দ্বীন প্রতিদিন - Deen Pratidin

দ্বীন প্রতিদিন - Deen Pratidin Islamic talk show with Md Delwar Hossain. Deen Pratideen is an Islamic cultural platform. This platform is open to everyone in the Islamic cultural arena.

30/09/2025

এই লাশের খাটিয়ায় নিয়ে গিয়ে কতজনকে দাফন করেছি, তার কোনো হিসেব নাই। একদিন আমাকেও নিয়ে গিয়ে দাফন করে দেবে। কবরের প্রথম রাতটি কেমন হবে😭😭

28/09/2025

শিক্ষকরা সচেতন না হলে আমাদের বাচ্চাদের শিক্ষা সফরে নেন কেন? বিদেশ বিভূঁইয়ে আমাদের বাচ্চারা হারিয়ে গেলে কোথায় যাবে? যদি এই সমস্ত বাচ্চারা কোনো দালালের খপ্পরে পড়ে! BAF SHAHEEN স্কুলের এই বোনটি বেইজিং এ হারিয়ে যায়। তারা ১৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ৩ দিনের কোনও একটা প্রগ্রামে বেইজিং এ গিয়েছিল। সে কিছু কিনতে গেলে বাকিদের থেকে হারিয়ে যায়। আন্তর্জাতিক কোনও প্রোগ্রামে আসলে শিক্ষকদের আরও যত্নবান হওয়া উচিৎ।

©️ ভিডিওটি চীনে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে কাজ করা এক ফেসবুক হোল্ডারের কাছ থেকে নেওয়া। ভিডিওটি এক চাইনিজের ধারণ করা।

22/09/2025

হামদ্ - তুমি রহমান তুমি মেহেরবান
কথা ও সুর: তাফাজ্জল হোসাইন খান

তুমি রহমান তুমি মেহেরবান
অন্ধ গাহে না শুধু তোমারি গুনগান
বুঝেও বুঝে না তব শান ॥

জনম জনম যদি গাহি
তোমারই মহিমা গাওয়া
শেষ হবে নাহি
ভরেও ভরে না যেন
সাহারা এ প্রাণ ॥

তোমারই করুণা ঘেরা সারা দুনিয়া
সে কথা ভাবে না শুধু বধির হিয়া ॥

অশেষ অসীম অনুপম
হৃদয় সুষমা তুমি
তুমি প্রিয়তম
প্রেমেরও আকাশে তুমি
চির মহীয়ান ॥

কখনো তোমারে যদি ভুলি
হেদায়েতের আলো জ্বেলে
নিও কাছে তুলি
ঠাঁই দিও প্রিয়তম
ওগো দয়াবান ॥

21/09/2025

এই কাদার বন্যা দেখলে পম্পেই নগরীর ইতিহাস স্মরণে আসে। পম্পেই নগরীর ইতিহাস যেন এটি একটি আপডেট ভার্সন কর্দমাক্ত বন্যা। এই মাটি-কাদার শাস্তি দিয়ে আল্লাহতা'লা এই রকম একটি নগরীকে ঢেকে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। আসুন পম্পেই নগরীর ইতিহাস জেনে একটু শিক্ষা নিই👇

যৌনতার আগুনে ধ্বংস হওয়া অভিশপ্ত পম্পেই নগরীর ইতিহাস👇

ধ্বংস হয়ে যাওয়া পম্পেই নগরীর নামটি অনেকেরই জানা! এটি এমন এক নগরী, যেটি ধ্বংস হওয়ার সময় সেখানকার মানুষ চোখের পলক ফেলার সময়টুকু পায়নি। মুহূর্তেই মানুষগুলো ভস্মে পরিণত হয়েছিল। অপরাধ ছিল অবাধ যৌনাচার। জেনে নিন কীভাবে ধ্বংস হল এ নগরীটি-

ইতালির কাম্পানিয়া অঞ্চলের নেপলসের (নাপোলি) কাছে যে আগ্নেয়গিরি রয়েছে তার পাদদেশে ‘পম্পেই’ নামক ছোট্ট এ নগরীটি অবস্থিত। পাশেই রয়েছে নেপল উপসাগর। এটি হাজার বছরের পুরনো একটি শহর। খৃস্টপূর্ব ৬-৭ শতাব্দীর দিকে ইতালীর তৎকালীন রাজা ওসকান কর্তৃক এই শহরের গোড়াপত্তন হয়। এরপর ইউরোপের বিভিন্ন যুদ্ধের মাধ্যমে খৃস্টপূর্ব ৮০ এর দিকে এই শহরটি রোমান সাম্রাজ্যের দ্বারা অধিকৃত হয় এবং সেখানে গড়ে উঠে রোমান সাম্রাজ্যের অন্যতম বাণিজ্য বন্দর। সেই থেকে রোমানরা সেখানে বসবাস শুরু করে।

অভাব নামক শব্দটি হয়ত তাদের কাছে একদমই অপরিচিত ছিল। প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যের এক অপার লীলাভূমি ছিল এ নগরটি। চারপাশে পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য আর নান্দনিক দৃশ্যের হাতছানি। সে সময়কার পৃথিবীর সব থেকে সুখি নগরী ছিল এটি। কিন্তু এই নগরীর মানুষগুলো ছিল অত্যন্ত বর্বর, অসভ্য ও নির্মম। যৌনতা আর সমকামিতা ছিল তাদের জঘন্য পেশা। তারা যে আগ্নেয়গিরির পাদদেশে বসবাস করত তার আগুন ও ছাই নগরীটিকে এক মুহূর্তে ধ্বংস করে দেয়। সেখানকার প্রতিটি মানুষ, পশুপাখিসহ সকল জীবন্ত প্রাণের স্পন্দন চোখের পলকে ভষ্মীভূত হয়ে যায়। অনেকে মনে করেন তাদের এসব পাপের কারণেই তারা ধ্বংস হয়েছে।

রোমান মহাকবি পাবলিয়াস বলেছিলেন, ‘মার্শেলাস, আমি গেয়ে যাই সে কাহিনী… সেখানে ভিসুভিয়াস প্রচণ্ড আক্রোশে নিক্ষেপ করছে আগুন… ভয়াবহ সে আগুন। কিন্তু তা সত্যি। ভাবীকালে একদিন যখন আবার দেখা দেবে শ্যামল শস্যক্ষেত্র এবং ধ্বংসস্তূপ ছেয়ে যাবে সবুজের সমারোহ। তখন কি লোকে বিশ্বাস করবে এর নীচে সমাহিত আছে সুন্দর নগরগুলো, তার অধিবাসীরা এবং তাদের পূর্বপুরুষদের জনপদগুলো বরণ করছে একই ভাগ্য’। রোমান মহাকবি পাবলিয়াস অর্থাৎ প্যাপিলিয়াস স্ট্যাটিয়াস আজ থেকে প্রায় দু’হাজার বছর আগে এটি লিখেছিলেন, যখন আগ্নেয়গিরি ভিসুভিয়াস থেকে নিঃসারিত গলিত লাভা, ছাই, কাদা আর পাথরের নীচে চাপ পড়ে গিয়েছিল দু’টি সমৃদ্ধশালী নগর পম্পেই আর হারকুলেনিয়াম। প্রায় দু’হাজার বছর পরে আজ তার জবাব মিলেছে এবং সবাই বিশ্বাস করছে। কারণ প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে সেই দু’টি প্রাচীন শহর আবার তাদের কবর থেকে উঠে আসছে। আর বিংশ শতাব্দীর মানুষ অবাক বিস্ময়ে দেখছে খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে কেমন ছিল সেই শহর। কেমন ছিল সেই অধিবাসীদের জীবনযাত্রা।

