Evu's diary

Evu's diary Let's learn about new stories. And let's create some new stories of life.

 #টুইনসিস্টার  #ইভুসডাইরি  #পর্ব১০ #সামনেরপথযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরের দিনগুলো ছিল একদিকে পুনর্গঠনের, অন্যদিকে ভেবে দেখার। যা...
14/05/2025

#টুইনসিস্টার
#ইভুসডাইরি
#পর্ব১০

#সামনেরপথ

যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরের দিনগুলো ছিল একদিকে পুনর্গঠনের, অন্যদিকে ভেবে দেখার। যারা এতদিন ভয়ে-ভয়ে বেঁচে ছিল, এখন তারা ইভ আর মিথের দিকে তাকিয়ে আছে—নতুন পথ দেখানোর আশায়। যুদ্ধ শেষ হলেও, যে ক্ষতগুলো রেখে গেছে, সেগুলো এখনো সারেনি। এখন আসল লড়াই—মানুষের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা, আর পুরো সাম্রাজ্যটাকে আবার দাঁড় করানো।
প্রাসাদ এখন ভরে গেছে লোকজন দিয়ে—উপদেষ্টা, সৈন্য, দূত…সব দিক থেকে সবাই আসছে ভবিষ্যতের দিশা খুঁজতে। ইভ জানত, নেতৃত্ব মানেই শুধু তলোয়ার চালানো না—এটা এমন সব সিদ্ধান্ত নেওয়া, যেগুলো লাখ লাখ মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলবে। আর এই জায়গাটার জন্য ও যুদ্ধ করেছে ঠিকই, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে দায়িত্বের ওজনটা অনেক বেশি।
বড় মিটিং টেবিলের একদম মাথায় বসে ছিল ইভ। সামনে রাখা স্ক্রলের দিকে তাকিয়ে ছিল—প্রদেশগুলোর অবস্থা, যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি, কী কী দরকার পুনর্গঠনের জন্য, কোথায় এখনো অশান্তি চলছে—সব লেখা। যুদ্ধ শেষ, কিন্তু ক্ষত এখনো কাঁচা।
মিথ পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, ওর চেয়ারের পেছনে হাত রেখে, একদম চুপচাপ। যেমন সবসময় থাকে—নির্ভরতার প্রতীক। ও রাজপুত্র, জন্মসূত্রে। কিন্তু নিজের সবকিছু ছেড়ে, এখন ইভের পাশে দাঁড়িয়ে সাম্রাজ্য গড়ে তুলছে।
"কোথা থেকে শুরু করব বলো?" ইভ আস্তে বলল, কণ্ঠে হালকা দ্বিধা।
"মানুষ দিয়েই শুরু করতে হবে," মিথ বলল শান্ত গলায়। "হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাসটা আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। যাদের পাশে পাওয়া যায়, তাদের সাথে মিত্রতা করতে হবে। আর মানুষকে বোঝাতে হবে—এটা একটা নতুন সময়। আমাদেরকে উদাহরণ হয়ে উঠতে হবে।"
ইভ মাথা নাড়ল। "আর যারা আমাদের সাপোর্ট করেনি? তাদের কী হবে? কীভাবে নিশ্চিত হবো যে তারা বিদ্রোহ করবে না?"
মিথের মুখ শক্ত হয়ে গেল। "সবাইকে দরকার নেই। আমাদের দরকার সঠিক লোকদের—যারা সত্যিই চায় সাম্রাজ্যটা সেরে উঠুক। যারা শুধু নিজেদের স্বার্থ নিয়ে চলবে, তাদেরকে ঝেড়ে ফেলতে হবে।"
