Right Way/ সঠিক পথ

  • Home
  • Right Way/ সঠিক পথ

Right Way/ সঠিক পথ ইসলামের সঠিক তথ্য পৌঁছে দেয়াই এই পেজে মূল লক্ষ The story Of ''Universal Truth''

ইসলামের দৃষ্টিতে অশ্লীলতা, গান, বাদ্যযন্ত্র বা মিউজিকের ব্যবহার সম্পূর্ণ হারাম এবং আল্লাহর আজাবের কারণ। কুরআন হাদিসে এ ব...
11/06/2025

ইসলামের দৃষ্টিতে অশ্লীলতা, গান, বাদ্যযন্ত্র বা মিউজিকের ব্যবহার সম্পূর্ণ হারাম এবং আল্লাহর আজাবের কারণ। কুরআন হাদিসে এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত সতর্ক বাণী উচ্চারিত হয়েছে।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করে দিয়েছেন যে,

কিয়ামতের পূর্বে এমন একটি সময় আসবে যখন মানুষ গান-বাজনাকে হালাল মনে করবে। তিনি বলেন,

لَيَكُوْنَنَّ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّوْنَ الْحِرَ وَالْحَرِيْرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ

“আমার উম্মতের মধ্য থেকে এমন কিছু লোক আসবে যারা জিনা-ব্যভিচার, রেশমি কাপড়, মদ এবং বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে।”

(বুখারি হা/৫৫৯০-আবু মালেক আল আশআরী রা. হতে বর্ণিত)।

তিনি আরও বলেন,

فِي هَذِهِ الْأُمَّةِ خَسْفٌ وَمَسْخٌ وَقَذْفٌ فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَتَى ذَاكَ قَالَ إِذَا ظَهَرَتِ الْقَيْنَاتُ وَالْمَعَازِفُ وَشُرِبَتِ الْخُمُورُ

‘‘এই উম্মতের মধ্যে ভূমিধ্বস, চেহারা বিকৃতি এবং উপর থেকে নিক্ষেপ করে ধ্বংস করার শাস্তি আসবে। জনৈক সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহর রাসূল, কখন এরূপ হবে?

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যখন ব্যাপক হারে গায়িকা, বাদ্যযন্ত্র এবং মদ্যপানের প্রসার ঘটবে’’।

[তিরমিযী, অধ্যায়: আবওয়াবুল ফিতান। সহীহুল জামে আস্ সাগীর, হাদিস নং- ৪১১৯।
--------------
সুতরাং

– যে সব শিল্পীরা গান গায়,

– যারা বাদ্যযন্ত্র বাজায়,

– যারা গান-বাজনা শিক্ষা দেয় ,

– যারা মিউজিক ভিডিও বানায়,

– যারা অভিনয় করে (নায়ক-নায়িকা ও অন্যান্য অভিনেতাগণ),

– যারা এসব প্রযোজনা, পরিচালনা ও দিকনির্দেশনা দেয়,

– যারা এগুলোর গল্প লিখে ও স্ক্রিপ্ট তৈরি করে,

– যারা ক্যামেরার মাধ্যমে এসব দৃশ্য ধারণ করে,

– যারা মিউজিক কম্পোজিশন করে ও ভিডিও এডিট করে,

– যারা জেনে-বুঝে এ সব কাজের জন্য ঘর বা সরঞ্জাম ভাড়া দেয়,

– যারা এসব প্রচার ও প্রসার করে,

– যারা এগুলো বাজারজাত করে,

– এবং যারা নানাভাবে তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করে তাদের সকলের এই কাজের বিনিময়ে এবং এ সংশ্লিষ্ট ব্যবসা থেকে উপার্জিত সমূদয় অর্থ হারাম। আর হাদিসে এসেছে, হারাম দ্বারা পরিপুষ্ট দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ جَسَدٌ غُذِّيَ بِالْحَرَامِ

“হারাম দ্বারা পরিপুষ্ট শরীর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”

[বায়হাক্বী, মিশকাত/২৭৮৭; সিলসিলা সহীহাহ হা/২৬০৯।]

◈ এ সকল লোক নিজেরা যেমন পাপ দ্বারা তাদের জীবনকে কুলষিত করে তেমনি সমাজকেও তারা কুলষিত করে। চতুর্দিকে পাপাচার ছড়িয়ে দেয়। এরা সকলেই যুবক-যুবতীদের চরিত্র ধ্বংস এবং অশ্লীলতা ছড়ানোর জন্য দায়ী।

এ সমস্ত লোকের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ

“যারা পছন্দ করে যে, ইমানদারদের মধ্যে অশ্লীলতা প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহা ও পরকালে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” (সূরা নূর: ১৯)

যারা কেবল অশ্লীলতার প্রসার লাভ করাকে পছন্দ করে তাদের জন্য যদি এই শাস্তির হুমকি হয় তাহলে যারা এগুলো উৎপাদন ও প্রচার-প্রসার করে তাদের কী পরিণতি হবে তা সহজেই অনুমেয়। আল্লাহ তুমি ক্ষমা করো। আমীন।

◈ আরও আতঙ্কজনক বিষয় হল, বর্তমান ইউটিউব আর ফেসবুকের যুগে এসকল গান-বাজনা ও নাটক-সিনেমা থেকে যত মানুষ গুনাহ কামাবে, যুগযুগান্তরে যত দিন এগুলো টিভিতে প্রদর্শিত হবে, সোশ্যাল মিডিয়া ও নেট জগতে শেয়ার, আপলোড-ডাউনলোড ইত্যাদি হতে থাকবে, মোবাইল মেমরি থেকে মেমরিতে কপি-পেস্ট হতে থাকবে ততদিন এর সংশ্লিষ্ট সকলের আমলনামায় অবিরত ধারায় গুনাহ জমা হতেই থাকবে। এমনকি এরা মারা যাওয়ার পরও এ গুনাহের ধারা অব্যাহত থাকবে। আল্লাহ ক্ষমা করুন।

জারীর রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ سَنَّ فِيْ الإِسْلاَمِ سُنَّةً سَيِّئَةً كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا وَ وِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يُّنْقَصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْئٌ.

