24/08/2025
"জ্ঞান যখন ফিরে, শ্রাবণ নিজেকে পাইলেন একটা অন্ধকার রুমের মধ্যে, অসংখ্য লাশের ভিতর শুয়ে থাকা অবস্থায়। শরীরের উপর অনুভব করলেন মৃত কারো হাত, কারো পা ছড়ায়ে আছে.."
৫ই আগস্টের ভয়াবহতম ভিক্টিমদের একজন গাজি মেরাজ উদ্দিন শ্রাবণ। ৫ই আগস্ট সকালে শ্রাবণদের নেতৃত্বে বিপুল পরিমাণ মানুষ গাজীপুর থেকে ঢাকার দিকে মার্চ করা শুরু করে।
কোণাবাড়ি মোড়ে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে আটকাইলো যখন তাদেরকে, অনেকক্ষণ অবরুদ্ধ থাকার পর একপর্যায়ে সবাই মিলে ব্যারিকেড ভেঙে অগ্রসর হইতে লাগলো এবং দুইশো গজের মধ্যেই অস্ত্রসজ্জিত পুলিশের মুখামুখি হয়ে গেলো।
পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। শ্রাবণ চোখের সামনেই ৪-৫জনকে দেখলেন লুটায়ে পড়তে। নিজেও পিছে দৌড় দিলেন, কিন্তু হঠাৎ পিছন থেকে বৃষ্টির মতো ছররা গুলি এসে তার কাঁধের এক পাশ থেকে নিয়ে সারা পিঠে এসে বিঁধে। গুলিবিদ্ধ শ্রাবণ হুট করে কাঁধটা দেখার জন্য ডান পাশে ফিরলেন, সাথে সাথেই দুইটা গুলি সরাসরি এসে ঢুকলো তার চোখে..
শ্রাবণ মাটিতে পড়ে যাওয়ার পর পুলিশ আগায়ে আসে তার দিকে। ৩-৪জন মিলে শ্রাবণের মাথায়, চেহারায়, হাতে বুট জুতা দিয়ে একটানা লাত্থি মারতে থাকে এবং রাইফেল দিয়ে থেতলায়ে দিতে থাকে। দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে শ্রাবণ জ্ঞান হারায়ে ফেলেন।
জ্ঞান যখন ফিরে, শ্রাবণ নিজেকে পাইলেন একটা অন্ধকার রুমের মধ্যে, অসংখ্য লাশের ভিতর শুয়ে থাকা অবস্থায়। শরীরের উপর অনুভব করলেন মৃত কারো হাত, কারো পা ছড়ায়ে আছে। শ্রাবণ চিৎকার করে উঠলেন যখন, অই জায়গার পুলিশ/আনসাররা (শ্রাবণ নিশ্চিত নন) বুঝতে পারে যে তিনি জীবিত।
শ্রাবণের দুই চোখ থেকেই রক্ত ঝরতেছে অই সময়, চিৎকার দিয়ে তাদেরকে বলতেছে তাকে ছেড়ে দিতে। হঠাৎ রক্তাক্ত শ্রাবণের দিকে আবার রাইফেল তাক করে একজন, গুলি করতে উদ্যত হয়। আরেক কনস্টেবল তখন বাঁচায়ে নিয়ে তাকে দেখায়ে দিলো 'তুই অই জায়গায় গিয়ে শুয়ে থাক'।
শ্রাবণ আরও এক ঘন্টা তখন বারান্দায় শুয়ে থাকলেন, তাও ৫টা লাশের সঙ্গে, মেঝেতে। বুঝতে পারতেছিলেন না তার হুঁশ আছে নাকি নাই, কি চলতেছে এইসব, আদৌ কোথায় আছেন তিনি!
এই ভয়াল দশা থেকে শ্রাবণ বেঁচে ফিরছিলেন সেইদিন। যখন অই পুলিশ/আনসার ফাঁড়িতে খবর পৌছায় শেখ হাসিনা পালায়ে যাওয়ার, শ্রাবণকে ফাঁড়ির পিছনে জঙ্গলে ফালায়ে আসে তারা। শ্রাবণের হুঁশ হয় নাই, সেন্স যখন পুরাদমে ফিরছে তখন হাসপাতালে তিনি।
বর্তমানে শ্রাবণের এক চোখে দৃষ্টিশক্তি নাই। নিজ বাড়ি ময়মনসিংহ শহরে বাস করেন। আগস্টের পর বহুদিন ধরে ট্রমায় ছিলেন, রাতে ঘুমের ভিতর চিৎকার করে জেগে উঠতেন অসংখ্য লাশের ভিতর আটকা পড়ার দৃশ্য দেখে।
চোখ ও মাথার গুলিগুলা বের করা যায় নাই আর। শ্রাবণ বলেন, '৫ই আগস্টের স্মৃতি হিসাবেই ধরেন রাইখা দিছি চোখের ভিতর বুলেট!'
history of July এর পেজ থেকে নেওয়া।