
11/07/2025
★ ১ম ছবিটি আমাদের বাংলাদেশের। ছবিতে মেয়েটি পিতা-মাতার শাসন মানতে রাজি নয় বলে পিতা-মাতার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
★ ২য় ছবিটি পাকিস্তানের। পাকিস্তানী অভিনেত্রীর মরদেহ গ্রহণ করতে সেই অভিনেত্রীর পিতা/পরিবার অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
দুইটি আলাদা দেশের সম্পূর্ণ আলাদা দুইটি সাম্প্রতিক ঘটনা। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, এই দুই ঘটনার চুড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে একটা যোগসূত্র আছে।
বিয়ে পারিবারিক পছন্দে হোক কিংবা নিজের পছন্দে, বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর চিন্তাধারায়, প্রতিদিনের পরিকল্পনায় থাকে সন্তানের সম্ভাব্য আগমনের আগাম প্রস্তুতির কথা। দীর্ঘ দশ মাস দশ দিন হাজারো কষ্টদায়ক যন্ত্রনা সহ্য করে #মা আগত সন্তান কে গর্ভে ধারণ করার পর বিগত সময়ের চেয়ে লক্ষগুণ বেশি যন্ত্রনার মধ্য দিয়ে সেই সন্তান কে দুনিয়ার মুখ দেখায়।
এ তো গেলো মায়ের কথা। #বাবা কি করে সেই সময়টাতে?
#বাবা গর্ভবতী স্ত্রীর দৈনিক কাজে যতটা সহযোগিতা করা যায়, তা করার পর হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে আয় করা অর্থ অনাগত সন্তানের সুস্থতার জন্য হাসপাতালে নিয়মিত চেক আপ কিংবা ঔষধপত্র কিনতে খচর করে। ভাল ফলমূল কিনে আনে। কার জন্য কিনে? স্ত্রী খেলে তা অনাগত সন্তানের সুস্থতায় কাজে দিবে বলে। সিংহভাগ সংসারে পিতার কেনা ফলমূল তার স্ত্রীকে খাওয়ানোর জন্য নয়, সন্তান কে খাওয়ানোর জন্য। এভাবেই একটা সময় পর ডেলিভারির ডেট আসে। যাদের ভাগ্য ভাল তাদের নরমাল ডেলিভারী হয়। আর যাদের কপাল পোড়া, তাদের সিজার করতে হয়। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের মাধ্যমে তিলতিল করে জমানো টাকা এবং সাথে বিভিন্ন উৎস থেকে আরো অনেক টাকা লোন নিয়ে সেই টাকা এক দিন কিংবা এক সপ্তাহে পিতা-মাতা হাসপাতালে উজাড় করার পর তার বিনিময়ে যেটা আশা করে, তা হল,------- #একটা_সুস্থ_সন্তান।
খরচ সেখানেই থেমে থাকেনি, এবার সন্তানের প্রতিটি দিন একটু একটু করে যখন বয়স বাড়ে, তার পেছনে পিতার আর্থিক খরচ এবং মাতার নির্ঘুম রাত বাড়তেই থাকে। রাত ১/২/৩/৪/৫ টায় সন্তানের ঘুম ভাঙ্গল, হয়ত পিতা ঘুমিয়ে আছে, কিন্তু মাতা? সে সন্তান কেঁদে উঠামাত্রই(কান্না তার মুখের ভাষা,সন্তানের তখন কথা বলার ক্ষমতা ছিলনা।) বুকের দুধ খাওয়াতে শুরু করে চোখে রাজ্যের ঘুম থাকা স্বত্ত্বেও। পালাক্রমে সন্তানের জন্য নিয়মিত চেক আপ, ডায়াপার, ল্যাকটুজেন ১/২/৩ কেনা। সন্তানের পেছনে সময় এবং অর্থ দুটোরই প্রয়োজন বাড়তে থাকে।
শুধু কি পিতা-মাতা? সেই সন্তানকে কেন্দ্র করে থাকা ডিরেক্ট আত্মীয়স্বজন ছাড়াও পাড়া-প্রতিবেশীদের আদর-যত্ন আর ভালোবাসায় সন্তান ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠে। অবশ্য সন্তানের জন্য, বেড়ে উঠা কে কেন্দ্র করে আমার এই লেখা পিতা-মাতার কষ্টের ১% হবে কিনা সএ ব্যাপারে আমি সন্দিহান।