“যে ব্যক্তি ইসলামে কোন মন্দ কাজ চালু করবে তার উপরই তার গুনাহ বর্তাবে। আর ঐ মন্দ কাজ করে যত মানুষ যে পরিমাণ গুনাহ অর্জন করবে সবার সমপরিমাণ গুনাহ তার আমলনামায় লেখা হবে। কিন্তু তাদের কারো গুনাহ এতটুকুও কম করা হবে না।"

(মুসলিম, মিশকাত হা/২১০; বাংলা মিশকাত ২য় খণ্ড, হা/২০০‘ইলম’ অধ্যায়)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

مَنْ سَنَّ سُنَّة سَيِّئَة فعَلَيْهِ مِثْل وِزْر كُلّ مَنْ عمل بِهَا إِلَى يَوْم الْقِيَامَة

‘‘যে ব্যক্তি কোন খারাপ কাজ (আল্লাহর নাফরমানি, পাপ, অন্যায়-অপকর্ম, বিদআত ইত্যাদি) চালু করলো কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ সে কাজ করবে তাদের সমপরিমাণ গুনাহ তার উপর পতিত হতে থাকবে।

(সহিহ মুসলিম: ১৬৯১)

সুতরাং গান-বাজনা, সিনেমা, নাটক, টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন মডেলিং, অভিনয় পেশা, মিউজিক ভিডিও নির্মাণ ইত্যাদি কর্মের সাথে জড়িত প্রত্যেক শিল্পীর জন্য তাদের জীবদ্দশায় লজ্জিত অন্তরে খাঁটি ভাবে তওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসা আবশ্যক।

তারা যদি তওবা করে এবং তাদের প্রকাশিত পূর্বের সকল গানবাজনা ও ভিডিও ইত্যাদি যথাসম্ভব ধ্বংস কিংবা বন্ধ করার ব্যবস্থা করে তাহলে আশা করা যায়, আল্লাহ তাদের সকল গুনাহ মোচন করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরণের পাপাচার, অশ্লীলতা ও আল্লাহর অসন্তোষ মূলক কার্যক্রম থেকে হেফাজত করুন এবং । আমিন।

কুরবানী সংক্রান্ত কিছু জরুরি মাসায়েলমাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া--------------------------------------------কুরবানী একটি গু...
06/06/2025

কুরবানী সংক্রান্ত কিছু জরুরি মাসায়েল
মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া
--------------------------------------------
কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, ‘যার কুরবানীর সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ -মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ৩৫১৯; আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৫

কার উপর কুরবানী ওয়াজিব

মাসআলা : প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

আর নেসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নিসাব হল- এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। -আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫

কুরবানী করতে না পারলে

মাসআলা : কেউ যদি কুরবানীর দিনগুলোতে ওয়াজিব কুরবানী দিতে না পারে তাহলে কুরবানীর পশু ক্রয় না করে থাকলে তার উপর কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করেছিল, কিন্তু কোনো কারণে কুরবানী দেওয়া হয়নি তাহলে ঐ পশু জীবিত সদকা করে দিবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৪; ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫

কোন্ কোন্ পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে

মাসআলা : উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। -ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫

কুরবানীর পশুর বয়সসীমা

মাসআলা : উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।

উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে না। -ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫-২০৬

মাসআলা : উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কুরবানী করা জায়েয। অর্থাৎ কুরবানীর পশুতে এক সপ্তমাংশ বা এর অধিক যে কোন অংশে অংশীদার হওয়া জায়েয। এক্ষেত্রে ভগ্নাংশ- যেমন, দেড় ভাগ, আড়াই ভাগ, সাড়ে তিন ভাগ হলেও কোনো সমস্যা নেই। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩১৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭

কুরবানীর পশুতে আকীকার অংশ

মাসআলা : কুরবানীর গরু, মহিষ ও উটে আকীকার নিয়তে শরীক হতে পারবে। এতে কুরবানী ও আকীকা দুটোই সহীহ হবে। -হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬২

মাসআলা : শরীকদের কারো পুরো বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না।

মাসআলা : যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট একা কুরবানী দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে ইচ্ছা করলে অন্যকে শরীক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে একা কুরবানী করাই শ্রেয়। শরীক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম। -ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৫০-৩৫১; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০

রুগ্ন ও দুর্বল পশুর কুরবানী

মাসআলা : এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫; আলমগীরী ৫/২৯৭; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪

দাঁত নেই এমন পশুর কুরবানী

মাসআলা : গরু-ছাগলের অধিকাংশ দাঁত না থাকলেও যে কয়টি দাঁত আছে তা দ্বারা যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে পারে তবে সেটি দ্বারা কুরবানী সহীহ। কিন্তু দাঁত পড়ে যাওয়ার কারণে যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে না পারে তবে ঐ পশু কুরবানী করা যাবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৫; ফাতাওয়া আলমগীরী ৫/২৯৮

যে পশুর শিং ভেঙ্গে বা ফেটে গেছে

মাসআলা : যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। কিন্তু শিং ভাঙ্গার কারণে মস্তিষ্কে যদি আঘাত না পৌঁছে তাহলে সেই পশু দ্বারা কুরবানী জায়েয। তাই যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি, সে পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। -জামে তিরমিযী ১/২৭৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৮৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৪; আলমগীরী ৫/২৯৭

কান বা লেজ কাটা পশুর কুরবানী

মাসআলা : যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। আর যদি অর্ধেকের কম হয় তাহলে তার কুরবানী জায়েয। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫; মুসনাদে আহমাদ ১/৬১০; ইলাউস সুনান ১৭/২৩৮; ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৫২; আলমগীরী ৫/২৯৭-২৯৮

মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী

মাসআলা : মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করা জায়েয। মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কুরবানী হিসেবে গণ্য হবে। কুরবানীর স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কুরবানীর ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। -মুসনাদে আহমাদ ১/১০৭, হাদীস ৮৪৫; ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬; কাযীখান ৩/৩৫২

অন্য কারো ওয়াজিব কুরবানী আদায় করতে চাইলে

মাসআলা : অন্যের ওয়াজিব কুরবানী দিতে চাইলে ওই ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি নিলে এর দ্বারা ওই ব্যক্তির কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। নতুবা ওই ব্যক্তির কুরবানী আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী বা পিতা যদি স্ত্রী বা সন্তানের বিনা অনুমতিতে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করে তাহলে তাদের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে অনুমতি নিয়ে আদায় করা ভালো।

গোশত, চর্বি বিক্রি করা

মাসআলা : কুরবানীর গোশত, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েয নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে। -ইলাউস সুনান ১৭/২৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫; কাযীখান ৩/৩৫৪; আলমগীরী ৫/৩০১

বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির কুরবানী অন্যত্র করা

মাসআলা : বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির জন্য নিজ দেশে বা অন্য কোথাও কুরবানী করা জায়েয।

মাসআলা : কুরবানীদাতা এক স্থানে আর কুরবানীর পশু ভিন্ন স্থানে থাকলে কুরবানীদাতার ঈদের নামায পড়া বা না পড়া ধর্তব্য নয়; বরং পশু যে এলাকায় আছে ওই এলাকায় ঈদের জামাত হয়ে গেলে পশু জবাই করা যাবে। -আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮

কুরবানীর পশুর হাড় বিক্রি

মাসআলা : কুরবানীর মৌসুমে অনেক মহাজন কুরবানীর হাড় ক্রয় করে থাকে। টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে হাড় সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে। এদের ক্রয়-বিক্রয় জায়েয। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু কোনো কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর কোনো কিছু এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েয হবে না। করলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে। আর জেনেশুনে মহাজনদের জন্য এদের কাছ থেকে ক্রয় করাও বৈধ হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫; কাযীখান ৩/৩৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১

কাজের লোককে কুরবানীর গোশত খাওয়ানো

মাসআলা : কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া জায়েয নয়। গোশতও পারিশ্রমিক হিসেবে কাজের লোককে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এ সময় ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদেরকেও গোশত খাওয়ানো যাবে। -আহকামুল কুরআন জাস্সাস ৩/২৩৭; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪; আলবাহরুর রায়েক ৮/৩২৬; ইমদাদুল মুফতীন পৃ. ৮০২

জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া

মাসআলা : কুরবানীর পশু জবাই করে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া জায়েয। তবে কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া যাবে না। -কিফায়াতুল মুফতী ৮/২৬৫

অতিবৃষ্টি বন্ধের জন্য দোয়াاللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ عَلَى الآكَامِ وَالظِّرَابِ، وَبُطُونِ الْ...
30/05/2025

অতিবৃষ্টি বন্ধের জন্য দোয়া
اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ عَلَى الآكَامِ وَالظِّرَابِ، وَبُطُونِ الْأَوْدِيَةِ، وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়ালা ‘আলাইনা। আল্লা-হুম্মা আলাল-আ-কা-মি ওয়ায্যিরা-বি ওয়াবুতূনিল আওদিয়াতি ওয়ামানা-বিতিশ শাজারি
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় (বর্ষণ করুন), আমাদের উপর নয়। হে আল্লাহ! উঁচু ভূমিতে, পাহাড়ে, উপত্যকার কোলে ও বনাঞ্চলে (বর্ষণ করুন)
উৎসঃ
মুসলীম হাঃ ১৯৬৩/ ৮৯৭,
উপকারিতাঃ
وَحَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، وَيَحْيَى بْنُ أَيُّوبَ، وَقُتَيْبَةُ، وَابْنُ، حُجْرٍ قَالَ يَحْيَى أَخْبَرَنَا وَقَالَ الآخَرُونَ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ جَعْفَرٍ، عَنْ شَرِيكِ بْنِ أَبِي نَمِرٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّجُمُعَةٍ مِنْ بَابٍ كَانَ نَحْوَ دَارِ الْقَضَاءِ وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَائِمٌ يَخْطُبُ فَاسْتَقْبَلَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَائِمًا ثُمَّ قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلَكَتِ الأَمْوَالُ وَانْقَطَعَتِ السُّبُلُ فَادْعُ اللَّهِ يُغِثْنَا ‏.‏ قَالَ فَرَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَدَيْهِ ثُمَّ قَالَ ‏"‏ اللَّهُمَّ أَغِثْنَا اللَّهُمَّ أَغِثْنَا اللَّهُمَّ أَغِثْنَا ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَنَسٌ وَلاَ وَاللَّهِ مَا نَرَى فِي السَّمَاءِ مِنْ سَحَابٍ وَلاَ قَزَعَةٍ وَمَا بَيْنَنَا وَبَيْنَ سَلْعٍ مِنْ بَيْتٍ وَلاَ دَارٍ - قَالَ - فَطَلَعَتْ مِنْ وَرَائِهِ سَحَابَةٌ مِثْلُ التُّرْسِ فَلَمَّا تَوَسَّطَتِ السَّمَاءَ انْتَشَرَتْ ثُمَّ أَمْطَرَتْ - قَالَ - فَلاَ وَاللَّهِ مَا رَأَيْنَا الشَّمْسَ سَبْتًا - قَالَ - ثُمَّ دَخَلَ رَجُلٌ مِنْ ذَلِكَ الْبَابِ فِي الْجُمُعَةِ الْمُقْبِلَةِ وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَائِمٌ يَخْطُبُ فَاسْتَقْبَلَهُ قَائِمًا فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلَكَتِ الأَمْوَالُ وَانْقَطَعَتِ السُّبُلُ فَادْعُ اللَّهَ يُمْسِكْهَا عَنَّا - قَالَ - فَرَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَدَيْهِ ثُمَّ قَالَ ‏"‏ اللَّهُمَّ حَوْلَنَا وَلاَ عَلَيْنَا اللَّهُمَّ عَلَى الآكَامِ وَالظِّرَابِ وَبُطُونِ الأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ ‏"‏ ‏.‏ فَانْقَلَعَتْ وَخَرَجْنَا نَمْشِي فِي الشَّمْسِ ‏.‏ قَالَ شَرِيكٌ فَسَأَلْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ أَهُوَ الرَّجُلُ الأَوَّلُ قَالَ لاَ أَدْرِي ‏.‏
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব, কুতায়বাহ ও ইবনু হুজুর (রহঃ) ..... আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত জনৈক ব্যক্তি জুমুআর দিন মসজিদে নবাবীতে দারুল কাযার দিকে স্থাপিত দরজা দিয়ে প্রবেশ করল। এ সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিচ্ছিলেন। সে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! (অনাবৃষ্টির ফলে) মাল সম্পদ বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জীবিকার পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। অতএব আল্লাহর কাছে দু’আ করুন যেন তিনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু হাত উঠিয়ে দু’আ করলেন, “আল্ল-হুম্মা আগিসনা- আল্ল-হুম্মা আগিসনা-, আল্ল-হুম্মা আগিসনা-” (অর্থাৎ- হে আল্লাহ আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করুন, আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন।)। [৩ বার]
আনাস (রাযিঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! এ সময় আসমানে কোন মেঘ বা মেঘের চিহ্নও ছিল না। আর আমাদের ও সালই পাহাড়ের মাঝে কোন ঘর-বাড়ী কিছুই ছিল না। (ক্ষণিকের মধ্যে) তার পেছন থেকে ঢালের ন্যায় অখণ্ড মেঘ উদিত হ’ল। একটু পর তা মাঝ আকাশে এলে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল এবং বৃষ্টি শুরু হ’ল। বর্ণনাকার বলেন, এরপর আল্লাহর শপথ আমরা সপ্তাহকাল যাবৎ আর সূর্যের মুখ দেখিনি।
অতঃপর পরবর্তী জুমুআয় আবার এক ব্যক্তি ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিচ্ছিলেন। সে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! মাল সম্পদ সব বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে, পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। অতএব, আল্লাহর কাছে দু’আ করুন যেন বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দেন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার হাত উঠিয়ে দুআ করলেন, “আল্ল-হুম্মা হাওলানা- ওয়ালা- আলায়না- আল্ল-হুম্মা ’আলাল আ-কা-মি ওয়ায় যিরা-বি ওয়া বুতনিল আওদিয়াত ওয়া মানা-বিতিশ শাজার” (অর্থাৎ- হে আল্লাহ আমাদের অবস্থা পাল্টে দাও আমাদের ওপর এ অবস্থা চাপিয়ে দিও না। হে আল্লাহ! পাহাড়ী এলাকায়, মালভূমিতে মাঠের অভ্যন্তরে ও গাছপালা গজানো স্থলে তা ফিরিয়ে নিয়ে যাও।)।
এরপর বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে গেল। আমরা বের হয়ে সূর্য তাপের মধ্যে চলাচল করতে লাগলাম। শারীক বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিককে জিজ্ঞেস করলাম, এ ব্যক্তি কি প্রথম ব্যক্তি? আনাস বললেন, আমার জানা নেই।

