26/08/2025
বিয়ের আগে সবসময় ভাবতাম আমি অনেক ভালো একটা বউ হব। সবাইকে জান দিয়ে ভালোবাসব। সত্যি বলতে আমার যেটা মনে হয় বিয়ের আগে বেশিরভাগ মেয়েদেরই কোন শত্রু থাকে না। সবাই অসম্ভব ফ্যান্টাসিতে ভুগে।আমিও তাই ছিলাম।
অনেক আশা আর স্বপ্ন নিয়ে শশুড়বাড়ি গেছিলাম। বিয়ের আগে আমার শাশুড়ী আর ননদকে ফেরেশতা জানতাম। তবে একটা হিসাব মিলাতে পারতাম না। কেন বাকি দুই জা বাপের বাড়ি থাকে ১২ মাস!
বিয়ের পরে আমার শাশুড়ী বিয়ের ৭ দিনের মাথায় আমাদের রুমের দরজায় প্রচন্ড জোরে জোরে লা*থি দিত আর বলত শুয়...রের বাচ্চারা আর কত ঘুমাবি উঠ্ উঠ্।বিয়ের ১০ দিনও যায়নি আমাদের নাকি রাতে দরজা খুলা রেখে ঘুমাতে হবে।আমাদের রুমে হাই কমোডের ওয়াশরুম।এটা তার মেয়ের প্রতিদিন এর অর্ডার।
এর কারণ কি জানেন? আমার মায়ের দেওয়া ৭ ভরি গয়না কেন আমি তার হাতে তুলে দিলাম না।আমার শশুড়বাড়ি থেকে আমি দুইটা চেইন ছাড়া আর কিছুই পাইনি।আমার মা কেন ৫ লাখ নগদ অর্থ আমার শাশুড়ীকে না দিয়ে আমার স্বামীকে ব্যাবসার জন্য ভালোবেসে দিল এই রাগ।তাছাড়া তার ছেলের এখনো বিয়ের বয়সই নাকি হয়নি (৩২)। আমি আমার বয়স লুকিয়ে( ২৩) রাখি তাদের মা মেয়ের ধারণা। আমার বয়স তার মেয়ের মতো ৩০+ নাকি হবে।উঠতে বসতে অপমান। অপদস্ততা।বাইরের মানুষের কাছে তারা মা মেয়ে একেবারে ফেরেশতা।
আমি সিলেটের মেয়ে ঢাকায় গিয়ে ওদের বাসার পানি খেয়ে পাতলা পায়খানা হতে হতে পুরা মরার মতো অবস্থা। আমার জামাই তখন দেশের বাইরে।আমাকে আল্লাহর কসম যদি একটাবার ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যেত এরা। আমার মা ফোন করে প্রচন্ড রাগারাগি করছিল সবার সাথে। আপনারা যদি ডাক্তার না দেখান আমরা সিলেট থেকে আসছি মেয়েকে ডাক্তার দেখিয়ে মেয়েকে নিজেদের সাথেই নিয়ে আসব।এই কথা কেন বলল এর জন্য মা মেয়ে আমার পেছনে কু কুরের মতো লেগে গেল। বাধ্য হয়ে মহাখালি নিয়ে যায়।তাও জা কে দিয়ে পাঠায়।
আমি পর্দা করি এটা তারা সহ্য করতে পারে না।আমি কেন লিপ্সটিক লাগিয়ে তাদের মতো বাইরে বের হইনা। কথায় কথায় উপহাস আর ব্যাং*ঙ্গাত্নক ঠাট্টা মশকরা হাসাহাসি। আমি আল্লাহর কসম করে বলছি ,আমার কান্না সবাই শুনছে।ভাতের পাতে কি যে কান্না করতাম।
