Mehera Mehera Islam

Mehera Mehera Islam ❤️ অক্ষরে অক্ষরে লুকানো প্রেম,
প্রতিটি শব্দে তোমাকে খুঁজে ফেরার গল্প। ✍️
(1)

Story:  #তোমার_কণ্ঠে_আমি🎶এক প্রেম, এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, এক অনন্ত গল্প)Part:7+8✍️ Write: Fahad_Chowdhory..রাতে তন্নিমা আর...
06/09/2025

Story: #তোমার_কণ্ঠে_আমি🎶

এক প্রেম, এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, এক অনন্ত গল্প)

Part:7+8

✍️ Write: Fahad_Chowdhory
..রাতে তন্নিমা আরিয়ানের দেওয়া প্যাকেট খুলে দেখলো স্টোন বসানো এক জোড়া চুড়ি। চুড়ি জোড়া হাতে পড়ে দেখলো একদম পারফেক্ট সাইজ! মানিয়েছে বেশ তাই আর খুললো না। পড়া শেষ করে ডিনার করে আবার রুমে এসে দেখলো তার ফোনে অচেনা নম্বর থেকে কল এসেছে দুইটা। লাইটটা অফ করে খাটে শুতেই আবার ফোনটা বেজে উঠলো। রিসিভ করতেই পুরুষ কন্ঠ বলে উঠলো,

কি করছো?

হ্যালো, কে বলছেন?

চিনতে পারো নি। কয়েক সেকেন্ড ভাবলে হয়তো চিনে ফেলবে...

তন্নিমা এবার কন্ঠ শুনেই বুঝে গেছে এটা আরিয়ান।

এতো রাতে কল করেছেন কেন?

চিনতে পেরেছো তাহলে?

হুম।

এতো রাত কোথায়! মাত্র ১০টা বাজে। এখনই ঘুমিয়ে পড়েছো নাকি!

ফোন নম্বর কোথায় পেলেন?

তুমি তো অনেক বুদ্ধিমতী তাহলে বোকার মতো প্রশ্ন করো কেন? ফোন নম্বর পাওয়া ব্যাপার! ভার্সিটির স্টুডেন্ট আইডেন্টিটি তে আছে, পলাশ স্যার এর কাছে আছে, তোমার ফ্রেন্ডের কাছে আছে।

আমার ফ্রেন্ড আপনাকে দিবে না সেটা খুব ভালো ভাবেই জানি।

তা ছাড়াও আরও অনেক অপশন আছে।

ওকে ফাইন। কল করেছেন কি জন্য, সেটা বলুন।

একটু একটু প্রেমালাপ করার জন্য।

আমার মনে এতো প্রেমালাপ নেই।

এতো লাগবে না, একটু একটু হলেই হবে।

একটুও নেই। ঘুমাবো আমি, কল কাটুন।

আরে ঘুমাবেই তো। এতো তাড়া কিসের। দিনার সাথে থেকেও কি কিছু শিখতে পারো নি! ওরা কথা বলে সারারাত কাটিয়ে দেয়। এখন ফোন দিলেও দেখবে ওয়েটিং এ আছে।

ভালো হয়েছে। আমার এতোকিছু শিখার প্রয়োজন নেই। গুড নাইট।

তন্নিমা কল কেটে দিলে আরিয়ান মেসেজ করলো, " তোমার বলা গুড নাইট আমার জন্য লাভ নাইট হয়ে গেছে। "
তন্নিমা হেসে বললো, পুরাই পাগল একটা!

সকালে দিনা জানালো সে আজ ভার্সিটি আসবে না। তন্নিমার ও যেতে ইচ্ছে করছে না। অন্যদিকে গানের প্রাক্টিস আছে। কিছুক্ষণ ভেবে সিদ্ধান্ত নিলো আজ যাবে না। একদিন প্রাক্টিস মিস হলে কিছু হবে না। আরিয়ান ভার্সিটি এসে তন্নিমাকে না দেখতে পেয়ে কল করলো তন্নিমার ফোনে,

বলুন

বাহ, আমার জন্যই ওয়েট করছিলে নাকি!

খেয়ে দেয়ে আমার কাজ নেই আর!

কি কাজ আছে শুনি।

এতো কিছু শুনতে হবে না।

ভার্সিটি আসোনি কেন?

ইচ্ছে হয়নি, তাই।

দিনা তো আজ আবিদের সাথে বেড়াতে যাবে। তোমারো যেতে ইচ্ছে করছে নাকি আমার সাথে?

না।

প্রাক্টিস এ আসবা না?

না।

আমারও থাকতে ইচ্ছে করছে না। চলেই যাবো ভাবছি।

ভাবতে থাকুন।

তন্নিমা আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না আরিয়ানকে। এগারোটার দিকে শুরু হলো বৃষ্টি! তন্নিমা মনে মনে খুশি হলো, আজ না গিয়ে ভালোই করেছে। বাসায় থেকে মামাতো বোন অহনার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবে। যেই অহনাকে ডাকতে যাবে তখনই আবার আরিয়ানের ফোন!

আবার কি?

ঝরছে বৃষ্টি, ইচ্ছে হচ্ছে ভিজতে তোমার সাথে। আসোনা একটু আমার কাছে।

আহ! নিসংকোচ আবদার!

ভালোবাসার আবদারে সংকোচ থাকবে কেন! সত্যিই খুব ইচ্ছে করছে ভিজতে।

ভিজো একা একা। না করেছে কে!

জানেমন! তুমি তো মেঘের সাথে আমার জান ও ফুটো করে দিলে!

হিহিহিহি......
-আরেকবার বলো না তুমি করে...

পারবো না।

বলো না...

আচ্ছা বলবো না। হিহিহি.....

প্লিজ....

ফোন রাখো এখন। বৃষ্টিতে ভিজবো।

সত্যি! আমিও ভিজবো।

জ্বরে না ভুগছিলে! আবার বৃষ্টি!

জানি তো আমি। তুমি মুখে না করলেই কি! মনে মনে ঠিকই আমার খেয়াল রাখো..

এতো ঠেকা পড়েনি আমার, কারো খেয়াল রাখার। দিনা বলেছিলো তাই জানতে পেরেছি। ফোন রাখো এবার। এতো কথা বললে বৃষ্টি শেষ হয়ে যাবে। আর ভিজতে পারবো না।

ভিজতে হবে না। তুমিও অসুস্থ হয়ে পড়বে।

না। ভিজবো।

তন্নিমা কল কেটে অহনাকে নিয়ে ছাদে চলে গেলো। তবে বেশিক্ষণ ভিজতে পারেনি। বৃষ্টি অল্প সময়ের জন্য ছিলো! মনটা খারাপ করে আবার ফ্ল্যাট এ ফিরে এলো।

ছুটির দিন হওয়ায় গতকালের মতো আজও বাসায় কাটাতে হলো। আরিয়ান দিনে তিন চারবার করে কল করে। তন্নিমাও টুকটাক কথা বলে কেটে দেয়। পরের দিন ভার্সিটিতে এলে ক্যানটিনের পাশে আরিয়ানকে দেখে তন্নিমা। চুড়ি জোড়া পড়নে দেখে আরিয়ান তন্নিমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো, তন্নিমাও প্রতুত্তরে হাসলো। তন্নিমা এগিয়ে বারান্দা দিয়ে হাটতে থাকলে আরিয়ান বন্ধুদের মাঝ থেকে কেটে পড়ে, আর তন্নিমার কাছে আসে বারান্দায়। তন্নিমা কোন কিছু না বলে নিজের মতো হাটতে লাগলো। আরিয়ান মলিন সুরে বললো,

হাতটা একটু ধরি?

কেন?

একটু...

তন্নিমার কোন জবাব না পেয়ে আরিয়ান তার একটা হাত ধরে হাটতে লাগলো।

চুড়ির মাপ জানা ছিলো না। আইডিয়া করে কিনেছি। সংশয়ে ছিলাম তোমার হাতে হবে কিনা! মানিয়েছে বেশ।

হয়েছে দেখা। ছাড়ো এবার।

সমস্যা কি! কেউ দেখছে না তো আমাদের!

এমনি ক্লাস থেকে দিনা বারান্দায় এলো। আর আরিয়ানকে তন্নিমার হাত ধরে হাটতে দেখে ফেললো। আরিয়ান দ্রুত হাত ছেড়ে কাশির ভান ধরে দ্রুত গতিতে হেটে চলে যাচ্ছিলো। দিনা হাসতে হাসতে বললো,

গায়ক আর গায়িকার প্রেম তো ভালোই জমেছে। পারফেক্ট জুটি! ভাইয়া আমি কিন্তু দেখিনি কিছু।

দূর, রঙ টাইমে শুধু তোমার এন্ট্রি!

হিহিহি....

আরিয়ান চলে গেলো সেখান থেকে। দিনা তন্নিমার সাথে মিটিমিটি হেসে ক্লাসে প্রবেশ করলো।

ভালোই তো ডুবে ডুবে জল খাচ্ছেন!

সরি, আমি গ্লাসে জল খাই।

হিহিহি.... তা তো দেখলাম ই! তন্নিমা! চুড়ি তোর হাতে!

চুড়ি কি ছেলেরা পড়ে নাকি!

না, কিন্তু সবসময় ঘড়ি! আর আজ হঠাৎ চুড়ি!

ইচ্ছে হলো, তাই...

ভাইয়ার দেওয়া গিফট?

হুম।

বাবাহ! আর কি কি গিফট দিয়েছে রে?

আবিদ ভাইয়ার কাছে গিয়ে কি বলবো, দিনা পড়াশোনা ছেড়ে অন্যের প্রেমের সন্ধান করে ভার্সিটি এসে!

হুহ! নিজের সময় সেয়ানা, আমি বলতে গেলে দোষ!

হুম, তুই দোস্ত।

গতদিনের নোট দে...

আমিও আসিনি।

ভালোই তো হয়েছে এবার। এখন পাবো কই?

সমস্যা নেই, এটার পরেই তো গেভ ক্লাস। কারো কাছ থেকে নিয়ে নিবো।

গেভ ক্লাসে এক মেয়ের কাছ থেকে নোট নিয়ে লাইব্রেরির দিকে যাচ্ছিলো তন্নিমা আর দিনা। বারান্দায় আরিয়ানকে দেখা হলো। আরিয়ান ফুল প্যান্ট ফোল্ড করে কোয়ার্টার বানিয়ে নিয়েছে, হাতে ফুটবল। খেলতে নামবে বুঝাই যাচ্ছে। তন্নিমা একটু কড়া কন্ঠে বললো,

প্রতিদিনই ফুটবল খেলতে হয়?