গত ২ শ’ বছরের খননকার্যের ফলে পম্পেই শহরের অধিকাংশ উদ্ধার করা হয়েছে। ফলে আবার সূর্যালোক দেখতে পাচ্ছে তখনকার রাস্তাঘাট, দোকানপাট, পান্থশালা, কর্মশালা, দালানকোঠা, যেখান থেকে লোকজন পালিয়েছিল প্রাণের ভয়ে আর যারা পালাতে পারেনি বরণ করেছিল শোচনীয় মৃত্যু তাদেরও। প্রায় ২৩ ফুট লাভার নীচে লুক্কায়িত ছিল পম্পেই। কিন্তু হারকুলেনিয়ামকে উদ্ধার করা ছিল আরো শক্ত কাজ। কারণ সেই শহরটি চাপা পড়েছিল পঞ্চাশ থেকে ষাট ফুট লাভার নীচে। সেই লাভা পরবর্তীকালে পাথরের মতো শক্ত হয়ে জমাট বেঁধে গিয়েছিল।

ভিসুভিয়াসের ভয়ঙ্কর অগ্নি উদ্গীরণ থামলে যে দলটি প্রথম খনন করতে এসেছিল, তারা ছিল পম্পেইর সেই সব অধিবাসী, যারা প্রাণ নিয়ে পালাতে পেরেছিল। তারা যতটুকু পেরেছিল খনন করে তাদের কিছু কিছু জিনিসপত্র উদ্ধার করেছিল। কোন কোনস্থানে এখনো তাদের তৈরি সুড়ঙ্গগুলো দেখা যায়। কিন্তু এমন একটি সময় এল, যখন লোকে ভুলে গেল পম্পেই আর হারকুলেনিয়ামের কথা। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিক্রান্ত হল, মুছে গেল মানুষের স্মৃতি থেকে পম্পেই আর হারকুলেনিয়াম, যা ছিল একদিন সুন্দর, সুসজ্জিত ধনজনে পূর্ণ। সেই রোমান মহাকবির ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে ভিসুভিয়াসের সানুদেশ সুশোভিত হয়ে উঠল শ্যামল শস্যক্ষেত্র আর বৃক্ষরাজিতে।

খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্য বর্বর জাতিদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। শুরু হয় তার ভাঙন। রেনেসাঁর যুগে ইতালিয়ানরা আবার আবিষ্কার করল তাদের গ্রিক ও রোমক উত্তরাধিকার। প্রাচীন পাণ্ডুলিপিগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ে জানতে পারল গলিত লাভা, ভস্ম এবং পাথরের নীচে চাপা পড়া তাদের প্রাচীন দু’টি ঐশ্বর্যশালী নগরীর কথা। যদিও তাদের প্রকৃত অবস্থান ছিল রহস্যাবৃত; তবুও গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল ভিসুভিয়াসের পাদদেশে আছে গুপ্তধনের ভাণ্ডার।

১৭০৯ সালের আগে এ শহর দু’টির নিদ্রা ভাঙল না। যদিও ভাঙল, তাও দৈবক্রমে। কালক্রমে হারকুলেনিয়ামের সমাধি স্থানের উপর এলোমেলোভাবে গড়ে উঠেছিল ‘রোসনা’ নামক একটি শহর। সেই শহর কূপ খননের সময় একজন শ্রমিক আঘাত করেছিল প্রাচীন থিয়েটারের উপরের আসনগুলোতে। ফলে বেরিয়ে এল সুন্দর দুর্লভ মার্বেল পাথরের নমুনা। সে সময় ইতালি ছিল অস্ট্রিয়ানদের দখলে। অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনীতে অফিসার হিসাবে কাজ করতেন একজন অস্ট্রিয়ান যুবরাজ। তিনি আদেশ করলেন সুড়ঙ্গ তৈরি করতে। কোন প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারের উদ্দেশ্য তার ছিল না। তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল, তার নির্মীয়মাণ বাসভবনের জন্য মার্বেল পাথর সংগ্রহ করা। সেই অজ্ঞ যুবরাজ জানতে পারলেন না যে, তিনি কী পেয়েছেন। তিনি বুঝতে পারেননি সেখানে সমাহিত আছে পৃথিবীর ইতিহাসের এক অপূর্ব উপাদান মাটির নীচে সমাহিত একটি প্রাচীন শহর। অবশেষে ১৭৩৮ সালে থিয়েটার এবং শহরের অবস্থান শনাক্ত হয়। সে সময় নেপলসের রাজা তৃতীয় চার্লসের আদেশে খননকার্য আরম্ভ হয়েছিল। একটি উৎকীর্ণ শিলালিপিতে প্রমাণিত হয় যে, সেখানেই মাটির নীচে রয়েছে মৃত শহর হারকুলেনিয়াম। তিনিও কিছু প্রাচীন বস্তু সংগ্রহ করা ছাড়া তেমন কোন আগ্রহ দেখাননি। তারও কয়েক বছর পর ঘটনাক্রমে প্রাপ্ত নিদর্শনের সূত্র ধরে পম্পেইয়ের খননকার্য আরম্ভ হয়।

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত খননকার্য চলে এসেছে নিরবচ্ছিন্নভাবে। যদিও তা ধীরে ধীরে চলেছে, তবু তার ফল ভালই হয়েছে। বর্তমানে পম্পেইতে খননকার্য প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। কিন্তু সেই তুলনায় হারকুলেনিয়ামের কাজ পেছনে পড়ে আছে। তবুও যেটুকু আবিষ্কৃত হয়েছে তাই প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ইতিহাসে বিস্ময়কর। কারণ এখানকার মত পৃথিবীর অন্য কোথাও খননকার্যে সেই প্রাচীনকালের সভ্যতা তৎকালীন মানুষের দৈনন্দিন জীবনধারা এমনভাবে মূর্ত হয়ে ওঠেনি। এই দুটো শহরে প্রবেশ করলে মনে হয়, এখানে যেন সেই দু’হাজার বছর আগেকার জীবনধারার অবলুপ্তি ঘটেনি বরং তা কোন বিপর্যয়ের মুহূর্তে হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে গেছে। সে জীবনধারা যেন হঠাৎ বন্দী হয়ে গেছে সময়ের ফ্রেমে।

সেখানে প্রবেশ করলে মুহূর্তেই পরিচয় ঘটে দু’হাজার বছর আগের জীবনধারার সাথে। পম্পেই এবং হারকুলেনিয়ামের সেই রাস্তাগুলো, বাসভবন এবং সুদৃশ্য বিপণিমালা, সরাইখানা ও ব্যবসা কেন্দ্রগুলো আবার লোকচক্ষুর গোচর হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। সেখানকার খাবার ঘর, তার আসবাবপত্র, শোবার ঘর এবং বিছানাপত্র, বিছানার পাশে ছোট্ট টেবিল, রান্না করার উনুন, তার উপর বসানো রান্নার পত্র, পান্থ নিবাস এবং তার দেয়ালে আগন্তুকদের হাতে লেখা মন্তব্য সবই নীরব অতীতের সাক্ষ্য দেয়। শুধু তাই নয়, পম্পেইর দেয়ালগাত্রে এখনো জেগে আছে তখনকার নির্বাচনের খবর, বালক-বালিকাদের বিদ্যাচর্চার পরিচয় এবং পেশাদার যোদ্ধাদের মানুষ অথবা জন্তুর সাথে লড়াইয়ের ঘোষণা। মোটেও অসুবিধা হয়নি, এসব লিপির পাঠোদ্ধার করতে। কারণ তা সবই ছিল ল্যাটিন ভাষায়। আর ধনী লোকদের বাড়ির প্রাচীর গাত্রে অঙ্কিত আছে তখনকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ছবি।

খ্রিষ্টপূর্ব ৮০ অব্দে রোমান সেনাপতি সুল্লা পম্পেই জয় করেন। কালক্রমে রোমানরা উন্নততর গ্রিক সংস্কৃতিকে আয়ত্ত করে নেয়। নেপলস উপসাগরের উপকূলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে বিত্তশালী রোমানরা পম্পেই, হারকুলেনিয়াম, মাইসেনাম প্রভৃতি স্থানে অবকাশ যাপনের জন্য অথবা স্থায়ীভাবে বাস করার জন্য সুন্দর ভবন তৈরি করতে থাকে। ভিসুভিয়াসের পাঁচ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে নির্মিত হয়েছিল পম্পেই। তার উত্তর-পশ্চিমে পাঁচ মাইলেরও কম দূরত্বে অবস্থান করছিল হারকুলেনিয়াম। পম্পেই আয়তনের দিক দিয়ে হারকুলেনিয়ামের চেয়ে অনেক বড় ছিল। বিভিন্ন মত অনুযায়ী পম্পেইর লোকসংখ্যা ছিল ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজারের মধ্যে। এই নগরীর বিশাল ক্রীড়াঙ্গনে যেখানে পেশাদার যোদ্ধাদের যুদ্ধ অথবা প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হত সেখানে ২০ হাজার লোকের আসনের ব্যবস্থা ছিল। মনে হয় ক্রীড়ার সময় বহু লোক শহরের বাইরে থেকে আসত। এ জন্যই বোধহয় এত হোটেল, সরাইখানার সংখ্যাধিক্য দেখা যায় এই শহরে।