৯ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১৩ যিলহজ্ব আসরসহ প্রত্যেক ফরয নামাযের পর একবার তাকীবরে তাশরীক তথা- আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা-ইলা...
27/05/2025

৯ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১৩ যিলহজ্ব আসরসহ প্রত্যেক ফরয নামাযের পর একবার তাকীবরে তাশরীক তথা- আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, ওয়ালিল্লাহিল হামদ্। বলা ওয়াজিব।

অবশ্য কোনো কোনো সাহাবী থেকে তাকবীরে তাশরীকের সাথে অন্য কিছু মিলিয়ে পড়ার বর্ণনাও পাওয়া যায়। যেমন হযরত ইবনে উমর রা. তাকবীরে তাশরীকের আগে তিনবার আল্লাহু আকবার বলতেন।(আলআওসাত, হাদীস : ২২০১)

কত তারিখ থেকে পড়বে তাকবীরে তাশরীক :
যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ ফজরের নামায থেকে ১৩ তারিখের আসরের নামায পর্যন্ত (মোট ২৩ ওয়াক্ত) তাকবীরে তাশরীক পড়া ওয়াজিব। তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, সাহাবায়ে কেরাম আরাফার দিন নামাযের পর উক্ত তাকবীর বলতেন।(মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৫৬৯৬)

কারা পড়বে :
এটা ফরয নামাযের পর প্রত্যেক বালিগ পুরুষ মহিলা, মুকীম, মুসাফির, গ্রামবাসী, শহরবাসী, জামায়াতের সাথে নামায পড়ুক বা একাকী পড়ুক প্রত্যেকের উপর একবার করে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে শামী, বাহরুর রায়িক)

কতবার পড়বে :
আর পূর্ণ তাকবীরে তাশরীক তিনবার পড়ার বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফিকহবিদগণও তিনবার বলার প্রতি গুরুত্ব দেন না। অবশ্য কেউ যদি সুন্নত মনে না করে এমনিতেই তিনবার বলে তবে সেটাকে বিদআত বলাও উচিত নয়।(আলআওসাত, হাদীস : ২১৯৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৫৬৯৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৫)

এই তাকবীর তিনবার বলা সুন্নত বা মুস্তাহাব নয়। সাহাবায়ে কেরাম রা. কীভাবে তাশরীকের দিনগুলোতে তাকবীর বলতেন তা হাদীসের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। সেখানে একাধিকবার তাকবীরের কথা উল্লেখ নেই।(মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৫৬৯৮, ৫৬৯৯; আলআওসাত, হাদীস : ২১৯৮, ২২০০)

তাকবীরে তাশরীক হচ্ছে :
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার,
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার,
আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।
----------------------------
তাকবীরে তাশরীকের গোড়ার কথা :
সহীহ আল-বুখারীর ব্যাখ্যাকার আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী রহ. মবসুত ও কাজীখান কিতাবদ্বয় থেকে ‘হেদায়া ’ কিতাবের ব্যাখ্যা গ্রন্থে নকল করেছেন যে, হযরত ইবরাহীম আ. আপন পুত্র ইসমাঈল আ. কে যখন কুরবানী করতে শুরু কররেন, তখন হযরত জিবরাইল আ. আল্লাহর নির্দেশে বেহেশ্ত থেকে একটি দুম্বা নিয়ে রওয়ানা হলেন।

তাঁর সংশয় হচ্ছিল পৃথিবীতে পদার্পন করার পূর্বেই হযরত ইবরাহীম আ. যবেহ কার্য সম্পন্ন করে ফেলবেন।
তাই হযরত জিবরাইল আ. আকাশ থেকেই উচ্চস্বরে ধ্বনী দিতে থাকেন - الله اكبر- الله اكبر । হযরত ইবরাহীম আ. তাঁর আওয়াজ শুনে আকাশ পানে দৃষ্টি করে দেখতে পেলেন যে, উপস্থিত কুরবানীর বস্তু ইসমাঈল আ.-এর পরিবর্তে তিনি একটি দুম্বা নিয়ে আসছেন।