একটু না খেললে যে ভালো লাগে না! খেলবে নাকি তুমি?

না, আমার এতো খেলার নেশা নেই।

চলো না খেলতে। তুমি আমি একদিকে, আর বাকি সবাই একদিকে। দেখবে, আমরা দুজনই জয়ী হবো। জানোই তো, আমাদের ভালোবাসার জোর বেশি।

তন্নিমা ভেংচি কেটে লাইব্রেরির দিকে চলে গেলো, দিনাও খিলখিল করে হাসতে হাসতে পিছু পিছু চলে গেলো।

এভাবে একটু আধটু দুষ্টুমি, একটু একটু প্রেম, ঝগড়া, খুনশুটির মাধ্যমে কেটে গেলো আরো ৬দিন।

দিনার গায়েহলুদ আজ। মামাতো বোন অহনাকে সাথে নিয়ে সন্ধ্যায় একেবারে সেজেগুজে দিনার বাসায় উপস্থিত হয়েছে তন্নিমা। দুদিন আগে আসার কথা ছিলো এ নিয়ে দিনার একটু রাগারাগি। তন্নিমা কৌশলে দিনাকে মানিয়ে নিলো। আবিদের বাসা থেকে হলুদের লগনে এসেছে আবিদের বাসার মানুষ। সাথে আরিয়ান, রিসাদসহ আবিদের অন্যান্য বন্ধুরা। তন্নিমাকে দেখে আরিয়ান হ্যাং! হলুদের শাড়ি পড়েছে সাথে ফুলের গহনা। খুবই সুন্দর দেখাচ্ছে তন্নিমাকে। বরপক্ষ চলে আসায় দিনার কাছ থেকে সরে এলো তন্নিমা। এমন সময় অহনা এসে বললো, ওয়াশরুমে যাবে। তাই নিচে নামার জন্য সিড়ির কাছে আসতেই মেহেদীকে দেখতে পেল তন্নিমা। আরিয়ান জিন্সের সাথে লাল পাঞ্জাবি পড়েছে। আরিয়ান সাথে দেখা হতেই মুচকি হাসলো তন্নিমা।

কোথায় যাও?

নিচে যাবো একটু।

দিনার রুমে এলো তন্নিমা অহনাকে নিয়ে।

আপু, আমার লেট হবে একটু।

যা, আমি এখানেই আছি।

তন্নিমার ফোন বাজতেই তন্নিমা বারান্দায় চলে গেলো। আর অহনা ওয়াশরুমে। ফোনে কথা বলা শেষ হলে তন্নিমা ঘুরে তাকাতেই দেখলো আরিয়ান বারান্দায় এসেছে। তন্নিমা একটু চমকে উঠলো। আরিয়ান তার কাছে আসতে আসতে গানের সুর ধরে বললো,

যদি বউ সাজো গো, আরো সুন্দর লাগিবে গো...

তন্নিমা জানালার গ্রিলের সাথে একদম মিশে আছে। আর আরিয়ান তার কাছে এসে দুপাশে দুহাতে গ্রিলে ধরে দাড়িয়ে বললো,

আমি সাদা পাঞ্জাবি পড়লে মনে হতো আজ তোমার আর আমার গায়েহলুদ। কাল লাল শাড়ি পড়ে বউ সাজবে কি?

তন্নিমা মুচকি হেসে জবাব দিলো,

না। সরো প্লিজ। অহনা আছে এখানে। দেখলে প্রব্লেম হবে।

অহনা কে?

আমার মামাতো বোন।

ওহ! একবার জড়িয়ে ধরো, চলে যাবো।

কিহ!

জ্বি...

প্লিজ যাও।

উহুম..

তন্নিমা চট করে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জড়িয়ে ধরে আবার ছেড়ে দিলো। কিন্তু আরিয়ান আগের ন্যায় দাড়িয়ে আছে।

হয়েছে তো এবার। যাও...

জড়িয়ে ধরলে কখন! আমি তো কিছুই টের পেলাম না। আবার ধরো...

তন্নিমা এবার আবার জড়িয়ে ধরলো। তন্নিমা জড়িয়ে ধরার একটু পর গ্রিল থেকে হাত সরিয়ে আরিয়ানও তন্নিমাকে ধরলো। তারপর ছেড়ে দিতে গেলে আরিয়ানের পাঞ্জাবির বোতামে তন্নিমার গলার মালা আটকে গেল। দুজনেই চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না ছুটাতে।

দেখি ছাড়ো তুমি। এমন প্যাঁচ লাগলো কিভাবে!

আমি কি জানি! আমার মালা ছিড়লে খবর আছে তোমার। তাড়াতাড়ি করো, অহনা চলে আসবে।

হচ্ছে না।

দাতে কেটে ফেলো।

আরিয়ান তন্নিমার দিকে একটু ঝুকে দাতে মালার বাড়ন্ত সুতা কেটে ফেললো। তারপর দ্রুত সেখান থেকে বেরিয়ে এলো। তন্নিমা আরো কিছুক্ষণ দাড়িয়ে, অহনাকে সাথে নিয়ে ছাদে এলো।
চলবে…

Story: #তোমার_কণ্ঠে_আমি🎶

এক প্রেম, এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, এক অনন্ত গল্প)

Part:7+8

✍️Write: Fahad_Chowdhory
...তন্নিমা আরও কিছুক্ষণ দাড়িয়ে, অহনাকে নিয়ে ছাদে এলো। বন্ধুদের অনুরোধে তন্নিমা ও আরিয়ান একসাথে দুইটা গান গেয়ে শোনালো।
বিয়ের দিন তন্নিমা একটা গোল্ডেন কালার লেহেঙ্গা পড়েছে। বরযাত্রী আসার পূর্বে পুরোটা সময় দিনার আশেপাশেই ছিলো। বড় যাত্রী এলে আরিয়ান গেইটের ভিরে তন্নিমাকে খুজেছে কিন্তু পায়নি। ভেতরে এসে দিনার পাশে বসে থাকতে দেখলো। সাথে মামাতো বোনটাও আছে! একা পাওয়ার সুযোগ খুঁজে একটু আধটু কথা বলতে পেরেছে।

রিসিপশনের দিন দিনা বার বার কল করে যেতে বলেছে তন্নিমাকে। দিনার মা ও জোর করছে তাই আবিদের বাসায় গেলো দিনাকে আনতে। সেখানে আর অহনা যায়নি। স্টেজের একপাশে রিসাদসহ বন্ধুদের সাথে হাসিঠাট্টা করছিলো আরিয়ান। তন্নিমাকে দেখে সেখান থেকে চলে এলো।

কেমন আছো?

আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?

আলহামদুলিল্লাহ। এদিকে চলো.... রাতে কল রিসিভ করোনি কেন?

ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

অহ! আজ এতো ভালো লাগছে কেন তোমাকে?

কখনো এটা বলেছো, যে আজ খারাপ লাগছে!

হাহাহা.... কখনো খারাপ লাগেইনি, বলবো কিভাবে!

মিথ্যে কথা সব!

খারাপ লাগছে বললে সত্য মেনে নিবা?

তন্নিমা আর কিছু বললো না। আবিদের রুমের কাছে এসে দেখলো এখানে কেউ নেই! তাই আরিয়ান বললো,

ভেতরে চলো।

সবাই ওদিকে। এখানে আমাদের দুজনকে দেখলে খারাপ কিছু ভাববে!

সবাই ওদিকে, তাই আমাদের এখানে কেউ দেখবে না। চলো...

আরিয়ান তন্নিমার হাত ধরে ভেতরে এসে দরজা লক করে দিলো কিন্তু জানালা খোলাই আছে।

একি! দরজা লক করছো কেন তুমি?

কেন! আমার কাছে থাকতে ভয় পাও?

না।

তাহলে!

আমরা অন্যের রুমে আছি। কেউ দেখলে উল্টাপাল্টা ভাববে, আরিয়ান।

কেউ যাতে না দেখে সেজই তো লক করলাম।

কথা বলতে বলতে আরিয়ান আস্তে আস্তে তন্নিমার দিকে এগিয়ে একদম কাছে দাড়ালো। তন্নিমা মুখে বলেছে ঠিকই ভয় পায় না, কিন্তু মনে ঠিকই ইতস্তত বোধ করছে! আরিয়ান মুচকি হেসে বললো,

বিশ্বাস নেই আমার উপর?

আছে!

ভালোবাসো আমাকে?

প্রমাণ দিতে হবে?

না, একটা গিফট দিবে। লাভ গিফট...

হিহিহি..... সরি, এরকম কোন গিফট নেই আমার কাছে!

তন্নিমা, আমি সিরিয়াস বলছি!

কি গিফট, বলো?

লিপ কিস।

তন্নিমা চোখ বড় বড় করে আরিয়ানের দিকে তাকালো! লিপ কিস কি ভালোবাসার গিফট! এমনিতেই একটু সংকোচে আছে সে, তাও মনের সাথে যুদ্ধ করে আরিয়ানের সামনে এতোক্ষণ নরমাল থাকার চেষ্টা করছে! আর এখন ও কি বললো এটা!

পারবে না গিফট দিতে!

আরিয়ান দুহাত পকেটে রেখে দাড়িয়ে আছে। তন্নিমার চোখে একটু একটু পানি জমছে! তবুও আরিয়ান মাথাটা দু'হাতে টেনে নিচু করে সামনে এনে পায়ের আঙুল ভর দিয়ে উঁচু হয়ে দাড়ালো তন্নিমা। আস্তে আস্তে নিজের ঠোঁট জোড়া আরিয়ানের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। কাছাকাছি আসতেই আরিয়ান তার হাত সরিয়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাড়িয়ে হাসতে লাগলো।

তুমি কি ভেবেছো, সত্যিই আমি এখন এমন গিফট নিবো! আই এম জাস্ট জোকিং ইয়ার! এভাবে ভালোবাসা প্রমাণ করতে হয় না। ভালোবাসা মন থেকে হয়, ফিল করতে হয়... এসব লিপ কিস টিস কিছু না!

তন্নিমা হঠাৎ আরিয়ানের কলার ধরে জোরে হেচকা টান দিলো তার দিকে। টাল সামলাতে না পেরে আরিয়ান তন্নিমাকে নিয়ে খাটে পড়ে গেলো। তন্নিমা তার নিচে পড়ে আছে, কিন্তু এখনো কলার ছাড়েনি! একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। আরিয়ান দৃষ্টি সরিয়ে উঠার চেষ্টা করতেই তন্নিমা আবারও কলার টেনে কাছে টানলো। এবং চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেললো! কি বুঝাতে

চেহারায় তাকিয়েও থাকতে পারছে না, কেমন যেন একটা মায়া কাছে টানছে আরিয়ানকে!

