09/07/2024
আমার একটা বাড়ি ছিল পদ্মা নদীর তীরে,
সাত পুরুষের জনম গেছে খড়কুটার এই নীড়ে!
একটুখানি উঠোন ছিলো ছোট্ট ক'টা ঘর,
পাশেই ছিলো বাবা-মায়ের পুরনো ক'বর।
দক্ষিণে এক পুকুর ছিলো কানায় কানায় জল,
দখিন হাওয়ার ঢেউগুলো তার করতো টলোমল।
হালের দুটো ব'লদ ছিল একটা দুধের গা'ই,
ওরা যেন ছিলো আমার ভগ্নি এবং ভাই।
ঘরের মুখে ছিল দুটো লাল গোলাপের চারা,
সারা বাড়ি থাকতো ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা।
লাল পুঁইয়ের এক মাচা ছিলো আঙ্গিনার এক পাশে,
পুঁইয়ের ডগা দুলত সেথায় দক্ষিণা বাতাসে।
তাজমহলের রূপ ছিল মোর সবুজ-শ্যামল নীড়ে,
আসতে যেতে পথের পথিক চাইতো ফিরে ফিরে।
এই বাড়িতে তেমন সুখেই যাচ্ছিল দিন কেটে,
যেমন সুখে শিশুরা সব ঘুমায় মায়ের পেটে।
আমার এ সুখ সইল না ঐ পদ্মা নদীর প্রাণে,
বান ডেকে সে ঢেউ তুলে মোর বক্ষে আ'ঘা'ত হানে।
ঘরবাড়ি সব ভাসিয়ে নিল ভাসালো দুই আঁখি,
অশ্রু ছাড়া কিছুই সে মোর রাখল না আর বাকি!
কাল যেখানে ছিল আমার মাথা গোঁজার ঠাঁই,
আজ সেখানে জলের খেলা আমার কিছুই নাই।
বাপ মা আমার ঘুমিয়ে ছিলো কাল যে মাটির ঘরে,
আজ সেখানে নদীর পানি রঙ্গের খেলা করে।
সাত পুরুষের স্মৃতির মতন নাই কো কিছুই আর,
নদীর জলে ভাসছে তাদের গোর ক'বরের হাড়।
নদীর জলে হাড় পেলে কেউ বক্ষে তুলে নিও,
গোর হারা মোর মায়রে আবার দা'ফন করে দিও।
কাল যেখানে থাকত বাঁধা আমার ব*লদ গা*ভী,
আজ সেখানে বানের জলে ভাসছে হাবিজাবি।
তাদের সাথে যদিও আমার রক্ত বাঁধন নাই,
তবুও ওরা ছিল আমার ভগ্নী এবং ভাই।
আমার সুখে হাসত ওরা কাঁ'দত আমার দু'খে,
নিজের বাছুর উপুস রেখে দুধ দিতে মোর মুখে।
হাসিমুখে আমার সাথে টানত ওরা হাল,
ভাইয়ের মতোই সঙ্গ দিয়ে আসছে চিরকাল।
আমার এ সুখ হয়নি হজম পদ্মা নদীর চোখে
আ'ঘাত করে আমাদের এই ভাই বাঁধনের বুকে।
হঠাৎ দেখি তার আ'ঘা'তে উঠোন গেছে ফেটে,
প্রাণ বাঁচাতে দিলাম ওদের গ*লার দ*ড়ি কে*টে।
নদীর জলে ভাসিয়ে দিয়ে সাত জনমের বাঁধন,
অবাক চেয়ে শুনছি তাদের হাম্বা সুরের কাঁ'দন।
বিদায় কাঁ'দন কা'ন্ধে ওরা আমার দিকে চাহি,
আমিও কাঁ'দি কা'ন্না ছাড়া কিচ্ছু করার নাহি।
জানিনা আজ কোথায় ওরা ম'রল না কি আছে,
কোথায় পাবো তাদের খবর সুধাই বা কার কাছে।
নদির জলে পাও যদি কেউ তিনটি ব*লদ গা*ই,
বুঝে নিয়ো এরাই আমার হা'রানো বোন ভাই।
বিনয় করে বলছি তোমার পা জড়িয়ে ধরে,
একটু তাদের থাকতে দিও তোমার গোয়াল ঘরে।
শিরোনাম:- "নদীর পাড়ের বাড়ি"
লেখায় :- কবি MD Fardos AHMED
বই - "কালের চিত্র"
ছবি:-সংগৃহীত।