সে সময় বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ পম্পেই শহরে আসত বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে। এটি ব্যবহার হত বাণিজ্যিক বন্দর হিসাবে। শহরটির এক পাশে রয়েছে সমুদ্র, অপর দিকে সবুজ ভেসুভিয়াস পাহাড় ও বিশাল আকাশ। নগরীটি দু’ভাগে বিভক্ত ছিল যার একটি নীচু স্থান, যার নাম পম্পেই এবং অপরটি উঁচু স্থান, যার নাম হারকুলেনিয়াম। তৎকালীন সময়ের রোমের বিশিষ্ট নাগরিকদের জন্য একটি সমৃদ্ধ আশ্রয়স্থল ছিল এ নগরীটি। মার্জিত ঘর এবং বিস্তৃত পাকা রাস্তা, অবাধ যৌনতা, পতিতালয় এসব কোন কিছুর অভাব ছিল না এ নগরীতে। প্রাচীন গ্রিক, রোমসহ বিভিন্ন দেশের নাবিকদের অবাধ চলাচল ছিল এই নগরীতে। বাণিজ্যিক টুরিস্টদের জন্য সেখানে গড়ে উঠেছিল অত্যাধুনিক দৃষ্টিনন্দন অট্টালিকা, প্রাসাদ, বাজার ইত্যাদি। শহরটি ধীরে ধীরে প্রাচীন কালের আধুনিক সভ্যতার সকল ধরনের চিত্তরঞ্জনের জন্য প্রাণবন্ত একটি শহরে পরিণত হয়ে উঠে।

তৎকালীন অভিজাত মানুষগুলোর আমোদপ্রমোদের কেন্দ্রস্থল ছিল এই নগরী। রোমের সব সম্পদশালী মানুষের অবসর কাটানোর শহর ছিল এই পম্পেই। কিন্তু প্রকৃতির এত সম্পদ পাওয়ার পরও ধীরে ধীরে প্রকৃতির নিদর্শনকে অস্বীকার করে পাপাচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে পম্পেইবাসী। এরা যৌনতায় এতই অন্ধ ছিল যে, বাড়ির গৃহকর্তা নিজের ছেলে-মেয়েদের দিয়ে অতিথির যৌন বিনোদনের ব্যবস্থা করতে দ্বিধা করত না। এমনকি পশু-পাখি দিয়েও নিজেদের যৌন বিকৃতির পিপাসা মেটাতো। বিভিন্ন নগ্ন মূর্তিকে তারা ‘ফারটিলিটি গড’ হিসাবে বিশ্বাস করত। যৌনক্ষম নারী-পুরুষরা এই সব ‘ফারটিলিটি গড’-এর মূর্তি ক্রয় করতো এবং মূর্তির সাথে যৌনকর্মের মাধ্যমে দেবতার পূজা করত। তারা খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারী ছিল। কিন্তু তারা ধীরে ধীরে খ্রিস্টান ধর্ম থেকেও বিচ্যুত হতে থাকে। ফলে সকল ধর্মযাজক নগরী ছেড়ে চলে যায়।

সৌন্দর্যমণ্ডিত প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত ছিল হারকুলেনিয়াম। গমনাগমন পথে ক্ষণিক থামবার স্থানও ছিল এটা। আর পম্পেইর অবস্থান ছিল নাব্য সারমো নদীর তীরে। সেখানে ছিল পোতাশ্রয়ের বিশেষ সুবিধা। তা ছাড়াও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের সংযোগ ছিল। সুতরাং পম্পেই ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য নগরী। সেই তুলনায় হারকুলেনিয়াম ছিল ছোট এবং গুরুত্বপূর্ণ। পম্পেই এবং হারকুলেনিয়ামের রাস্তা দিয়ে এখন যদি আমরা হেঁটে যাই, তাহলে মনে হবে আমরা যেন সেই দু’হাজার বছরের আগের শহরে ফিরে গেছি। তখনকার অধিবাসীদের জীবনযাত্রা প্রত্যক্ষ দেখতে পাচ্ছি। কারণ খননকার্য অত্যন্ত সাবধানতার সাথে করা হয়েছে। প্রত্যেকটি জিনিস যেখানে ছিল তা সেখানে রাখার জন্য কঠোর প্রয়াস চালানো হয়েছে। তা সম্ভব হয়েছে আর একটি কারণে। সেই ভয়ঙ্কর দিনে যে সর্বগ্রাসী লাভাস্রোত নেমে এসেছিল ভিসুভিয়াসের জ্বালামুখ থেকে। তার বেগ ছিল বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম। কোথাও কোথাও প্রচণ্ড লাভাস্রোতের ফলে ধসে গেছে ঘরের দেয়াল ও থামগুলো, ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে আসবাবপত্র এবং ভেসে গেছে মূর্তিগুলো। আবার কোথাও কোথাও লাভা জমে স্ফীত হয়ে উঠেছে, ধীরে ধীরে গ্রাস করেছে বাড়িঘর। ফলে জিনিসপত্র থেকে গেছে নিজ নিজ স্থানে, স্থানচ্যুত হয়নি। এমনকি রান্নাঘরের চুল্লির উপরে বসানো পাত্রটিও রয়েছে স্থির। পম্পেই এবং হারকুলেনিয়ামের খননকারীরা সেই ভয়ঙ্কর লাভার স্রোত, গন্ধক ধূম, ছাই ভস্ম পাথর বৃষ্টিতে লোকজন যে কি অসহায় আর শোচনীয় অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তা সাজাতে পেরেছেন।

পম্পেইতে দেখা যাবে একটি ঘরের কোণায় বসে আছে একটি লোক। তার নাক এবং মুখের সামনে ধরা আছে তার দু’টি হাত। বোধহয় বিষাক্ত গ্যাস থেকে বাঁচতে চেষ্টা করেছিল। এক পিতা হামাগুড়ি দিয়ে এগোতে চেষ্টা করেছে তার ছেলেমেয়েদের কাছে।

ভাগ্যবান বলতে হবে হারকুলেনিয়ামের অধিবাসীদের। তারা পালাতে পেরেছিল। যে অল্প কয়েকজন পালাতে পারেনি, উত্তপ্ত লাভা তাদের ধ্বংস করে দিয়েছে। কিন্তু অস্থিগুলো অক্ষুণ্ন রয়ে গেছে। পালানোর সময় কোন কিছু নেয়ার মত সময় তাদের ছিল না। মূল্যবান জিনিসপত্র, অলঙ্কারাদি, টাকা-পয়সা রোপ্য নির্মিত বাসনপত্র, দলীলপত্র সব ফেলে রেখে তাদের পালাতে হয়েছে। যারা পালাতে দেরি করেছে, তারাই বরণ করেছে শোচনীয় মৃত্যু।