পরের কয়েক সপ্তাহে ইভ আর মিথ বিশ্রাম ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছিল। রাজধানী ঘুরে ঘুরে মানুষের সাথে কথা বলছিল—শুধু শাসক হিসেবে না, বরং শুনতে, বুঝতে, আর তাদের ব্যথায় সঙ্গী হতে।
তবুও, কাজ অনেক বাকি। অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে, অনেক প্রদেশ এখনো ক্ষতির ধাক্কা সামলাতে পারছে না। রাজকোষ প্রায় খালি, খাবারের অভাব, দক্ষিণে দুর্ভিক্ষের গুজব, আর উত্তরে এখনো এরনার প্রভাব—সব একসাথে সমস্যা তৈরি করছে।
ইভ এখন বুঝে গেছে—নেতৃত্ব মানে শুধু সিদ্ধান্ত না, এটা মানে অসংখ্য মানুষের আশা, দাবি, আর কষ্ট সামলানো। তবুও, পাশে মিথ আছে বলেই সাহস পাচ্ছে।
তবে, সবকিছু শান্ত ছিল না। ছায়ার মধ্যে আবার নতুন হুমকির গুজব ছড়াতে শুরু করল। যারা একসময় এরনার পক্ষে ছিল, তারা আবার একত্রিত হচ্ছে। মিথের চাচার সমর্থকরাও একেবারে গায়েব হয়ে যায়নি। সাম্রাজ্য এখনো ভীষণ ভঙ্গুর, আর ক্ষমতার ভারসাম্য একেবারে ধারালো ছুরির উপর দাঁড়ানো।
এক সন্ধ্যায়, ইভ আর মিথ প্রাসাদের বাগানে বসে ছিল। চারপাশে নীরবতা। হঠাৎ পায়ের শব্দ শোনা গেল। উত্তরের অঞ্চল থেকে আসা এক দূত সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
"মহারানি, উত্তরে বিদ্রোহের গুজব পাওয়া গেছে। পুরনো শাসনের প্রতি আনুগত্য দেখানো কিছু দল জোটবদ্ধ হচ্ছে। তারা শহর দখল করছে, সৈন্য ভাড়া নিচ্ছে।"
ইভের বুক ধক করে উঠল। মিথের চোখে দেখা গেল চিন্তা, কিন্তু সাথেই দৃঢ়তা।
"এটা আমরা ম্যানেজ করব," মিথ বলল শক্ত গলায়। "আমাদের সেনা পাঠাতে হবে—এই আগুন ছড়ানোর আগেই নিভিয়ে ফেলতে হবে। মানুষকে দেখাতে হবে আমরা দুর্বল না, বরং দৃঢ়ভাবে শান্তি রক্ষা করব।"
ইভ আর মিথ বিদ্রোহ ঠেকানোর পরিকল্পনা করতে লাগল। প্রতি মুহূর্তে দায়িত্বটা যেন আরও ভারী হয়ে উঠছিল। ইভ একসময় শান্ত জীবন চেয়েছিল, এখন সে দাঁড়িয়ে আছে এক সাম্রাজ্যের চালকের আসনে—ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত ওর হাতেই।
মিথও কম কষ্টে নেই। সে নিজের জন্মগত অধিকার ত্যাগ করেছে ইভের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। কেউ কেউ এখনো বলে, রাজত্ব মিথের হওয়া উচিত ছিল, ইভকে রানী করে পাশে বসানো উচিত ছিল। কিন্তু মিথ বেছে নিয়েছে ভালোবাসা, আর তার সাথে এমন এক রাস্তা, যেখানে প্রতিটা পদক্ষেপেই চ্যালেঞ্জ।
তবে এক জিনিস নিশ্চিত—ওরা এটা একা করতে পারবে না।
"মানুষকে বিশ্বাস করতে হবে, মিথ," ইভ বলল আস্তে, ওর হাত ওর হাতে রেখে। "তাদের বিশ্বাস করতে হবে আমাদের ওপর। এই সাম্রাজ্যের ওপর। ভবিষ্যতের ওপর।"
মিথ হেসে ওর দিকে তাকাল। হাতটা শক্ত করে ধরল।
"তারা বিশ্বাস করবেই, ইভ। আমরা তাদের বিশ্বাস করাবো—একসাথে।"