তন্নিমা ছাড়ো....

আরিয়ান কলার থেকে তন্নিমার হাত সরিয়ে তারাতাড়ি উঠে পড়লো। একটানে তন্নিমাকেও বসিয়ে দিলো। তন্নিমা শুধু আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।

ঠিক আছো তুমি?
.....

তন্নিমা, ঠিক আছো তুমি?

তন্নিমা কোন জবাব দিলো না। উঠে দাড়িয়ে দরজার উপরের লকটা খুলতে চেষ্টা করে পারলো না, আরিয়ান এসে পেছনে দাড়িয়েই খুলে দিলো। তন্নিমা বেরিয়ে চলে গেলো। একটু পর আরিয়ানও বেরিয়ে বন্ধুদের কাছে ফিরে এলো।

অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরলো। এর মধ্যে আর তন্নিমা ও আরিয়ানের মধ্যে কোনো কথা হয়নি। রাতে আরিয়ান কল করেছে। কিন্তু তন্নিমা রিসিভ করে নি। আবার মেসেজ সেন্ট করেছে,
"কল রিসিভ করছো না কেন?"
"রেগে আছো আমার উপর?"
"রাগের কারণ কি?"

পরপর তিনটা মেসেজ এলো। কোন রিপ্লাই পেল না। এবার তন্নিমা নিজেই কল করলো।

বলো...

কল রিসিভ করছিলে না কেন?

এমনি।

এমনি মানে! তাহলে এখন ব্যাক করলে কেন?

ইচ্ছে হলো তাই।

এমন করে কথা বলছো কেন? রেগে আছো আমার উপর?

না।

উহুম, রেগে আছো। কিন্তু রাগ করার কারণ কি?

বললাম তো, রাগ করি নি।

কাল আসবে না ভার্সিটিতে?

হ্যাঁ।

ক্লাস করবে? নাকি প্রাক্টিস?

দুটাই। আরো কিছু বলবা?

আমি তো বললাম ই। এবার তুমি বলো...

কি বলবো?

যা ইচ্ছা...

বাসায় ফিরেছো? খেয়েছো? পড়েছো? ঘুমিয়েছো?

হাহাহা.... জেগে আছি।

আমি ঘুমাবো।

আমি তোমার কথা শুনবো।

আমি কিন্তু সত্যিই ক্লান্ত। অনেক ঘুম পেয়েছে।

ওকে, সুইট একটা লাভ নাইট দাও। তারপর ঘুমাও।

আমি সুইট খাই না, তাই এমন কিছু দিতেও পারি না।

তাহলে ঘুমাতেও পারবে না।

ওকে, লাভ নাইট।

হয়নি... আবার বলো...

লাভ নাইট, ডিয়ার!

লাভ নাইট, জানেমন...

সকালে ভার্সিটিতে চলে এলো তন্নিমা। আগামীকাল গানের সেকেন্ড টার্ম কমপিটিশন হবে। আজ প্রাক্টিস টা বেশি জরুরি। দিনা আসেনি আজ। কবে থেকে আসবে কে জানে! একা একা ক্লাস করতেও ভালো লাগছে না। ভার্সিটিতে দিনার সাথে যতটা মিশে অন্যদের সাথে তার শতকরা পাচ ভাগও না!

পরপর তিনটা ক্লাস করে লাইব্রেরিতে বসে গতক্লাসের নোটগুলো শেষ করলো। লাইব্রেরী থেকে ক্লাসে ফেরার পথে কেউ হাত টেনে একটা রুমের মধ্যে নিয়ে এলো। রুমটা খালি! আরিয়ান এনেছে তন্নিমাকে!

কি ব্যাপার? এখানে আনলে কেন?

তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য, জান....

কিসের সারপ্রাইজ?

আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। কাল কমপিটিশন এ যাবা?

কমপিটিশন হলে যাবো না কেন!

যদি আমি যেতে নিষেধ করি....

কি বলছো এসব! নিষেধ করবে কেন!

কারণ আমি চাই না তুমি কমপিটিশনে এটেন্ড করো।

এতোদিন ধরে প্রাক্টিস করছি, এখন তুমি নিষেধ করছো কেন?

এতো কথা কিসের? বলেছি যাবে না, তো যাবে না।

তুমি যাবে?

হ্যাঁ।

তাহলে আমি যাবো না কেন?

কারণ তুমি গেলে আমি জিততে পারবো না। প্রথম থেকেই তোমাকে আমার সহ্য হয় না। তুমি, তোমার এই সুর সবচেয়ে বেশি অসহ্যকর! আমার সাথে পাল্লা দিতে আসবে না কখনো। তাহলে বিপদে পড়বে।

কি বলছো তুমি এসব! হঠাৎ এমন আজেবাজে কথা বলছো কেন! কি হয়েছে তোমার! আগে তো এমন ছিলে না! ভালোবাসতে তুমি আমাকে!

ভালোবাসা! হা হা হা.... নাটক ছিলো সুইটহার্ট! নাটক... নাটক বুঝো! তোমাকে তো আমার সহ্যই হয় না! ভালোবাসবো কিভাবে! এসব প্রেম, ভালোবাসার কোন মূল্য নেই আমার কাছে! তোমার চেয়ে শতরূপের রূপসী কন্যারাও এসেছিলো প্রেম চিঠি নিয়ে! কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেছে। এখন কমপিটিশন থেকে কেটে পড়াই তোমার জন্য উত্তম।

তন্নিমা পলকহীন তাকিয়ে আছে তার দিকে। চোখে অশ্রু ভীড় জমিয়েছে! অন্যদিকে আরিয়ানের মুখে হাসি! তন্নিমা দাতে দাত চেপে বললো,

আর যদি আমি কমপিটিশন থেকে না সরে যাই!

সেটাও পূরণ হবে না গো.... তোমাকে সরানোর ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছি আমি। এই দেখো...

আরিয়ান মোবাইলে তন্নিমা আর আরিয়ানের ছবি বের করলো। এটা তো সেই ছবি, দিনার গায়ে হলুদে তন্নিমা আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরেছিলো! আরেকটা রিসিপশনে আবিদের রুমে আরিয়ান পকেটে হাত রেখে দাড়িয়ে আছে আর, তন্নিমা আরিয়ানকে কাছে টেনে কিস করতে যাচ্ছে!

একটা মেয়ে জোর করে একটা ছেলের সাথে নোংরামি করার চেষ্টা করছে! ভাবা যায়!!! ভেবে দেখোতো, এই ছবি যদি ফেসবুকে, ভার্সিটি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে মুখ দেখাতে পারবে তুমি! সহ্য হবে এসব তোমার! এই ছবিগুলো যদি তোমার পরিবারের কাছে পৌঁছে যায়, উনারা সহ্য করতে পারবে কি! তোমাকে কমপিটিশন থেকে সরানোর জন্যই সাজানো ভালোবাসার এই প্ল্যান! আগেও বলেছি এখনো বলছি, আমার সাথে লাগতে এসো না। অনেক বড় সমস্যায় পড়বে! কমপিটিশন থেকে নাম না সরালে কি ঘটবে তোমার লাইফে, কল্পনাও করতে পারবে না তুমি। ভেবে দেখো, সময় আছে এখনো!

আরিয়ান বেরিয়ে গেলো ক্লাস থেকে! তন্নিমাও মন খারাপ করে বেরিয়ে এলো। যার কাছ থেকে নোট নিয়েছে, তাকে নোট ফেরত দিয়ে অডিটোরিয়ামে এলো প্রাক্টিসের জন্য। আরিয়ান লক্ষ্য করছে সে চিন্তিত! তন্নিমা গান গাইতে গিয়েও পারলো না! বারবার আটকে যাচ্ছে! স্যারকে অনেক বলে বাসায় চলে এলো। আরিয়ান আর রিয়াদের প্রাক্টিস চললো আজ। বাসায় ফিরে ফোনটাও বন্ধ করে দিলো তন্নিমা।

চলবে…

👉👉অপেক্ষা করুন, পরের পর্ব খুব শীঘ্রই আসছে... 👈👈










04/09/2025

$$

Story:  #তোমার_কণ্ঠে_আমি🎶এক প্রেম, এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, এক অনন্ত গল্প)Part:5+6✍️ Write: Fahad_Chowdhory . রিসাদ একটু আশে...
30/08/2025

Story: #তোমার_কণ্ঠে_আমি🎶

এক প্রেম, এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, এক অনন্ত গল্প)

Part:5+6

✍️ Write: Fahad_Chowdhory
. রিসাদ একটু আশেপাশে তাকিয়ে তন্নিমার পাশেই বসে পড়লো।
দিনা আবিদের কাছে গিয়ে দেখলো আবিদ আরিয়ানসহ আরো কয়েকজনের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। তাই সে একটু দূরেই দাড়ালো। আবিদ তাকে দেখে সেখান থেকে উঠে এসে জিজ্ঞেস করলো,

এখানে কেন? কিছু বলবে?

আমি কি বলবো? তুমি নাকি ডেকেছো আমাকে তাইতো এলাম।

আমি কখন ডাকলাম!

রিসাদ ভাইয়া যে বললো।

দুষ্টুমি করেছে হয়তো। আমি ডাকিনি। আমাদের এখানে বসিয়ে রেখে ফাজলামো শুরু করেছে! কোথায় সে?

ক্যান্টিনের দিকে ছিলো। এখন কোথায়, জানি না!

আচ্ছা তুমি যাও।

দিনা ক্যান্টিনে ফিরে এসে দেখলো তন্নিমা একা বসে আছে। তন্নিমার পাশে বসতেই তন্নিমা জিজ্ঞেস করলো,

কিরে, কি এমন জরুরি তলব করলো?

আরে কিছুই না। রিসাদ ভাইয়া দুষ্টুমি করছে। অনেক ফাজিল রিসাদ ভাইয়া।

হিহিহি......

আজ দিনাদের বাসায় যাবে তন্নিমা। তাই দিনা ছুটির পর ওয়েট করলো তন্নিমার প্রাক্টিস শেষ হওয়া পর্যন্ত! প্রাক্টিস শেষ হতেই তন্নিমা যখন বের হতে যাবে, আরিয়ান তন্নিমার কাছে একটা বই দিলো। তন্নিমা বইটি দেখে অবাক হয়ে গেল! এটা তো তারই বই!

