
06/09/2025
Story: #তোমার_কণ্ঠে_আমি🎶
এক প্রেম, এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, এক অনন্ত গল্প)
Part:7+8
✍️ Write: Fahad_Chowdhory
..রাতে তন্নিমা আরিয়ানের দেওয়া প্যাকেট খুলে দেখলো স্টোন বসানো এক জোড়া চুড়ি। চুড়ি জোড়া হাতে পড়ে দেখলো একদম পারফেক্ট সাইজ! মানিয়েছে বেশ তাই আর খুললো না। পড়া শেষ করে ডিনার করে আবার রুমে এসে দেখলো তার ফোনে অচেনা নম্বর থেকে কল এসেছে দুইটা। লাইটটা অফ করে খাটে শুতেই আবার ফোনটা বেজে উঠলো। রিসিভ করতেই পুরুষ কন্ঠ বলে উঠলো,
কি করছো?
হ্যালো, কে বলছেন?
চিনতে পারো নি। কয়েক সেকেন্ড ভাবলে হয়তো চিনে ফেলবে...
তন্নিমা এবার কন্ঠ শুনেই বুঝে গেছে এটা আরিয়ান।
এতো রাতে কল করেছেন কেন?
চিনতে পেরেছো তাহলে?
হুম।
এতো রাত কোথায়! মাত্র ১০টা বাজে। এখনই ঘুমিয়ে পড়েছো নাকি!
ফোন নম্বর কোথায় পেলেন?
তুমি তো অনেক বুদ্ধিমতী তাহলে বোকার মতো প্রশ্ন করো কেন? ফোন নম্বর পাওয়া ব্যাপার! ভার্সিটির স্টুডেন্ট আইডেন্টিটি তে আছে, পলাশ স্যার এর কাছে আছে, তোমার ফ্রেন্ডের কাছে আছে।
আমার ফ্রেন্ড আপনাকে দিবে না সেটা খুব ভালো ভাবেই জানি।
তা ছাড়াও আরও অনেক অপশন আছে।
ওকে ফাইন। কল করেছেন কি জন্য, সেটা বলুন।
একটু একটু প্রেমালাপ করার জন্য।
আমার মনে এতো প্রেমালাপ নেই।
এতো লাগবে না, একটু একটু হলেই হবে।
একটুও নেই। ঘুমাবো আমি, কল কাটুন।
আরে ঘুমাবেই তো। এতো তাড়া কিসের। দিনার সাথে থেকেও কি কিছু শিখতে পারো নি! ওরা কথা বলে সারারাত কাটিয়ে দেয়। এখন ফোন দিলেও দেখবে ওয়েটিং এ আছে।
ভালো হয়েছে। আমার এতোকিছু শিখার প্রয়োজন নেই। গুড নাইট।
তন্নিমা কল কেটে দিলে আরিয়ান মেসেজ করলো, " তোমার বলা গুড নাইট আমার জন্য লাভ নাইট হয়ে গেছে। "
তন্নিমা হেসে বললো, পুরাই পাগল একটা!
সকালে দিনা জানালো সে আজ ভার্সিটি আসবে না। তন্নিমার ও যেতে ইচ্ছে করছে না। অন্যদিকে গানের প্রাক্টিস আছে। কিছুক্ষণ ভেবে সিদ্ধান্ত নিলো আজ যাবে না। একদিন প্রাক্টিস মিস হলে কিছু হবে না। আরিয়ান ভার্সিটি এসে তন্নিমাকে না দেখতে পেয়ে কল করলো তন্নিমার ফোনে,
বলুন
বাহ, আমার জন্যই ওয়েট করছিলে নাকি!
খেয়ে দেয়ে আমার কাজ নেই আর!
কি কাজ আছে শুনি।
এতো কিছু শুনতে হবে না।
ভার্সিটি আসোনি কেন?
ইচ্ছে হয়নি, তাই।
দিনা তো আজ আবিদের সাথে বেড়াতে যাবে। তোমারো যেতে ইচ্ছে করছে নাকি আমার সাথে?
না।
প্রাক্টিস এ আসবা না?
