02/08/2025
আমাদের বাঙ্গালি স্ত্রীদের প্রতি স্বামীরা কেন আগ্রহ হারিয়ে ফেলে?!
দিন, রাত, মাস বছর এক সাথে থাকার পরেও কেন তাদের ভেতর অনেক দূরত্ব তৈরি হয়?!
আমার কিছু বোনেরা আমাকে অনেক কষ্ট থেকে প্রশ্ন করে, যাদের বিয়ের বয়স দেড় কি দুই বছর! প্রশ্ন করে, তাদের স্বামীরা এখন আর সময় দেয়না, গল্প করে না। কিছু শুনতেও চায়না, ভুল বোঝে, ঝগড়া হয়। কি করবে?! ছেড়ে চলে আসতে ইচ্ছে করে, কিন্তু লোকটাকে তো ভালোবাসি। কিংবা একটা বাচ্চা আছে।
আপনিই বলুন কিভাবে আমাদের সমাজে দাম্পত্য জীবন সুখের হবে? জইন ফ্যামিলি রুলসের মধ্যে একটা মেয়ে চাইলেই কি আর নিজের মতো করে স্বামীর কাছে রিপ্রেজেন্ট করতে পারে নিজেকে?
সে যে ভোর পাঁচটা থেকে রাত ১২ টা টানা পরিশ্রম দেয় একটা মানুষ, এরপর মধ্যরাতে এসে সে আপনাকে বিছানায় কিভাবে সুখ দেবে? একটা যুক্তি দিন।
কিভাবে সে নিজেকে গুছিয়ে রাখবে? একটু সুন্দর করে চুল বাঁধবে, একটা ম্যাগী হাতের ব্লাউজ পরবে ম্যাচিং শাড়ি বা চুড়ির সাথে, এরপর হয়তো রান্নাঘর থেকে ডাক আসবে চা করে দাও, ভাত বসাও, রুটি বানাও, টেবিল গোছাও, অমুক আসবে, তমুক যাবে। একজন কনজার্ভেটিভ মাইন্ডের মেয়ের পক্ষে কি এভাবে খোলামেলাভাবে ১০ জনের সাথে সংসার করা সম্ভব?
এখন কি করা লাগবে? তার শাড়ি চুড়ি আর ঠোঁটের লিপস্টিক মুছে লাইক জরিনার মা হয়ে বেড রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে হবে। এরপর যখন রাতে এই সংসার ছুটি দেয়, তখন কি আর শক্তি থাকে যে একটু চুলে চিরুনি চালাতে? কিংবা একটা নতুন ড্রেস গায়ে জড়াতে!! বিছানায় পিঠ জড়ানোর সাথে সাথে মনে হতে থাকে হাড় গুলো সব জোড়া নিচ্ছে, কোথায় তলিয়ে যাচ্ছে দেহ, ঘুম এসে ক্লান্তির আবেশে চোখ বুঝে দেয়। স্বামী নাকম হার্ড কপিটার কথা আর কি মনে থাকে???
এরপর দিনে দিনে ইচ্ছের মৃত্যুতে বয়সের ভারে যৌবন যখন ফ্যাকাসে হতে শুরু করে, আমাদের পুরুষসঙ্গীর আর মন জুড়োয় না,প্রাণ ভরে না টাইপ অবস্থা।
এই জায়গায় এসে আপনি খাট্টা ইংরেজি সালের মা চাচীদের মতো তাদের জীবনের উদাহরণ টানতে পারেন চাইলে। তাহলে আমিও বলব, ভাই সে যুগের বাপ চাচাদের মোবাইল আসক্তি ছিল না, এত পরকীয়া আর অফিস কলিগও ছিল না।
কড়া পারফিউম মেখে আপনার বাপ চাচারা অফিসের সুন্দরী রমনীর সাথে প্রতি সপ্তাহে এক দুইবার লাঞ্চে যেতো না।
আবার আপনাদের এই ব্যাপারে কিছু বললেই চ্যাৎ করে উঠে বলে বসেন- তোমার জন্য কি আমি চাকরি বাকরি করব না?
মাওলানা তারিক জামিলের একটা বক্তব্য খুব মনে লেগেছে - জইন ফ্যামিলি সিস্টেম আমাদের স্বামী স্ত্রীদের ভেতর সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়। আর এই কারণেই আমাদের সমাজে এত এত দাম্পত্যকলহ। এক ঘরে ১৪ জন থাকে, একজন কাজের লোকের মতো খাটে এরপর ওই লোকটাই আবার সমালোচনার স্বীকার , বিচারের সম্মুখীন। পরের বাড়ি মেয়ে বলে কথা, ছেলে পক্ষ নিলেই, ওমা জাদু জানে এই মেয়ে তাবিজ কি কারিশমা বলে কানাকানি শুরু।
আমি বলি কি, এমন তাবিজ করা আসলে সব স্ত্রীদের উচিত। অন্তত একটা হালাল সম্পর্ক মধুর তো থাকবে। তাবিজ করে পারলে জামাই নিয়ে পাতালে চলে যাওয়া উচিত। এতে করে এসব টক্সিক মার্কা ফ্যামিলি মেম্বারদের থেকে তো বাঁচা যাবে!