তাই তিনি স্বতস্ফুর্তভাবে বলে উঠলেন -لا اله الاالله والله اكبر পিতার মুখে তাওহীদের এ অমূল্যবাণী শুনতে পেয়ে হযরত ইসমাঈল আ. আল্লাহর মহাত্ম, মর্যাদা ও শান শওকতের উপর হামদ পেশ করে বললেন : الله اكبر ولله الحمد একজন মহান আল্লাহর ফেরেশতা, একজন নবী ও একজন ভাবী নবী এ তিন মহান ব্যক্তিত্বের খুশীর আবেগে উচ্চারিত এ আমলটুকু ও পবিত্র কালামগুলো আল্লাহর দরবারে এত বেশী কবুল হল যে, কিয়ামত পর্যন্ত ঈদুল আয্হায় বিশ্ব মুসলিমের কন্ঠে কন্ঠে উচ্চারিত হতে থাকবে।

তাকবীর সম্পর্কে আরো কতিপয় মাসআলা
১. ইমাম তাকবীর বলতে ভুলে গেলে ও মুক্তাদীর তাকবীর বলা ওয়াজিব।(ফাতওয়ায়ে শামী ১ম খন্ড ৭৭৭ পৃষ্ঠা)
২. পুরুষেরা তাকবীর উচ্চ-মধ্যম স্বরে আর মহিলাগণ অনুচ্চস্বরে বলবে। পুরুষ উচ্চ স্বরে না পড়ে আস্তে আস্তে পড়লে ওয়াজিব আদায় হবে না।
৩. মাসবুক তার নামায আদায় করে তাকবীর বলবে। (ফাতাওয়ায়ে শামী ১ম খন্ড-৭৮৬পৃষ্ঠা )
৪. যদি মুসল্লী ফরয নামাযের পর তাকবীর বলতে ভুলে যায়। এবং কিছু কাজ করে ফেলে যার দ্বারা নামায নষ্ট হয়ে যায় (যেমন মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া, অথবা ভূলে বা ইচ্ছায় কথা বলা অথবা ইচ্ছা করে অজু ভঙ্গ করা) তবে তার উপর থেকে তাকবীর বলা রহিত হয়ে যাবে।(ফাতাওয়া শামী ১ম খন্ড, ৭৮৬ পৃষ্ঠা)

26/05/2025
23/05/2025

জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের আমল
-----------------------------
আরবী বার মাসের মধ্যে জিলহজ্ব অত্যন্ত গুরুত্ব ও ফজীলতপূর্ণ একটি মাস। বিশেষ করে এ মাসের ১ম দশদিন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাাহ তায়লা পবিত্র কুরআনের সুরা ফাজর এর মধ্যে এমাসের প্রথম দশ রাতের কসম খেয়েছেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘শপথ ফজর-কালের। এবং দশ রাতের’ -আল ফাজর-১-২
মুফাসসিরীনে কেরামদের মতে উক্ত দশ রাত বলতে জিলহজ্বেও ১ম দশদিন উদ্দেশ্য।
-
তাছাড়া এ মাসের ১ম দশদিন গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত এ মাসে মুসলিম উম্মার বিশেষ দুটি ইবাদত রয়েছে। কুরবানী এবং হজ্ব।
------------------
আট যিলহজ্ব থেকে হজ্বের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু। আট তারিখে মিনা গমন দিয়ে নয় তারিখে আরাফার প্রান্তরে অবস্থান, সূর্যাস্তের পর মাগরিব-ইশা একসাথে আদায় করতঃ মুযদালিফায় রাত্রি যাপন। দশ তারিখ সকাল হওয়ার পর মিনায় গিয়ে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করে কুরবানী,হলক এবং তাওয়াফ। এরপর এগার,বার এবং সম্ভব হলে তের তারিখ শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করার মাধ্যমে হজের কাজ সম্পন্ন হয়।
--
অন্যদিকে এই মাসের ১০-১২ তারিখ পুরা মুসলিম উম্মাহ পবিত্র ঈদুল আযহা ও কুরবানির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং তাঁর সান্যিধ্য লাভ করে থাকে। এসব কারণে এ মাসের প্রথম দশক অতিগুরুত্বপূর্ণ।
তাই এমাসের প্রথম দশকের আমল বছরের অন্যান্য দিনের তুলনায় আল্লাহ তায়ালার কাছে অধীক পছন্দনীয় ও ফজীলতপূর্ণ। এক হাদিসে রাসূল সা. এ দশ দিনের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে জিহাদের চেয়েও এ দিনগুলোর আমলকে ফজীলতপূর্ণ বলেছেন।

ইব্নু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের আমলের চেয়ে অন্য কোন দিনের আমলই উত্তম নয়। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, জিহাদও কি (উত্তম) নয়?
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ জিহাদও নয়। তবে সে ব্যক্তির কথা ছাড়া যে নিজের জান ও মালের ঝুঁকি নিয়েও জিহাদে যায় এবং কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না। [সহিহ বুখারী, হাদিস নং-৯৬৯]

এই দিনগুলোর বিশেষ কিছু আমল: এক. তাকবির ও তাসবিহ পড়া : এই দিনগুলোতে তাকবির (আল্লাহু আকবার), তাহমিদ (আলহামদু লিল্লাহ), তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাসবিহ (সুবহানল্লাহ) পড়া সুন্নত।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এ ১০ দিনের নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় ও মহান কোনো আমল নেই। তাই তোমরা এ সময়ে তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবির (আল্লাহু আকবার) ও তাহমিদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি বেশি করে পাঠ করো।(মুসনাদে আহমদ-৫৪৪৬)

দুই. দিনে সিয়াম পালন ও রাতে নফল ইবাদত : এই দিনগুলোর বিশেষ একটি আমল হলো দিনের বেলায় সিয়াম পালন করা এবং রাতের বেলায় যথাসম্ভব নফল ইবাদতে মশগুল থাকা।
হাদীস শরীফে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দিনগুলোর প্রতিটি রোযাকে পুরো বছরের রোযা এবং এ রাতের ইবাদতকে শবে কদরের ইবাদতের সমতূল্য বলেছেন: আবু বকর ইবনে নাফি আল বাসরী (রাহঃ) ...... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসূল বলেন, এমন কোন দিন নাই যে দিনসমূহের ইবাদত আল্লাহর নিকট যিলহজ্জ মাসের দশ দিনের ইবাদত অপেক্ষা অধিক প্রিয়। এর প্রতিটি দিনের রোযা এক বছরের রোযার সমতুল্য। এর প্রতিটি রাতের ইবাদত লায়লাতুল কাদরের ইবাদতের সমতুল্য। [তিরমিজি-৭৫৮, ইবনে মাজাহ-১৭২৮