না।
আমারও থাকতে ইচ্ছে করছে না। চলেই যাবো ভাবছি।
ভাবতে থাকুন।
তন্নিমা আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না আরিয়ানকে। এগারোটার দিকে শুরু হলো বৃষ্টি! তন্নিমা মনে মনে খুশি হলো, আজ না গিয়ে ভালোই করেছে। বাসায় থেকে মামাতো বোন অহনার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবে। যেই অহনাকে ডাকতে যাবে তখনই আবার আরিয়ানের ফোন!
আবার কি?
ঝরছে বৃষ্টি, ইচ্ছে হচ্ছে ভিজতে তোমার সাথে। আসোনা একটু আমার কাছে।
আহ! নিসংকোচ আবদার!
ভালোবাসার আবদারে সংকোচ থাকবে কেন! সত্যিই খুব ইচ্ছে করছে ভিজতে।
ভিজো একা একা। না করেছে কে!
জানেমন! তুমি তো মেঘের সাথে আমার জান ও ফুটো করে দিলে!
হিহিহিহি......
-আরেকবার বলো না তুমি করে...
পারবো না।
বলো না...
আচ্ছা বলবো না। হিহিহি.....
প্লিজ....
ফোন রাখো এখন। বৃষ্টিতে ভিজবো।
সত্যি! আমিও ভিজবো।
জ্বরে না ভুগছিলে! আবার বৃষ্টি!
জানি তো আমি। তুমি মুখে না করলেই কি! মনে মনে ঠিকই আমার খেয়াল রাখো..
এতো ঠেকা পড়েনি আমার, কারো খেয়াল রাখার। দিনা বলেছিলো তাই জানতে পেরেছি। ফোন রাখো এবার। এতো কথা বললে বৃষ্টি শেষ হয়ে যাবে। আর ভিজতে পারবো না।
ভিজতে হবে না। তুমিও অসুস্থ হয়ে পড়বে।
না। ভিজবো।
তন্নিমা কল কেটে অহনাকে নিয়ে ছাদে চলে গেলো। তবে বেশিক্ষণ ভিজতে পারেনি। বৃষ্টি অল্প সময়ের জন্য ছিলো! মনটা খারাপ করে আবার ফ্ল্যাট এ ফিরে এলো।
ছুটির দিন হওয়ায় গতকালের মতো আজও বাসায় কাটাতে হলো। আরিয়ান দিনে তিন চারবার করে কল করে। তন্নিমাও টুকটাক কথা বলে কেটে দেয়। পরের দিন ভার্সিটিতে এলে ক্যানটিনের পাশে আরিয়ানকে দেখে তন্নিমা। চুড়ি জোড়া পড়নে দেখে আরিয়ান তন্নিমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো, তন্নিমাও প্রতুত্তরে হাসলো। তন্নিমা এগিয়ে বারান্দা দিয়ে হাটতে থাকলে আরিয়ান বন্ধুদের মাঝ থেকে কেটে পড়ে, আর তন্নিমার কাছে আসে বারান্দায়। তন্নিমা কোন কিছু না বলে নিজের মতো হাটতে লাগলো। আরিয়ান মলিন সুরে বললো,
হাতটা একটু ধরি?
কেন?
একটু...
তন্নিমার কোন জবাব না পেয়ে আরিয়ান তার একটা হাত ধরে হাটতে লাগলো।
চুড়ির মাপ জানা ছিলো না। আইডিয়া করে কিনেছি। সংশয়ে ছিলাম তোমার হাতে হবে কিনা! মানিয়েছে বেশ।
হয়েছে দেখা। ছাড়ো এবার।
সমস্যা কি! কেউ দেখছে না তো আমাদের!
এমনি ক্লাস থেকে দিনা বারান্দায় এলো। আর আরিয়ানকে তন্নিমার হাত ধরে হাটতে দেখে ফেললো। আরিয়ান দ্রুত হাত ছেড়ে কাশির ভান ধরে দ্রুত গতিতে হেটে চলে যাচ্ছিলো। দিনা হাসতে হাসতে বললো,
গায়ক আর গায়িকার প্রেম তো ভালোই জমেছে। পারফেক্ট জুটি! ভাইয়া আমি কিন্তু দেখিনি কিছু।
দূর, রঙ টাইমে শুধু তোমার এন্ট্রি!
হিহিহি....