সব কাজকর্মে হঠাৎ এক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। তখন মধ্যাহ্নভোজের সময় হয়ে এসেছিল। এ অত্যন্ত আশ্চর্যজনক যে, শত শত বছর পরও পাওয়া গেল এক টুকরো রুটির ধ্বংসাবশেষ। মনে হয় সেই প্রলয়ঙ্করী ধ্বংসযজ্ঞের সময় কেউ রুটি ছিঁড়ে খাচ্ছিল। অনেক বাড়ির খাবার টেবিলে তখন দেয়া হয়েছিল মধ্যাহ্নভোজের আহার দ্রব্য। বাজারের সম্মুখে আধা প্যাক করা অবস্থায় পাওয়া গেল চমৎকার কতগুলো কাঁচ দ্রব্য। ডাইওনিসিয়াসের মূর্তিটি এখনো পড়ে আছে এক ঝালাই করার দোকানে মেরামতের অপেক্ষায়। রুটি তৈরির কারখানায় রুটি সেঁকার ব্রোঞ্জের পাত্রগুলো এখনো অবস্থান করছে উনুনের উপর। আর বাইরে গম ভাঙার কলের সাথে জুড়ে আছে কতগুলো গাধার হাড়। মনে হয় সেই বিপর্যয়ের সময় গাধাগুলো গম ভাঙানোর কল ঘোরাচ্ছিল।

একটি দোকানে পাওয়া গেল একটি ছোট বালকের কঙ্কাল। কঙ্কালটি একটি সুন্দর বিছানায় শায়িত। কাছেই রয়েছে তার মধ্যাহ্নভোজের জন্য প্রস্তুত একটি মুরগির দেহাবশেষ। প্রশ্ন জাগে বালকটিকে এমনি করে কেন সবাই ফেলে চলে গেল? সে কি অসুস্থ হয়ে একেবারে শয্যাশায়ী ছিল, তাই সে পালাতে পারেনি? কিংবা তার পিতা-মাতা কি সে সময় বাইরে ছিল তাই তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি? ভিসুভিয়াসের জ্বালামুখ নিঃসৃত সেই ভয়ঙ্কর লাভা যখন স্ফীত হয়ে তাকে গ্রাস করছিল, তখন তাকে সাহায্য করতে কেউ এগিয়ে আসবে, হয়তো ব্যাকুল হয়ে এই প্রত্যাশা করছিল। কিংবা সে হয়তো আকুল চিৎকার করছিল কিন্তু হায়, তার সাহায্যের জন্য কেউ হয়তো এগিয়ে আসেনি।

আর একটি বাড়ির ছোট্ট কামরায় দেখা যায় একটি লোকের কঙ্কাল। কঙ্কালটির অবস্থান দেখে মনে হয় লোকটি বিছানায় মুখ ডেকে শুয়ে পড়েছিল। হয়তো আগ্নেয়গিরির বিষাক্ত গ্যাস থেকে বাঁচার জন্য অথবা জীবনের সব আশা ভরসা ছেড়ে দিয়ে অসহায়ভাবে অপেক্ষা করছিল অগ্রসরমান লাভার শেষ ঢেউটির জন্য যে ঢেউ তাকে তলিয়ে দেবে মৃত্যুর অতল তলে। কারণ ঘরটি ছিল তালাবদ্ধ। তাই তার পালানোর উপায় ছিল না।

আরো দেখা যায়, একটি দোলনায় একটি ছোট্ট শিশুর কতগুলো হাড়। হয়তো তার মাতা-পিতা তাদের নয়নমণি ছোট্ট শিশুটিকে নিয়ে যেতে পারেনি। সেই ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের যে একমাত্র চাক্ষুস বিবরণ ঐতিহাসিকরা পেয়েছেন তা লিখেছিলেন ছোট প্লিনী। তিনি ছিলেন মাইসেনাম বন্দরে অবস্থানরত রোমান নৌবহরের অধিনায়ক বড় প্লিনীর ভাগ্নে। বড় প্লিনী তার নৌবহরে একটি অংশ নিয়ে উদ্ধারকার্য চালানোর সময় গন্ধক ধূমে শ্বাস-প্রশ্বাস রুদ্ধ হয়ে মারা যান। ছোট প্লিনী তখন অবস্থান করছিলেন পম্পেই থেকে বেশ দূরে মাইসেনাম বন্দরে। সে বন্দরও ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তার বিবরণও ভয়াবহ। কিন্তু পম্পেই এবং হারকুলেনিয়ামের অধিবাসীরা যে মহাপ্রলয়ের অভিজ্ঞতা লাভ করছিল তার স্বাক্ষর পাওয়া যায় এ দুটো শহরের রাস্তায়, বাড়িঘরে, দালানকোঠায়। সেই সব নিদর্শনগুলো পর্যবেক্ষণ করে ভয়ঙ্কর ধ্বংসলীলার যে চিত্র পাওয়া গেছে তা থেকে আমরা জানতে পারি যে, কী ভয়ঙ্কর ছিল সেই দিন, কী প্রলয়ঙ্করী ঘটনা সেদিন ঘটেছিল। কী ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিল সেই মুহূর্তটি। আল্লাহর শক্তির কাছে মানুষ যে কত বড় অসহায় তার বাস্তবতা সেদিন স্পষ্ট হয়েছিল। কী নির্মম, কী করুণ, কী অসহায়ভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছিল তা ভাষায় প্রকাশ ক্ষমতা কারো নেই।

সে দিন ছিল ৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ আগস্ট। নির্মেঘ আকাশের নীচে নেপলস উপসগারের জল নীল আর শান্ত। ভিসুভিয়াসের গাত্র দেশ ছেয়ে আছে সবুজ জলপাই গাছ। হারকুলেনিয়াম থেকে সাত মাইল দূরে ভিসুভিয়াসের অপর পাশে ছিল পম্পেই। কিছু দিন উভয় শহরেই অনুভূত হচ্ছিল মৃদু ভূমিকম্প। অবশ্য এ অঞ্চলে এটা নতুন নয়। ভিসুভিয়াসের জ্বালামুখ থেকে এত বেশি ধূম নির্গত হচ্ছিল যে, স্মরণকালের মধ্যে এমনটি আর দেখা যায়নি। সে দিন হারকুলেনিয়াম ছিল উৎসবমুখর। হাটবাজার লোকজনে পূর্ণ। শহরের বড় তোরণের বাইরে দু’পাশে ফেরিওয়ালাদের সারি। তারা হরেকরকম সওদা বিক্রি করছে। জাদুকর, গায়ক, বাজিকর প্রভৃতি বৃত্তিজীবী লোকজন পথচারীদের আনন্দ দিচ্ছিল প্রচুর আর কামিয়ে নিচ্ছিল দু’পয়সা। পালাস্রোতে ক্রীড়া চলছে। ঘোষণা করা হয়েছে বিকেলে হবে নাট্যানুষ্ঠান। বিচারালয়ের সে দিন ছুটি। সারা শহরে জীবনের চাঞ্চল্য। হঠাৎ এক প্রচ- বিস্ফোরণে আকাশ-বাতাস কেঁপে উঠল। ভিসুভিয়াসের দিক থেকে এক কর্ণবিদারী শব্দে কেঁপে উঠল সকল চরাচর। মাটি যেন স্ফীত হচ্ছে এবং কাঁপছে। সকলে চমকে তাকাল ভিসুভিয়াসের দিকে। সভয়ে দেখল ভিসুভিয়াসের উপরিভাগ বিস্ফোরণে উড়ে গেছে। আর দেখা গেল দিকে দিকে আগুনের শিখা। লোকজন ভয়ে চিৎকার করে উঠল। তারপর ভিসুভিয়াসের ভয়াবহ জ্বালামুখ থেকে প্রচণ্ড গর্জনে ছত্রাকারে বেরিয়ে আসছে তরঙ্গায়িত ধুম্রকুণ্ডলী আর তার সাথে নির্গত হচ্ছে কাদা আর পাথর। একটার পর একটা ঘন ঘন শব্দ হচ্ছে। আর কালো রঙের থামাকৃতির পাথরের বিশাল খ-গুলো ওপরে উঠে ভেঙেচুরে আবার স্তূপের পর স্তূপ হয়ে নীচে পড়ছে। অচিরেই আকাশ কালো হয়ে উঠল। সূর্য ঢাকা পড়ল ধূম্র মেঘের আড়ালে। মধ্য দিনেই নেমে এল রাত্রির নিকষ কালো আঁধার। গন্ধকের ধূমে লোকের শ্বাস-প্রশ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসতে লাগল। হঠাৎ দেখা গেল কোত্থেকে কেউ জানে না তীব্র বেগে পড়তে লাগল বৃষ্টির ফোঁটা। তার সাথে এল পাথর আর মাটি। মাঝে মাঝে দেখা যায় আগুনের ঝলকানি। আকাশ থেকে পাখিগুলো মরে অথবা অসাড় হয়ে মাটিতে পড়তে লাগল। সমুদ্র হল উত্তাল। উদ্দাম ঢেউগুলো তীরে আঁছড়ে ফেলতে লাগল মরা মাছগুলো। উত্তপ্ত কাদার সমুদ্র ৩০ থেকে ৫০ ফুট উঁচু হয়ে এগিয়ে এল হারকুলেনিয়ামকে গ্রাস করতে। সেই লাভার স্রোতে তলিয়ে যেতে লাগল, হাটবাজার, দোকানপাট, মন্দির ভূগর্ভস্থ কুঠুরি। জীবন বাঁচানোর একমাত্র পথই খোলা আছে সম্ভব পলায়ন। বিলম্ব মানে ভয়াবহ মৃত্যু। যাদের গাড়ি ছিল ঘোড়া ছিল চড়ে বসল তাতে। ঘোড়াকে লাগাল চাবুক যেন যথাসম্ভব দ্রুতগতিতে শহর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে পারে। শক্ত করে ধরল তারা জ্বলন্ত মশাল। কারণ মধ্য দিনেই নেমে এসেছিল অমানিশার সূচিভেদ্য আঁধার। প্রাণ বাঁচানোর জন্য পালাচ্ছে তারা পাগলের মতো সমুদ্রের দিকে অথবা নেপল্স শহরের দিকে।