আমার বই আপনার কাছে গেলো কিভাবে!

তুমি গান গাওয়ার সময় নিয়েছিলাম তোমার ব্যাগ থেকে। না বলে নেয়ার জন্য সরি। আসলে আমার এক ছোট ভাই খুঁজেছিলো তার প্রয়োজন থাকায়। তাই তোমার ব্যাগে সার্চ করেছি। দেখে নাও, যেমন ছিলো তেমনই আছে।

তন্নিমা একটু এলোমেলো ভাবে উল্টেপাল্টে দেখলো ঠিকই আছে। কিন্তু আরিয়ান যে মিথ্যে বলেছে এটা তন্নিমা নিশ্চিত। বই নিয়ে তন্নিমা দিনার সাথে তাদের বাসায় এলো। দিনার হাত পা রীতিমতো কাপা শুরু করেছে!

দিনার মা কে সালাম দিলো। দিনার বাবা বাসায় আছে কিনা তা জিজ্ঞেস করলো। দিনার মা দিনাকে বললো আপ্যায়নস্বরূপ খাবার দিতে আর তন্নিমাকে বসতে বলে দিনার বাবাকে ডেকে আনলেন। পাশের রুম থেকে দিনার বাবা এলে তাকেও সালাম দিলো তন্নিমা। তারপর উনারাও পাশে বসলো। দিনা খাবার দিয়ে চলে যাচ্ছিলো, তন্নিমা তাকে ডেকে পাশে বসতে বললো। অত:পর তন্নিমা বলতে লাগলো,

আংকেল আমি দিনার ফ্রেন্ড তন্নিমা। আমরা একসাথেই পড়ি।

হ্যাঁ, দিনা বলেছিলো তোমার কথা। পড়ালেখা কেমন চলছে?

আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আংকেল, দিনার নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে?

দিনার বাবার মুখটা কিছুটা মলিন হয়ে উঠলো, তবুও জবাব দিলো,

ঠিক হয়নি এখনো। তবে কথাবার্তা চলছে।

অহ, ভালো। আসলে আমি দিনাকে নিয়ে একটু কথা বলতে চাচ্ছিলাম। কথাটা বলতে ইতস্তত বোধ করছি। কিন্তু এটা বলাটা খুব জরুরি মনে করছি আমি। আমি অনেক ছোট, আপনাদের জ্ঞান বুদ্ধির চেয়ে আমার জ্ঞান বুদ্ধি অনেক কম। এমনকি বিষয়টা জানানো উচিত হচ্ছে কিনা সেটাও আমার জানা নেই। জানিনা আপনারা কিভাবে নিবেন আমার কথাটা! আশা করি ভুল করলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

দিনার বাবা লক্ষ্য করলো তন্নিমা অনেক ইতস্তত বোধ করছে। তাই হেসে সাহস যুগিয়ে বললো,

আচ্ছা, কি বলতে চাও বলো।

আংকেল দিনাকে একটা ছেলে খুব পছন্দ করে। মানে দিনাও...

দিনার বাবা-মায়ের মুখ গম্ভীর হয়ে গেল। তন্নিমা আবার বলতে শুরু করলো,

আংকেল, বাবা-মা নিশ্চয়ই সন্তানের জন্য উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আপনারাও নিশ্চয়ই এর ব্যাতিক্রম না। কিন্তু দিনা আপনাদের এ কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না। আমিও জানতাম না। গত দুদিনের মধ্যেই জেনেছি তাই বিষয়টি আপনাদের জানানো প্রয়োজন মনে করলাম। দিনাও আপনারা সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে রাজি না। সে নিজেই আমাকে বলেছে আপনারা সর্ব চেষ্টা তাদের মঙ্গলের জন্য করছেন, তাই সে আপনাদের কিছুতেই ঠকাতে পারবে না। কিন্তু দিনার বিশ্বাস সেই ছেলের কাছেই সে খুব সুখী থাকবে। আপনারা যেন একটু ভেবে চিন্তে দেখেন। কিন্তু সেটা বলতেই পারছে না আপনাদের। আপনারাও নিশ্চয়ই মেয়ের সুখ বিবেচনা করে পাত্র ঠিক করছেন। জোর করে কোথাও বিয়ে হলে সে সম্পর্ক বেশিদিন টিকে না। মনের সুখই প্রকৃত সুখ। যারা সংসার করবে তাদের যদি মতামত, পছন্দ অপছন্দ না থাকে তাহলে সংসার টিকবে কিভাবে! তারা আপনাদের না জানিয়ে চাপে পড়ে যেন কোন ভুল সিদ্ধান্ত না নিতে পারে সেজন্যই আমার এখানে আসা। হয়তো ছোট মুখে কথা বেশিই বলে ফেলেছি। মাফ করে দিবেন প্লিজ।

দিনার বাবা দিনার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

ছেলেটি কে?

দিনা কোন উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করেই বসে আছে। তন্নিমা দিনাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলতে বললো। দিনা কাপা কাপা কন্ঠে জবাব দিলো,

রিতু আপুর হাসব্যান্ড এর ফুপাতো ভাই, আবিদ।

ছেলে কি করে?

মাস্টার্সে পড়ছে, আমাদের ভার্সিটিতেই।

ছেলে কাজ কি করে?

দিনা আর কোন জবাব দিচ্ছে না! কি বলবে সে! ছেলে বেকার! তন্নিমা বুঝতে পেরে বললো,

দিনা বলছিস না কেন? আংকেল না জেনে শুনেই কি সিদ্ধান্ত নিবে? বল, আবিদ যে NN গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির ম্যানেজার।

দিনা চমকে উঠে তন্নিমার দিকে তাকালো! এতোবড় মিথ্যে কেন বললো! যদি বাবা খোঁজ করার পর ধরা পড়ে! দিনার বাবা তন্নিমার দিকে তাকিয়ে বললো,

মোহাম্মদপুরের NNগ্রুপ?

হ্যাঁ, আংকেল। দিনা বলেছে আবিদের ফ্যামিলির অবস্থা নাকি তেমন ভালো না। মানে আপনাদের চেয়ে একটু নিম্ন মানের। কিন্তু জবটা নতুন পেয়েছে।

আচ্ছা, দিনা, মেয়ের বাবা হয়ে আমি তো আর প্রস্তাব নিয়ে যাবো না। আবিদকে বলো তার বাবা-মাকে নিয়ে বাসায় আসতে। কথা বলবো আমি তাদের সাথে। তন্নিমা দুপুরের খাবার খেয়ে তারপর যেয়ো। আর দিনাকে একটু সাহস যুগিয়ে দিয়ো।

দিনার মা ও তন্নিমা হাসলো।

আচ্ছা আংকেল।

দিনা তন্নিমাকে নিয়ে তার রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।

থ্যাংক ইউ সো মাচ দোস্ত। তোকে এত্তগুলা ভালোবাসা।

হয়েছে হয়েছে! আমার কিন্তু ক্ষুধা লেগেছে।

হিহিহি..... আচ্ছা। বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়। কিন্তু তুই মিথ্যে বললি কেন! এখন যদি বাবা খোঁজ নিয়ে দেখে আবিদ বেকার! আর আমি তাকে নিয়ে মিথ্যে বলেছি বাবার কাছে, এটা জানলে আবিদও রাগ করবে খুব।

তন্নিমা পার্স থেকে একটা কাগজ বের করে দিনার হাতে দিয়ে বললো,

এটা ভাইয়ার কাছে দিয়ে বলবি কাল সাড়ে দশটায় NN গ্রুপে গিয়ে ইন্টারভিউ দিতে।

এটা কিভাবে সংগ্রহ করলি?

আমার মামার কোম্পানি। আমি মামার সাথে কথা বলেছি, কাউকে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। শুধু ভাইয়াকে বলবি ইন্টারভিউ দিতে।

দিনা তন্নিমাকে জড়িয়ে ধরে রইল।

এতো কিছু করছিস কেন আমার জন্য?

এখন কি আমি অপরাধী?

হিহিহি.... না, কিন্তু আবিদকে বলতে হবে। বেশি কিছু বলবো না, শুধু এটুকু বলবো। এটা পেতে তন্নিমা হেল্প করেছে।

ওকে।

খাওয়াদাওয়া শেষ করে তন্নিমা বিদায় নিয়ে চলে আসার সময় দিনার মা বললো,

তন্নিমা, তোমার বাবা মা কে নিয়ে এসো আবার।

সরি, আন্টি। বাবা মা আসবে না।

কেন?

দিনার মতো আমি এতোটা ভাগ্যবতী নই। তাই ছোট থেকেই বাবা মা কে হারিয়ে মামা মামীর কাছে আছি।

দিনার বাবা মা উভয়ই অনেক কষ্ট পেল। দিনার মায়ের কাছে এখন মনে হচ্ছে কথাটা বলে মেয়েটাকে আরো বেশি কষ্ট দিলো। আর দিনা তো আরো বেশি অবাক হয়েছে, আর খুব বেশি কষ্ট পেয়েছে। সে জানতোই না তন্নিমার বাবা মা নেই!!! দিনার মা অত:পর বললো,

মাঝে মাঝে আসবে দিনার সাথে। আর তোমার মামা মামীকে নিয়েও আসবে।

আচ্ছা আন্টি। আল্লাহ হাফেজ।

রাতে তন্নিমা পড়তে বসেছে। হঠাৎ করেই মনে হলো আরিয়ান তার বইটা কোন না কোন কারণে নিয়েছে। তাই বইটা খুলে প্রথম থেকেই খুব ভালোভাবে দেখতে লাগলো। প্রথম পেজ দেখে দ্বিতীয় পেজে আসতেই চোখ আটকে গেল। খুব সুন্দর করে কিছু লেখা আছে বইয়ে। হাতের লেখাও খুব সুন্দর। প্রশংসা না করে পারলো না তন্নিমা!

"হয়েছি মুগ্ধ তোমাতে আমি,
পেরেছো কি বুঝতে কবু তুমি?
গাইবো গান, তোমারই শানে,
চির অন্তর জামি!"
---- চিরকুট দিলে তো ছুড়ে ফেলে দিতে, তাই চুরি করে বইটা নিয়েছি। আশা করি এটা ফেলতে পারবে না।
প্রথম থেকেই ঝগড়া দিয়ে শুরু হয়েছে তোমার আমার পরিচয়, শেষটা যেন এমন না হয়! এভাবে আর কতো! ভালো কিছু প্রত্যাশা করতে পারি না আমরা একে অপরের কাছে? তন্নিমা অনেক ভালো লাগে তোমাকে, এই ভালো লাগা শুধু ভালো লাগাতে রাখতে চাই না আমি। পারবে কি দিতে ভালো লাগা থেকে ভালোবাসার সুযোগ???
তোমার উত্তরের আশায় আছি, আরিয়ান....

