11/11/2025
পরীক্ষার সময়ে পুষ্টি: শিক্ষার্থীদের জন্য মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধক খাবার
একাডেমিক লাইফ মানেই পরীক্ষা। পরীক্ষার সময় মানেই উদ্বেগ, রাত জাগা আর অনিয়মিত খাবার। কিন্তু অনেকেই জানে না, এই সময়ের খাবারই মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা, মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তির উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। একটি সুষম খাদ্যাভ্যাস শুধু শরীর নয়, মস্তিষ্ককেও শক্তি ও স্বচ্ছতা দেয়, যা ভালো ফলাফলের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
১. মস্তিষ্কের পুষ্টির গুরুত্ব
আমাদের মস্তিষ্ক শরীরের মোট শক্তির প্রায় ২০% ব্যবহার করে। পরীক্ষার সময় এই চাহিদা আরও বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক পুষ্টি গ্রহণ করলে:
স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বাড়ে,মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমে,ঘুমের মান উন্নত হয়,
শরীর ও মস্তিষ্কে ভারসাম্য বজায় থাকে।
এক গবেষণায় দেখা যায়, নিয়মিত সকালের নাস্তা ও ফলমূল খাওয়া শিক্ষার্থীদের GPA বা ফলাফল উন্নত করে, বিপরীতে ফাস্টফুড ও অনিয়মিত খাওয়া একাডেমিক পারফরম্যান্স কমায়।
এছাড়া আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, বোর্ডিং স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা সকালের নাস্তা বাদ দেয় বা পুষ্টিহীন খাবার খায়, তাদের মনোযোগ ও কগনিটিভ ক্ষমতা কমে যায়।
২.গবেষণালব্ধ তথ্য ও পরীক্ষামূলক ফলাফল
একটি ছয়-দলীয় গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ (স্যামন, ম্যাকারেল, সার্ডিন) এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত ফল (ব্লুবেরি, আম, তরমুজ) নিয়মিত খেয়েছে, তাদের শেখার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
অন্যদিকে, যারা গিংকো বিলোবা ও ফলিক অ্যাসিড-এর মতো ব্রেইন বুস্টিং সাপ্লিমেন্ট নিয়েছে, তারাও শেখার ক্ষেত্রে উন্নতি দেখিয়েছে। অর্থাৎ, মস্তিষ্কের পুষ্টিকর খাবার ও মানসিক অনুশীলন (lumosity training) উভয়ই শিক্ষার গুণগত মান বাড়ায়।
৩.পরীক্ষার সময়ের জন্য উপকারী খাবারসমূহ
বাদাম ও বীজজাতীয় খাবার :
কাঠবাদাম, আখরোট ও কুমড়োর বীজে আছে ভিটামিন ই, জিংক ও ওমেগা-৩ যা মস্তিষ্কের কোষ রক্ষা করে এবং স্মৃতি শক্তি বাড়ায়।
ডিম :
ডিমে থাকা কোলিন নামক উপাদান শেখার ক্ষমতা উন্নত করে। সকালের নাস্তায় একটি সেদ্ধ ডিম হতে পারে দারুণ মস্তিষ্কের জ্বালানি।
মাছ (ইলিশ, রুই, টুনা) :
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের বিকাশ ও চিন্তাশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
ফলমূল (কলা, আপেল, বেরি জাতীয় ফল) :
এগুলো প্রাকৃতিক গ্লুকোজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে, যা মস্তিষ্ককে সজাগ ও ক্লান্তিহীন রাখে।
সবুজ শাকসবজি
পালং শাক, লাল শাক, ব্রকোলিতে আছে আয়রন, ফোলেট ও ভিটামিন কে, যা মনোযোগ ও সেল গ্রোথে সহায়তা করে।
হোল গ্রেইন খাবার :
ওটস, ব্রাউন রাইস বা হোল হুইট ব্রেড ধীরে শক্তি ছাড়ে, যা দীর্ঘসময় পড়াশোনার শক্তি ধরে রাখে।
পানি ও হারবাল ড্রিংকস
ডিহাইড্রেশন মনোযোগ কমায়। পর্যাপ্ত পানি বা গ্রিন টি, তুলসি টি পান করলে মনোযোগ ও শান্তি বজায় থাকে।
৪.যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত
চিনি ও সফট ড্রিংক : অল্প সময়ের শক্তি দেয়, পরে ক্লান্তি আনে।
জাংক ফুড : মনোযোগ কমায় ও ঘুমে সমস্যা করে।
অতিরিক্ত কফি :অস্থিরতা ও উদ্বেগ বাড়ায়।
৫. কিছু কুইক টিপস
৩–৪ ঘণ্টা পর পর হালকা খাবার খান।
সকালের নাস্তা কখনও বাদ দেবেন না।
প্রতিদিন অন্তত ৭ ঘণ্টা ঘুমান।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
মাঝে মাঝে ছোট বিরতি নিন।
পরীক্ষার প্রস্তুতির মতোই সঠিক খাদ্যাভ্যাসও সাফল্যের অংশ। গবেষণা প্রমাণ করে যে, স্বাস্থ্যকর খাবার ও পর্যাপ্ত পানি মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়, চাপ কমায় এবং শেখার ক্ষমতা উন্নত করে।
তাই মনে রাখুন “ভালো ফলাফল শুরু হয় ভালো খাওয়া থেকে।”
Aisha Rahman Rubab
Content writer, Healthroot