পম্পেইতে বিপর্যয় ঘটল একটু পরে। হারকুলেনিয়ামের মত লোকজন তাড়াহুড়ো করল না। সুতরাং নষ্ট হয়ে গেল মূল্যবান সময়। সেখানকার অধিবাসীরা সভয়ে দেখছিল ভিসুভিয়াসের রুদ্রমূর্তি। তখন সেই ভীষণ মূর্তি আগ্নেয়গিরির জঠর থেকে জন্ম এবং ধূম এক বিশাল পাইন গাছের আকার ধারণ করে প্রায় এক হাজার ফিট উপরে উঠে গেছে। তারা তখনো আশা করছিল এবং প্রার্থনা করেছিল বাতাস হয়তো দূরে সরিয়ে দেবে ভস্ম আর ধূমের ভয়াল মেঘ। তারা তাদের একান্ত প্রিয় বাড়িঘর ছেড়ে যেতে চাচ্ছিল না। এটাই হল বহু লোকের মৃত্যুর কারণ। কিন্তু উত্তর-পশ্চিম বায়ুদানবরূপী সেই মেঘকে চালিত করল শহরের দিকে। তখন ফিরে এল তাদের সম্বিত। তারা পালাতে চেষ্টা করল। তখন স্তূপের পর স্তূপ লাভা এসে পড়ছে এবং ছোট্ট ছোট্ট পাথরগুলো এসে ঢুকছে সর্বত্র। আর মাঝে মাঝে প্রবল বায়ু প্রায় চৌদ্দ পাউ- ওজনের পাথর উড়িয়ে ফেলছে শহরের ওপর। শিগগিরই লাভা সব কিছু গ্রাস করতে শুরু করল। অনেক বাড়ির ছাদ ভেঙে যাচ্ছে পাথর আর লাভার চাপে। পলায়নপর লোকেরা তখন সংগ্রাম করছে নয়-দশ ফুট উঁচু লাভার প্রাচীর ভেঙে এগিয়ে যেতে। এক রকম সাদা ছাই বৃষ্টির সাথে মিশে পড়ছে নিরবচ্ছিন্নভাবে। নির্দয়ভাবে পলায়নপর পম্পেইবাসীদের পথে বাঁধার সৃষ্টি করছে। গন্ধক ধূমে দম বন্ধ হয়ে পথের উপর ঢলে পড়তে লাগল অগণিত লোক। ভেজা ভস্ম আঠার মত আটকে ধরছে মানুষের হাত-পা। যারা আগে পালায়নি, বরণ করল ভয়াবহ মৃত্যু। সেই মহাবিপদের সময় পম্পেইবাসীরা প্রাণের ভয়ে দিশেহারা হয়ে গেল। যা যেখানে ছিল সেখানে রেখেই পালাতে লাগল। পেছনে ফিরে তাকানোর অবস্থা তাদের ছিল না।

এক বাড়িতে শূকর ছানা রোস্ট হচ্ছিল। আর এক জায়গায় রুটি সেঁকা হচ্ছিল উনুনে। তাই রেখে বাড়ির লোকজন পালিয়ে গেল। এক বাড়িতে শেকলে বাঁধা ছিল একটি কুকুর। কুকুরের মালিক পালিয়ে যাওয়ার সময় কুকুরটিকে মুক্ত করে যেতে ভুলে গেলেন। যখন পাথরের টুকরোগুলো বৃষ্টি ধারার মত তার গায়ে এসে পড়ছিল, তখন হতভাগ্য জীবটি নিজেকে বাঁচানোর জন্য কী লাফালাফিই না করেছে। অবশেষে যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পাগুলো ছড়িয়ে দিয়ে ঢলে পড়েছে মৃত্যুর কোলে। ইতোমধ্যে পম্পেইয়ের রাস্তাগুলো ভীতসন্ত্রস্ত লোকজন পূর্ণ হয়ে গেছে। সবাই বাঁচার জন্য সংগ্রাম করছে। কার আগে কে পালাতে পারে। বেশির ভাগ লোকই ধাবিত হচ্ছে পশ্চিমের ফটকের দিকে সেখান থেকে রাস্তা বেরিয়ে গেছে হারকুলেনিয়ামের দিকে। কিন্তু তারা জানে না ইতোমধ্যে কী দশা হয়েছে হারকুলেনিয়ামের।

এ দিকটায় মার্কারি স্ট্রিটে বাস করত একজন ধনী রোমান। তার বাড়িটি ছিল সুন্দর। এই বসতবাড়ি রেখে তিনি প্রাণ নিয়ে পালিয়ে গেলেন। কিন্তু তার স্ত্রী মূল্যবান জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে দেরি করে ফেললেন। ফলে মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে গেল তার। বাড়ি থেকে বেরিয়ে অল্প দূরে রাস্তায় তিনি ঢলে পড়লেন আগ্নেয়গিরি নিঃসৃত, বৃষ্টিসিক্ত, আঠালো ভস্ম স্তূপের মাঝে। তার চতুর্দিকে ছড়িয়ে রইল তার অলঙ্কারাদি, টাকা-পয়সা, রুপালি আয়না। আর কাছেই পড়ে রইল তার তিন পরিচারিকা। এদিকে অন্ধকার আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ছে পাথর আর ছাই ভস্ম। গন্ধক ধূমে দৃষ্টিহীন হয়ে আসছে পলায়মান লোকদের চোখ। বন্ধ হয়ে আসছে শ্বাস-প্রশ্বাস। শহরের সড়ক পূর্ণ মৃত মানুষের মিছিলে। মৃত্যুর সাথে লড়াই করে পরাজিত হয়ে লুটিয়ে পড়ছে দলে দলে, পাথর আর ভস্মের সমুদ্রে। স্তূপের পর স্তূপ জমে উঠল মৃতদেহ।

একটি বাড়িতে আবিষ্কৃত হল সম্ভবত সবচেয়ে করুণ এবং লোমহর্ষক দৃশ্য। স্পষ্টত বোঝা যায় কোন আত্মীয়ের মৃত্যুর অন্ত্যেষ্টিভোজের আয়োজন হয়েছিল সেখানে। বিষাক্ত গ্যাসে সেখানকার লোকজন এমন আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করল যে, নিজ নিজ স্থানেই রয়ে গেল লাশগুলো।