..চলবে

Story: #তোমার_কণ্ঠে_আমি🎶

এক প্রেম, এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, এক অনন্ত গল্প)

Part:6

✍️ Write: Fahad_Chowdhory
...লেখাটা পড়ে তন্নিমা হাসলো। বইটা বন্ধ করে বালিশ টা কোলে নিয়ে খাটে হেলান দিয়ে বসে রইলো কিছুক্ষণ।

পরদিন ভার্সিটিতে পা রাখতেই আরিয়ান সমান তালে তন্নিমার সাথে হাটতে লাগলো। তন্নিমা কিছু বলছে না তাই আরিয়ান বললো,

কুচ তুম কহো, কুচ হাম কাহে....

কি বলবো?

কি বলবে মানে! আমার প্রশ্নের উত্তর দিবে।

কিসের প্রশ্ন?

তন্নিমা, তুমি বই পড়ো নি?

কিসের বই?

ইকোনমিকস।

কেন! বইয়ে কি ছিল?

তন্নিমা, আমি শিউর তুমি বই পড়েছো। ইচ্ছে করে কথা এরিয়ে যাচ্ছো! আমি কিন্তু সিরিয়াস। প্লিজ কিছু বলো...

কি বলবো?

আরিয়ান এবার হাটা থামিয়ে হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তন্নিমার দিকে। তন্নিমা এভাবে তাকাতে দেখে হিহি করে জোরে হেসে ক্লাসের দিকে চলে গেলো।

দিনার সাথে দেখা হতেই জিজ্ঞেস করলো আবিদকে পেপার দিয়েছে কিনা! দিনা উত্তরে হ্যাঁ জানালো। আজ ক্লাস করতে তেমন একটা ভালো লাগছে না, তাই দিনাকে অফার করলো ক্যান্টিনে চটপটি খাওয়ার জন্য। পরপর দুটো ক্লাস করে ক্যানটিনে চলে গেলো। অর্ডার করার দুমিনিট পর চটপটি চলে এলো। আহ! গরম গরম চটপটি, সাথে টক পানি! গরম ধোঁয়া উঠে যাচ্ছে প্লেট থেকে। দু চামচ মুখে দিতেই ফুরুৎ করে আরিয়ানের আগমন! আরিয়ান এসে তারাহুরো করে তন্নিমার পাশে চেয়ার টেনে বসে পড়লো। দিনা তন্নিমা দুজনেই অবাক! এভাবে তাকাতে দেখে আরিয়ান বললো,

এভাবে তাকাচ্ছো কেন আমার দিকে! শুধু শুধু আমাকে দেখে লাভ নেই! আমি তোমাদের মতো এতো সুন্দর নই।

তারা দুজনেই হেসে উঠলো। তাদের হাসি দেখে আরিয়ান আবার বললো,

দিনা, রাগ করো না। তোমার হাসি থেকে তন্নিমার হাসি অনেক সুন্দর। না মানে আমার কাছে মনে হয় আরকি! আবিদ থাকলে হয়তো তোমার হাসিটাই বেশি সুন্দর বলতো।

দিনা মিটিমিটি হাসছে আর তন্নিমা রাগে ফাটছে!

আপনি এখানে কেন?

কি আপনি আপনি শুরু করেছো! দিনাই তো, অন্য কেউ তো আর নেই এখানে। তুমি দিনার ব্যাপার সব জানো, তাহলে আমাদের কথা দিনার কাছে লুকাচ্ছো কেন!

মানে!

ওফ! ড্রামা বন্ধ করো তো! এসবের মানে আজকাল ছোট বাচ্চারাও জানে!

দিনা তন্নিমার দিকে অবাক হয়ে তাকালে তন্নিমা বললো,

দিনা, সত্যি বলছি। আমি তোর কাছে কিছুই লুকাচ্ছি না!

ভাইয়া আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন!

হুম, প্রেম পাগলা!

হিহিহি..... তা এখানে এসেছেন কেন!

কেন আবার! তোমাদের সাথে চটপটি খেতে। মামা, চটপটি শেষ না?

ক্যানটিনের ম্যানেজার জবাব দিলো, "না"
আরিয়ান আবার বললো,

আচ্ছা, তার মানে শেষ! কিন্তু চামচ তো হবে, একটা চামচ পাঠান।

হিহিহি.... ভাইয়া মামা বলেছে চটপটি শেষ না। এখনো আছে...

একটু বেশিই বুঝে ফেলেছো তুমি, আমি বলেছি শেষ না? মামা বলেছে না। না এবং না কেটে গেলে বাকি আছে শেষ! তারমানে শেষ....

হিহিহি....

কথা বলতে বলতে ক্যান্টিনে কর্মরত ছোট ছেলেটি চামচ নিয়ে হাজির।

দূর ব্যাটা! চামচ আনতে এতোক্ষণ লাগে! চটপটি তো ঠান্ডাই হয়ে গেছে! তন্নিমা খাও খাও...

তন্নিমাকে খেতে বলে আরিয়ান নিজেই তন্নিমার প্লেট থেকে খাওয়া শুরু করলো। দিনা তন্নিমা দুজনেই অবাক হয়ে হা করে তাকিয়ে রইলো। আরিয়ান তন্নিমার চামচ দিয়ে তন্নিমার মুখে তুলে দিলো। আরিয়ান এখন এটা করবে, কেউ ভাবতেই পারেনি! তন্নিমা রেগে তাকাতেই আরিয়ান বললো,

বুঝেছি তো আমি খায়িয়ে দেওয়ার জন্যই হা করে ছিলে। সমস্যা নেই, দিনা ছাড়া কেউ দেখেনি। নেক্সটও কি আমি তুলে দিবো?

আপনি আমার প্লেট থেকে খাচ্ছেন কেন?

শুনলে না, চটপটি আর নেই। তাছাড়া এক প্লেটে খেলে ভালোবাসা বাড়ে গো ভালোবাসা বাড়ে। দিনা খেয়েছো কখনো আবিদের সাথে এভাবে?

না।

হালকা হালকা প্রেম তোমাদের। ফুউউউউই দিলে বাতাসের সাথে উড়ে যাবে। আমাদের প্রেম গভীরের চেয়েও অনেক গভীর। তোমরা দুবছরেও এতোটা গভীরে যেতে পারো নি। তন্নিমা খাচ্ছো না কেন? বিল আমি দিয়ে দিবো চিন্তা করো না। দিনারটা সহ দিয়ে দিবো। আর শোন, দিনা তো জেনেই গেছে আমাদের ব্যাপারে। তাই দিনার সামনে এখন থেকে আর লুকাচুপি খেলতে হবে না।

দিনা খেতে লাগলো, আর বলতে লাগলো,

তন্নিমা খা, খা... ভাইয়া প্লেট একটা কিন্তু চামচ দুইটা হলো কেন?

কি বলো তোমার সামনে এক প্লেটে খাবো বলে এক চামচেও খাবো নাকি! লজ্জা করে না বুঝি আমাদের! সেটা তো চলবে গোপনে...

হিহিহি...

দিনা তুই যাবি এখন আমার সাথে?

তন্নিমা বসা থেকে দাড়িয়ে গেলো, আরিয়ান হাত টেনে আবার বসিয়ে দিলো।

দিনার প্লেটের অর্ধেকও খাওয়া হয়নি, এখনি উঠে যাবে! আর তুমি উঠে যাচ্ছো কেন! ভালোবাসার মানুষ উঠে পড়লে কি খাবারের টেস্ট থাকে! আমারও খাওয়া শেষ হয়নি, বসে থাকো।

আচ্ছা! এবার টেস্ট বাড়িয়ে দিচ্ছি....

তন্নিমা প্লেটে মরিচের গুঁড়ো ঢেলে দিলো।

এবার খান...
আরিয়ান তার সবটুকু খেয়ে নিলো।

খুশিতো এবার?

দিনা তন্নিমা দুজনেই হা করে আছে।

ভাইয়া এমন ঝাল কিভাবে খেলেন!!!

প্রেমে পড়লে নাকি সব খাবার মিষ্টি লাগে। আজ তার প্রমাণ পেলাম.... যাইহোক, বিল দিয়ে আসি আমি। তোমরা আরো কিছু খাবে নাকি? আমি অর্ডার করে দেই।

তন্নিমা তোর তো খাওয়া হয়নি। খাবি কিছু?

না চল। আর বিল আমি দিয়ে দিয়েছি।

গার্লফ্রেন্ড নাকি শুধু খরচ বাড়ায়। আমার ক্ষেত্রে উল্টো! তুমি তো আমার খরচ কমিয়ে দাও!

তন্নিমা আর কিছু না বলে দিনার সাথে বেরিয়ে গেলো। গানের প্রাক্টিসের সময় আরিয়ান আজ প্র‍্যাক্টিস করতে চাইছে না। স্যারকে বলে বাসায় চলে যেতে চাইছে। তন্নিমাও দেখলো আরিয়ানের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে! স্যারও জিজ্ঞেস করছিলো আরিয়ান অসুস্থ কি না! আরিয়ান বললো সে ঠিক আছে, তবে একটু খারাপ লাগছে তাই চলে যাবে। স্যার সম্মতি দিলে আরিয়ান বাসায় চলে গেলো।

আরিয়ান ছাড়া আজ শুধু তন্নিমা আর রিয়াদের প্রাক্টিস চললো।

গত দুদিন যাবত আরিয়ান ভার্সিটি আসেনি। দুদিন পর দিনা ক্লাসে এসেই তন্নিমাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো।

আরে হচ্ছে টা কি!

লাভ ইউ দোস্ত! ওহ, না এটা বলা যাবে না। থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ সো মাচ ডিয়ার।

পাগল হয়ে গেলি নাকি!

হুম। হিহিহি...

কি হয়েছে, সেটা বল...

বাবা মা আবিদের সাথে বিয়ে দিতে রাজি.... (হাতটা তন্নিমার সামনে বাড়িয়ে) গট এনগেজড!

এটা কিন্তু একদমই ঠিক হলো না! তুই আমাকে ইনভাইট না করে এনগেজড হয়ে গেলি!