তাই রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দিনগুলোতে রোযা রাখতেন।
মুসাদ্দাদ .... হুনায়দা ইবনে খালিদ তাঁর স্ত্রী হতে এবং তিনি নবী করীম এর কোন এক স্ত্রী হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ যিল-হজ্জের প্রথম নয়দিন ও আশুরার দিন রোযা রাখতেন। আর তিনি প্রতি মাসে তিনদিন, মাসের সোম ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখতেন। [আবু দাউদ-২৪২৯]
---
তিন. আরাফার দিনের রোযার বিশেষ গুরুত্ব দেয়া এবং আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া: এই দশক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার বড় একটি কারণ হলো এই দশকে ইয়াওমে আরাফাহ রয়েছে। যা বছরের গুরুত্ব ও ফজীলতপূর্ণ দিন। এই দিনের ব্যাপারে হাদীস শরীফে পৃথক ফজীলত বর্ণিত হয়েছে।
হযরত কাতাদাহ রা. বলেন: রাসূল সা. ইরশাদ করেন আরাফার দিন (৯ তারিখ) এর একটি রোযার দ্বারা পূর্বের ও পরের এক বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। এবং আশুরার রোযার দ্বারাও পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। (তিরমিযি- ১/১৫৭ ইসলামিয়া, হাদিস নং-৭৫০, মুসনাদে আহমদ-২২৫৩৫]

তবে আরাফায় অবস্থানকারী হাজিদের জন্য রোজা রাখা মুস্তাহাব নয়। কেননা মহানবী (সা.) আরাফায় অবস্থান করেছিলেন রোজাবিহীন অবস্থায়। এছাড়া ভিন্ন এক বর্ণনায় এসেছে যে, আরাফা তথা ৯ই জিলহজ্জ আল্লাহ তায়ালা বছরের অন্যদিনের তুলনায় অধীক সংখ্যক জাহান্নামীদের মুক্তি দেন।

সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ: তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আরাফাহ্ দিবসের তুলনায় এমন কোন দিন নেই- যেদিন আল্লাহ তা’আলা সর্বাধিক লোককে দোযখের আগুন থেকে মুক্তি দান করেন। আল্লাহ তাআলা নিকটবর্তী হন, অতঃপর বান্দাদের সম্পর্কে মালায়িকার সামনে গৌরব করেন এবং বলেনঃ তারা কী উদ্দেশে সমবেত হয়েছে (বা তারা কী চায়)? [সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-৩১৭৯]
--
চার:
এছাড়াও এমাসের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানীর পশু জবাই করা পর্যন্ত কুরবানী আদায়কারীর জন্য বিশেষ একটি আমল রয়েছে। তাহল, উপরোক্ত সময়সীমার মধ্যে নখ, চুল ও শরীরের অবাঞ্ছিত লোম না কাটা। এটি মুস্তাহাব। যে ব্যক্তি এ নিয়ম পালন করবে, হাজীদের সাথে এটুকু সাদৃশ্য গ্রহণ করায় সে সাওয়াবের অধিকারী হবে।

উবাইদুল্লাহ ইবনে মূআয আম্বারী (রাহঃ) ... নবী এর সহধর্মিনী উম্মে সালামা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেনঃ যে ব্যক্তির নিকট কুরবানীর পশু আছে সে যেন যিলহজ্জ এর নতুন চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানী করা পর্যন্ত তার চুল ও নখ না কাটে। [সহীহ মুসলিম-৪৯৫৯, আবু দাউদ-২৭৮২]

এক্ষেত্রে নখ,চুল এবং শরীরের অবাঞ্ছিত লোম কাটার সর্বোচ্চ সময়সীমা ৪০ দিন যেন অতিক্রম না হয় তাই চাঁদ ওঠার আগেই এসব পরিষ্কার করে নিবে। আর এ আমলটি উপরোক্ত হাদিসে কুরবানি আদায়কারীর জন্য বলা হলেও অনেকের মতে কুরবানী অনাদায়ীরাও এ আমল করতে পারে। আশা করা যায় তারাও সাওয়াবের অধিকারী হবে।
--
পাঁচ. ৯ জিলহজ ফজর থেকে ১৩ জিলহজ আছর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক বলা: তাকবিরে তাশরিক নিয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ”তোমরা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহকে স্মরণ করগ্ধ। (সূরা বাকারা: ২০৩) ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এখানে নির্দিষ্ট দিনগুলো দ্বারা উদ্দেশ্য-তাকবিরে তাশরিক পাঠের দিনসমূহ। ( সহীহ বুখারী, মারিফাতুস সুনানি ওয়াল আছার, হাদিস-১০৮৭২)
---
ছয়: হজ ও ওমরাহ সম্পাদন করা : হজ ও ওমরাহ এ দুটি হলো এ দশকের সর্বশ্রেষ্ঠ আমল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এক ওমরাহ থেকে আরেক ওমরাহ মধ্যবর্তী গুনাহের কাফফারাস্বরূপ আর কবুল হজের প্রতিদান কেবলই জান্নাত।’ (বুখারি, হাদিস:১৭৭৩; মুসলিম, হাদিস:৩৩৫৫)
--
সাত. সামর্থবান হলে ১০-১২ জিলহজ্জ কুরবানী করা: কুরবানির ফজীলত সম্পর্কে হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে... হযরত যায়েদ বিন আরকাম রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সা. কে জিজ্ঞেস করলেন ইয়া রাসূল্লাহ! কুরবানি, ইহা কী? তিনি বললেন তোমাদেন পিতা ইবরাহীম আ. এর সুন্নত। সাহাবায়ে কেরাম পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, এতে আমাদের জন্য কী রয়েছে? রাসূল সা. বললেন, প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি পাওয়া যাবে। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ভেঁড়ার পশমের বিনিময়ে? রাসূল সা. বললেন, ভেঁড়ার প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকি পাওয়া যাবে। [ইবনে মাজাহ পৃষ্ঠা-২২৬ ইসলামিয়া, হাদিস নং: ৩১২৭]
--
অতএব মুসলিম উম্মাহ›র উচিত জিলহজ মাসের প্রথম দশদিনে হাদিসে বর্ণিত আমগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর সান্যিধ্য অর্জন করা এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করা।

