09/08/2025
গতকাল দেব-শুভশ্রীর ইভেন্টটা দেখলাম, পুরোটা সময় জুড়ে নিজেকে কিছুটা শুভশ্রীর বিচ্ছেদের পর কামব্যাকের সাথে কানেক্ট করতে পারলাম।
আসলে আমাদের জীবনে তুমুল ভালবাসা আসা উচিত, এবং বিচ্ছেদও হওয়া উচিত। ফেসবুকের পাতায় মাঝেমধ্যেই এই লাইনটা দেখতে পাই, 'একটি ক্ষুধার্ত পেট, একটি শূন্য পকেট, আর ভাঙ্গা হৃদয় যা শেখায় তা আপনাকে পৃথিবীর কোনো বই শেখায় না।' আমি এই লাইনগুলোর সাথে লাউড এন্ড ক্লিয়ারলি একমত। এবারে আমি শুধু ভাঙ্গা হৃদয়ের বিষয়েই আসি, আর কেনোই বা বিচ্ছেদ হওয়া উচিত।
শুভশ্রীর যখন ব্রেকাপ হয়, তখন দুজনের সম্মতিতেই হয়, দুজনই আসলে দুজনকে ছেড়ে দিতে হয়েছিলো, শুভশ্রী ছেড়ে দিয়েছিলো আর দেব ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছিলো। শুভশ্রী সম্পর্কের এক পর্যায়ে আর দশটা বাঙ্গালি মেয়ের মতো ঘর চেয়েছে, সন্তান চেয়েছে যেটাতে দেব রাজি ছিলোনা। এই জুটির ব্রেকাপের পর প্রায় চার বছর শুভশ্রী মিডিয়াতে কাজ করেনি, কারও সাথে যোগাযোগ করেননি, মিডিয়াতে তেমন ইন্টারভিউ দেয়নি, সে চেয়েছিলো দেবকে তার শূন্যতাটা বোঝাতে আর তার ফিরে আসার অপেক্ষায়। দেব যে কষ্ট পায়নি তা কিন্তু নয়, দেবও ডিপ্রেশনে ছিলো প্রচুর, তখনকার অনেক ইন্টারভিউতে সে নিজেই এসব বলতো।
'ধূমকেতু' সিনেমাটা আগেই ওদের লক করা ছিলো ইনেশিয়াল স্টেজে, তাই শুভশ্রী আরও একবার দেবের মুখোমুখি হতে হয়েছিলো, এবং তখন তিনি দেখলেন দেবের জীবনে আসলে শুভশ্রীর জায়গাটা রিপ্লেস হয়ে গিয়েছে, সে বিকল্প খুঁজে নিয়েছে। দেব মূলত ব্রেকাপের ডিপ্রেশনের সময়ই রুক্ষ্মিণীর মেন্টাল সার্পোট পায় এবং সম্পর্কে জড়ায়। সম্পর্ক থেকে দুই ধরনের মুভ অন হয়, প্রথমটা অন্য কারও সাহায্য, মানসিক সার্পোট আর ভালবাসায়, দ্বিতীয়টা নিজেকে নিজের সার্পোট, গ্রুমিং আর ভালবাসায়। দ্বিতীয়টা মানুষটিকে করে শক্ত ভেতর থেকে মজবুত আর আত্নবিশ্বাসী।
লাস্ট ইভেন্টে বিচ্ছেদের পর প্রথমবার দেব-শুভশ্রী একসাথে হয়েছিলো, যদিও পুরো ইভেন্টটাই একটা বিজনেস আর সেজন্যই ওয়ার্কিং প্রোফেশোনাল হিসাবেই দুজনে অংশগ্রহন করেছে। কিন্তু পুরো ইভেন্টে যতবার তাদের প্রেম, অতীত নিয়ে প্রশ্ন এসেছে ততবার দেবকে খুবই আনইজি লেগেছে। সে প্রথমেই বলে দিয়েছে 'এমন কোনো প্রশ্ন করিস না যাতে বাড়ি গিয়ে মার খেতে হয়।' অন্যদিকে শুভশ্রী বলেছিলো, 'যত প্রশ্ন আমাকে কর, আমার কোনো সমস্যা নেই।' প্রত্যেকটা প্রশ্নের জবাবে শুভশ্রী কনফিডেন্স, অডিয়েন্সের সাথে কমিউনিকেশন সার্প এবং খুবই প্রোফেশোনাল ওয়েতে হ্যান্ডেল করেছে। অন্যদিকে দেবের উত্তরগুলোতে যেনো মনে হলো সে অনুতপ্ত, সে শুভশ্রীকে চাইলেই ধরে রাখতে পারতো। শুভশ্রী যেভাবে তাকে রোস্ট করেছে, সেখানে দেব ডিফেন্ডই করেনি। উল্টো সে দেখলাম এক পর্যায়ে বলতেছিলো ইন্টারভিউতে দেবের কথা আসলেই তোমার মুখটা গোমড়া হয়ে যায়, একটু হেঁসোও। মানে সে নিজেও জানে যে, সে যে কষ্টটা দিয়েছে সেটা শুভশ্রীকে কেউ তার নাম মনে করিয়ে দিলেও মুখটা মলিন হয়ে যায়।