সরি দোস্ত, এরকম কিছু হবে আমি ভাবতে পারিনি। কাল আবিদের বাবা মা দেখতে এসে হঠাৎ করেই হলো। আর পরের শুক্রবার মানে, ৯দিন পর বিয়ে ঠিক করলো।

হোয়াট! এতো তারাতাড়ি!!

হুম। আবিদের বাবা মা বললো তারা কোথাও বেড়াতে যাবে। ফিরতে ২/১ মাস দেড়ি হবে। এজন্য হয় এ সপ্তাহে বিয়ে হবে আর না হয় দুমাস পর। বাবা কি বুঝে সামনের সপ্তাহ বাছাই করলো!

যাক ভালোই হয়েছে। শুভ কাজে দেরি করতে নেই। হিহিহি....

তোকে কিন্তু দু তিনদিন আগেই যেতে হবে। বাবা মা যাবে তোদের বাসায় দাওয়াত করতে।

এতো আগে গিয়ে কি করবো। বাসা তো কাছেই। তাছাড়া এগারো দিন পর আমাদের সেকেন্ড টার্ম কমপিটিশন।

আমাদের বাসা থেকে আসবি। আর দু একদিন প্রাক্টিস মিস হলে কিছু হবে না। তুই এমনিতেই ভালো গাইতে পারছ।

আহহ! সবাই নিজ স্বার্থে মতলবি!

হিহিহি... ভালো কথা মনে হয়েছে, আরিয়ান ভাইয়া নাকি সেদিন ঝাল খাওয়ার পর জ্বরে ভুগছে। তাই দুদিন যাবত ভার্সিটি আসছে না! ঝালে ভাইয়ার এলার্জি আছে। বেচারা প্রেমে পড়ে এলার্জির কথা ভুলে গেছে!

ভালো হয়েছে! আমি কি বলেছি নাকি, ঝাল খেতে!

সত্যি করে বলতো, কি এমন করলি যার ফলে হঠাৎ প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে!

আশ্চর্য! কি আযব কথাবার্তা বলছিস! আমি কিছু করিনি...

সেদিন ভার্সিটিতে এসে আরিয়ানকে না দেখলেও ক্লাস শেষে প্রাক্টিস এ ঠিকই দেখেছে। রিয়াদের প্রাক্টিস চলাকালে তন্নিমা চেয়ারে বসে রইলো। আরিয়ানও কাছে এসে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো।

কতোদূর এগিয়েছো তন্নিমা?

যতোদূর সম্ভব।

আমি তো শুধু সেকেন্ড গুনেছিলাম কখন ভার্সিটি আসবো আর তোমার সাথে দেখা হবে!

তাই নাকি! কতো সেকেন্ড গুনেছেন শুনি?

কতো সেকেন্ড যেনো...... এই দেখো তোমাকে দেখার পর সব ভুলে গেছি!
- হিহিহি....
আরিয়ান চুপিচুপি তন্নিমা পার্সে কিছু রাখলে তন্নিমা তা দেখে ফেললো। তাই বললো,
- ব্যাগে কি রেখেছেন তুলে নিন।
- এমন কেন করো!
- আমি কিন্তু ফেলে দিবো।
- আচ্ছা, ফেলে দিয়ো। কিন্তু আমার সামনে ফেলো না।
আরিয়ান আর সেখানে বসে না থেকে উঠে চলে গেলো। তন্নিমা শুধু ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।

👉👉অপেক্ষা করুন, পরের পর্ব খুব শীঘ্রই আসছে... 👈👈










🎉 লেভেল 3 সম্পূর্ণ করলাম এবং Facebook-এ ক্রিয়েটর হিসাবে আরও এগিয়ে যেতে আমি অত্যন্ত উৎসাহী!
30/08/2025

🎉 লেভেল 3 সম্পূর্ণ করলাম এবং Facebook-এ ক্রিয়েটর হিসাবে আরও এগিয়ে যেতে আমি অত্যন্ত উৎসাহী!

Story:  #তোমার_কণ্ঠে_আমি🎶এক প্রেম, এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, এক অনন্ত গল্প)Part:3+4✍️ Write: Fahad_Chowdhoryফিন্যান্স ক্লাস শ...
29/08/2025

Story: #তোমার_কণ্ঠে_আমি🎶

এক প্রেম, এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, এক অনন্ত গল্প)

Part:3+4

✍️ Write: Fahad_Chowdhory

ফিন্যান্স ক্লাস শেষে গেভ ক্লাসে তন্নিমা দিনাকে নিয়ে বের হয়ে এলো ক্যানটিনের উদ্দেশ্যে। মাঠে দেখতে পেল আজও আরিয়ানের টিম ফুটবল খেলতে নেমেছে। তন্নিমা ইচ্ছে করেই আজ মাঠ দিয়ে ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছে। দিনা তন্নিমাকে বললো,

চলো এদিক দিয়ে যাই।

দিনা, আমরা একে অপরকে তুই করেও বলতে পারি।

হিহিহি, আচ্ছা চল এদিক দিয়ে যাই।

কেন? মাঠ দিয়ে যেতে সমস্যা কি?

বল লাগতে পারে শরীরে।

বল লাগবে! নাকি কেউ দেখলে বকাঝকা করবে সেই ভয়ে! হুম?

কি বলছিস এসব! কে দেখবে!

হিহিহিহি... আচ্ছা, বল খেলছে মাঠের মাঝখানে। সাইডে আসবে কেন?

আসতেও তো পারে! মাঠ তো আর বিশাল নয়!

আচ্ছা, তুই এদিক দিয়ে যা। আমি মাঠ দিয়েই যাবো।

দিনা সাইড দিয়ে চলে গেলো আর তন্নিমা প্রায় খেলার রাউন্ডে হাঁটছে। আরিয়ান তন্নিমাকে দেখতে পেয়ে বল আজও তন্নিমার দিকে পাঠালো কিন্তু সেদিনের মতো এতোটা জোরে নয়। বল তন্নিমার পায়ের কাছে আসতেই পা দিয়ে আটকে দিলো তন্নিমা। ওদিকে আরিয়ানের টিমের আবিদ এর রিসাদ রেগে ফায়ার আরিয়ানের কান্ড দেখে। এমনিতেই বিপরীত দল তাদের থেকে এক গোল এগিয়ে আছে, তার উপর খুব ভালো একটা সুযোগ ছিলো এখন একটা গোল নেয়ার। এমন সময় কি ফাজলামো করার দরকার ছিলো আরিয়ানের!

তাদের দলের অন্যজন বল আনতে যেতে নিলে আরিয়ান নিষেধ করলো, তারপর সে এগিয়ে গেলো বল নিতে। তন্নিমা এখনো বল পায়ের নিচে আটকে রেখে দাঁড়িয়ে আছে, আর দিনা মাঠের সাইডে থেকে দেখে দাঁড়িয়ে আছে। আরিয়ান বল নেয়ার জন্য কাছে আসতেই তন্নিমা খুব জোরে কিক মারলো।

কিন্তু আরিয়ানের দিকে নয়, গোলকিপারের দিকে। যার ফলে গোল হয়ে গেল। আরিয়ানসহ মাঠের বাকি খেলোয়াড়রা হা হয়ে তাকিয়ে আছে। তন্নিমার কিক স্ট্যান্ডার্ড ছিলো!

আরিয়ান কিছু বলার আগে তন্নিমাই বলে ফেললো,

গোলকি তো কাছেই ছিলো, ফুটবল গোলকিপারে না গিয়ে এদিকে এলো কেন?

কি জানি!

আমি জানি, কেন এসেছে।

কেন?

খেলোয়াড়ের নিশানা ভুল ছিলো।

হাহাহা.... আচ্ছা! তুমি তো দেখছি ভালোই খেলতে জানো। চলো, নেমে পড়ো মাঠে, খেলা হয়ে যাক...

ইচ্ছে নেই।

তন্নিমা সেখান থেকে ক্যান্টিনের দিকে পা বাড়ালো। আরিয়ানের টিম তাকে বকাঝকা শুরু করেছে। সে ও মাঠের মাঝে যেতে যেতে চিৎকার করে বললো,

ইচ্ছে আছে, সাথে হেরে যাবার ভয়ও আছে। তাই আসছো না...

তন্নিমা তার কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া জানালো না। তার উপযুক্ত জবাব দিতে হলে এখন তাকে মাঠে নেমে খেলতে হবে। যা সে কিছুতেই করবে না। দিনার কাছে আসতেই দিনা বলে উঠলো,

বলেছিলাম, বল আসতে পারে এদিকে।

বল আসেনি, ইচ্ছে করে আনা হয়েছে।

তুই বুঝলি কি করে?

এটা সেকেন্ড টাইম ছিলো।

মানে! আগে থেকেই জানা ছিলো?

হুম। আর আসতে পারে বলেই আমি মাঠে পা বাড়িয়েছি।

ডাল মে কুচ কালা হে! কি চলছে সত্যি করে বলতো!

মানে?

মানে বাইরে দেখাচ্ছেন একে অপরকে দেখতে পারেন না। মনে কি অন্যকিছু আছে নাকি! প্রেম টেম এমন কিছু? আরিয়ান ভাইয়াকেও দেখলাম এক প্রকার হাসতে হাসতে মাঠে চললো!

হিহিহি..... হাসালি আমায়! আর ডালে কালা থাকলে তো সহজেই চোখে পড়বে। চল...

হুম..