[ কপি করা নিষেধ 🚫। এটা আমার লেখা প্রথম গল্প। ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ। ]

 #টুইনসিস্টার  #ইভুসডাইরি  #পর্ব৯ #সাম্রাজ্যগড়েতোলাযুদ্ধ শেষ। তলোয়ারের শব্দ এখন থেমে গেছে। চারপাশে একটা অদ্ভুত শান্তি,...
12/05/2025

#টুইনসিস্টার
#ইভুসডাইরি
#পর্ব৯

#সাম্রাজ্যগড়েতোলা

যুদ্ধ শেষ। তলোয়ারের শব্দ এখন থেমে গেছে। চারপাশে একটা অদ্ভুত শান্তি, যেন রাজপ্রাসাদ আর ভয় আর দম্ভের জায়গা না, বরং একটা নতুন শুরু। সাম্রাজ্যটা ধীরে ধীরে সেরে উঠছে—ঠিক যেমন ইভ আর মিথও সেরে উঠছে তাদের ক্ষত নিয়ে।
ইভ দাঁড়িয়ে ছিল প্রাসাদের বারান্দায়। দূরে তাকিয়ে দেখছিল শহরটাকে, যে শহরটাকে ও একসময় হারানোর ভয়ে কেঁপে উঠত। এখন সেটা ওর শহর, ও আর মিথের। সিংহাসনটা এখন আর শুধু ক্ষমতার প্রতীক না, এটা সেই স্বপ্নের চিহ্ন যেটার জন্য এত কিছু লড়ে এসেছে ওরা।
তবুও, চারপাশে একটা ভারী নিস্তব্ধতা। যুদ্ধ জেতার দাম কম ছিল না। মিথের চাচা মারা গেছে, এরনা পালিয়ে গেছে, প্রাসাদটাও এখন আর রাজকীয় গ্ল্যামারের জায়গা না, বরং বদলের সূচনা। ইভের বাবা-মা মুক্ত, কিন্তু সম্পর্কটা... সেটা আগের মতো হবে না আর কখনোই। বিশ্বাসঘাতকতা, অবহেলা—সবকিছুর মাঝে দিয়ে বড় হয়েছে ইভ।
একটা কনফিউশন ওর মধ্যে সব সময় ঘুরপাক খাচ্ছিল—ও কি সত্যিই পারবে এতো বড় দায়িত্ব নিতে? রাজা হওয়া তো আর শুধু সিংহাসনে বসে রাজত্ব করা না। হাজার হাজার মানুষের স্বপ্ন, নিরাপত্তা, বিশ্বাস... সব এর সঙ্গে জড়িয়ে।
ঠিক তখন মিথ পাশে এসে দাঁড়াল। ওর উপস্থিতিতে একটা অদ্ভুত শান্তি আছে, যেন ঝড়ের মাঝেও একটা থেমে যাওয়া পায় ইভ।
"আমরা পেরেছি, ইভ," মিথ বলল শান্ত গলায়। "এখন আমাদের সময়—সবকিছু নতুন করে গড়ার। একসাথে।"
ইভ ওর দিকে তাকাল। চোখে কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা, আর একরাশ বিশ্বাস। মিথ তো সবকিছু ছেড়ে ওর পাশে দাঁড়িয়েছে—টাইটেল, পরিবার, ভবিষ্যৎ... সব। আর এই একটা জিনিসই ওর বুক ভরে দিল।
"আমি জানি না আমি কতটা তৈরি," ইভ আস্তে বলল। "এটা শুধু সাম্রাজ্য চালানোর বিষয় না। এটা মানুষের ভরসা ফিরে পাওয়ার ব্যাপার।"
মিথ হেসে ওর হাত ধরল। "তুমি একদম তৈরি। তুমি যেটা করে দেখিয়েছ, সেটা কেউ পারে না। আর আমি সবসময় তোমার পাশে থাকব।"
তবুও, একটা প্রশ্ন ইভের মাথায় ঘুরছিল—এরনার কী হলো? কেউ জানে না সে কোথায়। কেউ বলে পালিয়ে গেছে, কেউ বলে হয়তো আত্মহত্যা করেছে পরাজয়ের পর। কিন্তু ইভ জানে, যত দূরেই যাক, এরনার ছায়া ওকে তাড়া করবেই।
দিন যায়। ধীরে ধীরে সাম্রাজ্যটা নিজের পায়ে দাঁড়াতে শুরু করল। মিথ পাশে থেকে সবকিছুতে সাহায্য করছিল। মানুষ, যারা এতদিন ধরে কষ্টে ছিল, তারা নতুন সূর্যের আশায় বুক বাঁধতে শুরু করল। আর ইভ—সে এখন একজন রানি, যার চোখে শুধু ক্ষমতার লোভ না, বরং একটা ভালো ভবিষ্যতের ছবি।
নতুনভাবে গঠন করা হলো কাউন্সিল, নতুন নতুন মিত্র জুটল, পুরোনো ক্ষত সেলাই হতে লাগল। কিন্তু সব কিছু এখনো ঠিক হয়নি। বিশ্বাস আবার গড়ে তুলতে হবে, শত্রুদের ঠান্ডা করতে হবে, আর ভবিষ্যতে নতুন চ্যালেঞ্জ তো আসবেই। তবুও, অনেকদিন পর ইভ মনে করল—হ্যাঁ, সত্যিই একটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে।
সূর্য অস্ত যাচ্ছিল। চারপাশে লম্বা ছায়া পড়েছে প্রাসাদের উঠোনে। ইভ আর মিথ দাঁড়িয়ে ছিল একসাথে। ওরা অনেক কিছু হারিয়েছে, অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে গেছে। কিন্তু এখন, ওরা দাঁড়িয়ে আছে নতুন একটা সময়ের দোরগোড়ায়।
ইভ মিথের দিকে তাকিয়ে বলল, "সব পেরিয়ে এলাম, মিথ। কিন্তু এটা শুধু রাজত্ব করার কথা না। এটা বাঁচার কথা, একসাথে হাসার কথা।"
মিথ ওর হাত ধরল, চোখে সেই চিরচেনা নির্ভরতা। "আর আমরা বাঁচবও, একসাথে।"
যেভাবে সাম্রাজ্যটা সেরে উঠছে, ঠিক সেভাবেই ইভ আর মিথের মনটাও সেরে উঠছিল। অন্ধকারে যে ভালোবাসা জন্মেছিল, সেটা এখন আগুনের মতো জ্বলছে। বিশ্বাস, ভালোবাসা আর নতুন ভবিষ্যতের স্বপ্ন—সবকিছু একসাথে নিয়ে, ওদের গল্পটা এখন নতুন এক অধ্যায়ে পা রাখল।

[কপি করা নিষেধ 🚫। ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। এটা আমার লেখা প্রথম গল্প ]

 #টুইনসিস্টার  #ইভুসডাইরি  #পর্ব৮  #চূড়ান্তপ্রতিরোধচূড়ান্ত যুদ্ধের আগের রাত। যেনো গোটা সাম্রাজ্য থেমে গেছে, নিঃশ্বাস আ...
09/05/2025