আসলে কাউকে এমন কারনে ছেড়ে যাওয়া উচিত নয়, যাতে নিজের কাছে নিজেকে রিগ্রেট ফিল করতে হয়। যদিও দেব এখনও লীভ টুগেদারেই আছেন, বিয়ে সংসার এসবে তার পরিকল্পনা এখন অবধি নেই, তবে অবশ্যই রুক্ষ্মিনীর সাথে আগের সম্পর্কের থেকে যথেস্ট ম্যাডিউরড আচরন করতেই দেখা যায়।
অন্যদিকে কেউ ছেড়ে গেলে, ভাঙ্গা হৃদয়কে এমনভাবে জোড়া লাগিয়ে নিজের গন্ডিতে ফিরতে হয় যাতে আপনার ভাল থাকা দেখে বাকিরাও আনন্দিত হয়। যেমনটা শুভশ্রীর এক অন্যরকম কামব্যাকে দর্শক হয়েছিলো। ধুমকেতু সিনেমার একটা বিয়ের সিনের শ্যুটিয়ের দিন নাকি শুভশ্রী বাড়ি ফিরতে সারাপথই গাড়িতে বসে কেঁদেছিলো প্রাক্তনের জন্য, সেই দিনের চার বছর পর শুভশ্রী যখন আবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান তখন তিনি আগের থেকেও পরিপক্ব। এই যে নিজেকে ভেঙ্গে, জোড়া তালি না লাগিয়ে নতুন করে নতুনভাবে সাজিয়ে তোলা যেখানে অতীত এসে হাওয়ায় ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারবেনা নতুন আমিকে, সেটা কজন পারে? শুভশ্রী শুধু নতুন করে তার জীবন, সংসার, স্বামী, সন্তানদেরই হ্যাপি রাখেননি একইসাথে তার দর্শককেও নতুন এক তারকাকে চিনিয়েছেন।
কামব্যাকের পরের সিনেমা সম্ভবত 'পরিণীতা', কি চমৎকার অভিনয়টাই করেছিলো। এরপরে ধর্মযুদ্ধ, ইন্দুবালা ভাতের হোটেল, গৃহপ্রবেশ 'সবগুলো কাজই তার আগের করা কাজের থেকে বেটার।
এজন্যই বিচ্ছেদ দরকার, নতুনভাবে নিজেকে আবিস্কার করার জন্য হলেও দরকার। জীবনে মানুষ না হারালে মানুষের ভ্যেলুস বোঝা যায়না, কারও থেকে কষ্ট না পেলে কষ্টের স্বাদ বোঝা যায়না, যে কারনে অন্যকে কষ্ট দেয়া সহজ হয়ে যায়। ভুল মানুষ, ভুল সময়, ভুল ভালবাসা জীবনে না আসলে নিজের জন্য সঠিক মানুষ, সঠিক সময়, সঠিক ভালবাসা ফিগার আউট করা যায়না। তাই বিচ্ছেদকে আসলে শোক থেকে শক্তিতে পরিণত করতে পারলেই, আর পজিটিভলি ফিরে আসলে আগের থেকেও বেটার মানুষ হিসাবে নিজেকে আবিস্কার করা যায়। যে মানুষ, মানুষের প্রতি আরও বেশি সংবেদনশীল, আন্তরিক। এজন্যই হয়তো শুভশ্রী এখন একটা হেলথি হ্যাপি লাইফ লীড করছে, যেখানে স্বামীর কাছে তিনিই সব, দুইটা ফুটফুটে বাচ্চা আছে যাদের মা ডাক তার অতীতে 'সংসার' চাইতে গিয়ে পাহাড় সমান কষ্ট নিয়ে ফেরার দিনগুলোকে হাওয়ায় মিলিয়ে দিয়েছে।
তাই ভালবাসা আসুক, বিচ্ছেদও আসুক আবার সেখান থেকে উঠে দাঁড়ানোর শক্তি ও সাহসও আসুক।❤️