শহরের বাইরে সমুদ্রের তীরে ছিল এক ধনাঢ্য লোকের বাড়ি। সহজেই অনুমান করা যায়, শহরের ভেতরের বাসিন্দাদের চেয়ে এই বাড়ির লোকজনের পলায়ন ছিল অনেক সহজতর। যখন খননকারীরা এই ধ্বংসস্তূপ সরাল, তখন বেরিয়ে আসল ওই বাড়ির প্রাচীর চিত্রগুলো। আর পাওয়া গেল তিন রমণীর কঙ্কাল। তারা পালাতে পারেনি। কারণ ঘরের মেঝে এবং ছাদ ভেঙে পড়েছিল। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল তারা নানা অলঙ্কারে শোভিত হয়ে। একজন যুবতী তখনো ধরে রেখেছিল একটি ব্রোঞ্জের আয়না। একটি মেয়ে অতি কষ্টে প্রবেশদ্বারে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু নিঃশেষ হয়ে গেল তার শক্তি। পড়ে রইল সেখানে। আর একটি লোকের কঙ্কাল দেখে মনে হয় লোকটি ছিল সেই বাড়ির দারোয়ান। সেই ঘোর বিপদের সময় সে বোধ হয় প্রাণ বাঁচানোর জন্য সেই বৃহৎ অট্টালিকার এ ঘরে সে ঘরে ঘুরে শেষ পর্যন্ত আশ্রয় নেয় নিজের ঘরের এক কোণে। সেখানেই সে বরণ করে শোচনীয় মৃত্যু। মনে হয় এখনো সে তাকিয়ে আছে বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুলের আংটির প্রতি। যেখানে বসানো আছে একটি পাথর, তার উপর অঙ্কিত আছে একটি ছোট্ট মূর্তি।

মাকে নিয়ে পলায়মান ছোট প্লিনি মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর পম্পেইর বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন, ‘অন্ধকার আমাদের গ্রাস করে ফেলেছে। সে অন্ধকার চন্দ্রহীন কিংবা মেঘাচ্ছন্ন রাত্রির অন্ধকার নয় সে যেন দরোজা-জানালা বন্ধ করা বাতি নেভানো ঘরের সূচিভেদ্য অন্ধকার। শোনা গেল নারীর করুণ আর্তনাদ, শিশুর মর্মভেদী কান্না। কেউ খুঁজছে তার ছেলেমেয়েদের, ছেলেমেয়েরা ডাকছে তার মাতাপিতাকে। কেউবা তার স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে। শুধু গলার স্বরে পরস্পরকে চিনতে পারছে। আবার কেউ নিজের পরিবার-পরিজনদের দুর্ভাগ্যে কাঁদছে। কেউ কামনা করছে মৃত্যু। অনেকেই হাত তুলে দেব-দেবীর সাহায্য প্রার্থনা করছে বেশির ভাগ লোকেই আফসোস করছে দেবদেবী বলে কোথাও কিছু নেই এবং ভাবছে পৃথিবীর বুকে নেমে এসেছে শেষ অনন্ত রাত্রি’। অধিকাংশই মনে করে যে, তাদের অবাধ যৌনাচার ও সমকামিতা এবং বিভিন্ন পাপাচারের কারণে আল্লাহ তাদের এমন শাস্তি প্রদান করেন।

উল্লেখ্য, আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাঁর অমোঘ নৈপুণ্য আর বৈজ্ঞানিক উপকরণ দিয়ে এই সব মৃতদেহকে বছরের পর বছর মাটির নীচে স্বযত্নে সংরক্ষণ করেছেন, যা আমাদের মত সাধারণ মানুষের জ্ঞানে অবিশ্বাস্য। এই সব প্রাণী ও মানুষের মৃতদেহ দিয়ে ইতালির সরকার নতুন করে তাদের ঐতিহাসিক যাদুঘর সাজাচ্ছে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে। এখন এই স্থানে জাতিসঙ্ঘের তথ্য অনুযায়ী বছরে প্রায় ২৫ মিলিয়ন টুরিস্ট ভ্রমণ করে।

সুধী পাঠক! মহান আল্লাহ দুনিয়াতেই ক্বিয়ামতের পূর্বে আরেক ক্বিয়ামতের নির্দশন দেখিয়ে দিয়েছেন, যাতে করে মানুষ এখান থেকে শিক্ষা নিতে পারে এবং ক্বিয়ামতের ভয়াবহতায় ভীত বিহ্বল হতে পারে। আর সাথে সাথে যৌনতা সহ সকল ধরনের পাপাচার থেকে বিরত থেকে আল্লাহর ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে। উপরে বর্ণিত ধ্বংসজ্ঞের সাথে ক্বিয়ামতের দিনের দৃশ্যের কিছুটা মিল রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

وَ یَقُوۡلُوۡنَ مَتٰی ہٰذَا الۡوَعۡدُ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ – مَا یَنۡظُرُوۡنَ اِلَّا صَیۡحَۃً وَّاحِدَۃً تَاۡخُذُہُمۡ وَ ہُمۡ یَخِصِّمُوۡنَ – فَلَا یَسۡتَطِیۡعُوۡنَ تَوۡصِیَۃً وَّ لَاۤ اِلٰۤی اَہۡلِہِمۡ یَرۡجِعُوۡنَ.

‘তারা বলে, তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে বল, এই প্রতিশ্রুতি কখন পূর্ণ হবে? তারা তো অপেক্ষায় আছে; আঘাত করবে তাদের বাক-বিতণ্কাডা কালে। তখন তারা অছিয়ত করতে সক্ষম হবে না এবং নিজেদের পরিবার-পরিজনের নিকট ফিরে আসতেও পারবে না’ (সূরা ইয়াসীন : ৪৮-৫০)। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ يَبْلُغُ بِهِ النَّبِىَّ صلي الله عليه وسلم قَالَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ وَالرَّجُلُ يَحْلُبُ اللِّقْحَةَ فَمَا يَصِلُ الْإِنَاءُ إِلَى فِيْهِ حَتَّى تَقُوْمَ وَالرَّجُلَانِ يَتَبَايَعَانِ الثَّوْبَ فَمَا يَتَبَايَعَانِهِ حَتَّى تَقُوْمَ وَالرَّجُلُ يَلِطُ فِىْ حَوْضِهِ فَمَا يَصْدُرُ حَتَّى تَقُوْمَ

আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ক্বিয়ামত এতই হঠাৎ প্রতিষ্ঠিত হবে যে, কোন ব্যক্তি হয়ত তার উটের দুধ দোহন করে তা পান করার জন্য মুখে উঠাবে, আর তা পান করার পূর্বেই ক্বিয়ামত হয়ে যাবে; দু’ব্যক্তি কাপড় ক্রয়-বিক্রয় করতে থাকবে, তাদের লেনদেন শেষ না হতেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। কোন ব্যক্তি তার হাউজ ঠিক করতে থাকবে, সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করার পূর্বেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। (ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৫৪।)

পরিশেষে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, হে আল্লাহ! আমাদেরকে যাবতীয় পাপচার থেকে দূরে থাকার তাওফীক দান করুন এবং ক্বিয়ামতের কঠিন ভয়াবহাতা থেকে আমাদেরকে হেফাযত করুন-আমীন!!

16/09/2025

মসজিদে নববীর মেহরাব। ইমাম সাহেব যে স্থানে দাঁড়িয়ে নামাজের ইমামতি করেন, ওই জায়গাকে মেহরাব বলা হয়। মসজিদে নববীতে মেহরাব দুইটি। একটি হলো- মসজিদ প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে নির্মিত মেহরাব-যেখানে দাঁড়িয়ে রাসুল (সা.) ইমামতি করতেন। এই মেহরাবটি মিম্বরের নিকটবর্তী- এখান থেকে এখন আজান দেওয়া হয়।

ঐতিহাসিকদের মতে , মূলত মসজিদে নববীর মেহরাব বলা হয় ওই জায়গাটুকুকে যেখানে দাঁড়িয়ে রাসুল (সা.) নামাজের ইমামতি করেছেন। তবে তিনি ঠিক যে স্থানে পা রাখতেন-সেটি মেহরাব নয়; মসজিদের অংশ।

- ছবিতে দেখা যাচ্ছে— এক ব্যক্তি মারা গেছেন, তাকে মসজিদুল হারামে জানাজা পড়ানো হচ্ছে মুখ খোলা অবস্থায়।কারণ কী...?- কারণ ...
14/09/2025

- ছবিতে দেখা যাচ্ছে— এক ব্যক্তি মারা গেছেন, তাকে মসজিদুল হারামে জানাজা পড়ানো হচ্ছে মুখ খোলা অবস্থায়।

কারণ কী...?