আরিয়ান চলে গেলো সেখান থেকে। দিনা তন্নিমার সাথে মিটিমিটি হেসে ক্লাসে প্রবেশ করলো।
ভালোই তো ডুবে ডুবে জল খাচ্ছেন!
সরি, আমি গ্লাসে জল খাই।
হিহিহি.... তা তো দেখলাম ই! তন্নিমা! চুড়ি তোর হাতে!
চুড়ি কি ছেলেরা পড়ে নাকি!
না, কিন্তু সবসময় ঘড়ি! আর আজ হঠাৎ চুড়ি!
ইচ্ছে হলো, তাই...
ভাইয়ার দেওয়া গিফট?
হুম।
বাবাহ! আর কি কি গিফট দিয়েছে রে?
আবিদ ভাইয়ার কাছে গিয়ে কি বলবো, দিনা পড়াশোনা ছেড়ে অন্যের প্রেমের সন্ধান করে ভার্সিটি এসে!
হুহ! নিজের সময় সেয়ানা, আমি বলতে গেলে দোষ!
হুম, তুই দোস্ত।
গতদিনের নোট দে...
আমিও আসিনি।
ভালোই তো হয়েছে এবার। এখন পাবো কই?
সমস্যা নেই, এটার পরেই তো গেভ ক্লাস। কারো কাছ থেকে নিয়ে নিবো।
গেভ ক্লাসে এক মেয়ের কাছ থেকে নোট নিয়ে লাইব্রেরির দিকে যাচ্ছিলো তন্নিমা আর দিনা। বারান্দায় আরিয়ানকে দেখা হলো। আরিয়ান ফুল প্যান্ট ফোল্ড করে কোয়ার্টার বানিয়ে নিয়েছে, হাতে ফুটবল। খেলতে নামবে বুঝাই যাচ্ছে। তন্নিমা একটু কড়া কন্ঠে বললো,
প্রতিদিনই ফুটবল খেলতে হয়?
একটু না খেললে যে ভালো লাগে না! খেলবে নাকি তুমি?
না, আমার এতো খেলার নেশা নেই।
চলো না খেলতে। তুমি আমি একদিকে, আর বাকি সবাই একদিকে। দেখবে, আমরা দুজনই জয়ী হবো। জানোই তো, আমাদের ভালোবাসার জোর বেশি।
তন্নিমা ভেংচি কেটে লাইব্রেরির দিকে চলে গেলো, দিনাও খিলখিল করে হাসতে হাসতে পিছু পিছু চলে গেলো।
এভাবে একটু আধটু দুষ্টুমি, একটু একটু প্রেম, ঝগড়া, খুনশুটির মাধ্যমে কেটে গেলো আরো ৬দিন।
দিনার গায়েহলুদ আজ। মামাতো বোন অহনাকে সাথে নিয়ে সন্ধ্যায় একেবারে সেজেগুজে দিনার বাসায় উপস্থিত হয়েছে তন্নিমা। দুদিন আগে আসার কথা ছিলো এ নিয়ে দিনার একটু রাগারাগি। তন্নিমা কৌশলে দিনাকে মানিয়ে নিলো। আবিদের বাসা থেকে হলুদের লগনে এসেছে আবিদের বাসার মানুষ। সাথে আরিয়ান, রিসাদসহ আবিদের অন্যান্য বন্ধুরা। তন্নিমাকে দেখে আরিয়ান হ্যাং! হলুদের শাড়ি পড়েছে সাথে ফুলের গহনা। খুবই সুন্দর দেখাচ্ছে তন্নিমাকে। বরপক্ষ চলে আসায় দিনার কাছ থেকে সরে এলো তন্নিমা। এমন সময় অহনা এসে বললো, ওয়াশরুমে যাবে। তাই নিচে নামার জন্য সিড়ির কাছে আসতেই মেহেদীকে দেখতে পেল তন্নিমা। আরিয়ান জিন্সের সাথে লাল পাঞ্জাবি পড়েছে। আরিয়ান সাথে দেখা হতেই মুচকি হাসলো তন্নিমা।
কোথায় যাও?
