09/08/2024
ধৈর্য্য ধরে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল
নিজের মধ্যে একটা realization আসলো। আমি একজন আন্দোলনকারী হিসেবে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে এই চিন্তা গুলো করেছি। আমরা কয়েকদিন যাবত কিছু জিনিস নিয়ে অনেক কথা বলছি। যেমন BNP বা অন্য রাজনৈতিক দলগুলো কেন লাফাচ্ছে। তারা কি করেছে। এমনকি এটাও দেখলাম আমাদের মধ্যে কিছু কিছু মানুষ খালেদা জিয়ার চেহারা নিয়েও কথা বলছেন। যদিও এটা সবাই করছি না।
আচ্ছা আমরা যারা বলছি যে আমরা এই দেশ স্বাধীন করেছি, তাই আমরা যেটা বলবো সেটাই হবে। এটাও কি একটা স্বৈরতান্ত্রিক চিন্তা ভাবনা নয়?
১৮ তারিখ রাস্তায় যারা গুলি খেয়েছি বা শহীদ হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সেই হিসেবে তো তাহলে তাদের কথায় সব হওয়ার কথা। ২/৩ তারিখে দেশের সাধারণ মানুষও আমাদের শিক্ষার্থীদের সাথে ছিলেন। তারা না আসলেও কিন্তু আমরা স্বাধীনতা পেতাম না। এবং আমি দেখেছি সেখানে সব দলের অংশগ্রহণ ছিল। আমরা শিক্ষার্থী আমরা অহংকারী হওয়ার শিক্ষা পাই নি।
আমি চিন্তা করে দেখলাম যে BNP, জামায়াত বা অন্যান্য রাজনৈতিক দল গুলো কি করেছে আর কেনই বা এত খুশি?
একটা কথা চিন্তা করুন তো, এই ১৬ টা বছর সব থেকে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কারা? BNP, জামায়াত এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো। আমরা দেখেছি আয়নাঘর, দেখেছি বিভিন্ন টর্চার সেল।
নিঃসন্দেহে আমরা যেটা করেছি সেটা অন্য কোন রাজনৈতিক দল করতে পারে নি। কেন পারে নি?
তারা যখনই কোন সভা সমাবেশ করেছে সেখানেও আমাদের মতো করে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হয়েছে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা সবাই জানি ৫ই মে ২০১৩ তে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সাথে কি করেছে। আমরা কিন্তু তখন কেউ কিছু বলি নি। কারন হিসেবে বলেছি রাজনীতি করলে এগুলো সহ্য করতে হবে। কেন? আমরা যদি তখন তাদের পাশে এইভাবে দাঁড়াতাম যে, কাউকে গুলি করা যাবে না আমার মনে হয় দেশটা আরো আগে স্বাধীন হতো।
তাদের কিভাবে নির্যাতন করা হয়েছে তার একটা উদাহরণ দেই, যখন আমাদের উপর চরম নির্যাতন করা হয় তখন তারা আমাদের পাশে থাকবেন বলে একটা বিবৃতি দেয় এরপর থেকেই তাদের গ্রেফতার করা হয় একের পর এক রিমান্ডে নিয়ে পাশবিক অত্যাচার চালানো হয় যার বিবরণ আমরা অনেকের বক্তব্যে পেয়েছি।
আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকেই অনেকে দেখেছি খালেদা জিয়ার চেহারা নিয়ে কথা বলছেন। আমরা কি এটার জন্য দেশ স্বাধীন করেছি? প্রথমত আমি বলবো মানুষ আল্লাহর তৈরি সবথেকে সুন্দর সৃষ্টি। আমরা কারো চেহারা নিয়ে কথা বলতে পারি না। সেটা একটা গুনাহের কাজ। দ্বিতীয়ত চিন্তা করুন একজন মানুষ এতদিন ধরে নির্যাতন সহ্য করেছেন। তার চোখের সামনে তার ছেলের লাশ দেখতে হয়েছে। তার আরেক ছেলেকে দেশে ঢুকতে দেয়া হয়নি। আমি যদি ভুল না করি ১২ টা বছর তিনি একটা বাড়ির মধ্যে ছিলেন। তাকে বাইরে বের হতে দেয়া হয়নি। সেই মানুষটির যে বেঁচে আছেন এটাই তো অনেক, তার চেহারা নিয়ে কিভাবে কথা বলি আমরা?