- কারণ তিনি ইহরাম অবস্থায় ইন্তিকাল করেছেন। আর যে ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় মারা যায়, সে হোক উমরাহকারী বা হাজী— তাকে তার ইহরামের কাপড়েই কাফন দেওয়া হবে এবং তার মুখমণ্ডল ও মাথা ঢেকে দেওয়া হবে না। এটাই এসেছে সুন্নাহতে।

রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন শুনলেন, একজন ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, তখন তিনি ﷺ বললেন:
“তাকে তার ইহরামের কাপড়েই কাফন দাও, তার মাথা ও মুখ ঢাকবে না; নিশ্চয়ই সে কিয়ামতের দিন লাব্বাইক বলতে বলতে পুনরুত্থিত হবে।” সহীহ আল-বুখারী – হাদীস 1265 (কিতাব: জানাযা), সহীহ মুসলিম – হাদীস 1206 (কিতাব: হাজ্জ)

কড়া শাসন থেকে মুক্তি পেতে বাবাকে হত্যা, প্রাণভিক্ষা চেয়েও মেলেনি মুক্তি || সিনেমা দেখে ছুরি মেরে বাবাকে হত্যা করে সন্তান...
14/09/2025

কড়া শাসন থেকে মুক্তি পেতে বাবাকে হত্যা, প্রাণভিক্ষা চেয়েও মেলেনি মুক্তি || সিনেমা দেখে ছুরি মেরে বাবাকে হত্যা করে সন্তান রোদোয়ান || ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ||
========================================

ভোলার দারুল হাদিস কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস ও উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আমিনুল হক নোমানী হত্যার অভিযোগে তার বড় ছেলে রেদোয়ানুল হককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গতকাল শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বিকালে ভোলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফুল হক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। তিনি জানান, অতিরিক্ত শাসনে বাবার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বাবাকে হত্যা করে রেদোয়ান। হত্যার জন্য অনলাইন থেকে আনা হয় ছুরি।

পুলিশ সুপার জানান, নিহত আমিনুল হক নোমানীর কড়া শাসনে ক্ষুব্ধ ছিলেন ছেলে রোদোয়ান। মানসিক বিকৃতিও দেখা দেয় তার। কিছুদিন আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েছিল। দুই মাস আগে আত্মহত্যার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় রেদোয়ান।

এরপর তাকে তজুমদ্দিনের খাসেরহাটে মামাবাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে বিভিন্ন সিনেমা দেখে বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। গত ২ সেপ্টেম্বর অনলাইনে একটি ধারালো ছুরির অর্ডার করে। ওই ছুরিটি হাতে এসে পৌঁছায় ৫ সেপ্টেম্বর।

এর পর সিনেমা স্টাইলে মামার বাড়ি থেকে কালো শার্ট ও ঘড়ি এবং ভোলা শহর থেকে ক্যাপ সংগ্রহ করে হত্যা মিশনের জন্য। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ৬ সেপ্টেম্বর মামার বাড়ি তজুমদ্দিন থেকে ভোলায় আসে রেদোয়ান। ওইদিন এশার নামাজ শেষে ঘরে ফেরার পর রাত ৯টায় বাবার পেটে ছুরি চালায় রেদোয়ান। প্রথম আঘাতে ছুরি তার বাবা ধরে ফেলেন, মাফ চেয়ে ছেলের কাছে জীবন ভিক্ষা চান। এতেও মন গলেনি রোদোয়ানের।

সিনেমা দেখে শেখা পদ্ধতিতে বাবার বুকে, পেটে ও ঘাড়ের পেছনে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এ সময় বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে এলে ঘরের পেছন দিয়ে বের হয়ে যায় সে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, যাওয়ার সময় ঘরের পেছনের খালে হত্যার ব্যবহৃত ছুরি ফেলে যায়। কালো জামা, ক্যাপ পরা ছদ্মবেশী রেদোয়ান রক্তমাখা জামা নিয়েই বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে অটোরিকশায় শহরে আসে। শহরের খলিফাপট্টি জামে মসজিদে এসে রক্ত পরিষ্কার করে। শহর থেকে সিএনজিতে তজুমদ্দিনের খাসেরহাট মামার বাড়ি যায় রেদোয়ান।

নিহত আমিনুল হকের ভোলা সরকারি স্কুল মাঠের ৭ সেপ্টেম্বর দুপুরের জানাজায় শিক্ষক বাবার হত্যাকারীদের ফাঁসি চেয়ে বক্তব্য দিয়ে অভিনয় করেছিল খুনী সন্তান রেদোয়ানুল হক। জানাজায় বক্তব্যের সময় রেদোয়ানুল আবেগপ্রবণ না হলেও বাবার হত্যার বিচার দাবিতে বেশ জোড়ালো বক্তব্য দেয়। নিহত আমিনুল হকের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে রেদোয়ানুল হক সবার বড়।

10/09/2025

ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে শিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট থেকে সাদিক কায়েম ও জিএস পদে এস এম ফরহাদের বিপুল জয়। ডাকসু নির্বাচনে বিপুল ভোটে ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন শিবির সমর্থিত প্রার্থী সাদিক কায়েম ও জিএস পদে এস এম ফরহাদ। এই নির্বাচনে ছাত্র সংসদ ও হল সংসদের অন্যান্য পদেও শিবির সমর্থিত প্রার্থীরা বেশিরভাগ পদে বিজয়ী হয়েছেন।

ভিপি পদে শিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের মোঃ আবু সাদিক কায়েম সর্বোচ্চ পেয়েছেন ১৪০৪২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৫৭০৮ ভোট।

জিএস পদে শিবির সমর্থিত প্রার্থী এসএম ফরহাদ পেয়েছেন ১০৭৯৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত শেখ তানবীর বারী হামিম পেয়েছেন ৫২৮৩ ভোট।

সহ-সাধারণ সম্পাদক বা এজিএস পদে শিবির সমর্থিত প্যানেলের মোঃ মহিউদ্দিন খান বিজয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ১১৭৭২ ভোট।

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের আব্দুল কাদের পেয়েছেন ১১০৩ ভোট।

স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা ভিপি প্রার্থী হিসেবে মোট ভোট পেয়েছেন ৩৩৮৯টি।

প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেছেন নির্বাচনে কোনও কারচুপি হয়নি, বরং একটি মডেল নির্বাচন হয়েছে।

08/09/2025

মানুষ কতটা পাষণ্ড হলে ও হিংস্র হায়েনার মত হলে এই কাজ ঘটাতে পারে! আহ! একজন ঘুমন্ত মানুষ জানতেই পারলো না পাশেই শুয়ে থাকা তাঁর সহকর্মীই তাঁকে হত্যা করবে!

