Nilkhet Modern Library

Nilkhet Modern Library All kinds of books retailer, wholesaler and distributor

06/07/2024

গল্পটা জানেন নিশ্চয়। একবার পড়ুন৷

খলিফা হযরত উমর (রা)-এর কছে দুই ব্যক্তির অভিযোগ—'এই যুবক আমাদের পিতাকে হত্যা করেছে। আমরা এর বিচার চাই।'

দোষী যুবককে টেনে-হিঁচড়ে খলিফার দরবারে নিয়ে এসেছেন দুই ব্যক্তি। তারা তাদের পিতার হত্যার বিচার চান।

খলিফা হযরত উমর (রা) সেই যুবককে জিজ্ঞেস করলেন যে তার বিপক্ষে করা অভিযোগ সত্য কি না। অভিযোগ স্বীকার করল যুবক। দোষী যুবক সেই ঘটনার বর্ণনা দিলো—

'অনেক পরিশ্রমের কাজ করে আমি বিশ্রামের জন্য একটি খেজুর গাছের ছায়ায় বসলাম। ক্লান্ত শরীরে অল্প সময়েই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার একমাত্র বাহন উটটি পাশে নেই। খুঁজতে খুঁজতে কিছু দূর গিয়ে পেলাম, তবে তা ছিল মৃত। অভিযোগকারী এই দুই ব্যক্তির বাবাকে আমার মৃত উটের পাশে পেলাম। সে আমার উটকে তার বাগানে প্রবেশের অপরাধে পাথর মেরে হত্যা করেছে। এই কারণে আমি হঠাৎ করে রাগান্বিত হয়ে পড়ি এবং তার সাথে তর্কাতর্কি করতে করতে এক পর্যায়ে মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করে ফেলি। ফলে সে সেইখানেই মারা যায়। যা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ঘটে গেছে। এর জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।'

বাদীরা জানালেন—'আমরা এর মৃত্যুদণ্ড চাই।'

সব শুনে হযরত উমর (রা) অপরাধী যুবককে বললেন—'উট হত্যার বদলে তুমি একটা উট দাবি করতে পারতে, কিন্তু তুমি বৃদ্ধকে হত্যা করেছ। হত্যার বদলে হত্যা। এখন তোমাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হবে। তোমার কোনো শেষ ইচ্ছা থাকলে বলতে পারো।'

নওজোয়ান বলল—'আমার কিছু ঋণ আছে আর অন্যের রাখা কিছু আমানত আছে। আমাকে যদি কিছু দিন সময় দিতেন, আমি বাড়ি গিয়ে আমানত ও ঋণগুলো পরিশোধ করে আসতাম।'

খলিফা হযরত উমর (রা) বললেন—'তোমাকে এভাবে একা ছেড়ে দিতে পারি না। যদি তোমার পক্ষ থেকে কাউকে জিম্মাদার রেখে যেতে পারো, তবে তোমায় সাময়িক সময়ের জন্য যেতে দিতে পারি।'

নওজোয়ান বলল—'এখানে আমার কেউ নেই যে আমার জিম্মাদার হবে।' যুবক তখন নিরুপায় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

এই সময় হঠাৎ মজলিসে উপস্থিত একজন সাহাবি হযরত আবু যর গিফারি (রা) দাঁড়িয়ে বললেন—'আমি হবো ঐ ব্যক্তির জামিনদার। তাকে যেতে দিন।'

আবু যর গিফারি (রা)-এর এই প্রস্তাবে সভায় উপস্থিত সবাই হতবাক। একে তো অপরিচিত ব্যক্তি, তার উপর হত্যার দন্ডপ্রাপ্ত আসামী! তার জামিনদার কেন হচ্ছেন আবু যর!

খলিফা বললেন—'আগামী জুমাবার জুম্মা পর্যন্ত নওজোয়ানকে মুক্তি দেওয়া হলো। জুম্মার আগে নওজোয়ান মদিনায় ফেরত না আসলে নওজোয়ানের বদলে আবু যরকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হবে।'

মুক্তি পেয়ে নওজোয়ান ছুটলো মাইলের পর মাইল দূরে তার বাড়ির দিকে। আবু যর গিফারই (রা) চলে গেলেন নিজ বাড়িতে। অন্য লোকজন পেরেশানি নিয়েই স্ব স্ব বাড়িতে ফিরে গেলেন।

দেখতে দেখতে জুম্মাবার এসে গেল। নওজোয়ানের আসার কোনো খবর নেই। হযরত উমর (রা) রাষ্ট্রীয় পত্রবাহক পাঠিয়ে দিলেন আবু যর গিফারির (রা)-এর কাছে।

পত্রে লিখা—'আজ শুক্রবার বাদ জুমা সেই যুবক যদি না আসে, আইন মোতাবেক আবু যর গিফারির মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে। আবু যর যেন সময় মতো জুম্মার প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদে নববিতে হাজির হন।'

