17/08/2025
♥️♥️খাজা গরিব নেওয়াজ অতি উঁচু পর্যায়ের ওলি। তিনি এমন কথাও বলেছেন যা ওলিদের অবাক করে। যেমন একস্থানে তিনি বললেন যে, ‘(হজরত) ইসার (নবির) সানিই আমি তথা আমিই দ্বিতীয় ইসা। কারণ, তাঁর কাছে যে রুহুল কুদ্দুস সেই একই রুহুল কুদ্দুস আমার কাছেও।’ ফারসি ভাষায় তাঁর এই অপূর্ব কথা আমরা দেখতে পাই যেমন, দাম বা দাম রুহুল কুদ্দুস আন্দার মঈনে মি দামাদ- মান নামিদানাম মাগার মান ইসায়ে সানি শুদাম।
হজরত শরফুদ্দিন ইয়াহিয়া মুনিরি ওরফে মখ্দুম শাহ্ বিহারির মকতুবাতে সদি নামক বইতে এলমে মারেফতের অতি উঁচু স্তরের কয়টি উপদেশ আমরা পাই এবং তাঁর একটি উপদেশ নিম্নে তুলে ধরলাম। তিনি তাঁর জনৈক মুরিদকে বলছেন যে, ‘জেনে রাখো বাবা, দুনিয়ার সবচাইতে বড় পাপী বলে গণ্য ব্যক্তিটি দুনিয়ার সবচাইতে উত্তম ব্যক্তিটির মাথা লাঠির দ্বারা আঘাতে জখম করলো বলে দেখলে, কিন্তু সেই আঘাত পাপী ব্যক্তিটি করে নি। তুমি বলবে, তবে? আমি এখন যা বলবো উহা তোমার বিশেষ তথা খাস বন্ধু ছাড়া কাউকে বলবে না। জেনে রাখো, সেই লাঠির আঘাত সেই পাপী ব্যক্তিটি করে নি। কারণ, আল্লাহর ইশারা ছাড়া তার পক্ষে লাঠি তোলা অসম্ভব। তুমি বলবে, এটা কেমন কথা? আমি বলবো, বাবা তুমি পরদার ভেতরে আছ, পরদা যদি খুলতে পার তবে দেখতে পাবে সব তাঁরই রহস্যময় লীলাখেলা। তুমি দেখতে পাবে যে, তিনিই বিচারক, তিনিই কৌশুলী তথা উকিল, তিনিই বাদী এবং তিনিই বিবাদী। কারণ, তিনি ছাড়া কিছুই নেই।’ আহাদ রূপের গুপ্তদর্শন এখানেই, যা তোমার কাছে অমিল-বেমিল এবং কেমন যেন খাপছাড়া মনে হবে। মোকামে তৌহিদে না যাওয়া পর্যন্ত আহাদ রূপটি মৌখিক স্বীকৃতিরই নামান্তর।
হোমিওপ্যাথিক ঔষধের নবম শক্তিতে ঔষধের কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায় না। তা হলে এক হাজার শক্তিতে কী থাকতে পারে? অথবা একলক্ষ কিংবা দশলক্ষ শক্তিতে? ঔষধের কোনোই অস্তিত্বই নেই, কিন্তু অস্তিত্বহীন ঔষধ রোগের মূলে গিয়ে আঘাত করছে। ঔষধ নেই অথচ শক্তি আছে- এ কেমন কথা?