সেই সন্তান বড় হয়ে পিতা-মাতার সামর্থ্য অনুযায়ী পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করে রূপে-গুণে-দক্ষতায় পরিপূর্ণ একজন মানুষ হিসেবে সমাজ তথা দেশের কাছে আত্মপ্রকাশ করে।
পরিপূর্ণ একজন মানুষ হয়ে সে ব্যক্তিস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে ১ম সুযোগেই পিতা-মাতার অবাধ্য হয়ে যায়(সব সন্তান নয়)।
উপরের ১ম ছবিতে মেয়েটি পিতা-মাতার শাসন মানতে রাজি নয় বলে পিতা-মাতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে! ভাবা যায়? এই যে মেয়েটি ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে মাইকের সামনে অনর্গল ইংলিশে কথা বলল,সেই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি হতে, পড়তে কতটা আর্থিক ইনভেস্টমেন্ট এর দরকার হয়েছে মেয়েটা সেটা বুঝে? স্কুলে ভর্তি খরচ, মাসিক বেতন, মেয়েকে স্কুলের অন্যান্য সহপাঠীদের সাথে তাল মিলিয়ে চালাতে মেয়ের পোশাক-আশাকের পেছনে কত খরচ করতে হয়েছে এ ব্যাপারে তার কোন ধারণা আছে?
বুঝলাম তার শাসন ভাল লাগে না। কেন তাকে শাসন করতে হবে? কোন পিতা-মাতা সন্তান কে শাসন করেনা, যতক্ষন পর্যন্ত সন্তান লাইনে থাকে। লাইনের বাহিরে না গেলে সেই সন্তানের শাসনের দরকার পড়েনা। মেয়েটাকে মুক্ত করে দিয়ে পিতা-মাতা নির্ভার হয়ে যাক সেটাই মেয়েটা চায়।
মেয়ে, তুমি মুক্ত।
২য় ছবির মেয়েটি ১ম ছবির মেয়েটির মত পিতা-মাতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের না করলেও অবাধ্য হয়ে চিত্রজগতে নাম লেখালো। একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করল। তার সাথে কে লিভ টুগেদার করল, তার লাইফস্টাইল কেমন, ইট ডাজন্ট মেটার।
মেটার ইজ দ্যাট, মেয়েটার রূপ যৌবনে ভাটা পড়ল/চিত্রজগতে তার ফর্ম ভাল যাচ্ছেনা। সে ধীরে ধীরে একা হয়ে পড়ল। ইনকাম সোর্স না থাকায় ২০২৪ সালের ১ম দিক থেকে ভাড়া পরিশোধ করা বন্ধ করে দিল অথচ ফ্ল্যাট ছাড়ল না। ভাড়ার টাকা পরিশোধ না করলেও কিছু না কিছু বুঝাপড়ার মাধ্যমে সে ঐ ফ্ল্যাটে ছিল। ঐ ফ্ল্যাটে থাকাবস্থাতেই মরণের আনুমানিক ৩০ দিন পর পুলিশ তার পচনশীল মরদেহ উদ্ধার করে।
লাশ কে নিবে? লাশ কোথায় যাবে? দায়ভার কার?
যে মেয়ে নিজের রূপ যৌবনের গরমে পিতা-মাতাকে অস্বীকার করে একা ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকতে পারে কিংবা পিতা-মাতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারে সেই মেয়ের লাশ পিতা-মাতা কোন যুক্তিতে বা কোন বন্ধনের কারণে গ্রহণ করবে?
জন্ম দিলে সে সন্তান, একথা সত্য। কিন্তু জন্মের পর পিতা-মাতা হাজারো ত্যাগের পর সন্তানকে বড় করে, সেই সন্তানই যখন তাদের বিরুদ্ধে যায় অন্যায্য দাবিতে, তখন সেই সন্তান মারা যাবার পর তার লাশ কেন পিতা-মাতা গ্রহণ করবে? কেন করতে হবে?
জাহান্নামে যাক এমন সন্তান। পথে-ঘাটে কুকুরের মত্ন পড়ে থাকুক, নর্দমার কীটে পরিণত হোক।