#টুইনসিস্টার
#ইভুসডাইরি
#পর্ব৮

#চূড়ান্তপ্রতিরোধ

চূড়ান্ত যুদ্ধের আগের রাত। যেনো গোটা সাম্রাজ্য থেমে গেছে, নিঃশ্বাস আটকে আছে অজানা ভবিষ্যতের অপেক্ষায়। ইভের মনে ভর করেছে একটা ভারী অজানা বোঝা—এটা শেষ মুহূর্ত, যেটা ঠিক করে দেবে সাম্রাজ্যের ভাগ্য।
ইভ একা বসে ছিল ঘরের কোণে, তলোয়ার ধার করছিল। জানালা দিয়ে চাঁদের আলো পড়ছিল তার ওপর, আর পাথরে লোহার ঘর্ষণের শব্দ ছাড়া চারপাশে ছিল নিস্তব্ধতা। এই অস্ত্রটা শুধু লড়াইয়ের জন্য নয়—মিথ তাকে এটা দিয়েছে অন্যায়ের অবসান ঘটাতে, স্বেচ্ছাচারিতার শিকড় উপড়ে ফেলতে।
গিল্ড-এ প্রবেশের পর থেকে সে শিখেছে অনেক কিছু—ক্ষমতার ছলচাতুরী, বিশ্বাসের মূল্য, আর বিশ্বাসঘাতকতার নির্মমতা। কিন্তু তার ভিতরে সবসময় জেগে ছিল একটাই আকাঙ্ক্ষা—একটা স্বাধীন সাম্রাজ্য।
শেষবার তলোয়ারে হাত বুলিয়ে উঠে দাঁড়াল সে। অস্ত্রটা যেনো তার হারানো অতীত আর ভবিষ্যতের আশার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
মিথ নিঃশব্দে ঘরে প্রবেশ করল, যেনো এক ছায়া। তার চোখ পড়ল ইভের ওপর।
"তুই প্রস্তুত," মিথ বলল, গম্ভীর কিন্তু কোমল গলায়। "আমরা একসাথে লড়ব, ইভ।"
ইভের ঠোঁটে একটুখানি হাসি খেলে গেল। "একসাথে," সে বলল। "কিন্তু মিথ... আমরা কি সত্যিই পারব? এরনা আর তোর চাচাকে হারাতে পারব?"
মিথ চুপ করে থাকল এক মুহূর্ত। তারপর বলল, "আমাদের হারার সুযোগ নেই। পেছনে ফেরার উপায়ও নেই।"
ঠিক তখনই এক দূত এসে হাজির হল। খবরটা শুনে যেনো ইভের পাইয়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো । মিথের চাচা শেষ চেষ্টা হিসেবে রাজপরিবারকে বন্দি করেছে—ইভের বাবা-মাও সেই তালিকায়। সে দাবি করেছে, মিথ যদি আত্মসমর্পণ না করে, তবে তাদের হত্যা করা হবে।
"তারা প্রাসাদে," দূত বলল, গলা কাঁপছে ভয়ে। "তাঁকে থামাতে হলে আপনাদের আত্মসমর্পণ করতে হবে। এখন থেকে সাম্রাজ্য তাঁর।"
ইভের মুখ শক্ত হয়ে উঠল। বাবা-মা তাকে ত্যাগ করলেও, তারা এমন মৃত্যু ডিজার্ভ করে না।
"আমরা তাদের উদ্ধার করব," ইভ বলল দৃঢ় কণ্ঠে। "আমরা কেবল সিংহাসনের জন্য নয়, তাদের জীবন আর সাম্রাজ্যের ভবিষ্যতের জন্যও লড়ছি।"
ইভ আর মিথ সৈন্য নিয়ে রওনা দিল প্রাসাদের দিকে। রাস্তাগুলো ছিল নীরব, বাতাসে যুদ্ধের গন্ধ। সবকিছু এখন নির্ভর করছে এই শেষ লড়াইয়ের ওপর।
প্রাসাদের দরজা খুলে গেল। তারা ঢুকল।
প্রাসাদের মূল হলে দাঁড়িয়ে ছিল এরনা, একদল বিশ্বস্ত সৈন্য নিয়ে। সে যেনো একজন রাণী—আত্মবিশ্বাসী, শক্তিশালী।
"ইভ," এরনা বলল, ঠান্ডা গলায়। "তুই এখনো বুঝিসনি। আমার সঙ্গে থাকলে তোরও ভাগে আসত ক্ষমতা। এখন তুই আমার পথে দাঁড়িয়ে, আর আমি তোকে ছেড়ে দেব না।"
ইভ এগিয়ে গেল। "এখনো সময় আছে। চল ফিরে যাই, এরনা। আরেকটা পথ বেছে নেই।"
এরনার চোখ জ্বলে উঠল। "এই সাম্রাজ্য দুর্বলদের জন্য নয়, ইভ। আমি যা করিনি, তুই সেটা কখনো করবি না। আমি হচ্ছি সেই শাসক, যার দরকার এই সাম্রাজ্যের।"
ঠিক তখনই সামনে এলো মিথের চাচা। ঠোঁটে কুটিল হাসি।
"তোমরা দেরি করে ফেলেছো," সে বলল। "সাম্রাজ্য এখন আমার। তোমরা কিছুই করতে পারবে না।"
কিন্তু মিথ তৈরি ছিল। তার চোখে আগুন, হৃদয়ে প্রতিশোধ।
যুদ্ধ শুরু হলো।
চারদিক থেকে তলোয়ার আর চিৎকারে ভরে গেল প্রাসাদ। ইভ আর মিথ একসঙ্গে লড়ল, ঠিক যেমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এ লড়াই শুধু শক্তির নয়—এটা বিশ্বাস, ভালোবাসা আর ভবিষ্যতের লড়াই।
শেষ পর্যন্ত, জিতল তারা। মিথের চাচা ধ্বংস হলো, তার ক্ষমতার অহংকার মাটিতে মিশে গেল। আর এরনা, নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষায় অন্ধ হয়ে পড়লেও, ইভ আর মিথের বন্ধনের সামনে সে দাঁড়াতে পারল না।

