30/09/2023
।। মুক্তিযুদ্ধ ।।
রমজান আলী,বয়স ১২/১৩। দিনাজপুর সীমান্তে হিলি এবং ফুলবাড়ির মাঝামাঝি জলপাইতলি। এখানে পাকিস্তান আর্মির শক্ত প্রতিরক্ষা অবস্থান। মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণের উদ্দেশ্যে রেকি করতে গিয়ে রমজান আলীকে সে ক্যাম্প থেকে বের হতে দেখে তাকে ধরে নিয়ে আসে তাদের কমান্ডার হামিদুল হোসেন তারেকের (বীর বিক্রম) কাছে। বলে,'স্যার, এ শালা রাজাকার'। রমজান আলী কেঁদে-কেটে যে কাহিনী শোনায় তা সত্যিই করুণ,বুক ভরা কষ্টের। রমজান বাবা-মার একমাত্র সন্তান। শান্তাহার রেল স্টেশনের পাশে তার বাবার একটি ছোট্ট চা-বিস্কুটের দোকান। এপ্রিলের প্রথমে পাকিস্তানিরা শান্তাহার এসে তার সামনেই তারা তার বাবাকে দোকানের ভিতর গুলি করে হত্যা করে। রমজান দৌড়ে কাছেই তার বাড়িতে যায়। দেখে তাদের ঘরসহ গোটা বস্তি আগুনে জ্বলছে। বস্তির সব লোক যে যেভাবে পারছে দৌড়ে পালাচ্ছে। বহু খুঁজেও মা'কে পায় না রমজান। আশ্রয় নেয় এক চালের গুদামের মালিকের কাছে। তারপর আরো দু'হাত বদল হবার পর এক মালিক তাকে এই পাকিস্তানি ক্যাম্পে দিয়ে যায়। এখানে সে থালা-বাসন ধোয়া থেকে সব ফুট-ফরমায়েশ খাটে। তার প্রচন্ড ঘৃনা পাকিস্তানিদের প্রতি। রমজান তার বাবা হত্যার এবং মা হারানোর প্রতিশোধ নিতে চায়। কমান্ডার তারেকের স্নেহে তাদেরই একজন হয়ে যায়। এলাকার পথ-ঘাট তার নখদর্পনে। ১৯ নভেম্বর ভোরে জলপাইতলির পাকিস্তানি অবস্থান আক্রমণ করে দখল করে মুক্তিযোদ্ধারা। গাইড আমাদের রমজান আলী। শত্রু অবস্থান দখলের আনন্দে ও উচ্ছাসে রমজান একাই দৌড় দেয় ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে। হঠাৎ বিকট শব্দ। শত্রুর পোঁতা মাইন-এ পড়ে রমজানের ছোট্ট শরীরটা খন্ড-বিখন্ড হয়ে যায়। যুদ্ধ জয়ের আনন্দ কোথায় মিলিয়ে গেল। প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা রমজানের জন্য বুক ভাসিয়ে সশব্দে কাঁদতে থাকে। এ পৃথিবীতে চোখের দু'ফোটা পানি ফেলার জন্য তখন তার আর কেউ নেই। সেদিন ঈদুল ফিতরের সকাল। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৬ গার্ড রেজিমেন্ট-এর কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল ভি কে দত্তের নির্দেশে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় লাস্ট পোস্ট বাজিয়ে রমজানকে সবাই শেষ বিদায় জানায়।
রমজান,বুদ্ধিজীবীদের কবরের ঠিকানা তো জানি। কিন্তু তোমার কবরটা জানি কোথায়?
Courtesy : Major Qamrul Hassan Bhuiyan (late)