নিচে যাবো একটু।
দিনার রুমে এলো তন্নিমা অহনাকে নিয়ে।
আপু, আমার লেট হবে একটু।
যা, আমি এখানেই আছি।
তন্নিমার ফোন বাজতেই তন্নিমা বারান্দায় চলে গেলো। আর অহনা ওয়াশরুমে। ফোনে কথা বলা শেষ হলে তন্নিমা ঘুরে তাকাতেই দেখলো আরিয়ান বারান্দায় এসেছে। তন্নিমা একটু চমকে উঠলো। আরিয়ান তার কাছে আসতে আসতে গানের সুর ধরে বললো,
যদি বউ সাজো গো, আরো সুন্দর লাগিবে গো...
তন্নিমা জানালার গ্রিলের সাথে একদম মিশে আছে। আর আরিয়ান তার কাছে এসে দুপাশে দুহাতে গ্রিলে ধরে দাড়িয়ে বললো,
আমি সাদা পাঞ্জাবি পড়লে মনে হতো আজ তোমার আর আমার গায়েহলুদ। কাল লাল শাড়ি পড়ে বউ সাজবে কি?
তন্নিমা মুচকি হেসে জবাব দিলো,
না। সরো প্লিজ। অহনা আছে এখানে। দেখলে প্রব্লেম হবে।
অহনা কে?
আমার মামাতো বোন।
ওহ! একবার জড়িয়ে ধরো, চলে যাবো।
কিহ!
জ্বি...
প্লিজ যাও।
উহুম..
তন্নিমা চট করে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জড়িয়ে ধরে আবার ছেড়ে দিলো। কিন্তু আরিয়ান আগের ন্যায় দাড়িয়ে আছে।
হয়েছে তো এবার। যাও...
জড়িয়ে ধরলে কখন! আমি তো কিছুই টের পেলাম না। আবার ধরো...
তন্নিমা এবার আবার জড়িয়ে ধরলো। তন্নিমা জড়িয়ে ধরার একটু পর গ্রিল থেকে হাত সরিয়ে আরিয়ানও তন্নিমাকে ধরলো। তারপর ছেড়ে দিতে গেলে আরিয়ানের পাঞ্জাবির বোতামে তন্নিমার গলার মালা আটকে গেল। দুজনেই চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না ছুটাতে।
দেখি ছাড়ো তুমি। এমন প্যাঁচ লাগলো কিভাবে!
আমি কি জানি! আমার মালা ছিড়লে খবর আছে তোমার। তাড়াতাড়ি করো, অহনা চলে আসবে।
হচ্ছে না।
দাতে কেটে ফেলো।
আরিয়ান তন্নিমার দিকে একটু ঝুকে দাতে মালার বাড়ন্ত সুতা কেটে ফেললো। তারপর দ্রুত সেখান থেকে বেরিয়ে এলো। তন্নিমা আরো কিছুক্ষণ দাড়িয়ে, অহনাকে সাথে নিয়ে ছাদে এলো।
চলবে…
Story: #তোমার_কণ্ঠে_আমি🎶
এক প্রেম, এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, এক অনন্ত গল্প)
Part:7+8
✍️Write: Fahad_Chowdhory
...তন্নিমা আরও কিছুক্ষণ দাড়িয়ে, অহনাকে নিয়ে ছাদে এলো। বন্ধুদের অনুরোধে তন্নিমা ও আরিয়ান একসাথে দুইটা গান গেয়ে শোনালো।
বিয়ের দিন তন্নিমা একটা গোল্ডেন কালার লেহেঙ্গা পড়েছে। বরযাত্রী আসার পূর্বে পুরোটা সময় দিনার আশেপাশেই ছিলো। বড় যাত্রী এলে আরিয়ান গেইটের ভিরে তন্নিমাকে খুজেছে কিন্তু পায়নি। ভেতরে এসে দিনার পাশে বসে থাকতে দেখলো। সাথে মামাতো বোনটাও আছে! একা পাওয়ার সুযোগ খুঁজে একটু আধটু কথা বলতে পেরেছে।
রিসিপশনের দিন দিনা বার বার কল করে যেতে বলেছে তন্নিমাকে। দিনার মা ও জোর করছে তাই আবিদের বাসায় গেলো দিনাকে আনতে। সেখানে আর অহনা যায়নি। স্টেজের একপাশে রিসাদসহ বন্ধুদের সাথে হাসিঠাট্টা করছিলো আরিয়ান। তন্নিমাকে দেখে সেখান থেকে চলে এলো।
কেমন আছো?
আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?
আলহামদুলিল্লাহ। এদিকে চলো.... রাতে কল রিসিভ করোনি কেন?
ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
অহ! আজ এতো ভালো লাগছে কেন তোমাকে?
কখনো এটা বলেছো, যে আজ খারাপ লাগছে!
হাহাহা.... কখনো খারাপ লাগেইনি, বলবো কিভাবে!
মিথ্যে কথা সব!
খারাপ লাগছে বললে সত্য মেনে নিবা?
তন্নিমা আর কিছু বললো না। আবিদের রুমের কাছে এসে দেখলো এখানে কেউ নেই! তাই আরিয়ান বললো,
ভেতরে চলো।
সবাই ওদিকে। এখানে আমাদের দুজনকে দেখলে খারাপ কিছু ভাববে!
সবাই ওদিকে, তাই আমাদের এখানে কেউ দেখবে না। চলো...
আরিয়ান তন্নিমার হাত ধরে ভেতরে এসে দরজা লক করে দিলো কিন্তু জানালা খোলাই আছে।
একি! দরজা লক করছো কেন তুমি?
কেন! আমার কাছে থাকতে ভয় পাও?
না।
তাহলে!
আমরা অন্যের রুমে আছি। কেউ দেখলে উল্টাপাল্টা ভাববে, আরিয়ান।
কেউ যাতে না দেখে সেজই তো লক করলাম।
কথা বলতে বলতে আরিয়ান আস্তে আস্তে তন্নিমার দিকে এগিয়ে একদম কাছে দাড়ালো। তন্নিমা মুখে বলেছে ঠিকই ভয় পায় না, কিন্তু মনে ঠিকই ইতস্তত বোধ করছে! আরিয়ান মুচকি হেসে বললো,
বিশ্বাস নেই আমার উপর?
আছে!
ভালোবাসো আমাকে?
প্রমাণ দিতে হবে?
না, একটা গিফট দিবে। লাভ গিফট...
হিহিহি..... সরি, এরকম কোন গিফট নেই আমার কাছে!
তন্নিমা, আমি সিরিয়াস বলছি!
কি গিফট, বলো?
লিপ কিস।
তন্নিমা চোখ বড় বড় করে আরিয়ানের দিকে তাকালো! লিপ কিস কি ভালোবাসার গিফট! এমনিতেই একটু সংকোচে আছে সে, তাও মনের সাথে যুদ্ধ করে আরিয়ানের সামনে এতোক্ষণ নরমাল থাকার চেষ্টা করছে! আর এখন ও কি বললো এটা!
পারবে না গিফট দিতে!
আরিয়ান দুহাত পকেটে রেখে দাড়িয়ে আছে। তন্নিমার চোখে একটু একটু পানি জমছে! তবুও আরিয়ান মাথাটা দু'হাতে টেনে নিচু করে সামনে এনে পায়ের আঙুল ভর দিয়ে উঁচু হয়ে দাড়ালো তন্নিমা। আস্তে আস্তে নিজের ঠোঁট জোড়া আরিয়ানের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। কাছাকাছি আসতেই আরিয়ান তার হাত সরিয়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাড়িয়ে হাসতে লাগলো।
তুমি কি ভেবেছো, সত্যিই আমি এখন এমন গিফট নিবো! আই এম জাস্ট জোকিং ইয়ার! এভাবে ভালোবাসা প্রমাণ করতে হয় না। ভালোবাসা মন থেকে হয়, ফিল করতে হয়... এসব লিপ কিস টিস কিছু না!
তন্নিমা হঠাৎ আরিয়ানের কলার ধরে জোরে হেচকা টান দিলো তার দিকে। টাল সামলাতে না পেরে আরিয়ান তন্নিমাকে নিয়ে খাটে পড়ে গেলো। তন্নিমা তার নিচে পড়ে আছে, কিন্তু এখনো কলার ছাড়েনি! একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। আরিয়ান দৃষ্টি সরিয়ে উঠার চেষ্টা করতেই তন্নিমা আবারও কলার টেনে কাছে টানলো। এবং চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেললো! কি বুঝাতে
চেহারায় তাকিয়েও থাকতে পারছে না, কেমন যেন একটা মায়া কাছে টানছে আরিয়ানকে!