06/09/2025

| নুরাল পাগলার লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে ফেলা ইসলামী আচরণবিধির লঙ্ঘন || সেখানে মাজার ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে কবরকে সমান করে দেওয়া পর্যন্ত সঠিক ছিল || কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া এটা কোনো যুক্তি দিয়েই ইসলামী আচরণবিধি জায়েজ করতে পারেন না || ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ||
=======================================

😭😭 নুরুল হক মোল্লা বা নুরা পাগলা রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার পাচ নম্বর ওয়ার্ডের হাতেম মোল্লার ছোট ছেলে। কৈশোর বয়স থেকে মাটির বদনা বাজিয়ে গান বাজনা শুরু করলেও পরবর্তীতে আশির দশকে নিজেকে ইমাম মেহেদী দাবি করে দরবার প্রতিষ্ঠা করে। যা ছিলো স্পষ্টতই ভন্ডামি। পরবর্তীতে স্থানীয় মুসল্লিদের আন্দোলনের মুখে ১৯৯৩ সালে মুচলেকা দিয়ে এলাকা ছাড়েন। পরে আবার ফিরে এসে দরবারের কার্যক্রম চালু করেন। নিজেকে ইমাম মাহাদী দাবী করা ছাড়াও ধর্মবিদ্বেষী নুরা পাগলা পবিত্র আল কুরআনকে 'ভুজপাতা' বা মূল্যহীন বলতেন। নিজস্ব কালেমা চালু করেন। তিনি এবং তার অনুসারীদেরকে দাফনের সময় মাথা দক্ষিণমুখী এবং পা উত্তরমুখী করে কবর দিতে বলতেন। মৃত্যুর পর ভক্তদেরকে তার কবরকে তাওয়াফ করার অসিয়ত করে গেছেন।

গতবছর অক্টোবর মাসেও স্থানীয় আলেম-মুসল্লিরা সমাবেশ করে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে নুরা পাগলার বিরুদ্ধে ভন্ডামির অভিযোগ দিয়েছিলেন। মুসল্লিদের অভিযোগ—নুরা পাগলা নিজেকে ইমাম মাহাদী দাবি করে বহু বছর ধরে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধোকা দিয়ে আসছে। তাদের দিয়ে শিরকের মতো কঠিন গোনাহ করাচ্ছে। তার বড় ছেলে মেহেদী নুরতাজ ওরফে নুরতাজ নোভা ঢাকা, ফরিদপুর সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আস্তানা গড়ে খৃস্ট ধর্মের প্রচারনা চালাচ্ছে। বেশ কয়েক বছর আগে মুসলমানদের আন্দোলনের মুখে নুরাল পাগলা আর এ সকল কর্মকান্ড করবেনা বলে মুচলেকা দেয়। কিন্তু তিনি তার ইসলাম বিরোধী অপকর্ম বন্ধ করেননি। মুসল্লিদের এই দাবির প্রেক্ষিতে তৎকালীন গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন— আমার কাছে এর আগেও এ বিষয় নিয়ে আলেম-ওলামারা এসেছিলেন। আমি ইতিমধ্যে নুরুল হককে তার কর্মকান্ড বন্ধ করতে অনুরোধ জানিয়েছি। প্রয়োজনে আবারও বলব।

নুরা পাগলা এবছরের ২৩ আগস্ট ভোরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি কাবা শরীফের আদলে উঁচু বেদি নির্মাণ করেন। মৃত্যুর পর ওই বেদিতে বিশেষ কায়দায় দাফন করা হয় তাকে। অভিযোগ রয়েছে, তাকে দক্ষিণমুখী মাথা দিয়ে দাফন করা হয়েছে, যা ইসলামী শরীয়তের পরিপন্থী। প্রতি শুক্রবার তাওয়াফ করার মতো করে ভক্তরা তার কবর প্রদক্ষিণ করতো বলে শোনা যায়।

মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট উঁচুতে নির্মিত এবং পবিত্র কাবা শরীফের আদলে তৈরি এই কবরকে ইসলামি শরিয়ত পরিপন্থী দাবি করে আবারো ফুঁসে ওঠে সাধারণ মুসল্লি-আলেম সহ প্রায় সব ধরণের গণ্যমান্য ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা। তারা এর প্রতিবাদে সমাবেশ, মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করেন। প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। কিন্তু ভন্ড নুরা পাগলার মুরীদরা তা শোনেনি। তারা কাবা ঘরের আদলে তৈরী কবর বেদীর কালো রং বদলে লোক দেখানো কিছু কাজ করেছে মাত্র। এ নিয়ে স্থানীয় মুসল্লিরা বারবার প্রতিবাদ করেছে। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ সবই জেনেছে, দেখেছে— ব্যবস্থা নেয়নি।

গতকাল শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর স্থানীয়রা আবারো প্রতিবাদ শুরু করলে মাজারীরা সেই প্রতিবাদ মিছিলে হামলা চালায়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এতে প্রতিবাদকারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তারা মাজার কমপ্লেক্সে ব্যাপক ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। সবচেয়ে নিন্দনীয় কাজটিও তারা করে ফেলে— তা হলো তীব্র ক্ষোভে নুরা পাগলা'র কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে রাস্তায় এনে পুড়িয়ে ফেলেছে। সার্বিক ঘটনার জন্য তৌহিদী জনতার ব্যানারে থাকা হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য কিছু মানুষের দোষ খোঁজা হচ্ছে। তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। পাশাপাশি এইসব ভন্ডামির সাথে যারা জড়িত ছিলো সেইসব মাজারপূজারীদেরকেও ছাড় দেয়া যাবে না, যারা উনুনে ঘি ঢেলেছে। তাছাড়া অথর্ব উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন সময়মতো সমাধান না করা এবং প্রয়োজনীয় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করার দায়ও এড়াতে পারেন না।

একজন ব্যক্তি জীবিত থাকতে নিজেকে ইমাম মাহদি দাবি করেছেন। তিনি দাবি করতেই পারেন। কারণ ইসলাম সম্পর্কে তিনি যেমন অজ্ঞ তেমনি যারা তার লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়েছে তারা আরো বেশি অজ্ঞ! ইমাম মাহদি নামে নির্দিষ্ট কোনো এক ব্যক্তি আসবেন মর্মে মাথামোটা ধারণা থেকেই মানুষেরা কেবল নিজেকে যেমন ইমাম মাহদি দাবি করে ফেলে তেমনি কেউ দাবি করলে তাকে কাফের বানিয়ে মেরে ফেলতে মরিয়া হয়ে পড়ে!

যাক, আসল কথা হলো আজ তৌহিদি জনতার নামে গোয়ালন্দের রাজবাড়িতে নুরা পাগলার লাশকে যা করা হয়েছে তা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক কাজ হয়েছে, মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বরতা হয়েছে। মূলত ধর্মাজ্ঞতার কারণেই মানুষ এমন নৃশংসতা করতে পারলো! কোনো মানুষের লাশ কবর থেকে তুলে পোড়ানোর মতো বীভৎস কাজের কোনো নুসুস অন্তত শরঈ আদিল্লাহ হিসেবে কেউ প্রমাণ করতে পারবেন বলে আমার মনে হয় না..!!!

কেননা, আল্লাহ ছাড়া কারো অধিকার নেই কোনো মানুষকে আগুন দিয়ে পোড়ানোর। ( সহিহ বুখারি, হা. নং: ৩০১৬)।

ইমাম নববী (রহ.) বলেন: “কবর খোলা হারাম, কারণ এটি মৃতের প্রতি অসম্মান।” (আল-মাজমূ, ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং: ৩০৩।)

এছাড়া৷ হাদিসে এসেছে- “মৃত মানুষের হাড় ভেঙে দেওয়া জীবিত অবস্থায় ভাঙার সমতূল্য!” (আবূ দাউদ ৩২০৭, ২৩৭৮৭, ২৪১৬৫, ২৪২১৮, ২৪৮২৮, ২৫১১৭, ২৫৭৪৩ ইরওয়াহ ৭৬৩।)

পুড়ানোর মাধ্যমে তো শুধু ভাঙেনি, বরং ছাই করে দেওয়া হয়েছে। তার অপরাধের শাস্তি মরে যাবার পরে আল্লাহর হাতেই ন্যস্ত ছিলো, তাহলে কেন আল্লাহর কাছ থেকে নিজেদের হাতে বিচারের ভার ছিনিয়ে নেওয়া হলো? শিরক ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে কবরকে কাবার আদলে তৈরি করা এবং উঁচু করার ব্যাপারটি আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে গুড়িয়ে ফেলা পর্যন্ত ঠিক ছিলো। কিন্তু পরে যা করা হলো তা ইসলামের ঘোরতর বিরোধী একটি কাজ করা হয়েছে। আপনি মানুষ মুসলিম ও ইসলাম ধর্মের অনুসারী হয়ে নেগলেক্ট আচরণ করতে পারবেন না।

Address

Dhaka

Telephone

+8801716002896

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when দ্বীন প্রতিদিন - Deen Pratidin posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to দ্বীন প্রতিদিন - Deen Pratidin:

Share