সালাত শুধু নামাজ কেই বলে না -----------কুরআনে সালাত শব্দটির প্রয়োগ এবং আরবি ভাষারীতি অনুসারে সালাত শব্দটির যেসব অর্থ পা...
16/05/2025

সালাত শুধু নামাজ কেই বলে না ------
-----
কুরআনে সালাত শব্দটির প্রয়োগ এবং আরবি ভাষারীতি অনুসারে সালাত শব্দটির যেসব অর্থ পাওয়া যায় তার মোটামুটি একটি তালিকা হলো:
(১) নিবিড় অনুসরণ
(২) সংযোগ
(৩) যোগাযোগ
(৪) আনুকূল্য/ অনকূলতা
(৫) সমর্থন, সহযোগিতা
(৬) অনুগ্রহ
(৭) দুআ বা আশীর্বাদ প্রার্থনা
ইত্যাদি।..............
‘সালাত’ শব্দটি ‘সল্লা’ ক্রিয়া (ক্রিয়ারূপ ২) এর ‘মাসদার’ (ক্রিয়াবিশেষ্য) ‘তাসলিয়া’ এর সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত।
-------------------------
সালাতের প্রকারভেদ--------
সালাত সম্পর্কিত আয়াতসমূহের সমন্বিত অধ্যয়ন থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সালাত তিন প্রকার। যথা:
১. দ্বীন সম্পর্কিত বাস্তব সালাত তথা বিশ্বপ্রভুর বিধানের নিবিড় অনুসরণ এবং তার সাথে স্বীয় ব্যক্তিত্বের সংযোগ সাধন বা অনুকূলতা বজায় রাখা।

২. দ্বীন সম্পর্কিত আনুষ্ঠানিক সালাত তথা বিশ্বপ্রভুর বিধানের নিবিড় অনুসরণমূলক আনুষ্ঠানিক কর্মসূচী।

৩. কোনো ব্যক্তিসত্তার প্রতি সালাত (আনুকূল্য, সহযোগিতা, অনুগ্রহ, আশীর্বাদ প্রার্থনা): যেসব আয়াতে ‘আলা’ অব্যয় সহযোগে বা অনুরূপ অর্থগত অবস্থানে কোনো ব্যক্তিসত্তার প্রতি সালাতের কথা এসেছে সেক্ষেত্রে সালাত হলো কোনো ব্যক্তিসত্তার প্রতি অনুকূলতামূলক বা সংযোগমূলক বা যোগাযোগমূলক কর্মসূচী। এতে সহযোগিতা, অনুগ্রহ বা আশীর্বাদ প্রার্থনার মাধ্যমে ব্যক্তির প্রতি সালাত করা হয়।

---------------------------
ব্যক্তিসত্তার প্রতি সালাত আবার কয়েক ভাগে বিভক্ত।
যেমন-
৩.১ রসূলের প্রতি আল্লাহর ও ফেরেশতাদের সালাত। (৩৩:৫৬)
৩.২ রসূলের প্রতি মু’মিনদের সালাত। (৩৩:৫৬)
৩.৩ মু’মিনদের প্রতি আল্লাহ ও ফেরেশতাদের সালাত। (২:১৫৭, ৩৩:৪৩)
৩.৪ মু’মিনদের প্রতি রসূলের সালাত। (৯:৯৯, ৯:১০৩)
৩.৫ মু’মিনদের প্রতি অন্য মু’মিনদের সালাত
-----------------------------
সালাতের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব
--
সালাতের উদ্দেশ্য-------
সালাত সম্পর্কিত আয়াতসমূহের সমন্বিত অধ্যয়ন থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সালাত তিন প্রকার। যথা:
১. দ্বীন সম্পর্কিত বাস্তব সালাত তথা বিশ্বপ্রভুর বিধানের নিবিড় অনুসরণ
এবং তার সাথে স্বীয় ব্যক্তিত্বের সংযোগ সাধন বা অনুকূলতা বজায় রাখা।

২. দ্বীন সম্পর্কিত আনুষ্ঠানিক সালাত তথা বিশ্বপ্রভুর বিধানের নিবিড় অনুসরণমূলক আনুষ্ঠানিক কর্মসূচী।

৩. কোনো ব্যক্তিসত্তার প্রতি সালাত (আনুকূল্য, সহযোগিতা, অনুগ্রহ, আশীর্বাদ প্রার্থনা): যেসব আয়াতে ‘আলা’ অব্যয় সহযোগে বা অনুরূপ অর্থগত অবস্থানে কোনো ব্যক্তিসত্তার প্রতি সালাতের কথা এসেছে সেক্ষেত্রে সালাত হলো কোনো ব্যক্তিসত্তার প্রতি অনুকূলতামূলক বা সংযোগমূলক বা যোগাযোগমূলক কর্মসূচী। এতে সহযোগিতা, অনুগ্রহ বা আশীর্বাদ প্রার্থনার মাধ্যমে ব্যক্তির প্রতি সালাত করা হয়।
-----------------------
সালাতের গুরুত্ব
আল কুরআন অনুসারে সালাতের গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে সালাতের গুরুত্বের বিভিন্ন দিক উল্লেখ করা হলো:
১. সালাত সম্পাদনকারীরা জান্নাত লাভ করবে। (২৩:১-১১, ৭০:১৯-৩৫)
২. সালাত পরিত্যাগকারীরা জাহান্নামে যাবে। (৭৪:৩৮-৪৮, ১০৭:১-৭)
৩. সালাত ও যাকাত দ্বীন ইসলামের মৌলিক কর্মকাঠামো, যারা তা পরিপালন করবে তারাই পরস্পর দ্বীনী ভাই। (৯৮:৫, ৯:১১)

৪. আনুষ্ঠানিক সালাত সম্পাদন আল্লাহর আদেশ, যেজন্য কিছু পূর্বশর্ত রয়েছে এবং যার নির্দিষ্ট সময়সীমা ও প্রক্রিয়া রয়েছে। (৪:১০১-১০৩, ৫:৬, ৪:৪৩, ১৭:১১০, ১১:১১৪, ৬২:৯-১১)
৫. নিছক আনুষ্ঠানিক সালাত বা সালাতের আনুষ্ঠানিকতা কল্যাণ অর্জনে কোনো কাজে আসবে না। সালাতের প্রকৃত উদ্দেশ্য অর্জন এবং আনুষ্ঠানিক সালাতের শিক্ষানুসারে বাস্তব সালাত প্রতিষ্ঠাই পুণ্য কাজ হিসেবে সাব্যস্ত হবে। (২:১৭৭, ১০৭:১-৭)