খবর শুনে সারা মদিনায় থমথমে অবস্থা। একজন নিষ্পাপ সাহাবী আবু যর গিফারী আজ বিনা দোষে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হবেন।

জুমার পর মদিনার সবাই মসজিদে নববির সামনে হাজির। সবার চোখে পানি। কারণ দন্ডপ্রাপ্ত যুবক এখনো ফিরে আসেনি।

জল্লাদ প্রস্তুত।

জীবনে কত জনের মৃত্যুদন্ড দিয়েছে তার হিসেব নেই। কিন্তু আজ কিছুতেই চোখের পানি আটকাতে পারছে না জল্লাদ। আবু যরের মতো একজন সাহাবি সম্পূর্ণ বিনা দোষে আজ মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হবেন, এটা মদিনার কেউ মেনে নিতে পারছেন না। এমনকি মৃত্যুদন্ডের আদেশ প্রদানকারী খলিফা উমর (রা) নিজেও চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। হৃদয় তাঁর ভারাক্রান্ত। তবু আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কারও পরিবর্তনের হাত নেই।

আবু যর (রা) তখনও নিশ্চিন্ত মনে হাঁসি মুখে দাঁড়িয়ে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত। জল্লাদ ধীর পায়ে আবু যর (রা) এর দিকে এগুচ্ছেন আর কাঁদছেন। আজ যেন জল্লাদের পা চলে না। পায়ে যেন কেউ পাথর বেঁধে রেখেছে।

এমন সময় এক সাহাবি উচ্চ স্বরে জল্লাদকে বলে উঠলেন— 'হে জল্লাদ! একটু থামো। মরুভুমির ধুলার ঝড় উঠিয়ে ওই দেখ কে যেন আসছে। হতে পারে ঐটা নওজোয়ানের ঘোড়ার পদধুলি। একটু দেখে নাও।'

ঘোড়াটি কাছে আসলে দেখা যায় সত্যিই এ সেই নওজোয়ান।

নওজোয়ান দ্রুত খলিফার সামনে এসে বলল—'আমিরুল মুমিনিন, মাফ করবেন। রাস্তায় যদি আমার ঘোড়া পায়ে ব্যথা না পেত, তবে যথা সময়েই আসতে পারতাম। বাড়িতে গিয়ে আমি একটুও দেরী করিনি। বাড়ি পৌঁছে গচ্ছিত আমানত ও ঋণ পরিশোধ করি। তারপর বাবা, মা এবং নববধুর কাছে সব খুলে বলে চিরবিদায় নিয়ে মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়ে মদিনার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। এখন আমার জামিনদার ভাইকে ছেড়ে দিন আর আমাকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে পবিত্র করুন। কেননা কেয়ামতের দিন আমি খুনি হিসেবে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে চাই না।'

আশেপাশের সবাই একেবারেই নীরব। চারিদিকে একদম থমথমে অবস্থা। সবাই হতবাক, কী হতে চলেছে! যুবকের পুনরায় ফিরে আসাটা অবাক করে দিলো সবাইকে।

খলিফা হযরত উমর (রা) যুবককে বললেন—'তুমি জানো তোমাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে, তারপরেও কেন ফিরে এলে?'

উত্তরে সেই যুবক বলল—'আমি ফিরে এসেছি, কেউ যেন বলতে না পারে, এক মুসলমানের বিপদে আরেক মুসলামান সাহায্য করতে এগিয়ে এসে নিজেই বিপদে পড়ে গেছিলো।'

এবার হযরত উমর (রা) হযরত আবু যর গিফারি (রা)-কে জিজ্ঞেস করলেন—'আপনি কেন অপরিচিত এই ব্যক্তির জামিনদার হলেন?'

উত্তরে হযরত আবু যর গিফারী (রা) বললেন— 'পরবর্তিতে কেউ যেন বলতে না পারে, এক মুসলমান বিপদে পড়েছিল; অথচ কেউ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।'

এমন কথা শুনে হঠাৎ বৃদ্ধের দুই সন্তানের মাঝে একজন বলে উঠল—'হে খলীফা, আপনি তাকে মুক্ত করে দিন। আমরা তার উপর করা অভিযোগ তুলে নিলাম।'

হযরত উমর (রা) বললেন—'কেন তাকে ক্ষমা করে দিচ্ছ?'

তাদের এক ভাই বলে উঠল—'কেউ যেন বলতে না পারে, এক মুসলমান অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল করে নিজেই স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ার পরেও অন্য মুসলমান তাকে ক্ষমা করেনি।’

[হায়াতুস সাহাবা-৮৪৪]

21/10/2022
Now available at Nilkhet modern library Colour print  volume 1&2Price:1900/-
11/09/2022

Now available at Nilkhet modern library
Colour print volume 1&2
Price:1900/-

Address

Nilkhet
Dhaka

Telephone

+8801753189991

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Nilkhet Modern Library posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Nilkhet Modern Library:

Share