26/10/2025
মধ্যরাতে 'মব' সৃষ্টি করে হৃদরোগীকে পুলিশে দিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করলো এনসিপি নেতাকর্মীরা
মধ্যরাতে 'মব' সৃষ্টি করে হৃদরোগীকে পুলিশে দিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করলো এনসিপি নেতাকর্মীরা
মধ্যরাতে ‘মব’ সৃষ্টি করে হৃদরোগীকে পুলিশে দিলেন এনসিপি নেতাকর্মীরা
চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ে মধ্যরাতে এক নাটকীয় ও উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে—জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র কিছু নেতাকর্মী ‘মব’ সৃষ্টি করে এক নিরীহ ব্যক্তিকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন এবং পরদিন তার পরিবারের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন মুক্তি দেওয়ার নামে।
ভুক্তভোগী আনিসুর রহমান, স্থানীয় আবদুস সাত্তারের ছেলে ও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে চান্দগাঁওয়ের পাঠানিয়াগোদা এলাকায় এনসিপি যুবশক্তির চট্টগ্রাম মহানগর শাখার যুগ্ম সদস্য সচিব মোহাম্মদ সজীব ভূঁইয়ার নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা তার বাসার সামনে জড়ো হয়ে হট্টগোল শুরু করেন। পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তারা ঘরে ঢুকে আনিসকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে যান। এরপর পুলিশকে খবর দিয়ে “আওয়ামী লীগের দোসর” আখ্যা দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
আনিসের স্ত্রী বিবি মরিয়ম জানান, তার স্বামী দীর্ঘদিন রাজনীতি থেকে দূরে, হার্টে তিনটি রিং পরানো—তবু কেউ তাদের কথা শোনেনি। পরদিন তাকে হত্যা ও বিস্ফোরক মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়। পরিবারের দাবি, মূল উদ্দেশ্য ছিল চাঁদা আদায়। প্রথমে ১০ লাখ, পরে ৬ লাখ টাকার দাবি জানানো হয়; রাজি না হওয়ায় পুলিশি সহযোগিতায় তাকে জেলে পাঠানো হয়।
চান্দগাঁও থানার ওসি জাহেদুল কবির বলেন, “এনসিপি নেতারা খবর দিয়েছিলেন, কোনো অঘটন ঘটার আশঙ্কা থাকায় পুলিশ গিয়ে আনিসকে থানায় নিয়ে আসে।”
অন্যদিকে অভিযুক্ত নেতা সজীব ভূঁইয়া দাবি করেছেন, “আনিস চান্দগাঁও থানা যুবলীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক ছিলেন। আত্মগোপনে ছিলেন বলে খবর পেয়ে পুলিশকে জানানো হয়।” তবে চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি পাল্টা দাবি করেন, “বরং আনিসের পরিবারই আমাদের টাকা অফার করেছিল, আমরা রাজি হইনি।”
স্থানীয় সূত্র বলছে, ৫ আগস্টের পর থেকে এনসিপি বা বৈষম্যবিরোধী পরিচয়ে এ ধরনের ‘মব’ গঠন ও চাঁদা আদায়ের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। কেউ চাঁদা দিলে ছেড়ে দেওয়া হয়, না দিলে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়—এমন ভিডিওও আগেই ভাইরাল হয়েছিল।
বিশ্লেষক ও স্থানীয়রা বলছেন, এটি এখন প্রশাসনের নীরব প্রশ্রয়ে চলা এক বিপজ্জনক প্রবণতা। রাজনৈতিক পরিচয়ের সুযোগে কিছু নেতা নাগরিক ভয়ের রাজনীতি তৈরি করছেন। পুলিশ যদি এসব ঘটনায় নিরপেক্ষ না থাকে, তবে এ ধরনের ‘মব ন্যায়বিচার’-এর সংস্কৃতি আরও ভয়ংকর আকার নেবে।