---

কয়েকদিন পর ভার্সিটিতে নোটিশ এলো এক মাস পর ৭টি ভার্সিটির মধ্যে এক্সটার্নাল একটা প্রোগ্রামের আয়োজন আছে। "জয়গান" প্রোগ্রামটি শুধুমাত্র তরুণদের জন্য। ৩টি ধাপে প্রোগ্রামটি অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ, প্রথম দুই ধাপে বাছাই করে তৃতীয় ধাপে চ্যাম্পিয়ন নির্বাচন করা হবে।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালক পলাশ স্যার অনেক ভেবে চিন্তে উনাদের ভার্সিটি থেকে মাস্টার্সের আরিয়ান, অনার্স ফাইনাল ইয়ারের রিয়াদ আর ফার্স্ট ইয়ারের তন্নিমাকে বেছে নিলেন। তাদের একসাথে ডেকে স্যার তাদের মতামত জানতে চাইলেন। সকলেই পার্টিসিপ্যান্ট করতে প্রস্তুত। স্যারও খুশি হলেন তাদের আগ্রহ দেখে।

এই একমাসের মধ্যেই ৩ ধাপে অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে তাই এখন থেকে নিয়মিত প্র্যাকটিস করতে হবে তাদের। স্যার নির্ধারণ করে দিলেন, প্রতিদিন ক্লাস শেষে ১ ঘন্টা করে সময় দিতে হবে প্র্যাকটিস এর জন্য। এতে আরিয়ান সমস্যায় পড়ে গেলো, কারণ ক্লাস শেষ করে তাকে কোচিং-এ যেতে হবে। কোচিং মিস করলে তো তার উপার্জন বন্ধ হয়ে যাবে! তাই স্যারের সাথে কথা বলে সময়টা এগিয়ে লাস্ট ক্লাসে নিয়ে এলো। অর্থাৎ তারা ভার্সিটির লাস্ট ক্লাসটা মিস করে প্র্যাকটিস করবে।

প্র্যাকটিস শুরুও হয়ে গেলো। কারণ, নেক্সট উইকে ফার্স্ট স্টেপ চলবে। তাদের বন্ধুবান্ধবও তাদের গান শুনার জন্য ভার্সিটিতে অপেক্ষা করে মাঝে মাঝে।

---

খুব ভালোভাবেই তাদের প্র্যাকটিস চলছে। এক সপ্তাহ পর পলাশ স্যার তাদের নিয়ে প্রোগ্রামে উপস্থিত হলো। ৭টা ভার্সিটি থেকে সর্বমোট ২৩ জন পার্টিসিপ্যান্ট করেছে প্রোগ্রামে। তাদের মধ্য হতে ১১ জন বাছাই করা হয়েছে। অত্যন্ত খুশির বিষয়, আরিয়ান, রিয়াদ ও তন্নিমা ৩ জনেই বাছাইকৃত! আরিয়ান ২য়, তন্নিমা ৩য় এবং রিয়াদ ৮ম!

পলাশ স্যার সহ ভার্সিটির সব শিক্ষক আর শিক্ষার্থী অনেক খুশি।

---

দিন যত যাচ্ছে আরিয়ানের মনে ভয় তত বাড়ছে! জয়গান চ্যাম্পিয়ন হবে মাত্র একজন। এর উপর তন্নিমা তার তীব্র প্রতিযোগী হয়ে উঠেছে। নাহ, এভাবে হচ্ছে না! তন্নিমা তার আশেপাশে থাকলে সে এগোতে পারবে না! যে করেই হোক, তন্নিমাকে প্রতিযোগিতা থেকে সরাতে হবে।

ভার্সিটির ইন্টার্নাল প্রোগ্রাম হলে কোনো প্রব্লেম ছিলো না। কিন্তু এক্সটার্নাল প্রোগ্রামে তন্নিমাকে সহ্য হচ্ছে না আরিয়ানের। এটা নিয়ে খুব বড় স্বপ্ন তার! কিন্তু তন্নিমাকে সরাবে কিভাবে! মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আরিয়ানের! যখনই তন্নিমার কাছে যাচ্ছে তখনই কোন না কোনভাবে ঝগড়া লেগে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে তাকে সরানো যাবে না প্রতিযোগিতা থেকে। অন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু কি করা যায়!!!

---

দিনা তারাহুরো করে ক্লাসে ঢুকতে নিলেই কারো সাথে ধাক্কা খেতে যাচ্ছিলো। ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলো তন্নিমা সামনে দাঁড়িয়ে! খুব খুশি খুশি দেখাচ্ছে দিনাকে, তাই তন্নিমা ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

এতো খুশির কারণ কি, শুনি?

কই, কিছু না তো!

তন্নিমা সাথে সাথে সেদিকে উকি দিলো যেদিক থেকে দিনা দৌড়ে এসেছে। বারান্দায় একটা ছেলে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। এই মাত্রই হাত নামালো। হ্যাঁ, এটা সেই ছেলেটাই যার সাথে দিনাকে আরো একবার কথা বলতে দেখেছিলো তন্নিমা।

তন্নিমাকে উঁকি দিতে দেখেই ছেলেটি মাথা চুলকাতে-চুলকাতে চলে গেলো। এবার তন্নিমা বললো,

তুই বললি কিছু না, কিন্তু আমি যে অনেক কিছু দেখে ফেললাম! এবার কি হবে!!

তন্নিমা, চুপ। তুই কিছু দেখিস নি।

হিহিহিহি..... আচ্ছা আমি কিছু দেখিনি। এবার বল এটা কি তোমার উনি?

হুম।

তা কি এমন বললো, যার ফলে এতো খুশি হয়ে দৌড়ে আসছিলে?

তন্নিমা, ক্লাসে আছি। এদিকে আয় আমার সাথে।

দিনা তন্নিমাকে টেনে কমনরুমের দিকে নিয়ে বারান্দায় ধীর গতিতে হাঁটতে লাগলো।

এবার তো বল!

কি বলবো! ও তো কিছুই বলেনি। হিহিহি....

কিছু না বললে হাসলি কেন?

দিনা তন্নিমার সামনে একটা ঘড়ি দেখিয়ে বললো,

ওর ঘড়ি নিয়ে এসে পড়েছি।

হিহিহি..... এজন্যই বুঝি ভাইয়া কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো!

হুম।

নাম কি ভাইয়ার?

আবিদ হাসান।

বাহ! আবিদ এর শেষে দ আর হাসান এর শেষে ন! দি আর না! দিনা! ভালোই তো!

হিহিহি....

কবে থেকে চলছে এসব?

প্রায় দুবছর। তিন মাস পরে দুবছর কমপ্লিট হবে।

দু..... বছর! কিভাবে সূচনা হয়েছিল?

আমার মামাতো বোনের বিয়েতে দেখা হয়েছিলো। বর পক্ষ ছিলো। ভাইয়ার ফুপাতো ভাই।

বাবাহ! কতো দূর পৌঁছে গেছে! একদিকে কনের ফুপাতো বোন আর অন্যদিকে বরের ফুপাতো ভাই! তা শুধু শুধু ঘড়ি নিয়ে এলি কেন! এটা কি তোর কোনো কাজে লাগবে।

দিনা তন্নিমার সাথে কথা বলতে বলতে ঘড়িটা তার হাতে পড়ছে আর খুলছে...

ভালো করেছি নিয়ে এসেছি। একটা কথাও শুনে না আমার। আমার কাজে না লাগুক, ওর কাজেও লাগতে দিবো না।

দেখতে কিন্তু অনেক ভদ্রলোক মনে হয়।

হুম, অনেক ভদ্র। ওর পরিবারও অনেক ভালো। ওর মতো মানুষ আমি আর দেখিনি কখনো। যা বলবো তাই করে।

এখন না বললি একটা কথাও শুনে না তোর!

আরে মাঝে মাঝে এমন করে। অর্থাৎ এমনিতে সব ঠিক আছে, শুধু ওর নিজের প্রতি কেয়ার লেস!

ওহ! বুঝেছি। অনেকের চেয়েও অনেক ভালো।

হিহিহি... চল ক্লাসে যাই।

হুম।

---

তন্নিমা গেভ ক্লাসে দিনাকে সাথে নিয়ে কিছুক্ষণ লাইব্রেরিতে বই পড়েছে। পড়া শেষে বারান্দা দিয়ে আসার সময় চারজন মেয়ে এসে ঘিরে ধরেছে তাকে, গতকাল কি গান গেয়ে থার্ড হয়েছে তা শুনার জন্য।

থার্ড কথাটা শুনে তন্নিমার কেমন যেন লাগলো। আরিয়ান না থাকলে আজ হয়তো সে সেকেন্ড থাকতো! যাই হোক, ভাগ্যকে মেনে নিতে হবে। সামনে কি হয়, তা দেখার অপেক্ষায় রইলো তন্নিমা।

কিন্তু এখন তার গান গাইতে মোটেও ইচ্ছে করছে না। তন্নিমা বলেছে তাদের, লাস্ট ক্লাসের সময় তাদের প্র্যাকটিস চলবে, তখন যেন শুনে। কিন্তু মেয়েগুলো মানছে না। তাকে জোর করেই যাচ্ছে। হঠাৎ, পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো,

এতো করে বলছে একটা গান গেয়ে শুনাতে পারছো না কেন তাদের?
..চলবে

Story: #তোমার_কণ্ঠে_আমি🎶

এক প্রেম, এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, এক অনন্ত গল্প)

Part:4

✍️ Write: Fahad_Chowdhory

তন্নিমা পেছনে তাকিয়ে দেখলো আরিয়ানের ফ্রেন্ড রিসাদ! রিসাদ আবার বলতে লাগলো,
- একটা গানের রিকোয়েস্ট ই তো করছে। তাছাড়া তোমার বড় আপুরা রিকোয়েস্ট করছে, তাও না!
তন্নিমা জবাব দিলো,
- আচ্ছা গান গাইবো। তবে একটা শর্তে,
- কি?
- আরিয়ান ভাইয়াকে গিটার বাজাতে হবে।

রিসাদ হা করে রইলো! আর মনে মনে বললো, "আরিয়ান গিটার না বাজিয়ে তোমার মাথায় গিটার দিয়ে বাড়ি দিবে!"
তন্নিমা চুপ থাকতে দেখে রিসাদকে আবার বললো,
- আসেনি আজ আরিয়ান ভাইয়া?
- হ্যাঁ, এসেছে। কিন্তু গিটার ছাড়াই তো তুমি সুন্দর গাও।
- কিন্তু আমি যে এখন গিটার সহিত গাইবো...

মেয়েগুলো বললো,
- আচ্ছা আরিয়ান ভাইয়াকে আমরা বলবো গিটার বাজাতে।

আরিয়ান আবিদের সাথে রিসাদের বাইকে গেইটের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে ছিলো। মেয়েগুলো তাকে অনেক রিকুয়েষ্ট করে বললো। আরিয়ান খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে তন্নিমা ইচ্ছে করেই তেলে বেগুন ভাজছে। সেও রাজি হয়ে গেল।

তন্নিমাকে বাগানে নিয়ে আসা হলে তন্নিমা গান গাইলো আর আরিয়ান গিটার বাজালো। মেয়েগুলোর সাথে আরো অনেক ছেলে মেয়ে জড়ো হলো। তন্নিমার গান শেষ হতেই সবাই আরিয়ানকে গান শুনাতে বললো। এবার আরিয়ানের আবদার, তন্নিমাকে তার সাথে গান গাইতে হবে।

আরিয়ান কে জ্বালাতে পেরে এতোক্ষণ তন্নিমার আনন্দ হলেও এখন খুব রাগ হচ্ছে। সুযোগ বুঝে আরিয়ানও তাকে পাল্টা ধাওয়া দিচ্ছে! এখন তো না করারও সুযোগ নেই। তাকে গান গাইতেই হলো।

দুজনের একত্রে গান শুনে সবাই খুব খুশি হলো। আর তাদের খুব সুন্দর জুটির প্রশংসা করলো। বাইরে থেকে খুশি দেখালেও ভেতরটা দুজনেরই রাগে ফাটছে। যে যার মতো চলে গেলো।

আসার সময় দিনা আবিদের কাছে ঘড়িটা ফেরত দিলো।
- দিচ্ছো কেন? রেখে দাও।
- তোমার ঘড়ি নিয়ে আমি কি করবো!
- তাহলে পড়িয়ে দাও, হাতে নিবো না।
- তাহলে পায়ে পড়িয়ে দিবো?

