27/04/2025
হজ-বিষয়ক প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা
হজ সম্পর্কে অনেকে মনে করেন যে, এটি বৃদ্ধ বয়সের আমল। ফলে জীবনের বিরাট একটি অংশ অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত এই ফরয বিধানটি আদায়ের প্রতি মানুষের মনোযোগই আকৃষ্ট হয় না। অথচ বয়সের সাথে হজের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর যেমন তার ওপর নামায-রোযা আবশ্যক হয়ে যায়, নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হলে যাকাত ফরয হয়ে যায়, ঠিক একইভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি যখনই হজ করার সামর্থ্য অর্জন করে, তখনই তার ওপর হজ ফরয হয়ে যায়।
হজ ফরয হলে মারাত্মক ওজর ছাড়া তা পালনে টালবাহানা করা বা দেরি করা মারাত্মক গুনাহের কাজ। তাছাড়া কে কতদিন বেঁচে থাকবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই হজ ফরয হওয়ার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা আদায় করা জরুরি। কিন্তু আমাদের সমাজে বিভিন্ন অহেতুক মনগড়া অজুহাতে হজ আদায়ে বিলম্ব করা হয়। যেমন: ১. এখনো ছেলেমেয়েকে বিবাহ দেয়া হয়নি। অথচ ছেলেমেয়েকে বিবাহ দেয়া হজ আদায়ের কোনো শর্ত নয়। এবং এটার বিশেষ কোনো ফযীলতও নেই।
২. অনেকে এ আশঙ্কায় হজ আদায়ে বিলম্ব করে যে, হজ করার পর যদি কোনো গুনাহ হয় তাহলে হজ শেষ হয়ে যাবে। তাই এত তাড়াতাড়ি হজ করলে সেটাকে রক্ষা করা যাবে না। এটিও মনগড়া অজুহাত। একে তো হজের পর গুনাহ হয়ে গেলে হজ ভেঙে যায়-এমনটি ঠিক নয়। দ্বিতীয়ত, এ ক্ষেত্রে তিনি বর্তমানে যেসকল গুনাহে লিপ্ত রয়েছেন, যেমন: দাড়ি শেইভ করা, সুদ-ঘুষের সাথে লিপ্তা থাকা ইত্যাদি কাজ তিনি এখন ছাড়তে চাচ্ছেন না। মনোভাবটা এমন যে, এখন গুনাহ করে নেই, এরপর হজ করে সব ছেড়ে দেব। এটা যে একটা ভ্রান্ত চিন্তা তা বলাই বাহুল্য।
৩. কোনো কোনো পরিবারে এই রীতি রয়েছে যে, পরিবারের বড়জন হজ না করা পর্যন্ত ছোটরা হজ করা জরুরি মনে করে না। বরং অনেক ক্ষেত্রে বড়দের পূর্বে ছোটদের হজ করাকে দূষণীয় মনে করা হয়। অথচ নামায-রোযা ইত্যাদির মতো হজও এমন একটি ফরয ইবাদত, যা প্রত্যেকের ওপর পৃথকভাবে ফরয। পরিবারের ছোটদের সামর্থ্য হলে তাকে তা আদায় করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বড়দের জন্য বিলম্ব করা যাবে না।
৪. আমাদের সমাজে অনেক সময় দেখা যায়, পিতার ওপর হজ ফরয নয়, পুত্রের ওপর ফরয। কিন্তু পুত্র হজ না করে পিতাকে হজ করার জন্য পাঠায়। কিংবা পিতাকে নিয়ে হজ করার সামর্থ্য হওয়া পর্যন্ত বিলম্ব করে। এমনটা করা ঠিক নয়। পিতাকে হজ করানো অত্যন্ত সৌভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু এ জন্য নিজের ফরয বিলম্ব করা অনুচিত।
বই : ইসলামী জীবনবিধান
লেখক : মাওলানা মাহমুদুল্লাহ
দারুল ফিকর থেকে প্রকাশিত