26/07/2025
ভ্রমণ কাহিনি:
এয়ারপোর্টের Lost and Found থেকে লাগেজ সংগ্রহ করে বাসে উঠেছি। বাসভাড়া দিতে হয় একটি ছোট বক্সে—২ ইউয়ান। কিন্তু সেখানে টাকা খুচরো করার কোনো ব্যবস্থা নেই। আমার কাছে খুচরা নেই, আর আশেপাশে কেউ ইংরেজি বোঝে না।
হঠাৎ করে, মোটা ফ্রেমের চশমা পরা ১৮-২০ বছর বয়সী একটি মেয়ে এসে ইংরেজিতে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “Can I help you?”
আমি বললাম, “তোমার কাছে কি খুচরা টাকা আছে?”
সে বলল, “আসলে চীনে সবাই QR কোড দিয়ে লেনদেন করে। তাই কেউ সাধারণত ক্যাশ ব্যবহার করে না।”
ভীষণ ব্যস্ত সময়, বাস ভর্তি মানুষ। লক্ষ্য করলাম, যারা বসে আছে সবাই বয়স্ক, আর যারা দাঁড়িয়ে আছে সবাই তরুণ। মেয়েটা একটা বৃদ্ধের কাছে গিয়ে পাঁচ ইউয়ান ভাঙিয়ে আমাকে দিল। তারপর বলল, “চীনে সবাই অনেক হেল্পফুল। সবাই তোমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে।”
আমি বললাম, “হ্যাঁ, আমি তা অনুধাবন করতে পারছি।”
তারপর মেয়েটি বলল, “Sorry, my spoken English is not good, but I got highest mark in written English. My written English is very good.”
আমি বললাম, “তোমার ইংরেজি তো চমৎকার।”
সে খুব খুশি হয়ে গেল। তারপর জিজ্ঞেস করল, “তুমি একা এসেছো?”
আমি বললাম, “হ্যাঁ, অফিসের কাজে শিয়ামেনে গিয়েছিলাম, সেখান থেকে বেইজিং এসেছি। উইকেন্ডটা এখানেই কাটাবো।”
সে অবাক হয়ে বলল, “তুমি একাই ঘুরবে?”
আমি বললাম, “হ্যাঁ, আমি একা ঘুরতে পছন্দ করি। নিজের মতো করে অনেক কিছু শেখা যায়, এক্সপ্লোর করা যায়। অবশ্য পরিবার নিয়ে ঘুরতেও ভালো লাগে—দুইটাই দুই রকম অভিজ্ঞতা।”
তার চোখে এক ধরনের ঝিলিক দেখা গেল। সে বলল, “আমিও একদিন তোমার মতো একা ঘুরতে বের হবো, এক্সপ্লোর করবো। নিশ্চয়ই দারুণ অভিজ্ঞতা হবে।”
সে জানাল, “তুমি খুব ভালো সময়ে এসেছো। এখন বেইজিং-এ বসন্তকাল। জানালা দিয়ে দেখো, সব জায়গায় গোলাপ ফুল ফুটে আছে, তাপমাত্রাও সহনীয়।”
সে বলল, “তুমি অবশ্যই এখানকার ডাম্পলিং ট্রাই করো।”
তারপর জানাল, সে বেইজিংয়ের একটি মেডিকেল স্কুলে পড়ে। মানসিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, তিন মাস মানসিক ক্লিনিকে ছিল। এখন সে সম্পূর্ণ সুস্থ এবং আজ সেখান থেকে ফিরছে।
তার মা ও আঙ্কেলকে দেখিয়ে বলল, “ওরা আমার সাথে।” আমি হাত নেড়ে তাদের অভিবাদন জানালাম।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “তোমাকে নিশ্চয়ই অনেক পড়াশোনা করতে হয়, তাই না?”
সে বলল, “হ্যাঁ।”
আমি বললাম, “তোমার কোনো বন্ধু আছে মেডিকেল স্কুলে?”
সে বলল, “না, আমার কোনো বন্ধু নেই।”
আমি শুধু বললাম, “বন্ধু তৈরি করো। জীবন উপভোগ করো। লেখাপড়া অবশ্যই জরুরী কিন্তু তোমার জীবন যেকোনো কিছুর চেয়ে মূল্যবান।”
সে আমার কথা খুব সিরিয়াসলি নিল।
আমি আরও বললাম, “এমন সুন্দর আবহাওয়ায় কোথাও একটু ঘুরে আসতে পারো, ভালো লাগবে।”
ও হ্যা বলে মাথা ঝাকালো।
সে বলল, “তুমি কোন দেশ থেকে এসেছো?”
আমি বললাম, “বাংলাদেশ, ভারতের পাশে ছোট একটা দেশ।”
সে বলল, “আমিও একদিন তোমার দেশে ঘুরতে যাবো।”
আমি হেসে বললাম, “আমার দেশ তোমাদের মতো এত সুন্দর না।”
সে বলল, “Your country is also beautiful. Every country has a reason for its existence, and each has its own unique beauty.”
এটা শুনে আমার চোখ চকচক করে উঠলো এতো ছোট একটা মেয়ের চিন্তাভাবনা কতকানি ম্যাচিউর হলে এতো সুন্দর একটা কথা বলতে পারে এটা চিন্তা করে।
এই ১৮-২০ বছরের এক তরুণীর মুখ থেকে আমি যা শুনলাম ও শিখলাম—তা আমাকে কোনো স্কুল শেখাতে পারেনি।
আর আমিও তাকে শেখালাম—তার জীবন পৃথিবীর যেকোনো কিছুর চেয়ে মূল্যবান।
এই যে কথপকথন এবং লার্নিং, এটাই আমার কাছে ভ্রমণের সৌন্দর্য।