এক বোন জানালো- আপু সপ্তাহে একদিন আমার উনি ছুটি পায় কিন্তু ওইদিন আমার ননদ নন্নাস ৫ জনই আমাদের বাসায় চলে আসে। আমি যে একটা দিন আমার বরের সাথে কাটাব সেই সময়টাও পাইনা। উনি একা একা রুমে ফোন টিপে আর আমি রান্নাঘরে ১৫ জন মানুষের পেটের খাবারের ব্যবস্থা করি। এই বয়সে যদি আমি তাকে কাছেই না পাই তাহলে আমার চামড়া কুচকে যাওয়ার বয়সে কি তাকে প্রয়োজন হবে?
আমি জাস্ট স্পীচলেস হয়ে শুনলাম আর তার গাল বেয়ে গড়ানো চোখের পানি দেখলাম। এই পানিগুলো কখনো বৃথা যাবে না আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি।
আরেকজন বলল- প্রায় দিন ফজরের নামাজের সময় আমার শাশুড়ি রুমের দরজায় এসে জোরে জোরে বাড়ি দিতে থাকে। যতক্ষণ আমরা দরজা খুলিনা। ফজরের নামাজের জন্য। বিবাহিত দম্পতির কি সব দিন ফজর পড়ার অবস্থা থাকে? উনি কি বোঝে না? নাকি ইচ্ছেকৃত করেন!
আমার একজন শিক্ষকের স্ত্রীকে জিগ্যেস করেছিলাম আপু আপনার বিয়ের ১৩/১৪ বছর পর ওয়াহিদ (ছদ্মনাম বয়স ৩) হয়েছে এর আগে ওর কোনো ভাই বোন হয়েছিল? উনার দেখলাম চোখ লাল হয়ে গেছে, এরপর বলল- তোমার স্যারকেই তো পাইনি কাছে। বিয়ের দিন রাত থেকে আমার শাশুড়ি যে তাহাজ্জুদের বাহানা দিয়ে দরজায় টোকা দিতেন সে দরজা ৩/৪ বছর আর লাগানো গেলো না। এরপর বাপের বাড়ি চলে গেলাম, আলাদা হওয়ার জন্য যুদ্ধ ঘোষণা করলাম তারপর ৮ বছর পর তোমার স্যারের সুবুদ্ধি হলে তিনি আমার জন্য বাসা নিলেন। আর ওয়াহিদ হয়েছে আমার শাশুড়ি নাতিকে এখনো কোলেও নেয়নি। ছোট বাচ্চাটাকে সুযোগ পেলেই মারতে থাকে। এই হিংসা কেন বলতে পারবে?
অথচ স্যার চরম ধার্মিক মানুষ। সবই জানেন সবই বোঝেন কিন্তু মা তো সব জানার উপর। তার উপর তো কথা বলা যাবে না।
আমি এর কোনো উত্তর দিতে পারিনি।
কত কত যে অভিযোগ আমাদের নতুন সংসারে ঢোকা মেয়েদের। আহ আল্লাহ সবার মনে শান্তি দিক।
একজন বলল, কয়েকটা টি শার্ট কিনেছিলাম বিয়ের আগে জামাইর সামনে পরব। কিন্তু পরার মতো পরিবেশ পাইনি। আমরা তো আর অতি আধুনিক না যে, রাস্তা ঘাটে এসব পরে ঘুরে বেড়িয়েছি। একজনের জন্য সব আয়োজন করব বলে জমা রেখেছিলাম, কিন্তু সংসার জীবন আর কল্পনা দুই মেরুর গল্প। এখানে বরটাও আমার না, ঘরটাও আমার না।
আমি ভাবছি আল্লাহ কেন বলেছেন যে, জাহান্নামের অধিকাংশ নারী হবে! অতপর উত্তর পেলাম, তাদের কেউ ননদ,কেউ শাশুড়ি, কেউ মামী, কেউ চাচী, কেউ জা, কেউ ভাবী।
এসব থেকে নিয়ত করলাম, ইনশাআল্লাহ আমার ছেলেদের ব্যাপারে আমি এমন কিছুই হতে দেব না। যে মেয়েটা আসবে সে প্রথম থেকেই নিজের বর আর নিজের ঘর দুইটাই পাবে।
এই কাজটা আমি নিজের স্বার্থেই করব, অন্তত আল্লাহর সামনে যেদিন দাঁড়াতে হবে সেদিন কারো হক নষ্টের দায় নিতে হবে না ইনশাআল্লাহ।
লেখা: Sabrina Vs Kabir