
21/08/2025
ইতিহাসে মানুষের চিকিৎসা চর্চার নানা অদ্ভুত দিক দেখা যায়। চিকিৎসার নামে মানুষ মানুষের দে হ খা*চ্ছে ভাবা যায়! মধ্যযুগে এমনিই এক প্রথা ইউরোপে চালু ছিল। এ প্রথাকে বলা হতো মেডিকেল ক্যানিবালিজম (medical cannibalism)।
ইতিহাসবিদদের ভিত্তিতে, ইউরোপে মমি খাওয়ার প্রথা ১২শ থেকে ১৭শ শতাব্দী পর্যন্ত চালু ছিল। সবচেয়ে জনপ্রিয় সময় ছিল ১৬ থেকে ১৭ শতক। ১৮শ শতকের শুরু পর্যন্ত কিছু দেশে এটি চালু ছিল। যদিও ১৮শ শতকের মাঝামাঝি থেকে আধুনিক বিজ্ঞানের উন্নতির পর এই ধারণা ভ্রান্ত প্রমাণিত হয় এবং তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।
প্রাচীন আরবে মুমিয়া (mumiya)নামে এক প্রকার কালো পিচ বা বিটুমিন চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভুল অনুবাদ ও ভুল ব্যাখ্যার কারণে মুমিয়া শব্দটি মিশরের মমিকে বোঝাতে শুরু করে। ফলস্বরূপ ইউরোপে মিশরীয় মমির গুঁড়া, হাড় কিংবা অন্য অংশকে নানা রোগ নিরাময়ের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়।
বিষে বিষ খাটে প্রবাদের মতো তৎকালীন মানুষদের বিশ্বাস ছিল—একই জিনিস একই রোগকে সারায়। তাই মাথাব্যথা হলে মাথার খুলি গুঁড়া, রক্তপাত বন্ধ করতে মানুষের রক্ত, আর হাড় ভাঙলে হাড়ের টুকরো বা গুঁড়া খা ও য়া হতো। অনেকেই মনে করতেন, মৃতদেহে বিশেষ এক ধরনের নিরাময় ক্ষমতা রয়েছে, যা জীবিত মানুষকে রোগমুক্ত করতে পারে।
মমির গুঁড়া ও হাড় সাধারণত ওষুধ বা মদে মিশিয়ে খাওয়ানো হতো। কখনো এটি চকলেট বা ওয়াইনের সঙ্গেও পরিবেশন করা হতো। আবার মৃতদেহ থেকে সংগৃহীত চর্বি ক্ষতস্থানে মলম হিসেবে লাগানো হতো। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীদের দেহ থেকে এই চর্বি সংগ্রহ করে বিক্রি করা হতো। এমনকি ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় চার্লসের ওষুধ তৈরিতেও মানুষের হাড়ের গুঁড়া ব্যবহার করা হতো।
তবে শুধু ইউরোপ নয়, চীনের ইতিহাসেও এরকম উদাহরণ আছে। অনেকসময় করুণা বা কর্তব্যের কারণে আত্মীয়রা অসুস্থ প্রিয়জনকে নিজের শরীরের অংশ খাওয়াতেন। এটিকে বলা হয় এন্ডোক্যানিবালিজম (endocannibalism)। তবে ইউরোপীয় প্রথা ছিল বাজারকেন্দ্রিক ও বাণিজ্যিক, যেখানে মমির গুঁড়া পর্যন্ত ইউরোপ জুড়ে বিক্রি হতো।
#অদ্ভুতইতিহাস