তন্নিমা ছাড়ো....
আরিয়ান কলার থেকে তন্নিমার হাত সরিয়ে তারাতাড়ি উঠে পড়লো। একটানে তন্নিমাকেও বসিয়ে দিলো। তন্নিমা শুধু আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।
ঠিক আছো তুমি?
.....
তন্নিমা, ঠিক আছো তুমি?
তন্নিমা কোন জবাব দিলো না। উঠে দাড়িয়ে দরজার উপরের লকটা খুলতে চেষ্টা করে পারলো না, আরিয়ান এসে পেছনে দাড়িয়েই খুলে দিলো। তন্নিমা বেরিয়ে চলে গেলো। একটু পর আরিয়ানও বেরিয়ে বন্ধুদের কাছে ফিরে এলো।
অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরলো। এর মধ্যে আর তন্নিমা ও আরিয়ানের মধ্যে কোনো কথা হয়নি। রাতে আরিয়ান কল করেছে। কিন্তু তন্নিমা রিসিভ করে নি। আবার মেসেজ সেন্ট করেছে,
"কল রিসিভ করছো না কেন?"
"রেগে আছো আমার উপর?"
"রাগের কারণ কি?"
পরপর তিনটা মেসেজ এলো। কোন রিপ্লাই পেল না। এবার তন্নিমা নিজেই কল করলো।
বলো...
কল রিসিভ করছিলে না কেন?
এমনি।
এমনি মানে! তাহলে এখন ব্যাক করলে কেন?
ইচ্ছে হলো তাই।
এমন করে কথা বলছো কেন? রেগে আছো আমার উপর?
না।
উহুম, রেগে আছো। কিন্তু রাগ করার কারণ কি?
বললাম তো, রাগ করি নি।
কাল আসবে না ভার্সিটিতে?
হ্যাঁ।
ক্লাস করবে? নাকি প্রাক্টিস?
দুটাই। আরো কিছু বলবা?
আমি তো বললাম ই। এবার তুমি বলো...
কি বলবো?
যা ইচ্ছা...
বাসায় ফিরেছো? খেয়েছো? পড়েছো? ঘুমিয়েছো?
হাহাহা.... জেগে আছি।
আমি ঘুমাবো।
আমি তোমার কথা শুনবো।
আমি কিন্তু সত্যিই ক্লান্ত। অনেক ঘুম পেয়েছে।
ওকে, সুইট একটা লাভ নাইট দাও। তারপর ঘুমাও।
আমি সুইট খাই না, তাই এমন কিছু দিতেও পারি না।
তাহলে ঘুমাতেও পারবে না।
ওকে, লাভ নাইট।
হয়নি... আবার বলো...
লাভ নাইট, ডিয়ার!
লাভ নাইট, জানেমন...
সকালে ভার্সিটিতে চলে এলো তন্নিমা। আগামীকাল গানের সেকেন্ড টার্ম কমপিটিশন হবে। আজ প্রাক্টিস টা বেশি জরুরি। দিনা আসেনি আজ। কবে থেকে আসবে কে জানে! একা একা ক্লাস করতেও ভালো লাগছে না। ভার্সিটিতে দিনার সাথে যতটা মিশে অন্যদের সাথে তার শতকরা পাচ ভাগও না!
পরপর তিনটা ক্লাস করে লাইব্রেরিতে বসে গতক্লাসের নোটগুলো শেষ করলো। লাইব্রেরী থেকে ক্লাসে ফেরার পথে কেউ হাত টেনে একটা রুমের মধ্যে নিয়ে এলো। রুমটা খালি! আরিয়ান এনেছে তন্নিমাকে!
কি ব্যাপার? এখানে আনলে কেন?
তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য, জান....
কিসের সারপ্রাইজ?
আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। কাল কমপিটিশন এ যাবা?
কমপিটিশন হলে যাবো না কেন!
যদি আমি যেতে নিষেধ করি....
কি বলছো এসব! নিষেধ করবে কেন!
