17/09/2025
ভুল ধারণা বদলানোর সময় উপস্থিত
অনেকের ধারণা এমন, যে আল্লাহ বিশ্বাস করে, নবী-রসুল বিশ্বাস করে, নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, জাকাত দেয়, সম্ভব হলে হজ করে, দাড়ি আছে, টুপি পরে, পাঞ্জাবি পায়জামা পরিধেয় ইত্যাদি সে মুমিন। সে কোনো পাপ করলে আল্লাহ ক্ষমা করে জান্নাত দান করবেন। তার জাতীয় জীবন কোন বিধান দ্বারা পরিচালিত হয় সেটা বিবেচ্য নয়। সমষ্টিগত জীবনে সে কার আনুগত্য করে সেটা বিবেচ্য না।
উক্ত ধারণার ব্যক্তিদ্বয় অজ্ঞতায় না সত্যতায় আছেন চলুন জেনে নেওয়া যাক। আল্লাহ মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বলতে গিয়ে বর্ণনা করেছেন- যখন তাদের মধ্যে কোনো বিষয়ের ফয়সালা (রায়) করার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রসুলের দিকে আহ্বান করা হয় তখন তারা বলে, আমরা শ্রবণ করলাম এবং আনুগত্য [পালন করব] করলাম, নিশ্চয়ই ইহারাই সত্যবাদী (সূরা নূর: ৫১)।
লক্ষ করুন। এখানে আল্লাহ কী বিষয় উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ উল্লেখ করেছেন 'ফয়সালা' অর্থাৎ বিচার-আচার। অর্থাৎ যারা মুমিন হবে তারা তাদের জীবনে সৃষ্ট যেকোনো সমস্যার সমাধার জন্য দ্বারস্থ হবে আল্লাহর বিধানের, আল্লাহর প্রেরণকৃত জীবনব্যবস্থার। অন্য কারো কাছে যাবে না। আচ্ছা বলুন তো, বর্তমানে ইসলামের অনুসারী দাবিদারেরা তাদের জীবনে সৃষ্ট সমস্যা সমাধার জন্য কোথায় যায়। তারা কী আল্লাহর বিধানে যায়, নাকি মানবসৃষ্ট বিধানে যায়? মানবসৃষ্ট বিধানে।
তাহলে তারা কী আল্লাহর বিধান শ্রবণ ও আনুগত্য করল? করল না। যদি না করে তাহলে কী তারা মুমিন থাকল? থাকল না। আর সেটা আল্লাহই বলে দিয়েছেন। সূরা মায়েদার ৪৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- যারা তাঁর নাজিলকৃত বিধান দ্বারা ফয়সালা দেয় না, হুকুম দেয় না, জীবন পরিচালনা করে না তারা কাফের। প্রশ্ন উঠতে পারে, কাফের হলে কী তারা উক্ত বিশ্বাস রাখত ও আমল করত। এর উত্তর হলো, হ্যাঁ। মক্কার কাফের মোশরেকরাও আল্লাহ ও পূর্ববর্তী নবী বিশ্বাসী ছিল, আমল করত।
কিন্তু তারা সমষ্টিগত জীবনে ফয়সাল দিত বিভিন্ন দেবতার নামে। মূলত সেই সব দেবতা ছিল উৎস, ফয়সালা দিত সমাজের গোত্রপতিরা। যার ফলে সমাজের বৃহৎসংখ্যক লোক মুষ্টিমেয় কিছু লোকের দ্বারা শোষিত ও নিপীড়িত হচ্ছিল। এজন্য আল্লাহর রসুল এসে মক্কার লোকদের আল্লাহ বিশ্বাসী হওয়ার প্রতি বা কোনো আমলের প্রতি আহ্বান না করে সরাসরি সমষ্টিগত জীবনে আল্লাহর বিধান গ্রহণ ও কার্যকরী করার আহ্বান করেছিলেন। যা কলেমা বলে অভিহিত।
ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রে যে কলেমা পাঠ করানো হয়। সেই কলেমার অর্থই হলো, আল্লাহর হুকুম-বিধান ছাড়া আর কারো হুকুম-বিধান মানি না, মানব না। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (শেষে নবীর নাম যুক্ত হয়েছে)। যারা বোধসম্পন্ন আশা করি তাদের জন্য এই তথ্যই যথেষ্ট হবে সত্য বোঝার জন্য। শেষে শুধু একটুই বলা যেতে পারে, যে প্রকৃতপক্ষে সত্যের অনুসন্ধানে তার কাছে সত্য পৌঁছানো নিশ্চিত। কিন্তু সে সত্য লাভ করবে কিনা সেটা তার আল্লাহর প্রতি ও সত্যের প্রতি সমর্পণের আকুলতা ও তার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ নির্ণয় করে বলে সৃষ্টি সাক্ষাৎ দেয়।