে দিবি। সমাজের মানুষগুলার তোর প্রতি তোলা বুড়ো আঙুলটা ভেঙে দিবি। তোকে অবহেলা করা মানুষ গুলাও যেনো বুঝে তুই কোনো ফেলনা নয় লাখো রুপার মধ্যে এক হিরা। পারবি না মা আমার মুখ উঁচু করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে গড়ে তুলতে?

"নিশ্চয় আব্বুজান দোয়া করবেন।ঠিক আছে আব্বুজান আপনি রেস্ট করুন অনেক বড় জার্নি হলো বলে চলে এল রান্নাঘরে।সেখানে মাহিমা এক গ্লাস লেবুপানি দিয়ে পাঠাল মায়াঙ্কের রুমে।রোজা প্রথমে এই অবাধ্য ছেলের রুমে আসতে রাজি না হলেও দুপুরের রান্নায় মাহিমা ব্যস্থ থাকায় রোজাকে দিয়ে পাঠাল। মত খেয়ে পড়ে থাকা এই ছেলের রুমে আসার বিন্দুমাত্র আগ্রহও নেই রোজার। রোজাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মাহিমা বললো, কি হয়েছে মা?শরবত টা নিয়ে দিয়ে আয়।মায়াঙ্ক বাবা কখন চেয়েছিল। আমি যাবো না মামনি।এমন একটা খাটাস লোকের রুমে যেতে বিন্দু পরিমাণ আগ্রহও নেই আমার। মত খেয়ে পরে থাকে কোনো শাসন নেই কিছু নেই। মাহিমা মুখে মিষ্টি হাসি এঁটে শুধালো, ছেলেটা মা ছাড়া বড় হয়েছে মা। একটু মানিয়ে নিতে হবে। আর তুই সেটা পারবি।তুই চাইলেই সব ঠিক করে দিতে পারবি। দায়িত্ব নিবি আমার ছেলেটার মা?

"মামনি আমি?

"হ্যাঁ পারবি না?

"আমার বয়েই গেছে ওই মাথা মোটা খবিশটার দায়িত্ব নিতে।

"ঠিক আছে তাড়াতাড়ি যা আবার চটে যাবে।সন্ধ্যায় নাকি ফ্রেন্ডদের নিয়ে পার্টি আছে বেরোবে বললো।

"মাহিমার কথায় কোনোরকম নিজেকে শান্ত রেখে রোজা ধীরে ধীরে পা বাড়াল মায়াঙ্কের রুমের দিকে।পায়ের শব্দে যেনো ফ্লোরে মিলিয়ে এক অদৃশ্য কাঁপন সৃষ্টি করল তার।দরজার সামনে এসে থেমে দাঁড়াল সে। মনে মনে নিজেক জিজ্ঞেস করতে লাগল আমি কি ঢুকবো ভেতরে? ইয়া আল্লাহ তুমিই বলে দাও কি করবো এখন?এই বলে কাঁপা হাত দিয়ে রোজা ডোরনব ঘুরাল। ধীরে ধীরে দরজা খুলে হালকা সিসির আওয়াজে রুমের ভিতরে পা ফেলল।রুমের আলোয় হালকা দেখা গেল মায়াঙ্ককে, সে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে।হাতের গ্লাসে থাকা লেবুজলটা আলতো করে পাশের টেবিলে রেখে বেরিয়ে যেতে উদ্যত সে। সে মুহুর্তে তার দৃষ্টি আটকে গেল ঘুমন্ত মায়াঙ্কের শান্ত, নিষ্পাপ মুখে। যে ছেলেটা জেগে থাকলে আগুনের মতো প্রজ্জ্বলিত হয়ে ওঠে, সেই ছেলেটাই ঘুমের কোলে কতটা নির্মল, কতটা শিশুসুলভ! এসব ভেবে কেন যেনো অজান্তেই ঠোঁটেট কার্নিশে একরাশ হাসির রেখা মিলল রোজার।মুচকি হেসে যখন দরজার দিকে পা বাড়াবে রোজা সে মুহুর্তে আচমকা পেছন থেকে শব্দ ভেসে এলো,,,,,

"হেই গার্ল।

"পেছন ফিরে তাকাতেই চোখ আটকে গেল উন্মুক্ত শরীরের মায়াঙ্কের দিকে। শরীরের সাথে একটি প্যান্ট পরা, বুক উন্মুক্ত। লজ্জায় রোজা চোখ নামিয়ে নিল। মায়াঙ্ক কাছে এগোলো তার দিকে। মায়াঙ্ককে সামনে এসে দাঁড়াতে দেখে কিছুটা কাচুমাচু হয়ে দাঁড়াল রোজা।

"সে সামথিং।

"মায়াঙ্ক লম্বায় এতোটা হওয়ায় চোখে চোখ রাখতে গিয়েও মাথা উঁচু করে তাকাতে হলো মেয়েটার।
কত হবে হয়তো বা ছ'ফুট বা তার একটু বেশি। এলোমেলো চুল তীক্ষ্ণ চাহনি সব মিলিয়ে লম্বাটে সুদর্শন ছেলেটাকে বেশ ভালোই লাগছে।ডান হাতে আর ঘাড়ে একটা ট্যাটুও রয়েছে।

" ঘটনার পরিস্থিতিতে নীরবতার সাথে কম্পিত কদমে রোজা চলে যেতে চাইলে পথ আটকে দাঁড়ায় মায়াঙ্ক।তাও রোজা ক্রস কেটে যেতে চাইলে হাত দিয়ে তার পথ আটকে দাঁড়ায় মায়াঙ্ক।রোজার দিকে কিছুটা ঝুঁকে তীক্ষ্ণ চাহনিতে জিজ্ঞেস করল,,

"এখানে কি করছো,লন্ডলে?

"এবারও মুখ ফুটে একটা শব্দও তুললো না রোজা।

"এই হ্যালো?বোবা নাকি?

"এবার মায়াঙ্ককে ধাক্কা দিয়ে চলে যেতে চাইলে,পেছন থেকে মায়াঙ্ক বলে উঠে,ড্যাডকে পটিয়ে ফেলেছো বুঝি?

"এতোক্ষণ চুপ থাকলেও এবার রাগটা সংবরণ করে থাকতে পারল না রোজা।চোখ ফিরে তাকাল মায়াঙ্কের পানে।

" মুখ দিয়ে যতো কথা বেরোলো একে একে সব বললো মায়াঙ্কের উদ্দেশ্যে।আপনি কি ভাবেন নিজেকে? হ্যান্ডাম?টাকা আছে?লন্ডনে বড় হয়েছেন বলে দেমাক আপনার?আর আমরা ক্ষ্যাত তাই না? ঠিক আছে আপনি থাকুন আপনার হ্যান্ডসামতা নিয়ে। আমি আর আব্বুজান চলে যাবো বিডিতে বলে দরজা খুলে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় রোজা।রোজা চলে যাওয়ার পানে একক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মায়াঙ্ক।

"সো নাইস, চেক করতে হয় তো?তেজ আছে বটে। তবে সে তেজ গুছিয়ে দেওয়া এই মায়াঙ্ক চৌধুরীর কয়েক সেকেন্ড এর ব্যাপার। তেজি জিনিস 'আই লাইক' বলে ঘার কাত করে হাসল মায়াঙ্ক।

#গল্প_তুমি_ছিলে_আমার_কল্পনায়।
#লেখনীতে_রিয়া_আফরোজ
#পর্ব_১
হ্যাপি রিডিং 😴🫰

Address

Dhaka

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when R.R media posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share