15/10/2025
✨হারিয়ে যাওয়া মানুষ আর পরীর গল্প✨
নব্বইয়ের দশকের সময়টা একটু আলাদা ছিল। তখন হঠাৎ করেই কেউ হারিয়ে গেলে সেটা পুরো এলাকার বড় খবর হয়ে যেত। পত্রিকায় ছবি ছাপানো হতো, টিভিতে প্রচার হতো—“অমুক ব্যক্তি নিখোঁজ, খোঁজ দিলে পুরস্কার দেওয়া হবে।”
সবাই আশা করত একদিন না একদিন সে ফিরে আসবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বেশিরভাগ মানুষ আর কখনোই ফেরেনি। যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছিল তারা।
যখন সাধারণ উপায়ে খোঁজ মেলেনি, তখন শুরু হতো অলৌকিক উপায়ে চেষ্টা। কেউ যেত পীর, ফকির, কবিরাজ বা তাবিজওয়ালার কাছে। তারা আবার খুব রহস্যময়ভাবে বলতো —
“লোকটা গাছের ভেতর কোথাও আছে”,
“সমুদ্রের ধারে আছে”,
“নদীর পাড়ে আছে” ইত্যাদি।
কিন্তু স্পষ্ট করে কিছুই বলতো না।
তবুও হারানো প্রিয়জনের পরিবার তাদের কথায় আশার আলো খুঁজে পেত। কারণ প্রায় সবাই বলতো — “বেঁচে আছে, ফিরে আসবে।”
সবচেয়ে মজার বিষয় ছিল, তখন প্রায়ই মানুষ বিশ্বাস করত — কেউ যদি হঠাৎ হারিয়ে যায়, তবে নিশ্চয় পরীরা ধরে নিয়ে গেছে। এটা কোনো কল্পকথা বলে কেউ ভাবত না। বরং এটা স্বাভাবিক ব্যাখ্যাই মনে করা হতো।
আর আশ্চর্যের কথা হলো, এই পরীর গল্প কেবল পুরুষদের ক্ষেত্রেই শোনা যেত। কোনো মেয়ে হারিয়ে গেলে কখনো বলা হতো না “পরী ধরে নিয়ে গেছে।”
আসলে সেই সময়ে মানুষ পাচার ছিল অনেক বেশি। সাগরপথে, সীমান্ত পথে অনেক মানুষকে ফাঁকি দিয়ে বাইরে পাঠানো হতো। কেউ যদি দূরে কোথাও দুর্ঘটনায় মারা যেত, সেই খবর পাওয়া তখনকার দিনে প্রায় অসম্ভব ছিল। ফোন, ইন্টারনেট বা ক্যামেরার যুগ তো তখনও আসে নাই।
তাই হারিয়ে যাওয়া মানুষদের নিয়ে তখনকার সমাজে গড়ে উঠেছিল একধরনের রহস্য আর বিশ্বাস—যা আজ শুনলে অবিশ্বাস্য লাগে, কিন্তু তখনকার মানুষ একে বাস্তব ভাবেই গ্রহণ করত।
একজন নব্বইয়ের দশকে হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তির পুরনো ছবি দেখে আজ মনে পড়ে গেল—
সেই হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলো কি আসলেই পরীর দেশে পৌঁছে গিয়েছিল? নাকি তারা ছিল এক নির্মম বাস্তবতার শিকার?