এক ফোঁটা ধাতুর (সিমেন) মধ্যে কোটি কোটি শুক্রকীট (স্পারমাটোজা) হতে একটি কীটের ক্রমবিকাশের পূর্ণাঙ্গরূপটি হলো মানুষ। আরও একটু তলিয়ে দেখি, দেখি এই ধাতু কোথা হতে এলো? শ্বেত (এ্যালবুমিন) ও লৌহ কণিকার (হিমোগ্লোবিন) মিশ্রিত রূপ রক্ত হতে ধাতুর জন্ম। রক্ত কোথা হতে এলো? খাদ্যদ্রব্য হতে রক্তের জন্ম। খাদ্যদ্রব্য কোথা হতে এলো? মাটি, পানি, আলো এবং বাতাস হতে খাদ্যদ্রব্যের জন্ম। মাটি, পানি, আলো এবং বাতাস কোথা হতে এলো? এভাবে পর পর চিন্তা করলে, আসল মূল কোথায়, এর উত্তর খুঁজতে গেলেই নিজেকে চেনার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ, নিজেকে চিনতে পারলেই আল্লাহকে চেনা হয়ে যায় বলে ইসলাম ঘোষণা করেছে এবং ইহাই ইসলামের একমাত্র উপদেশ। দ্বিতীয় কোনো উপদেশ ইসলাম দেয় নি।
আল্লাহ এক কিন্তু তাঁর গুণাবলি অনেক। অনেক গুণাবলির মধ্যে সবচাইতে প্রিয় গুণটি তাঁর কী? ‘ইচ্ছা’ তাঁর সবচাইতে প্রিয় গুণ। সব গুণগুলোই ‘ইচ্ছা’ নামক গুণের অধীন। ‘ইচ্ছা’ হলো সকল গুণের নেতা বা সরদার। কিন্তু এই শীর্ষস্থানীয় ‘ইচ্ছা’ গুণটিও একদম বেকার হয়ে পড়ে কখন, কোথায় এবং কার কাছে? তিনটি প্রশ্নের একটি ছোট্ট উত্তর হলো প্রেমের তথা ইশকের কাছে ‘ইচ্ছা’ বেকার হয়ে পড়ে। প্রেমের তথা ইশকের আগুন যখন প্রেমিকের তথা আশেকের মনে দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে, ‘ইচ্ছা’র দৃঢ় বাঁধনও তাকে থামিয়ে দিতে পারে না। মৃত্যুর যাতনাও প্রেমের কাছে তুচ্ছ। আইন-কানুন, রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান, ছোট-বড়, রাজা-প্রজা কোনো কিছুই প্রেমকে বেঁধে রাখতে পারে না। যেন একটি জ্বলন্ত আগুনের টুকরো। কে এগিয়ে যাবে নীতির আঁচলে প্রেমকে বেঁধে রাখতে? সব কিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে একাকার করে দেয় এই প্রেম। তাই তো জেনে-শুনেই সত্যদ্রষ্টা আদম খেয়েছিলেন নিষিদ্ধ গাছের ফল। জেনে-শুনেই আজাজিল ওরফে শয়তান গলায় নিয়েছেন কলঙ্কের মালা। বিশ্ববিখ্যাত ওলিয়ে কামেল হজরত শামসে তাব্রিজ এ রকম অতি গুপ্ত কথা তাঁর দিওয়ান-এ বলে দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের বলার অধিকার নেই। সত্য যে উলঙ্গ হয়ে পড়ছে, আবরণী আর যে থাকছে না। কামনার মায়াকাননে বাস করে কিছুই জানলাম না, বুঝলাম না। যত শিখি, যত পড়ি, তাতে আরও স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ে নিজের অজ্ঞতা। তবে কি নৈরাজ্যের আঁধারে হিংসা, আত্মগরিমা, লোভ আর কামনাই জানলাম? তবে কি আমাদের মতো আমিত্বের রশিতে বাঁধা জীবনে এটুকুই জানতে পারি যে, জীবনটা সত্য, মৃত্যুটাও সত্য এবং এর মাঝখানের ছুটোছুটিটা একটা ফাঁকা, বিরাট শূন্য। হিশাব মিলাতে গিয়ে দেখি কলুর চোখ-বাঁধা বলদের মতো অনেক পথ বেয়ে একই স্থানে দাঁড়িয়ে আছি, যেখান থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম!
- ♥️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️