27/09/2025
মাউন্ট এভারেস্টকে তো আমরা পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হিসেবে জানি, তাই না? কিন্তু মঙ্গল গ্রহে গেলে মনে হবে, এভারেস্ট আসলে একটা ছোট্ট টিলার মতো! 😂
মঙ্গল গ্রহের অলিম্পাস মন্স (Olympus Mons) হলো আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরি, যার আকার আর উচ্চতা এতটাই বিশাল যে, এর সামনে এভারেস্টকে সত্যিই তুচ্ছ মনে হয়।
- মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা প্রায় ৮.৮ কিলোমিটার, কিন্তু অলিম্পাস মন্স-এর উচ্চতা প্রায় ২২ কিলোমিটার! অর্থাৎ, এটি এভারেস্টের উচ্চতার প্রায় ২.৫ গুণ। এভারেস্টে চূড়ায় পৌঁছতে যেখানে প্রায় ৮,৮৫০ মিটার উঠতে হয়, সেখানে অলিম্পাস মন্স-এ চূড়ায় পৌঁছাতে হবে প্রায় ২২,০০০ মিটার!
- অলিম্পাস মন্স-এর ব্যাস প্রায় ৬০০ কিলোমিটার, যা আমাদের পৃথিবীর বেশ কয়েকটি রাজ্যের বা দেশের আয়তনের সমান। উদাহরণস্বরূপ, এটি আমেরিকার অ্যারিজোনা রাজ্যের প্রায় সমান। আরেকটু সহজ করে বললে, এটি আমাদের বাংলাদেশের মোট আয়তনের (প্রায় ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার) প্রায় দ্বিগুণ!
- অলিম্পাস মন্স একটি ঢাল আগ্নেয়গিরি (shield volcano)। এর ঢাল এতটাই কম যে, এর গড় ঢাল মাত্র ৫ ডিগ্রি। এটি কোনো খাড়া পর্বত নয়, বরং একটি বিশাল, সমতল ঢালের মতো। এর উপর দিয়ে হেঁটে চললে বোঝাও যাবে না যে একটি বিশাল পর্বতে ওঠা হয়েছে! এর চূড়া এতই দূরে যে, এর গোড়া থেকে দাঁড়ালে এর চূড়া দেখাই যাবে না, কারণ এটি দিগন্তের আড়ালে চলে যাবে।
- পৃথিবীর আগ্নেয়গিরিগুলো সাধারণত কয়েক মিলিয়ন বছর সক্রিয় থাকে। কিন্তু অলিম্পাস মন্স-এর বয়স প্রায় ৩.৬ বিলিয়ন বছর, এবং বিজ্ঞানীরা মনে করেন এটি এখনও মাঝে মাঝে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। এর শেষ অগ্ন্যুৎপাত প্রায় ২ থেকে ২৫ মিলিয়ন বছর আগে হয়েছিল বলে মনে করা হয়, যা মহাজাগতিক পরিমাপে 'খুব বেশি দিন আগের নয়'!
- অলিম্পাস মন্স-এর চারপাশে একটি বিশাল খাড়া প্রাচীর আছে, যার উচ্চতা ৮ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এই প্রাচীরটি আগ্নেয়গিরির গোড়া থেকে শুরু হয়ে আশেপাশের সমতল ভূমি থেকে এটিকে আলাদা করে রেখেছে।
- কেন এটি এত বড় হলো? এর দুটি প্রধান কারণ আছে। প্রথমত, মঙ্গল গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর মাত্র ৩৭.৫%। অর্থাৎ, সেখানে কোনো কিছু খুব হালকা। দ্বিতীয়ত, মঙ্গল গ্রহে পৃথিবীর মতো প্লেট টেকটোনিকস নেই। ফলে, আগ্নেয়গিরির নিচে থাকা ম্যাগমা প্লুম (magma plume) একই জায়গায় মিলিয়ন বছর ধরে লাভা উদগীরণ করেছে, যা ধীরে ধীরে এই বিশাল আকার ধারণ করেছে।
- অতিকায় জ্বালামুখ (caldera)! অলিম্পাস মন্স-এর চূড়ায় একটি বিশাল জ্বালামুখ আছে, যা আমাদের মাউন্ট এভারেস্টের আকারের কাছাকাছি। এই জ্বালামুখের ব্যাস প্রায় ৮০ কিলোমিটার! এর ভেতরে ছয়টি আলাদা জ্বালামুখ একটার উপর আরেকটা করে বসে আছে।
- এটি শুধু সর্বোচ্চ নয়, বিশালও বটে! যদিও অলিম্পাস মন্স সৌরজগতের সর্বোচ্চ পর্বত, তবে এটি সবচেয়ে উঁচু পর্বত নয়। কারণ, ভেস্টা গ্রহাণুর 'রিয়াসিলভিয়া' নামে একটি পর্বত আছে, যা উচ্চতার দিক থেকে অলিম্পাস মন্সকে সামান্য ছাড়িয়ে গেছে। তবে, আয়তনের দিক থেকে অলিম্পাস মন্স অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
- নামটি এসেছে গ্রীকদের কাছ থেকে! গ্রীক পুরাণে দেব-দেবীদের নিবাস ছিলো অলিম্পাস পর্বত। যেহেতু এই আগ্নেয়গিরিটি এতটাই বিশাল যে এটিকে মহাজাগতিক দেবতাদের নিবাস হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে!
- ধুলোঝড়ের মধ্যেও দৃশ্যমান! মঙ্গল গ্রহে মাঝে মাঝেই বিশাল ধুলোঝড় হয়, যা পুরো গ্রহটিকে ঢেকে ফেলে। কিন্তু এই ঝড় এত বিশাল হলেও অলিম্পাস মন্স-এর চূড়া এতই উপরে থাকে যে, এটি ধুলোঝড়ের মেঘের উপরে উঠে যায়, এবং মহাকাশ থেকে সহজেই দেখা যায়। এটি যেন তার বিশালতার এক নীরব সাক্ষ্য!