13/08/2025
""নার্সারিতে ও প্রথম স্থান অধিকার না করায় নাতাশা তার পাঁচ বছরের মেয়ে নওমিকে অনেক বকাঝাকা করছে আর ছোট্ট মেয়েটা গুটিশুটি হয়ে খাটের এক কোণে বসে কাঁদতে কাঁদতে বলছে....
"আম্মু প্লিজ আমাকে বকো না,
নেক্সটে আর এমন হবেনা,
প্লিজ মা আর বকোনা!
কথা গুলো ঠিক মত স্পষ্ট ও বলতে পারছেনা,
কিন্তু নাতাশা যেনো কিছুতেই থামছেনা।
"তিন বছর বয়সে শিশু শ্রেনীতে ভর্তি করে নওমিকে, প্লে তে ফার্স্ট হয় কিন্তু নার্সারিতে গিয়ে মেয়েটা সেকেন্ড হয় আর আজকে রেজাল্ট আনতে গিয়ে সেই স্কুল থেকে পুরা রাস্তা বকতে বকতে আনে মেয়েটাকে।
বাসায় আসার পরেও থামার নাম নেই।
সে যেনো মানতেই পারছেনা মেয়ের এমন রেজাল্ট,
আচ্ছা প্রথম স্থান তো একটাই তাইনা?
তাহলে কেনো প্রতিটি গার্ডিয়ান চায় তার বাচ্চাই ফার্স্ট হোক?
"যাই হোক,
নাতাশা পার্সেনালি শোঅফ টাইপের,
সব কিছু নিয়ে শোঅফ করা তার এক প্রকার নেশা,
মেয়ের রেজাল্ট ও তেমন একটা টপিক,
গত বছর মেয়ে যখন প্লে গ্রুপে ফাস্ট হয় তখন তার সোশ্যাল মিডিয়ায় স্টাটাস আর রিলস এর শেষ নেই এমন একটা অবস্থা।
"মেয়েকে বকাঝকা করার এক পর্যায়ে মোবাইলে একটা নোটিফিকেশন এর টোন এলে,
নাতাশা যা ভেবে ফোন হাতে নিলো তাই হলো,
রিয়ার আম্মু রিয়ার ফাস্ট হওয়া নিয়ে পোস্ট শেয়ার করেছে আর তা দেখে সে আরো রেগে একাকার,
মেয়ের দিকে তাকালো খুব রাগ নিয়ে,
পরে মেয়েকে বলে,
আজ সারাদিন বাথরুমে বন্ধ থাকবা পাপা আসার আগ পর্যন্ত এটাই তোমার শাস্তি,
নওমি বাথরুমে একা যেতে ও অনেক ভয় পায় সেটা নাতাশা যানে তারপরও মেয়ের এত রিকুয়েষ্ট এর পরেও বাথরুমে আটকে রাখে আর নাতাশার রাগ এতোটাই থাকে সে বাথরুমের লাইট অফ করে দেয়।
এরপর নিজের বেডে এসে মোবাইল স্ক্রোল করতে করতে একটা সময় ভুলেই যায় মেয়ে বাথরুমে,
তবে নাতাশার ইনটেনশান ছিলো হালকা ভয় দেখিয়ে একটু পর বের করে আনবে যাতে পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী হয়।
কিন্তু নাতাশা একটা সময় ঘুমিয়ে পরে,
গতকাল রাতে আসিফ মানে নওমির বাবার সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে নাতাশা তার বালিশ নিয়ে নিজের বেডরুম থেকে ড্রয়িং রুমে চলে আসে,
অন্যন্য দিন আসিফ নাতাশার রাগ ভাঙ্গালেও গতকাল নাতাশা wrong ছিলো তাই আসিফ এগিয়ে যায়নি,সারা রাত সোফাতে বসেই কাটিয়ে দেয় না ঘুমিয়ে,
আসিফ এমনিতেও অল্পভাষী একজন মানুষ,
তর্কাতর্কি ঝামেলা এসব পছন্দ করেনা কিন্তু পক্ষান্তরে নাতাশা পুরোপুরি উল্টো।
যাই হোক,
নাতাশার ঘুম ভাঙ্গে আসিফের কলে,
মেয়ের রেজাল্ট এর জন্য কল করেছে সে,
যত যাই হোক মেয়ের ক্ষেত্রে সে পুরোই অন্য রকম,
ফোন হাতে নিয়ে রিসিভ করতেই আসিফ জিজ্ঞেস করে আমার মামনির রেজাল্ট কি আর ও কি করে?