[কপি করা নিষেধ 🚫। ভুলক্রটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। এটা আমার লেখা প্রথম গল্প। ]

 #টুইনসিস্টার  #ইভুসডাইরি  #পর্ব৭  #বিভাজনইভ আর এরনার সংঘর্ষ শুরু হয়ে গেছে। এক সময় যারা একে অপরের ছায়াসঙ্গী ছিল, এখন ...
07/05/2025

#টুইনসিস্টার
#ইভুসডাইরি
#পর্ব৭

#বিভাজন

ইভ আর এরনার সংঘর্ষ শুরু হয়ে গেছে। এক সময় যারা একে অপরের ছায়াসঙ্গী ছিল, এখন তারা দাঁড়িয়ে আছে বিপরীত ময়দানে—ভালোবাসা, বিশ্বাস আর পরিবারের সব স্মৃতিকে পেছনে ফেলে কেবল ক্ষমতা আর বাঁচার লড়াইয়ে।
যুদ্ধ থেমে গেলে ধোঁয়ার মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিল ইভ, তার হাতে এখনও তরবারি, নিঃশ্বাস ভারী। তারা কাফেলাটা দখল করে ফেলেছে, প্রমাণও মিলেছে, কিন্তু ইভ জানত—এটাই তো আসল যুদ্ধের শুরু।
সামনের দিকে, সামরিক পোশাকে দাঁড়িয়ে ছিল এরনা। চোখে মুখে বিজয়ের গর্ব।
"ইভ," এরনা ডেকে উঠল, হাওয়ায় ভেসে এলো তার কণ্ঠ, "তুই কখনও বুঝিসনি, তাই না? এই সিংহাসন আমার প্রাপ্য। আমি তো সবসময় রাজত্বের জন্যই জন্মেছিলাম—তুই না।"
ইভের বুকটা মোচড়ে উঠল। একসময় যাকে নিজের প্রাণের থেকেও বেশি বিশ্বাস করত, এখন সে-ই সবচেয়ে বড় শত্রু। এরনার চোখে এখন আর কোনো মমতা নেই, আছে শুধুই ঠান্ডা নিষ্ঠুরতা।
"তোর এখনও সুযোগ আছে, এরনা," ইভ বলল, স্বরটা ঠান্ডা কিন্তু দৃঢ়। "ওর হাতের পুতুল হবার দরকার নেই। চল, ফিরে চল। সবকিছু আবার শুরু করা যায়।"
এরনা মাথা নাড়ল, ঠোঁটে একটুকরো কটাস্নান হাসি। "তুই এখনো কল্পনায় বাস করিস, ইভ। এই সাম্রাজ্যকে শক্ত হাতে চালানোর দরকার। দুর্বলরা টিকে থাকতে পারে না।"
এই কথাগুলো ইভের মনে যেনো তলোয়ার চালাল। তার বোন, যাকে নিয়ে সে স্বপ্ন দেখত, আজ তার বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়ে।
যুদ্ধ আবার শুরু হল। মিথের চাচা যেভাবে সৈন্য সাজিয়ে রেখেছিল, তা দেখে ইভের মাথা ঘুরে গেল। তার একেকটা পা যেনো তাকে আরও গভীর ষড়যন্ত্রের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তার বাবা-মা—যারা তাকে ছোটবেলা থেকে আগলে রেখেছিল—এখন এরনার পাশে দাঁড়িয়ে।
মিথ ইভকে সব জানিয়েছে, কীভাবে তার চাচা রাজনীতির চালাকিতে একেকটা মানুষকে নিজের মতো করে গড়ে তুলেছে। আর এখন, এরনাও হয়ে গেছে সেই শক্তির পুতুল।
তবুও, মিথ ছিল অটল। নিজের রাজপরিবার হারিয়েও সে হার মানেনি। বরং, ইভের পাশে থেকে সে নতুন একটা বিশ্বাস পেয়েছে। দু’জন মিলে এখন এমন একটা জোট, যেটাকে কেউ সহজে ভাঙতে পারবে না।
যখন যুদ্ধের ময়দান থেকে দূরে, তারা পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখছিল, ইভ ধীরে ধীরে বুঝতে পারল—এই বন্ধুত্বটা আর কেবল সাম্রাজ্যের জন্য নয়। মিথের নির্ভরতা, তার একাগ্রতা—সব কিছুই তাকে ইভের চোখে ভিন্নভাবে তুলে ধরেছে।
"মিথ," ইভ নিচু স্বরে বলল, "যদি আমরা হেরে যাই? যদি এরনা আর তোমার চাচা জিতে যায়?"
মিথের চোখে চোখ রেখে সে বলল, "তাহলে আমরা শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়ব। ওদের জিততে দিতে পারি না।"
সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে। এখন আর পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। শেষ যুদ্ধ আসন্ন। এবং মিথ থাকবে ঠিক তার পাশে—যুদ্ধের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত।
এরনা আর ইভ—একসময়ের যমজ, এখন একে অপরের প্রতিপক্ষ। ভালোবাসা, বিশ্বাস, আর রাজ্য—সবকিছুর জন্যই এই শেষ লড়াই।
তবুও ইভের মনে প্রশ্ন: এখনো কি সময় আছে এরনাকে ফিরিয়ে আনার? সে কি আদৌ বাঁচাতে পারবে তার বোনকে?
মিথ তার কাঁধে হাত রাখল। "যা-ই হোক, একসাথে সামলাবো।"
ইভ মাথা নাড়ল। চোখে আগুনের মতো দৃঢ়তা। "একসাথেই।"

