26/10/2025
মনে আছে সেই হৃদয়বিদারক দৃশ্যটি? গাজীপুরে গার্ডার ভেঙে পড়ে এক পরিবারের তিনজনের মৃত্যু — হাসিনার তথাকথিত “উন্নয়ন”-এর চাপেই শেষ হয়ে গিয়েছিল পুরো পরিবার।
একটি ক্রেন দিয়ে গার্ডার তুলছিল শ্রমিকরা। হঠাৎ সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাজীপুর অভিমুখী একটি প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে। মুহূর্তেই দুমড়ে-মুচড়ে যায় গাড়িটি। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান গাড়িতে থাকা তিনজন।
এই দুর্ঘটনা শুধু একটি পরিবারের নয় — এটি পুরো জাতির ব্যর্থতার প্রতীক।
২০১২ সালে পাশ হওয়া গাজীপুর-বিমানবন্দর রুটের ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বিআরটি প্রকল্প এখন বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যর্থ প্রকল্পগুলোর একটি হিসেবে পরিচিত।
প্রথমে এর বাজেট ছিল প্রায় ২,০৩৭.৯ কোটি টাকা। কিন্তু পরবর্তী সংশোধনে তা বাড়তে বাড়তে ৬,৫৯৭.৬৬ কোটি টাকায় পৌঁছেছে— অর্থাৎ মূল বাজেটের চেয়ে ৩ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি। অবিশ্বাস্যভাবে, বিশ্বের অন্য যেকোনো বিআরটি প্রকল্পের তুলনায় এটি ৬ গুণ বেশি সময় ও ৪ গুণ বেশি অর্থ খরচ করে এখনো শেষ হয়নি।
সরকারি হিসাবে বলা হচ্ছে, প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। অথচ বাস্তবে প্রকল্পের ক্ষতি ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বহুবার প্রকল্প বাতিলের দাবি উঠলেও ওবায়দুল কাদেরের একক সিদ্ধান্তে তা অগ্রাহ্য করা হয়েছে।
অভিযোগ আছে— প্রায় ৪ হাজার কোটির ৬০ শতাংশেরও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছে কাদের-হাসিনা গোষ্ঠী।
শুধু অর্থ নয়, এ প্রকল্পের কারণে সৃষ্ট ভয়াবহ যানজটে সাধারণ মানুষ বছরের পর বছর দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
অগণিত কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়েছে, ব্যাহত হয়েছে শিল্প উৎপাদন। অনিরাপদ নির্মাণ কাজে প্রাণ হারিয়েছে অনেকেই।
অবশেষে, দীর্ঘ একযুগ পর অন্তরবর্তী সরকার এই প্রকল্প বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন এটি বিশেষায়িত বাস লেন নয়, বরং সাধারণ চার লেনের সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
এখন প্রশ্ন একটাই —
রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা গিলে খাওয়া এই দুর্নীতিবাজদের জবাবদিহি কবে হবে?
যারা এই ব্যর্থতা ও প্রাণহানির দায়ী, তাদের আইনের আওতায় আনা না গেলে— বাংলাদেশ কখনোই জাপান বা কোরিয়ার মতো শাস্তি-নিশ্চিত রাষ্ট্রে পরিণত হবে না।