22/10/2025
সম্প্রতি এক তথাকথিত বক্তা আমির হামজা প্রকাশ্যে এমন মিথ্যা ও ঘৃণিত বক্তব্য দিয়েছেন যে— আম্মাজান খাদিজা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) নাকি জীবনে নামাজ পড়েননি, রোজা রাখেননি, পর্দা করেননি ও যাকাত দেননি! — ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
এ বক্তব্য শুধু একজন সাহাবিয়া বা মহান নারীর বিরুদ্ধে নয়, বরং ইসলাম ও রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর পরিবারের মর্যাদার ওপর সরাসরি আঘাত।
আম্মাজান খাদিজা (রা.) ছিলেন ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম নারী।
তিনি নবুয়তের প্রথম মুহূর্ত থেকেই রাসূল ﷺ-এর পাশে দাঁড়িয়েছেন, নিজের সম্পদ, জীবন ও হৃদয় বিলিয়ে দিয়েছেন ইসলামের জন্য। রাসূল ﷺ নিজেই বলেছেন —
"آمَنَتْ بِي إِذْ كَفَرَ النَّاسُ، وَصَدَّقَتْنِي إِذْ كَذَّبَنِي النَّاسُ، وَوَاسَتْنِي بِمَالِهَا إِذْ حَرَمَنِي النَّاسُ"
"আল্লাহ তাআলা আমাকে তার (খাদিজা রা.) ভালোবাসা দিয়ে সম্মানিত করেছেন, যখন মানুষ আমাকে অস্বীকার করেছিল, তখন সে আমাকে বিশ্বাস করেছিল; যখন সবাই আমাকে বঞ্চিত করেছিল, সে তার সম্পদ দিয়ে আমাকে সহায়তা করেছিল।" (সহিহ বুখারী, হাদিস: ৩৮১৮; মুসলিম, হাদিস: ২৪৩২)
তিনি রাসূল ﷺ-এর একমাত্র স্ত্রী যিনি জীবদ্দশায় জান্নাতের সুসংবাদ লাভ করেছেন —
"أَقْرِئْ خَدِيجَةَ مِنْ رَبِّهَا السَّلَامَ، وَمِنِّي، وَبَشِّرْهَا بِبَيْتٍ فِي الْجَنَّةِ مِنْ قَصَبٍ، لَا صَخَبَ فِيهِ وَلَا نَصَبَ"
“হে রাসূল ﷺ, খাদিজা (রা.) তোমার কাছে আসছে। তাকে তার রবের পক্ষ থেকে জান্নাতে মুক্তো দ্বারা নির্মিত এক প্রাসাদের সুসংবাদ দাও।” (সহিহ বুখারী, হাদিস: ৩৮২০; মুসলিম, হাদিস: ২৪৩2)
তাই যিনি জান্নাতি নারী, ইসলামের প্রথম দাওয়াতের সহযোগী, রাসূল ﷺ-এর প্রিয়তমা স্ত্রী — তাঁর সম্পর্কে এমন ঘৃণ্য ও কল্পিত কথা বলা স্পষ্ট অসত্য, বিদআত ও অপমানজনক অপরাধ।
ইসলামী ফতোয়া ও শরিয়তী অবস্থান
প্রথমত:
যে ব্যক্তি কোনো সাহাবি বা সাহাবিয়াকে অপমান করে বা তাদের ঈমান, আমল ও ধর্মীয় মর্যাদাকে অস্বীকার করে, সে এক মহা গোনাহে লিপ্ত হয়।
ইমাম নববী (রহ.) বলেন:
"مَن سَبَّ الصَّحَابَةَ فَهُوَ فَاسِقٌ بَاطِلُ الشَّهَادَةِ"
“যে সাহাবিদের গালি দেয়, সে ফাসিক; তার সাক্ষ্য বাতিল।”
— (شرح مسلم، للنووي، جـ 16، صـ 93)
দ্বিতীয়ত:
যদি কেউ রাসূল ﷺ-এর স্ত্রীদের সম্পর্কে অপমানজনক বা মিথ্যা কথা বলে, তাহলে সে নবীর মর্যাদাকেই আঘাত করছে, কারণ কুরআনে বলা হয়েছে:
"يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ"
“হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্যান্য নারীদের মতো নও।”
— (সূরা আহযাব, আয়াত: 32)
তৃতীয়ত:
ইসলামী ফিকহ অনুযায়ী, এমন বক্তব্য যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অবমাননার উদ্দেশ্যে হয়, তবে এটি কুফরীর পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।
ফতোয়া:
“من شتم زوجات النبي ﷺ أو طعن فيهن، فقد كفر بالله العظيم.”
“যে ব্যক্তি নবীর স্ত্রীদের গালি দেয় বা তাদের সম্পর্কে অপবাদ রটে, সে আল্লাহ তাআলার প্রতি কুফরি করে।”
— (ফতোয়ায়ে শামী, খণ্ড 4, পৃ. 237)
সুতরাং, আমরা এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, একই সাথে এরকম ঘৃণ্য বক্তব্য প্রত্যহারের দাবি জানাচ্ছি।