মেয়ের কথা বলতেই নাতাশা হাত থেকে ফোন ফেলে বাথরুম খুলে একটা চিৎকার দেয়,
ওপাশ থেকে আসিফ হ্যালো হ্যালো করছেই কারণ সে স্পষ্ট কিছু শুনতে পারছেনা চিৎকার চেঁচামেচি ছাড়া।
নাতাশা দেখে নওমির শরীর প্রায় পুরা ঠান্ডা,
ভিতরে ভয়ে আর অনেক সময় কান্না করাতে দূর্বলতার কারণে মেয়েটা সেন্স লেস হয়ে পরে থাকে অনেক সময়,
দিক বেদিক না দেখে নাতাশা ফোন হাতে নিয়ে আসিফ কে শুধু বলল,
প্লিজ একটা এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এখনি আসো কিছু জিজ্ঞেস করোনা,
আসিফ পাগলের মত এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে বাসায় সামনে আসে এর মধ্যে নাতাশা হাতে পায়ে তেল দিয়ে অনবরত মেয়েকে ডাকতে থাকে,
কিন্তু মেয়ে তখনো সেন্স লেস।
নওমিকে দ্রুত ইমারজেন্সিতে নিয়ে যায়,
আসিফ আর নাতাশা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে,
নাতাশা কেঁদেই চলেছে,
আসিফ স্পিচ লেস,
কাঁদছে ও না নাতাশা কে কিছু জিজ্ঞেস ও করছেনা,
কারণ বিষয়টা কি তার একটা সমীকরণ ইতিমধ্যে সে তৈরি করে ফেলেছে,
নাতাশার এমন স্বভাব সম্পর্কে আসিফ অজানা নয়,
কিন্তু সেটা এমন পর্যায়ে যাবে এটা ভাবেনি কখনো।
ইমারজেন্সির বাইরে দুজন তীর্থের কাকের মত দাড়িয়ে আছে মেয়ের রেসপন্স এর জন্য কিন্তু কেউ কিছু বলছেনা,
নাতাশা শুধু কাঁদছে আর মনে মনে দোয়া করছে এই যাত্রায় মেয়েটা সেইফ হলে পড়াশোনার জন্য আর কখনো কিছু বলবেনা,
তার চাইতে বড় কথা আজ যদি মেয়ের উনিশ বিশ কিছু হয় আসিফ তাকে কখনো ক্ষমা করবেনা।
অনেক সময় পার হয়ে যাবার পরেও মেয়ের কোনো খবর আসছে না তাদের কাছে,
এর মধ্যে একজন নার্স এসে বলল,
আপনাদের ম্যাম ডাকছেন তার চেম্বারে,
তারা দুজনেই এক প্রকার দৌড়ে রুমে গেলো,
ডাক্তার তাদের দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
সরি, অনেক লেট করে ফেলেছেন আপনারা,
ও অনেকক্ষণ থেকেই ভয়ের মধ্যে ছিলো,
বন্ধ ঘরে ওর শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল ঠিক কিন্তু সবচাইতে বাজে বিষয় হলো ভয়,
প্রচন্ড ভয়ে ওর ভিতরে কিছু নার্ভ কাজ করা অফ করে দিয়েছিলো আর তাতেই এমনটা হলো,
কিন্তু কথা হলো এত টুকু মেয়ে কি কারণে এত ভয় পেলো?
আসিফ শুধু নাতাশার দিকে একবার চাইলো,
ডাক্তারের কথা শুনে নাতাশা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো আর আসিফ প্রচন্ড রাগে ওর উপর হাত তুলতে গিয়ে হাত নামিয়ে বলে...
চুপ!
