01/06/2025
**শিয়ালের ভ্রান্তি**
একসময় সুন্দরবনের গভীরে বাস করত এক শক্তিশালী বাঘ। জঙ্গলের সকল প্রাণী তাকে ভয় পেত, কারণ সে ছিল নির্মম শিকারি, শক্তির প্রতীক। কিন্তু সেই বাঘের আশেপাশে সবসময় ঘোরাঘুরি করত এক চালাক শিয়াল।
শিয়ালটি খুবই চতুর ছিল। সে বাঘের কাছে নিজেকে বিশ্বস্ত ও প্রিয় করে তোলে। বাঘ যেখানে যেত, শিয়াল ঠিক পেছনেই থাকত। বাঘ যখন শিকার করত, শিয়াল সেই শিকারের কিছু অংশ পেত—শুধু বন্ধুত্বের খাতিরে। জঙ্গলের অন্য প্রাণীরা ভাবত, “এই শিয়াল কতই না ভাগ্যবান! সে বাঘের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।”
ধীরে ধীরে শিয়ালের অহংকার বাড়তে থাকে। সে ভাবতে থাকে, “আমি তো বাঘের খুব কাছের বন্ধু। আমিও একপ্রকার শক্তিশালী। কেউ আমাকে কিছু বলবে না!” শিয়াল জঙ্গলের ছোট প্রাণীদের ওপর ক্ষমতা দেখাতে শুরু করে, গলা উঁচু করে হাঁটত, এমনকি কখনও কখনও অন্যদের হুমকিও দিত।
একদিন হঠাৎ জঙ্গলে শিকার খুব কমে গেল। বাঘের অনেক দিন পেট ভরেনি। ক্ষুধায় কাতর বাঘ তখন আর ধৈর্য রাখতে পারল না। সে চারদিকে তাকিয়ে দেখল, তার পাশে কেবল সেই বিশ্বস্ত শিয়াল।
হঠাৎ এক লম্ফে বাঘ শিয়ালটির ঘাড়ে দাঁত বসাল। শিয়াল অবাক হয়ে বলল, “আমি তো তোমার বন্ধু! আমিই তো সবসময় তোমার পাশে ছিলাম!”
বাঘ হেসে বলল, “ক্ষুধা বন্ধুত্ব বোঝে না।”
আর এভাবেই শিয়ালের সেই বন্ধুত্বের মোহের অবসান ঘটে।
---
গল্পের শিক্ষা:
আমাদের সমাজেও কিছু মানুষ আছে যারা ক্ষমতাবান মানুষের ছায়ায় থাকেন। তাঁরা মনে করেন, এই কাছাকাছি থাকলেই তাঁরাও অদম্য হয়ে উঠেছেন। কিন্তু বাস্তব হলো, ক্ষমতার সঙ্গে থাকলেই কেউ চিরকাল রক্ষা পায় না। যখন স্বার্থের সময় আসে, তখন সেই "বন্ধুত্ব" বা "ঘনিষ্ঠতা" আর কোনো মূল্য রাখে না। ঠিক যেমন শিয়ালটি ভেবেছিল, কিন্তু শেষমেশ তার পরিণতি হলো করুণ।
তাই বাস্তবিক শক্তি নয়, নীতিবোধ ও আত্মসম্মানই মানুষকে সত্যিকারের মূল্যবান করে তোলে।