16/10/2025
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে। অফিসের পুরোনো বিল্ডিংটায় নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে। কাগজের গন্ধে ভরা সেই ঘরটার এক কোণে বসে আছেন রফিক সাহেব— সমাজসেবা অফিসের একজন ক্লার্ক, ত্রিশ বছরের চাকরি জীবনে এখনও যার কণ্ঠে সততার প্রতিধ্বনি।
তার সামনে ফাইলের ‘পাহাড়’। প্রতিটি ফাইল মানে একটা মানুষের জীবন, কোনো পরিবার, কোনো আশার প্রতীক। কিন্তু এই অফিসে ফাইল মানে কেবল কাগজ নয়— টাকার গন্ধ, দালালদের কণ্ঠস্বর, আর টেবিলের নিচে গুঁজে রাখা খামের ওজন।
রফিক সাহেবের সহকর্মীরা হাসে তাকে নিয়ে।
“তুমি এখনও এগুলো খাও না, রফিক ভাই?”
সে মৃদু হাসে, উত্তর দেয়, “ফাইলের নিচে টাকা রাখলে ফাইলের উপর থেকে বিবেক হারিয়ে যায়।”
একদিন দুপুরে অফিসে এলেন এক বৃদ্ধা। তাঁর শাড়ি মলিন, চুল পেকে সাদা, চোখে অদ্ভুত অসহায়তা।
তিনি ধীরে ধীরে বললেন, “বাবা, আমার স্বামী শিক্ষক ছিলেন। বছর দুইয়েক আগে রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। সরকার থেকে ভাতার কাগজে সই দরকার, তিন মাস ধরে ঘুরছি... কিন্তু কেউ সই দিচ্ছে না। কামাল সাহেব বললেন, কয়েক হাজার দিলে হয়তো হয়ে যাবে।”
রফিক সাহেব স্তব্ধ হয়ে গেলেন।
“কয়েক হাজার?” — তার কণ্ঠ ভারী হয়ে গেল।
বৃদ্ধা মাথা নিচু করে বললেন,
“বাবা, ও টাকা আমার কাছে নেই… আমি শুধু তার নামের সম্মানটা রাখতে চেয়েছিলাম।”
ফাইলটি হাতে নিয়ে রফিক দেখলেন— সব কাগজ ঠিক আছে। কেবল অনুমোদনের সই বাকি। অথচ সেই এক সইয়ের জন্য এক শিক্ষকের স্ত্রীকে ঘুষ দিতে বলা হচ্ছে।
বিকেলে তিনি কামাল সাহেবের ঘরে গেলেন। কামাল, অফিসের সিনিয়র অফিসার, চা হাতে হেলান দিয়ে বসে আছেন।
রফিক শান্তভাবে বললেন,
“কামাল ভাই, ওই বৃদ্ধার ফাইলটা তো পুরো ঠিক আছে। টাকা ছাড়া কাজটা করে ফেলি না কেন?”
কামাল হেসে উত্তর দিলেন,
“রফিক ভাই, তুমি একা পৃথিবী বদলাতে চাও নাকি? এখানে টাকা ছাড়া কিছু নড়ে না। উনার স্বামী শিক্ষক তাই বলে অফিসের নিয়ম বদলাবে?”
রফিক কিছু বলেননি। শুধু ফাইলটা নিঃশব্দে তুলে নিলেন, যেন কাগজের ভেতর থেকে কোনো অদৃশ্য আর্তনাদ শুনছেন।
সেই রাতে রফিক ঘুমাতে পারলেন না। টেবিলের ওপর রাখা ফাইলটা বারবার চোখে পড়ছিল।
তিনি ভাবলেন— “যদি চুপ থাকি, তবে আমিও এই অন্যায়ের অংশ।” জানি পুরো সিস্টেম বদলাতে পারবে না।
তবু অন্তত একবার,,
তার কলেজে পড়া পুরোনো বন্ধু সাংবাদিক সালেহর কাছে ফোন করলেন।
“একটা কাহিনি আছে, সত্যি কাহিনি। প্রকাশ করলে ঝড় উঠবে।”,,,🖋️ চলমান
গল্প: 'উন্মোচন '
জাকিউল ইসলাম
ভালো লাগলে ছড়িয়ে দাও।