একদম ন্যাকা কান্না করবা না,
এখান থেকে সোজা তোমাদের বাসায় চলে যাবে,
আমার মেয়ের কি করতে হবে সেটা আমি জানি,
তুমি ছুঁবে না আমার মেয়েকে,
আমি শুধু চাই পৃথিবীতে আর কোনো সন্তান হত্যাকারী মায়ের জন্ম না হোক,
নাতাশা এসে আসিফের পা ধরে বলে,
প্লিজ আমাকে এত বড় শাস্তি দিওনা,
আমাকে ওর কাছে যেতে দাও,
ওর কিছু হয়নি আমি ওকে ডাক দিলে ও উঠে যাবে,
মাঝে মাঝে স্কুলে যেতে না চাইলে ও অমন করে ঘুমের ভান ধরে শুয়ে থাকতো,
আমি জানি ওকে কিভাবে তুলতে হবে প্লিজ আমাকে যেতে দাও,
কিন্তু আসিফের নাতাশার কোনো কথায় মন গলার পরিস্থিতিতে ছিলো না,
নাতাশার হাত তার পা থেকে ছিটকে দূরে সরে গেলো আসিফ,
চিৎকার করতে থাকে নাতাশা।
---------------
এমন টা ও হতে পারতো কাহিনি,
খুবই সেড একটা ফিনিসিং।
কিন্তু কাহিনির মোড় অন্য দিকে ঘুরে গেলো,
--ডাক্তার যখন বললেন সরি অনেক লেট করে ফেলেছেন এই বলে দুজনের মোটিভ যখন দেখলেন তখন তিনি বললেন,
আপনারা আসুন আমার সাথে,
ওয়ার্ডে নিয়ে গেলে তারা দেখতে পায় ছোট্ট নওমি শুয়ে আছে বেডে,
ডাক্তার মাথায় হাত রাখতেই আস্তে করে চোখ খুলে তাকালো নওমি,
আসিফ নাতাশা দুজনে খুশিতে পাগলের মতো কান্না শুরু করলো,
ডাক্তার তাদের থামিয়ে দিয়ে বলল,
এখানে চেঁচামিচি করবেন না,
ওর ভিতরে এখনো ভয় কাজ করছে যদিও আমরা ওকে অনেক নরমাল করেছি,
চলুন কেবিনে ওকে রেষ্ট এ থাকতে দিন।
--আসিফ নাতাশা দুজনে কেবিনে আসলে ডাক্তার বলেন,
অনেক কষ্টে আমরা ওর হুঁশ আনতে সক্ষম হই,
আল্লাহ পাকের মেহেরবানী বলতে পারেন,
যখন ওর জ্ঞান আসে ও তখন শুধু অস্পষ্ট কিছু শব্দ বলতে থাকে যেমন সরি আম্মু, বকো না আম্মু, বের করো আমাকে,ভয় করছে এমন টাইপ কিছু ভাঙা ভাঙা শব্দ,
তখন আমি নিজে ওকে পুরোপুরি হুঁশ আসার পর আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করি কি হয়েছে এবং ও তখন যতটুকুই বলেছে তাতে পুরো বিষয় বুঝতে কষ্ট হয়নি আমার,
কারণ সন্তানকে ফাস্ট পজিশনে আনার প্রতিযোগিতায় এ কেমন নেশায় গার্ডিয়ান গুলো বিশেষ করে মায়েদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
ডাক্তার একটু চুপ থেকে বলে...
আমার যখন ছয় বছর বয়স তখনো আমি স্কুলে যাইনা, আমি ছোটবেলায় একদম পড়াশোনা করতে চাইতাম না তাই বাবা মা কখনো আমাকে চাপ দেয়নি, কারণ তারা জানতেন আমি একটা সময় নিজেই পড়তে আগ্রহী হবো,
তাই হলো, ছয় বছর বয়সে আমি আশেপাশে সবাকে দেখে পড়াশোনা স্টার্ট করি আর আজ আমার পজিশন তো দেখতেই পারছেন,
আমার বাবা মাকে আশেপাশের সবাই অনেক কিছু বলতো যে এত বড় মেয়েকে এখনো স্কুলে দেন না,
বাচ্চার কথা মত চললে ওর ভবিষ্যৎ চাঙ্গে উঠবে আরো অনেক কথা...
দেখুন ছেলে মেয়ের ভবিষ্যৎ এর জন্য পড়াশোনা, আমাদের অতিরিক্ত শাসনের ফলে আমাদের আদরের বাচ্চা গুলো আরো বিগড়ে যায়,
আমরা না বুঝে ওদের ভালোর পরিবর্তে হিতে বিপরীত করে ফেলি,
যাক আপনারা শিক্ষিত ভদ্র মানুষ আপনাদের আশা করি এত কিছু বুঝাতে হবেনা।
ওকে আজ আমাদের অবজারভেশনে থাকতে দিন,
আগামী কাল রিলিজ দিয়ে দিব বাট না আপনারা নিজেরা লড়াই করবেন আর না মেয়ের সাথে আর এমন মিস বিহেভিয়ার করহেন কথাটা মনে রাখবেন।
নাতাশা আর আসিফ তাদের কলিজার টুকরাকে সাথে করে বাড়ি ফিরলো।
""মনে রাখবেন সন্তানের ভবিষ্যৎ ভালো করতে জীবনে উন্নতি করতে,ভালো মানুষ হতেই পড়াশোনা কিন্তু সেই সন্তানের জীবনই যদি আমাদের ভুল বা অতিরিক্ত শাসনের জন্য হুমকির মুখে পরে তাহলে সেটা আসোলেই দুঃখজনক।
©