আবিদ হেসে তার হাত বাড়িয়ে দিলো। দিনা ঘড়ি পড়িয়ে দিতেই আবিদ দিনার হাতে একটা র‍্যাপিংএ মোড়ানো প্যাকেট দিলো।
- এটা কি?
- হবে হয়তো কিছু!
- আমার এসবের কোন প্রয়োজন নেই। তুমি নিজের প্রতি কেয়ার কর। এটাই এনাফ!
- ফেরত দিবে?
- না। চাকরির ইন্টারভিউ রেজাল্ট কি হলো?

আবিদ নিশ্চুপ থাকায় দিনা তার উত্তর পেয়ে গেল। তাই আবার বললো,
- আমার কাছে কিন্তু বেশি সময় নেই। আমি কাউকে কিছু বলতেও পারছি না। আর এসব সইতেও পারছি না। যা করার তারাতাড়ি করো। না হলে খারাপের চেয়েও খারাপ কিছু হয়ে যাবে।

আবিদ কিছু বলতে পারলো না। দিনা তার আগেই দ্রুত পায়ে চলে গেলো সেখান থেকে। চাকরি না হলে এখানে তার তো কোন দোষ নেই! সে তো চেষ্টা করেই যাচ্ছে!

তন্নিমা সেখান থেকে ফিরে এসে বই পড়ছিলো। ক্লাস শুরু হতে আরো দশ মিনিট বাকি। শিক্ষার্থীরা দুএকজন ছাড়া সবাই বাইরে। দিনাকে মন খারাপ করে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে তন্নিমা প্রশ্ন করলো,
- কি হয়েছে তোর? এভাবে আছিস কেন?
-.....
- দিনা, কি হয়েছে। বল আমাকে....
- আবিদকে ছাড়া আমি অন্য কারো কাছে যাবো না, তন্নিমা। অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না।
- কেন ভাইয়ার ফ্যামিলি কি তোকে মেনে নিবে না?
- ওর ফ্যামিলিতে কোন প্রব্লেম নেই। কিন্তু আমার ফ্যামিলি কি মানবে! এদিকে বাসায় আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলা হচ্ছে।
- বাসায় বলেছিস ভাইয়ার কথা?
- না।
- না বললে তো বিয়ে ঠিক করবেই।
- কি বলবো আমি! কিছু বললেই তো জানতে চাইবে ছেলে কি করে, পরিবারের অবস্থা কেমন! তখন আমি কি জবাব দিবো! সব ফ্যামিলি চায় তাদের মেয়েকে তাদের চেয়েও উচ্চ ফ্যামিলিতে বিয়ে দিতে। আবিদের অবস্থা এতোটা ভালো না। প্রায় আমাদের চেয়েও একটু নিম্ন।
- বাসায় বলিস নি। অথচ আগে থেকেই জানা তোর ফ্যামিলি কি বলবে না বলবে! প্রেমে পড়ার আগে আবিদের অবস্থা জেনে নিলি না!
- অবস্থা, ধনসম্পদ, মর্যাদা, রূপ দেখে কেউ কাউকে ভালোবাসে না, তন্নিমা। মানুষের মনটা সবথেকে বেশি মূল্যবান।
- কে বলেছে! রূপ দেখেই তো মানুষ প্রেমে পড়ে। পরে না মনটা যাচাই করে। তেমন তোর ফ্যামিলিও এটাই করবে।
- এখন আমি কি করবো বল..!
- বাসা থেকে পালিয়ে বিয়ে কর।
- কি যা তা বলছিস! এটা আমি কখনোই করবো না। বাবা মায়ের একটাই মেয়ে আমি। আমাদের দু ভাইবোনকে নিয়ে, আমাদের স্বার্থের কথা ভেবে তাদের সকল চেষ্টা। তা ধংস করে দেই কিভাবে!
- তাহলে, ভুলে যা আবিদ ভাইয়াকে। আর যার সাথে বিয়ে ঠিক হচ্ছে তাকে বিয়ে করে নে।

দিনা অশ্রুসিক্ত নয়নে, অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
- এটাও সম্ভব না!

তন্নিমা মলিন হেসে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
- জীবন অনেক কঠিন। এমন কিছু সময় আসে যা মানুষকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে দোটানায় ফেলে দেয়। আর সেই চিন্তা করতে করতেই মানুষ তার জীবনটাকে শেষ করে দেয়। কিন্তু এই বোকাপ্রান, একটা বারের জন্যও চেষ্টা করে দেখে না সে সফলতা অর্জন করতে পারে কি না! আগে তুই বাসায় বল, তারপর দেখ কি হয়।
- সেই সাহস নেই আমার। অন্তত একটা চাকরি যোগাড় করতে পারলেও আমি একটু সাহস পেতাম। কবে থেকে বলছি একটা চাকরি যোগাড় করতে। একটা কথাও আমার শুনছে না। খুব বেশি কিছু চেয়েছি আমি তার কাছে! কেউ কি কোন বেকার ছেলের কাছে মেয়েকে বিয়ে দিবে! অবশ্য এতে তারও দোষ দেয়া যায় না, সে চেষ্টাও করছে অনেক।
- বুঝেছি খুব বেশি ভালোবেসে ফেলেছেন। আর খুব দামি ও কঠিন একটা জিনিস চেয়েছেন, যা বাংলাদেশে খুজে পাওয়া খুব এবং খুবই কঠিন। চাকরি বললেই আর খুজলেই পাওয়া যায় না। ভাগ্যেও থাকতে হবে। ভাইয়া কোন সাবজেক্ট নিয়ে অনার্স কমপ্লিট করেছে?
- একাউন্টিং ই।
- আমি যাবো তোর বাসায় আংকেল আন্টির সাথে কথা বলতে।
- কিহ!!
- কি আবার! নিবি না নাকি তোর বাসায়?
- আমি সেটা বলছি না! তুই কথা বলে তো আমার ঘুম হারাম করে দিলি! যদি বাবা মা রেগে আরো উলটাপালটা কিছু করে ফেলে!
- করলে করবে, ধরে নিবি তা তোর ভাগ্যে ছিল। চুপ করে বসে থাকলে তো আর কোন সমাধান খুঁজে পাবি না!
- কবে যাবি?
- আজ যাবো না। কালকে দেখি...
- আচ্ছা।


বাসায় ফিরে আরিয়ান তার গিটারকে সাবান দিয়ে ইচ্ছে মতো ঘষেমেজে ওয়াশ করতে লাগলো। রাগে তা গা ঝিমঝিম করছে। এই গিটার শেষ পর্যন্ত ওই মেয়ের গানে ব্যাবহৃত হলো!

আরিয়ানের মা ছেলের কান্ড দেখে অবাক!
- কি করছস এইসব! পাগল হইয়া গেছস! নষ্ট হইয়া যাইবো তো!
- হোক নষ্ট!
- আরে! ওঠ! গিটার দে। কার জিদ এর উপর ঝারতাছস?

আরিয়ান কোন জবাব না দিয়ে গিটার রেখে চলে গেলো। মা গিটার সুতি কাপড় দিয়ে মুছে যত্নসহকারে রেখে দিলেন।


পরদিন ভার্সিটি একটু আগেই চলে এলো আরিয়ান। তন্নিমা গেইট দিয়ে ঢুকতেই আরিয়ান তার সমানে হাঁটতে লাগলো। তন্নিমা একটু অবাকই হলো। তারপর জিজ্ঞেস করলো,
- কিছু বলবেন?
- হ্যাঁ, তোমার সাথে পাশাপাশি হাঁটতে পারি?

তন্নিমা এবার চরম পর্যায়ে অবাক!!! অত:পর জবাব দিলো,
- হাঁটছেন ই তো!
- হ্যাঁ, এটাই বলতে চাচ্ছি। আর কিছু না।
- আযব মানুষ!

তন্নিমা ক্লাস পর্যন্ত এসে ক্লাসে প্রবেশ করলে আরিয়ান বারান্দা দিয়ে তার ক্লাসের দিকে চলে গেলো।

গেভ ক্লাসে দিনার সাথে ক্যান্টিনে বসে কফি খাচ্ছিলো আর গল্প করছিলো। হঠাৎ আরিয়ানের ফ্রেন্ড রিসাদ এসে দিনাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
- দিনা, কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে আবিদ তোমাকে ডাকছে।

দিনা একটু অবাক হলো, কারণ আবিদ ওকে কখনো এভাবে কাউকে দিয়ে ডাকে না। তাও রিসাদ তার ফ্রেন্ড, হয়তো কোন প্র‍য়োজনে ডেকেছে। তাই ভেবে তন্নিমাকে বলে দিনা বেরিয়ে গেলো ক্যান্টিন থেকে।

রিসাদ তন্নিমাকে বললো,
- একটু বাইরে আসবে তন্নিমা? ক্যান্টিনের ওপাশটায়...
- কেন?
- তোমার সাথে একটু কথা ছিলো।

কয়েকদিন যাবত রিসাদের আচরণ ভালো লাগছে না তন্নিমার কাছে। কাল আবার ওই আপুদের সাথে জোট হয়ে গান গাইতে বললো। আজ কথা বলার জন্য সুযোগ খুজছে! দিনাকে হয়তো এজন্যই পাঠিয়ে দিয়েছে।

এতোসব ভেবে তন্নিমা জবাব দিলো,
- না, আমি এখন কোথাও যাবো না। যা বলার এখানেই বলুন।

রিসাদ একটু আশেপাশে তাকিয়ে তন্নিমার পাশেই বসে পড়লো।

চলবে...


👉👉অপেক্ষা করুন, পরের পর্ব খুব শীঘ্রই আসছে... 👈👈

TomarKonthoAmi








Address

Dhaka
Dhaka

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Mehera Mehera Islam posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share