14/10/2024
ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখার কিছু ঝুঁকি থাকে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি থাকে যখন চরিত্রগুলো বাস্তব হয়। ঐতিহাসিক উপন্যাসের মূল উপাদান যদি শুধুই সময় হয়ে থাকে, এবং শুধু সময়কে ধারণ করার অভিপ্রায় থেকে লেখক লিখতে চান তাহলে তার ঝুঁকি কম। সাধারণ চরিত্রের সমাবেশ ঘটিয়ে সময়ের অভিপ্রায় ও গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে তার রেখে যাওয়া ছাপ ও অভিঘাত তুলে ধরার জন্য তিনি ইচ্ছেমতো কাল্পনিক চরিত্রের সমাবেশ ঘটাতে পারেন। কিন্তু ঐতিহাসিক উপন্যাসের মূল উপাদান যদি ঐতিহাসিক চরিত্র হয়ে থাকে তাহলে ঝুঁকি অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে সময় অবধারিতভাবেই নির্দিষ্ট। আগের অবস্থায় চরিত্র ছিল অনির্দিষ্ট। এ ক্ষেত্রে চরিত্রগুলো নির্দিষ্ট, ঐতিহাসিক, সুপরিচিত, সুবিদিত এবং বহুল চর্চিত। এরকম চরিত্র নিয়ে, জানা ঘটনা নিয়ে, বহুল চর্চিত বিষয় নিয়ে ফিকশন লেখা সহজ কথা নয়। বলা বাহুল্য, এ ধরনের রচনার সবগুলো উপাদানই হলো নন-ফিকশনাল কিন্তু লেখক লিখতে বসেছেন ফিকশন। চরিত্রের প্রকৃত রূপ ঠিক রেখে এ ধরনের বিষয় নিয়ে ফিকশন লেখা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। এই দুঃসহ-ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে অনেক মেধার প্রয়োজন হয়।
লেখক মোস্তফা কামাল এই ঝুঁকিপূর্ণ এবং দুঃসহ কাজটি নিজ দায়িত্বে কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এই গুরুদায়িত্ব তাঁকে দিয়ে যে মহান কাজটি করাল তাতে কয়েকটি কাজ সাধিত হলো। যেমন, বাংলা সাহিত্য একটি উপন্যাস পেল। যে উপন্যাসে তথ্যের কোনো নৈরাজ্য নেই, আবেগের বাহুল্যতা নেই, কাউকে বড়ো করে দেখানোার কপট মাহাত্ম্য নেই, কাউকে ছোট করে দেখানোর নির্লজ্জ কপটতা নেই, ইতিহাসের মোড় ঘুড়িয়ে দেওয়ার গোপন অভিসন্ধি নেই, সর্বোপরি ইতিহাসের উপাদান নিয়ে কপট ধর্ম প্রচার নেই। তিনি আসলে ফিকশন রচনা করতে চেয়েছেন। আর তাতে ইতিহাসের সত্য, যাপনের সত্য, চরিত্রের সত্য ও ক্ষমতার চরিত্র নিয়ে দেখাতে চেয়েছেন ইসলামের এক নাজুক সময়কে।
পাঠক যদি নির্ভেজাল তথ্যের আলোকে ওই সময়টাকে যাপন করতে চান, মর্মোদ্ধার করতে চান ওই সময়ের চরিত্রের, তাহলে এ উপন্যাসের সঙ্গে যাপন করতে পারেন। সে-যাপন শিল্প ও সত্যের আলোকে আলোকিত হয়ে উঠবে।
কারবালা উপাখ্যান
লেখক: মোস্তফা কামাল
প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২৪
সময় প্রকাশন
প্রচ্ছদ: মেধা রোশনান সারওয়ার