কারণ আমি চাই না তুমি কমপিটিশনে এটেন্ড করো।
এতোদিন ধরে প্রাক্টিস করছি, এখন তুমি নিষেধ করছো কেন?
এতো কথা কিসের? বলেছি যাবে না, তো যাবে না।
তুমি যাবে?
হ্যাঁ।
তাহলে আমি যাবো না কেন?
কারণ তুমি গেলে আমি জিততে পারবো না। প্রথম থেকেই তোমাকে আমার সহ্য হয় না। তুমি, তোমার এই সুর সবচেয়ে বেশি অসহ্যকর! আমার সাথে পাল্লা দিতে আসবে না কখনো। তাহলে বিপদে পড়বে।
কি বলছো তুমি এসব! হঠাৎ এমন আজেবাজে কথা বলছো কেন! কি হয়েছে তোমার! আগে তো এমন ছিলে না! ভালোবাসতে তুমি আমাকে!
ভালোবাসা! হা হা হা.... নাটক ছিলো সুইটহার্ট! নাটক... নাটক বুঝো! তোমাকে তো আমার সহ্যই হয় না! ভালোবাসবো কিভাবে! এসব প্রেম, ভালোবাসার কোন মূল্য নেই আমার কাছে! তোমার চেয়ে শতরূপের রূপসী কন্যারাও এসেছিলো প্রেম চিঠি নিয়ে! কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেছে। এখন কমপিটিশন থেকে কেটে পড়াই তোমার জন্য উত্তম।
তন্নিমা পলকহীন তাকিয়ে আছে তার দিকে। চোখে অশ্রু ভীড় জমিয়েছে! অন্যদিকে আরিয়ানের মুখে হাসি! তন্নিমা দাতে দাত চেপে বললো,
আর যদি আমি কমপিটিশন থেকে না সরে যাই!
সেটাও পূরণ হবে না গো.... তোমাকে সরানোর ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছি আমি। এই দেখো...
আরিয়ান মোবাইলে তন্নিমা আর আরিয়ানের ছবি বের করলো। এটা তো সেই ছবি, দিনার গায়ে হলুদে তন্নিমা আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরেছিলো! আরেকটা রিসিপশনে আবিদের রুমে আরিয়ান পকেটে হাত রেখে দাড়িয়ে আছে আর, তন্নিমা আরিয়ানকে কাছে টেনে কিস করতে যাচ্ছে!
একটা মেয়ে জোর করে একটা ছেলের সাথে নোংরামি করার চেষ্টা করছে! ভাবা যায়!!! ভেবে দেখোতো, এই ছবি যদি ফেসবুকে, ভার্সিটি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে মুখ দেখাতে পারবে তুমি! সহ্য হবে এসব তোমার! এই ছবিগুলো যদি তোমার পরিবারের কাছে পৌঁছে যায়, উনারা সহ্য করতে পারবে কি! তোমাকে কমপিটিশন থেকে সরানোর জন্যই সাজানো ভালোবাসার এই প্ল্যান! আগেও বলেছি এখনো বলছি, আমার সাথে লাগতে এসো না। অনেক বড় সমস্যায় পড়বে! কমপিটিশন থেকে নাম না সরালে কি ঘটবে তোমার লাইফে, কল্পনাও করতে পারবে না তুমি। ভেবে দেখো, সময় আছে এখনো!
আরিয়ান বেরিয়ে গেলো ক্লাস থেকে! তন্নিমাও মন খারাপ করে বেরিয়ে এলো। যার কাছ থেকে নোট নিয়েছে, তাকে নোট ফেরত দিয়ে অডিটোরিয়ামে এলো প্রাক্টিসের জন্য। আরিয়ান লক্ষ্য করছে সে চিন্তিত! তন্নিমা গান গাইতে গিয়েও পারলো না! বারবার আটকে যাচ্ছে! স্যারকে অনেক বলে বাসায় চলে এলো। আরিয়ান আর রিয়াদের প্রাক্টিস চললো আজ। বাসায় ফিরে ফোনটাও বন্ধ করে দিলো তন্নিমা।
চলবে…
👉👉অপেক্ষা করুন, পরের পর্ব খুব শীঘ্রই আসছে... 👈👈