[ কপি করা নিষেধ 🚫। ভুল ক্রুট থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর এটা আমার লেখা প্রথম কোনো বড় গল্প। ]

 #টুইনসিস্টার  #ইভুসডাইরি  #পর্ব৬ #বিভক্তহৃদয়পরিকল্পনা শুরু হয়ে গেছে, কিন্তু প্রতিদিন যেন ইভের কাঁধে আরও ভার চাপিয়ে দিচ্...
07/05/2025

#টুইনসিস্টার
#ইভুসডাইরি
#পর্ব৬

#বিভক্তহৃদয়

পরিকল্পনা শুরু হয়ে গেছে, কিন্তু প্রতিদিন যেন ইভের কাঁধে আরও ভার চাপিয়ে দিচ্ছে। গিল্ডে তার ভূমিকা এখন অনেক শক্ত হয়ে গেছে—সে আর কেবল দর্শক না, বরং একটা ভেঙে পড়া সাম্রাজ্যকে বাঁচানোর লড়াইয়ের মূল খেলোয়াড়। মিথ হয়ে উঠেছে তার সবচেয়ে কাছের সঙ্গী। ওদের মধ্যে বোঝাপড়াটা এখন অনেক গভীর, কিন্তু যতই ইভ জানছে, ততই বুঝতে পারছে সে হয়তো নিজেকেই হারিয়ে ফেলবে এই যুদ্ধে—আর হয়তো হারাবে একমাত্র পরিবারকেও।
গিল্ডের সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের ইনফরমেশন। প্রাসাদের গোপন ম্যাপ, চিঠিপত্র, গোপন রিপোর্ট—সব মিলে এক বিশৃঙ্খল সাম্রাজ্যের চিত্র চোখের সামনে তুলে ধরছে। মিথ সবসময়ই ছায়ার আড়ালে থেকেছে, এক সিংহাসনহীন রাজপুত্র। কিন্তু এখন ইভ দেখতে পাচ্ছে ওর প্রকৃত যুদ্ধটা আসলে কত বড়।
এক রাতে, যখন ওরা একসাথে ম্যাপ আর কাগজপত্র নিয়ে বসে কাজ করছিল, ইভ হঠাৎ করে অনুভব করল মিথের উপস্থিতি যেন আরও বেশি করে টানছে তাকে। ওর চোখে সেই নীরব শক্তিটুকু ছিল, যেটা ইভ শুরু থেকেই অনুভব করত।
“মিথ,” ইভ ধীরে বলল, “তুমি কতোদিন ধরে এই প্ল্যান করছো?”
মিথ চোখ তুলল না। “তুমি কল্পনাও করতে পারবে না কতদিন ধরে,” সে নরম গলায় বলল। “আমি বছরের পর বছর ধরে আমার চাচার ওপর নজর রেখেছি। সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। গিল্ড ছিল একমাত্র রাস্তা।”
“আর এখন?” ইভ জিজ্ঞেস করল, বুক ধড়ফড় করতে লাগল। “তথ্য আমাদের হাতে। এরপর?”
মিথ এবার চোখ তুলল। তার নীল চোখে ছিল গভীর দৃঢ়তা। “এবার সময় হয়েছে—আঘাত করার।”

তাদের প্রথম টার্গেট ছিল এক রাজকীয় বহর, যেখানে ধরা পড়বে মিথের চাচার দুর্নীতির প্রমাণ। জায়গাটা ছিল সাম্রাজ্যের একটু দূরের অঞ্চল, যেখানে আক্রমণ করা সুবিধাজনক। কিন্তু ইভ জানত, কাজটা সহজ হবে না।
“একটাও ভুল চলবে না,” মিথ বলল। “এটা শুধু ক্ষমতার খেলা না। এটা সাম্রাজ্য বাঁচানোর লড়াই।”
ইভ মাথা নেড়ে বলল, “আমরা তৈরি। এবার ব্যর্থ হবার প্রশ্নই আসে না।”

