06/06/2025
কমলাপুর রেলস্টেশনের পাশে গাড়ি থেকে নামতেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলমের কাছে দৌড়ে আসলো একটা ছিন্নমূল ছেলে। এসে উনার পা ধরতে গিয়ে বলল, স্যার আমার জন্য দোয়া কইরেন। জাহাঙ্গীর সাহেব হাত দিয়ে ছেলেটার মাথা মুছে দিয়ে পাশে থাকা সহকারীকে বলল, টাকা আছে? সহকারী মানিব্যাগ থেকে ৫০০ টাকার নোট বের করতেই ছেলেটা দৌড়ে চলে যেতে লাগল - না, না স্যার, টাকা নিমু না। আপনি আমার জন্য শুধু দোয়া কইরেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অনেক বললেন, সে টাকাটা নিলোই না। এটা তোমার জন্য ঈদ উপহার বলব - তাও না। পাশে থাকা পুলিশ অফিসারও রিকুয়েষ্ট করতে থাকলেন টাকা নিতে, কিন্তু ছেলেটা লজ্জায় পড়ে গেল। ও টাকা নিলোই না।
পরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তার মাথাটা মুছে দিয়ে চলে গেলেন। এরপর সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞেস করে, তুমি টাকা নিলে না কেন? উনি কে চিনো?
ছেলেটা হাসিতে খুব সারল্য উত্তর দিলো, উনারা কষ্ট করে দেশ চালায় না!? টাকা নিলে মানুষে খারাপ বলবো। দোয়া করলে চলতে পারবো, টাকা নিলে ২দিনে শেষ হয়ে যাইতো।
এ ছিন্নমূল ছেলেটার সরলাপনা মুগ্ধ করেছে। বাড়িঘর নাই, খাওন-দাওনের কোনো ঠিকঠিকানা নাই, রাস্তায় ঘুরে, তার মাথায় এ সেন্স কাজ করছে, টাকা নিলে মানুষে খারাপ বলবে। দোয়া করলে সারাজীবন থাকবে। টাকাটা নিলে ২ দিনে শেষ হয়ে যাবে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে এসব ছিন্নমূল ছেলেরা আন্দোলনের একটা বড় শক্তি হিসেবে আবিভূত হয়েছিল। এরা পুলিশের সাথে ফাইটে ছাত্রদের সামনের সারির যোদ্ধা ছিল। এখনো অনেক ছিন্নমূল ছেলের ছবি চোখে ভাসে। এরা ছিল রাস্তায় তেজোদীপ্ত; সাহসী। প্রায় ১৬০ জনের মতো ছিন্নমূল ছেলে শহীদ হয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে। রাস্তায় কোনো ছিন্নমূল ছেলে দেখলেই মায়া হয়; মনে পড়ে জুলাই-আগস্টের কথা।
এ ছেলেটির প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলমের মমতা দেখে খুশি হয়েছি। রাষ্ট্রনেতারা এরকম দয়ালু, সহজ-সরল ও স্নেহপরায়ণ হৃদয়ের হতে হয়।
নাম না-জানা ছিন্নমূল ছেলেটির প্রতি ভালোবাসা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম সাহেবের প্রতি সম্মান।
-ফরিদ উদ্দিন রনি।