আমরা বলছি তারা কেন লাফাচ্ছে?
নিজেদের কথাই চিন্তা করি ১ মাস আমাদের সাথে যা করা হয়েছে সেটা আমরা সহ্য করতে পারি নি। আমি নিজে দেখেছি এক একজন গণভবনে ঢুকে কিভাবে পাগলের মত যা পাচ্ছে তাই নিয়ে যাচ্ছে। আর এরা ১৬ বছর ধরে অত্যাচারিত এবং কেউ কেউ বন্দী ছিল। কেউ তো নিজের বাড়িতেও থাকতে পারে নি। তাহলে তাদের খুশি হওয়াটা কি ভুল? তারা তো লাফাবেই। আমাদের উচিত সবার জায়গায় নিজেকে বসিয়ে চিন্তা করা।
আমরা যা চেয়েছি তাই কি পাবো?
আমরা চেয়েছি একটা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। কিন্তু বর্তমানে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে তার মধ্যে বেশিরভাগই BNP এর। যতদুর জানি সারজিসরা একটি দল গঠন করে নির্বাচনে আসবে। তাহলে নাহিদ এবং আসিফ অবশ্যই তাদের দলেরই হবে। সেক্ষেত্রে তো আমরা আর নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন পাচ্ছি না। আমরা শিক্ষার্থীরা কারো ক্ষমতায় যাবার মই না। ১৮ তারিখ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বসে থাকলে সব থেমে যেত। আমাদের বেশিরভাগই সরকারি চাকরির কথা চিন্তাও করে না তাও আমরা নেমেছিলাম কারন আমরা মনে করেছি তারাও আমাদের ভাই। কিন্তু সব কিছু হয়ে যাওয়ার পরে আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের সাথে কোন কথা নেই। আশা করবো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন হলেও প্রতিনিধিকে তারা ডাকবে।
আরেকটি বিষয় আওয়ামী লীগ এবং পুলিশ যেটা করেছে অবশ্যই ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। কিন্তু আমরা কে তাদের শাস্তি দেয়ার? দেশে আইন আছে। আমি জানি আমরা কখনোই তাদের মেনে নিতে পারবো না, কিন্তু তাদের বিচারের দায়িত্ব আইনের। আমাকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে, আমার শরীরেও আঘাত করা হয়েছে। আমিও চাই তাদের বিচার হোক কিন্তু সেটা আইন অনুযায়ী।
যাইহোক আমার একটাই কথা আমরা কাউকে ছোট করে কখনোই আগাতে পারবো না। সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হলে সবাইকেই লাগবে। শুধু শিক্ষার্থীদের দিয়ে যেমন দেশ চলে না, তেমনি শুধু রাজনীতিবিদ দিয়েও দেশ চলে না। সবাইকে সম্মান করতে না শিখলে এই দেশের উন্নতি কখনোই সম্ভব নয়।
কখনো রাজনীতির প্রতি আগ্রহ না থাকায় অনেক কিছু আমি জানতাম না এগুলো জেনে নিজের realization থেকে পোস্ট করা। কারো ভালো না ই লাগতে পারে। আমি যদি কাউকে অসম্মান করে থাকি এই কয়েকদিনে তাদের কাছে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। ক্ষমা করে দিবেন। যাদের উপরে এই ১৬ বছরে নির্যাতন চালানো হয়েছে তাদের প্রতি আমার সমবেদনা এবং যারা নিহত হয়েছেন বা এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন তাদের সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
আবারও সবাইকে বলছি আসুন সবাইকে সম্মান করে একসাথে দেশটাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাই। ধন্যবাদ সবাইকে।