আমার ভাসুররা আমাকে আজও দেখেনি।কিন্তু ওরা আমার কান্না শুনেছে।আমি নাকি এত এত খাই।অথচ আমি ডায়েট করতাম তখন। আমার নামে যত মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা।মা মেয়ে।সারাদিন কাজ করতে করতে পাগলের মতো হয়ে থাকি। তাও কেউ এসে জিগায় না।আজকে ইতিহাস রচনা হয়ে যাবে যদি সব বিস্তারিত লিখি।তারা মা মেয়ে সারা দুনিয়ার কাছে প্রচন্ড ভদ্র অমায়িক আর অসম্ভব নরম মানুষ।অথচ আমার ননদ ২ বছরও সংসার করতে পারে নি।তার শাশুড়ী ননদ তাকে নিয়ে দুইদিন পরপর বিচার সালিশ।সে অতিত প্রেমিকের সাথে কথা বলে। ঘরের কোন কাজ করে না।সারাদিন নাকি সেজেগুজে খালি স্বামীর সাথে ঘুরতে যায় ,ঘুরে ফিরে। শাশুড়ী নিজে নিজের হাত ফাটিয়ে ফেলছে তার উপর জিদ করে। আমার ননদের ডিভোর্স হয়ে গেছে।
আর সে আমার শশুড়বাড়ি এসে পায়ের উপর পা তুলে শুধু অরডার আর দুই মা মেয়ে মিলে সারাক্ষণ নেগেটিভ জিনিস খুজে খুজে বের করে বাসায় রাজনীতি করা।মেয়ের যা খেতে মনে চায় আমাকে সাথে সাথে তা বানিয়ে এনে দিতে হয় ,নাহলে আমি খারাপ।সে ঢাকা ইউনিভার্সিটি পাশ করা মেয়ে। তার অরডারে বাসায় সব রান্না হয়।সে যা বলবে তাই আমাকে করে দিতে হবে।আমি আমার রুমে আলাদা ভাবে দরজা লাগিয়ে থাকতে পারবনা।
আমি শুধু অপেক্ষায় থাকি ওরা যদি একটাবার বাসা থেকে বের হত আমি ডিম ভেজে একটু ভাত যদি খেতে পারতাম।অথচ বাকি দুই ছেলে ,ছেলের বউ আমার শাশুড়ী আর ননদকে দুই পয়সার দাম দেয়না।
হ্যা আজ আমিও বদলে গেছি আর সবার মতো। অনেক বদলে গেছি। আমি দুই হাত তুলে আমার আরশের মালিকের কাছে বিচার দেই এদের নামে।আল্লাহ যেন দুনিয়ায় ওদের পাওনা বুঝিয়ে দেয় অক্ষরে অক্ষরে।
আমি স্বামীর সাথে এখন দেশের বাইরে থাকি আলহামদুলিল্লাহ।এটাও তাদের ভালো লাগছেনা।কবে দেশে যাব তাদের কাজ করে খাওয়াব সেইজন্য বসে আছে।কয়দিন আগে বাসায় আমাকে নিয়ে ছেলের সাথে ফোনে সে কি ঝগড়া।হয় আরও বেশি টাকা পাঠা আর নাহয় বউ পাঠা। আমাদের কাজ করে খাওয়াক।
আমিও বলে দিছি।আমি কবে দেশে যাব না যাব এ শুধু আমার ব্যাপার।আমি কারও দাসি না।আজ আমি নিজেকে নিয়ে ব্যাস্ত আলহামদুলিল্লাহ।আমার স্বামী সন্তান ছাড়া এদের কাউকে আমি চিনিনা।আমি ঘৃনা করি। আমি ঘৃনা করি।আমি ঘৃনা করি।
এটা এখন একটা ট্রেন্ড হয়ে গেছে ,এ যুগের মেয়েরা আলাদা থাকে। একা থাকতে পছন্দ করে। হ্যা জানি সব এক না। কিন্তু তা বলে ঢালাও ভাবে সব মেয়েকেই দোষা হয়।কেন মেয়েরা এরকম করে এই সত্যটা কেউ কখনোই জানতে চায়না।কেউ না।সবাই থাকুক ভালো সবার মতো।
- কালেক্টেড