
21/09/2024
✅আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
’’উক্ত কারণেই আমি বানী ইস্রাঈল্কে এ মর্মে নির্দেশ দিয়েছি যে, যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে হত্যার বিনিময় অথবা ভূপৃষ্ঠে ফাসাদ সৃষ্টির হেতু ছাড়া অন্যায়ভাবে হত্যা করলো সে যেন সকল মানুষকেই হত্যা করলো। আর যে ব্যক্তি কাউকে অবৈধ হত্যাকান্ড থেকে রক্ষা করলো সে যেন সকল মানুষকেই রক্ষা করলো’’। (মা’য়িদাহ্ : ৩২)
কাউকে অবৈধভাবে হত্যা করাও কবীরা গুনাহ্। তবে উক্ত হত্যা আরো ভয়ঙ্কর বলে বিবেচিত হয় যখন তা এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে হয় যাকে বাঁচানো সবার নৈতিক দায়িত্ব এবং যাকে হত্যা করা একেবারেই অমানবিক। যেমন: নিষ্পাপ শিশু, নিজ মাতা-পিতা, নবী-রাসূল, ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী রাষ্ট্রপতি অথবা উপদেশদাতা আলিমকে হত্যা করা।
✅আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
‘‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ্ তা‘আলার আয়াত ও নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করে, অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করে এবং মানুষদের মধ্য থেকে যারা ন্যায় ও ইন্সাফের আদেশ করে তাদেরকেও। (হে নবী) তুমি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। এদেরই আমলসমূহ ইহকাল ও পরকালে নষ্ট হয়ে যাবে এবং এদেরই জন্য তখন আর কেউ সাহায্যকারী হবে না’’। (আ’লি ’ইমরা’ন : ২১-২২)
✅আল্লাহ্ তা‘আলা উক্ত হত্যাকারীকে চির জাহান্নামী বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং তিনি তার উপর অত্যন্ত অসন্তুষ্ট। তেমনিভাবে তার উপর তাঁর অভিশাপ ও আখিরাতে তার জন্য দ্বিগুণ শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
✅আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
‘‘আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন মু’মিনকে হত্যা করে তার শাস্তি হবে জাহান্নাম। তার মধ্যে সে সদা সর্বদা থাকবে এবং আল্লাহ্ তা‘আলা তার প্রতি ক্রদ্ধ হবেন ও তাকে অভিশাপ দিবেন। তেমনিভাবে তিনি তার জন্য প্রস্ত্তত রেখেছেন ভীষণ শাস্তি’’। (নিসা : ৯৩)
✅আল্লাহ্ তা‘আলা নিজ বান্দাহ্দের গুণ-বৈশিষ্ট্য বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন:
‘‘আর যারা আল্লাহ্ তা‘আলার পাশাপাশি অন্য কোন উপাস্যকে ডাকে না। আল্লাহ্ তা‘আলা যাকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন যথার্থ (শরীয়ত সম্মত) কারণ ছাড়া তাকে হত্যা এবং ব্যভিচার করে না। যারা এগুলো করবে তারা অবশ্যই শাস্তি ভোগ করবে। কিয়ামতের দিন তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হবে এবং তারা ওখানে চিরস্থায়ীভাবে লাঞ্ছিতাবস্থায় থাকবে। তবে যারা তাওবা করে, (নতুনভাবে) ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে; আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের পাপগুলো পুণ্য দিয়ে পরিবর্তন করে দিবেন। আল্লাহ্ তা‘আলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু’’।
(ফুর্কান : ৬৮-৭০)
উক্ত হত্যার ভয়াবহতার কারণেই আল্লাহ্ তা‘আলা শুধুমাত্র এক ব্যক্তির হত্যাকারীকে সকল মানুষের হত্যাকারী বলে আখ্যায়িত করেছেন।
উক্ত হত্যাকান্ডকে হাদীসের পরিভাষায় সর্ববৃহৎ গুনাহ্ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
✅আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
‘‘সর্ববৃহৎ কবীরা গুনাহ্ হচ্ছে চারটি: আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা, কোন ব্যক্তিকে অবৈধভাবে হত্যা করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা। বর্ণনাকারী বলেন: হয়তো বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মিথ্যা সাক্ষী দেয়া’’। (বুখারী ৬৮৭১; মুসলিম ৮৮)
নিম্নোক্ত হাদীসগুলোতে হত্যাকান্ডের ভয়াবহতা ও ভয়ঙ্করতা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়।
✅আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
‘‘হত্যাকৃত ব্যক্তি হত্যাকারীকে সঙ্গে নিয়ে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার সামনে উপস্থিত হবে। হত্যাকৃত ব্যক্তির মাথা তার হাতেই থাকবে। শিরাগুলো থেকে তখন রক্ত পড়বে। সে আল্লাহ্ তা‘আলাকে উদ্দেশ্য করে বলবে: হে আমার প্রভু! এ ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে। এমনকি সে হত্যাকারীকে আর্শের অতি নিকটেই নিয়ে যাবে। শ্রোতারা ইব্নে ‘আববাস্ (রাঃ) কে উক্ত হত্যাকারীর তাওবা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উপরোক্ত সূরাহ নিসা’র আয়াতটি তিলাওয়াত করে বললেন: উক্ত আয়াত রহিত হয়নি। পরিবর্তনও হয়নি। অতএব তার তাওবা কোন কাজেই আসবে না’’। (তিরমিযী ৩০২৯; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৭০; নাসায়ী ৪৮৬৬)
✅আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
‘‘মু’মিন ব্যক্তি সর্বদা ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা ভোগ করবে যতক্ষণ না সে কোন অবৈধ রক্তপাত করে’’। (বুখারী ৬৮৬২)
✅আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
‘‘এমন ঝামেলা যা থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই তা হচ্ছে অবৈধভাবে কারোর রক্তপাত করা’’। (বুখারী ৬৮৬৩)
✅আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
‘‘কিয়ামতের দিন মানবাধিকার সম্পর্কিত সর্বপ্রথম হিসেব হবে রক্তের’’। (বুখারী ৬৫৩৩, ৬৮৬৪; মুসলিম ১৬৭৮; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৬৪, ২৬৬৬)
✅আবূ সা’ঈদ ও আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
‘‘যদি আকাশ ও পৃথিবীর সকলে মিলেও কোন মু’মিন হত্যায় অংশ গ্রহণ করে তবুও আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের সকলকে মুখ থুবড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন’’। (তিরমিযী ১৩৯৮)
✅আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
‘‘কোন মুসলিমকে গালি দেয়া আল্লাহ্’র অবাধ্যতা এবং তাকে হত্যা করা কুফরি’’। (বুখারী ৪৮; মুসলিম ৬৪)
✅জারীর বিন্ ‘আব্দুল্লাহ্ আল্-বাজালী, আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর, আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ ও আবূ বাক্রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
‘‘আমার ইন্তিকালের পর তোমরা কাফির হয়ে যেও না। পরস্পর হত্যাকান্ড করো না’’।
(বুখারী ১২১, ১৭৩৯, ৪৪০৫, ৬১৬৬, ৬৭৮৫, ৬৮৬৮, ৬৮৬৯, ৭০৮০; মুসলিম ৬৫, ৬৬, ১৬৭৯)
✅আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
‘‘আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট পুরো বিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাওয়া অধিকতর সহজ একজন মুসলিম হত্যা অপেক্ষা’’।
(তিরমিযী ১৩৯৫; নাসায়ী ৩৯৮৭; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৬৮