30/08/2025
বিশ্বের রাজনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে। প্রধান শক্তিধর রাষ্ট্র ও টেক বিলিয়নেয়াররা ব্যাপক হারে ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার ও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করছেন। এটি নিছক সতর্কতামূলক উদ্যোগ নয়, বরং এক সম্ভাব্য বৈশ্বিক মহাবিপর্যয়ের জন্য তাদের গুরুতর প্রস্তুতির ইঙ্গিত।
রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ
— তুরস্ক সবচেয়ে বিস্তৃত উদ্যোগ নিয়েছে। ২০২৫ সালের জুন মাসে রাষ্ট্রপতি এরদোয়ানের অনুমোদনে দেশটির ৮১টি প্রদেশে আধুনিক বোমা-প্রতিরোধী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয়েছে। এটি TOKI (হাউজিং ডেভেলপমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন)-এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। আঙ্কারাসহ বিভিন্ন শহরে ইতিমধ্যে নির্মাণকাজ চলছে।
— জার্মানি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় পুরোনো বাঙ্কার পুনঃব্যবহার ও নতুন পারমাণবিক আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। এমনকি ভূগর্ভস্থ পার্কিং লট ও মেট্রো স্টেশনকে জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তরের বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে।
— চীন ‘বেইজিং মিলিটারি সিটি’ নামে এক বিশাল ভূগর্ভস্থ দুর্গ নির্মাণ করছে, যা কথিতভাবে পেন্টাগনের চেয়েও দশগুণ বড়। এতে পারমাণবিক-প্রতিরোধী বাঙ্কার রয়েছে, যা যুদ্ধকালীন কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহারযোগ্য। (তথ্য যাচাইযোগ্য নয়)
— রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র শীতল যুদ্ধকালীন পুরাতন বাঙ্কারগুলো আধুনিকীকরণ করছে। উভয় দেশই তাদের ভূগর্ভস্থ সামরিক ও রাজনৈতিক কমান্ড সেন্টার সম্প্রসারণ করেছে।
টেক বিলিয়নেয়ারদের গোপন প্রস্তুতি
— মেটা প্রধান মার্ক জাকারবার্গ হাওয়াইয়ের কাউয়াই দ্বীপে ৫,০০০ বর্গফুটের একটি ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার নির্মাণ করছেন। এটি তার ১,৪০০ একরের বিলাসবহুল কমপাউন্ডের নিচে অবস্থিত এবং দুটি পৃথক টানেলের মাধ্যমে প্রবেশযোগ্য। এস্টেটটির আয়তন প্রায় ৫৫ লাখ বর্গমিটার, যা দুই মিটার উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এবং বিপুল নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা পাহারাকৃত।
— টেসলা ও স্পেসএক্স প্রধান ইলন মাস্ক টেক্সাসে একটি দুর্গসদৃশ কমপাউন্ড নির্মাণ করছেন, যার খরচ প্রায় ২৪৯ কোটি টাকা সমমূল্যের। রিপোর্ট অনুযায়ী এটি পারমাণবিক যুদ্ধের ভয় থেকে নির্মিত হচ্ছে।
— OpenAI প্রধান স্যাম অল্টম্যানের একটি গোপন ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে দাবি করা হয়েছে।
— জেফ বেজোস-এরও একাধিক দুর্গসদৃশ এস্টেট আছে, যেগুলোর কিছু ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্র-সদৃশভাবে নকশা করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
— অন্তত ১৫ জন বিলিয়নেয়ার এবং তিনটি শীর্ষ টেক কোম্পানি বর্তমানে “ফাইভ-স্টার ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার” নির্মাণ করছে। এসব বাঙ্কারে বোমা-প্রতিরোধী ব্যবস্থা ছাড়াও সুইমিং পুল, জিম, টেনিস কোর্টসহ বিলাসবহুল সুবিধা থাকবে।
বাঙ্কার নির্মাণ এখন একটি বহুমিলিয়ন ডলারের শিল্পে পরিণত হয়েছে। একটি সাধারণ পারিবারিক বাঙ্কারের দাম ৫০,০০০ ডলার থেকে শুরু হলেও বিলিয়নেয়ারদের বিলাসবহুল “ভূগর্ভস্থ প্রাসাদ”-এর খরচ কয়েকশ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পৌঁছায়।
আধুনিক বাঙ্কারগুলো কেবল মৌলিক নিরাপত্তা নয়, বরং এর সঙ্গে যুক্ত থাকে- পারমাণবিক, রাসায়নিক ও জৈবিক দূষণ থেকে সুরক্ষা, দীর্ঘমেয়াদি টিকে থাকার সক্ষমতা, হাসপাতাল ও অস্ত্রোপচার সুবিধা, স্যাটেলাইট যোগাযোগ ও এনক্রিপ্টেড নেটওয়ার্কসহ ফ্যারাডে খাঁচা প্রযুক্তি দ্বারা সাইবার সুরক্ষা।
বিলিয়নেয়ারদের প্রিয় গন্তব্য নিউজিল্যান্ড। কারণ, দেশটি ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন এবং রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল। একইভাবে সুইজারল্যান্ড ঐতিহ্যগত নিরপেক্ষতার পাশাপাশি পর্বতময় ভূপ্রকৃতির কারণে নিরাপদ বলে বিবেচিত। এমনকি অনেক বিলিয়নেয়ার দূরবর্তী দ্বীপ ক্রয় করে সেখানে মধ্যযুগীয় সামন্ত রাজ্যসদৃশ আশ্রয় তৈরি করছেন বলেও গুজব রয়েছে।
এই প্রস্তুতি জনমানসে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি করছে। যখন বিশ্বশক্তি ও বিলিয়নেয়াররা নিজেদের রক্ষায় এত ব্যস্ত, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে, কোনো মহাবিপর্যয় কী আসন্ন?
মনোবিজ্ঞানীরা এই প্রবণতাকে ‘প্রিপার মেন্টালিটি’ ও ‘সারভাইভাল অ্যাংজাইটি’ হিসেবে দেখেন। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময়কার চেয়েও জটিল। আর ধর্মীয় ব্যাখ্যায়, একে অনেক বিশেষজ্ঞ ‘শেষ যুগের লক্ষণ’ বলছেন।
২০২৫ সালে এসে মানবসভ্যতা এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। তুরস্কের ৮১টি প্রদেশের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে শুরু করে ইলন মাস্ক ও জাকারবার্গের বিলিয়ন ডলারের বাঙ্কার, সবই একই ভয়ের প্রতিচ্ছবি। সেই ভয় হলো, মানুষ তার নিজের সৃষ্ট শক্তি দিয়ে নিজেকেই ধ্বংস করে ফেলতে পারে। ওয়াল্লাহু আ’লাম।
নোট: উপরোক্ত প্রতিবেদনের অনেক তথ্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম, সরকারি ঘোষণা ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে নেয়া হয়েছে। তবে কিছু তথ্য এখনও যাচাইযোগ্য নয়।
— সাঈদ মুহাম্মাদ আবরার