৬. যারা সালাতকে নষ্ট করেছে তথা আল্লাহ প্রদত্ত উদ্দেশ্য, শিক্ষা, প্রক্রিয়া ইত্যাদিকে প্রবৃত্তির অনুসরণে বিকৃত করেছে তারা কিতাবের নিকৃষ্ট পর্যায়ের প্রতিনিধি হিসেবে সাব্যস্ত। (৮:৩৫, ১৯:৫৯)
৭. সালাতের ক্ষেত্রে অলসতা করা মুনাফিকদের কাজ। (৪:১৪২, ৯:৫৪)। তাই মুনাফিকসুলভ জীবনধারা পরিহার করে নিজেকে মু’মিন হিসেবে আত্মগঠনের জন্য সালাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ করণীয়।

৮. শয়তানের অন্যতম উদ্দেশ্য থাকে যিকর (আল্লাহর স্মরণ ও স্মরণিকা/কুরআন) থেকে এবং সালাত থেকে ফিরিয়ে রাখা। (৫:৯১)
৯. প্রকৃত মু’মিনদেরকে তাদের ব্যবসায়-বাণিজ্য সালাত থেকে উদাসীন রাখতে পারে না। (২৪:৩৭)
১০. নিজে সালাত করার পাশাপাশি পরিবার-পরিজনকেও এ বিষয়ে আদেশ দিতে হবে। নবী ইবরাহীম তাঁর পরিবার পরিজনকে ‘আল বাইতুল মুহাররাম’ তথা কা’বার কাছে আবাসনের ব্যবস্থা করেছেন যেন তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে। (২০:১৩২, ১৪:৩৭)

১১. সালাত নারী-পুরুষ সকলেই সম্পাদন করতে হবে। (৩৩:৩৩)
১২. নবী ঈসা বলেছেন যে, তিনি যতদিন জীবিত থাকেন ততদিন সালাত প্রতিষ্ঠা ও যাকাত প্রদানের জন্য আদেশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। (১৯:৩১)

আবু হুরাইরাহ্ (রা.)–র বরাতে একটি হাদিস বর্ণনা করা হয়েছে। নবী (সা) বলেন, যে দিন আল্লাহর রহমতের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাক...
05/05/2025

আবু হুরাইরাহ্ (রা.)–র বরাতে একটি হাদিস বর্ণনা করা হয়েছে। নবী (সা) বলেন, যে দিন আল্লাহর রহমতের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাঁর নিজের আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন—
১. ন্যায়পরায়ণ শাসক;
২. প্রতিপালকের ইবাদতে যে যুবক জীবন গড়ে তুলেছে;
৩. যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত:
৪. সে দুই ব্যক্তি পরস্পরকে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালোবাসে;
৫. যে কোন নারীর আহ্বান এই বলে প্রত্যাখ্যান করে যে, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’;
৬. যে এতই গোপনে দান করে যে তার বাঁ হাত জানতে পারে না ডান হাত কী খরচ করেছে;
৭. যে নির্জনে আল্লাহর যিকর করে বলে তার দুচোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইতে থাকে। (মুসলিম)
--------------------
1..ন্যায়পরায়ণ শাসক:
ন্যায় প্রতিষ্ঠাকারী শাসক জালিমের হাত থেকে অসহায়কে রক্ষা করা। দুর্বলের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া, আল্লাহর বিধান কায়েম করা, মানুষের আমানত, জীবন ও ধনসম্পদ রক্ষা করা সবকিছু ন্যায়পরায়ণ শাসক দায়িত্বের সঙ্গে করে থাকেন।
-------------------------------
2..আল্লাহর ইবাদতে বেড়ে ওঠা যুবক:
যুবকদের কর্মতৎপরতা থাকে বেশি। পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও বেশি। কিন্তু তা না করে কোনো যুবক যদি নিজেকে আল্লাহর ইবাদতে ব্যস্ত রাখেন, আল্লাহর নৈকট্য পেতে নিজেকে সদা তৎপর থাকেন, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তার ধারেকাছে যান না, আল্লাহ তাআলা ওই যুবককে আরশের নিচে ছায়া দেবেন।
----------------------------------------
3...মসজিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত যার অন্তর:
এর অর্থ হলো প্রতি ওয়াক্তে মসজিদে নামাজ আদায় করতে যিনি তৎপর থাকেন, সেখানে দোয়ার মাধ্যমে তিনি আল্লাহর ক্ষমতা অনুভব করে, তাঁর প্রতি বিনম্র হন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেন। দুনিয়ার প্রলোভন তাকে মসজিদ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে না।
------------------------------
4..আল্লাহর জন্য পরস্পরকে ভালোবাসা:
যে দুই ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবাসেন, তাদের ভালোবাসায় দুনিয়ার কোনো স্বার্থ নেই। তারা আল্লাহর আনুগত্যের জন্য একত্র হয়েছেন। আর তাই একজন আরেকজনকে নেক কাজের আদেশ এবং, অসৎ কাজে বাধা দেন।
----------------------------------------
5..আল্লাহর ভয়ে নারীর আহ্বান থেকে দূরে থাকা:
এ এমন এক যুবক যাকে কোনো নারী নিজের দিকে আহ্বান করলেও আল্লাহর ভয়ে তিনি তার আহ্বান থেকে দূরে থাকেন। আল্লাহ এমন যুবককে তাঁর আরশের নিচে ছায়া দেবেন।
-------------------
6.গোপন দানশীল:
আল্লাহ্‌র দেওয়া সম্পদ এই লেক আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যয় করেন। কাউকে দেখানোর জন্য নয়, হৃদয় থেকে দান–সদকা করেন। তিনি কারও কৃতজ্ঞতা চান না, প্রতিদানও নয়। তিনি দান করে বলে বেড়ান না, দান করে কাউকে খোঁটাও দেন না।
---------------------------
7..নিভৃতে আল্লাহর ভয়ে কাঁদা:
আল্লাহর ভয়ে জিকির করতে করতে অনেকে নীরবে–নিভৃতে কাঁদেন। এই সাত শ্রেণির সৌভাগ্যবান ব্যক্তি, যাদের আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাঁর ছায়া দেবেন।
--------------------

Address

Dhaka

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Right Way/ সঠিক পথ posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

  • Want your business to be the top-listed Media Company?

Share