এরই মাঝে ইভার জীবনে একটা বড় ধাক্কা এল। একদিন প্রাসাদে গোপনে গিয়ে সে শুনল, তার বাবা-মা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে—
“ও বুঝে না রাজনীতি কাকে বলে,” মা বলছিল। “এরনা-ই পারবে রাজ্য চালাতে। ইভ তো হারিয়ে গেছে অনেক আগেই।”
ইভের বুকটা কেমন যেন ভেঙে গেল। নিজের বাবা-মা তাকে ছেড়ে এরনার পাশে দাঁড়িয়েছে? এই বিশ্বাসঘাতকতা সে কোনোদিন ভাবেনি।
কিন্তু সে কাঁদল না। এখন তার কাছে কান্নার সময় নেই। এরনা নিজের রাস্তা বেছে নিয়েছে, আর ইভও নেবে নিজের। এখন পেছনে ফেরার পথ নেই। সাম্রাজ্য টিকে থাকবে কি ধ্বংস হবে, তা নির্ভর করছে তার ওপর।

সেদিন রাতে, মিশনের সব প্রস্তুতি শেষ হওয়ার পর ইভ গিল্ডের এক কোণায় একা বসে ছিল। সবকিছু এত ভার লাগছিল তার কাছে—বিশ্বাসঘাতকতা, একাকীত্ব, পরিবারের দূরত্ব। একটু সময়ের জন্য হলেও সে নিজের মন খুলে বসে থাকতে চেয়েছিল।
ঠিক তখনই মিথ এসে দাঁড়াল দরজায়। কিছু না বলেই ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে তার পাশে বসল।
“তুমি একা না, ইভ,” মিথ বলল শান্ত স্বরে।
ইভ তার দিকে তাকাল। গলা কাঁপছিল। “কখনও কখনও মনে হয়, আমি ছাড়া কেউই আর লড়ছে না। সবাই তো চলে গেছে...”
মিথ তার হাতটা ধরল। “আমি আছি। আমি কোথাও যাচ্ছি না।”
প্রথমবারের মতো ইভ বিশ্বাস করল। তার যুদ্ধটা এখন শুধু সাম্রাজ্যের জন্য না—এটা তাদের জন্য, যারা পাশে থাকবে শেষ পর্যন্ত। ঠিক মিথের মতো।
অ্যাম্বুশের রাত এসে গেল। রাজকীয় বহরটা ঠিক সময়েই চলছিল, আর গিল্ড একদম প্রস্তুত। ইভ ছিল সবার সামনে। বুক ধড়ফড় করছিল, কিন্তু চোখে ছিল সাহস।
লড়াই শুরু হল। ইভ পুরো মন দিয়ে লড়ছিল। ওর প্রতিটা চাল আর কৌশল ছিল নিখুঁত। মিথও তার পাশেই ছিল, একদম একইভাবে —দুজন যেন একসাথে বাঁচা-মরার কসম নিয়েছে।
কিন্তু হঠাৎ ইভ টের পেল, কিছু একটা ঠিকঠাক লাগছে না।
ঠিক তখনই বহরের সামনে দেখা গেল এক পরিচিত মুখ—এরনা, নেতৃত্ব দিচ্ছে একদল সৈন্যকে, যারা মিথের চাচার অনুগত।
সব এখন পরিষ্কার হয়ে গেল।
এরনা শুধু নিজের পথেই চলছে না, সে এখন হয়ে উঠেছে ইভের সবচেয়ে বড় শত্রু।

[ কপি করা নিষিদ্ধ 🚫। ভুলক্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]

 #টুইনসিস্টার  #ইভুসডাইরি  #পর্ব৫ #বন্ধনেরটানাপোড়েনদিনগুলো কেমন যেন ধোয়াসা হয়ে যাচ্ছিল। ইভ এখন আর আগের মত সেই চুপচাপ র...
07/05/2025

#টুইনসিস্টার
#ইভুসডাইরি
#পর্ব৫

#বন্ধনেরটানাপোড়েন

দিনগুলো কেমন যেন ধোয়াসা হয়ে যাচ্ছিল। ইভ এখন আর আগের মত সেই চুপচাপ রাজকুমারী নয়—ও এখন সেই খেলায় নামছে, যেটা পুরো সাম্রাজ্যের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিতে পারে। মিথ আর গিল্ডের সাথে হাত মেলানোর সিদ্ধান্তটা যতই দিন যায়, ততই ভারী মনে হচ্ছিল। বাবার সতর্কবাণী এখনো কানে বাজে, কিন্তু ইভ জানে—ফিরে যাওয়ার উপায় নেই।
এই নতুন পথেও ইভ ছিল একা। কাউকে কিছু বলার মতো বিশ্বাস নেই—তার বাবা-মা তো পুরোটাই অন্ধভক্তির চাদরে ঢেকে রেখেছে আর্নাকে। আর মিথ? সে এক রহস্যই থেকে গেছে। তবুও মিথের মধ্যে একটা কিছু আছে—নীরব শক্তি, চোখে চোখে রাখা প্রতিজ্ঞা, যেন সেও কোনো বড় সত্যের জন্য লড়ছে।
এদিকে মিথের চাচা, যার হাতে এই সাম্রাজ্যের যাবতীয় নষ্টের বীজ, সে যেন দিনকে দিন আরও সাহসী হয়ে উঠছে। রাজাকে সে এতটাই নিজের মোহে বেঁধে ফেলেছে যে, এক সময়ের জাঁদরেল সম্রাট এখন একটা পুতুল ছাড়া আর কিছুই না।
কিন্তু শুধু ও-ই না। ইভের নিজের যমজ বোন আর্নাও এখন বিপদের আরেক নাম। যতদিন যাচ্ছিল, ইভ বুঝতে পারছিল—এরনা আগেই গড়ে তোলা হয়েছে ক্ষমতার জন্য। ও আর সেই নিরীহ বোন নেই। ওকে গড়ে তোলা হয়েছে রাজনীতি আর প্রভাবের মোড়কে। এখন ও শুধু একটা প্যাদার মতো ব্যবহার হচ্ছে সাম্রাজ্যের শত্রুদের হাতে।
একদিন রাতে ইভ লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে, এরনা বাগানে মিথের চাচার সাথে দেখা করতে এসেছে। কথা বলছিল নিচু স্বরে, হাওয়ার ঝিরঝির শব্দের জন্য কথা শোনা যাচ্ছিল না, কিন্তু ইভের মনে হলো তার সব জানা প্রয়োজন ।
এরনা বদলে যাচ্ছে। ক্ষমতার মোহে সে ভুলে যাচ্ছে কার হয়ে খেলছে। মিথের চাচা হয়তো ওকে সিংহাসনের লোভ দেখাচ্ছে, আর এরনা সেই ফাঁদে পড়ে যাচ্ছে।
ইভের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল। যমজ বলে যেই বন্ধনটা ছিল, সেটা যেন আস্তে আস্তে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইভ থামবে না। ওর একটা দায়িত্ব আছে, একটা লক্ষ্য আছে। বোনকে, আর পুরো সাম্রাজ্যকে, বিশ্বাসঘাতকদের হাত থেকে বাঁচাতে হবে।
দিনগুলো যেতে যেতে, ইভ আর মিথ একসাথে অনেক কিছু করতে থাকল। গিল্ডের মধ্যেই ওদের জুটি গড়ে উঠলো—শুধু কাগজে-কলমে নয়, মনে মনে একে অপরের প্রতি একটা টান তৈরি হতে থাকলো।
মিথও অনেক কিছু হারিয়েছে—তার সিংহাসনের অধিকার, পরিবারের ভালোবাসা। তাদের দুজনের পথ আলাদা হলেও যন্ত্রণাটা ছিল একরকম। ওরা চায় ন্যায়বিচার, শুধু ক্ষমতা না।
ইভের মাঝে মাঝে মনে হতো, মিথ একটু বেশিই তাকায় ওর দিকে। চাহনিতে ছিল অদ্ভুত কিছু, ভাষায় না বলা কিছু অনুভব। ইভ বারবার নিজেকে বলেছে—ভাবছো কেন এসব? কিন্তু চোখে চোখ পড়লেই সব ভুলে যেতে মন চায়।
একদিন রাতে, গিল্ডের টেবিলে মানচিত্র আর পরিকল্পনার মাঝে বসে, ইভ আর থাকতে পারল না।
– "মিথ," ইভ ধীরে বলল, "তুমি এতটা কেন করছো আমার জন্য ? তুমি তো চাইলে অনেক আগেই সিংহাসন নিতে পারতে। তাহলে এখনও আমার পাশে আছো কেন?"
মিথ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল, যেন ভিতরে ভিতরে কথাগুলো গুছাচ্ছে। তারপর ধীরে বলল,
– "কারণ, তুমিই একমাত্র মানুষ যে সত্যটা দেখতে পাচ্ছে, ইভ। তুমি লড়ছো ন্যায়ের জন্য। আমি অনেক দিন ধরে দেখেছি কিভাবে ক্ষমতাধররা খেলা খেলেছে। কিন্তু তুমি ভিন্ন। তুমি শুধু রাজত্ব চাও না, তুমি সত্য চাও।"
ইভের বুক কেঁপে উঠল। ও ভাবেনি মিথ এমন কিছু বলবে। কিন্তু কথাগুলো ঠিক যেন মনে গেঁথে গেল। মিথ যে অন্যদের মতো না—ওটা বুঝে গেল ও।
এরনাকে নিয়ে সন্দেহটা তখনো মাথায় ঘুরছিল। ও শুধু খেলায় প্যাদা না, এখন মনে হচ্ছে নিজেই নিজের মতো চাল দিচ্ছে। আর সেই চাল সাম্রাজ্যের পতন ডেকে আনতে পারে।
এক রাতে, ইভ আর চুপ করে থাকতে পারল না। ওর বোনকে মুখোমুখি করল।
– "এরনা, তুমি কী করছো বুঝতে পারছো না ?" ইভের গলায় কাঁপা। "তোমাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। তুমি বুঝতে পারছো না?"
এরনা তাকাল ঠান্ডা চোখে, মুখে কোনো ভাব নেই।
– "আমি যা করতেছি সেটা আমার ভবিষ্যতের জন্য। সিংহাসন আমার অধিকার, আর আমি কাউকে সেটা নিতে দেবো না—তোমাকেও নাহ ."
এই কথাটা ইভের বুক ছিঁড়ে দিল। যমজ বোন, যে এক সময় ওর ছায়া ছিল, এখন এক শত্রুতে পরিণত হয়েছে।
– "আমি কখনও সিংহাসন চাইনি, এরনা," ইভ ফিসফিস করে বলল। "আমি শুধু সত্য চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি, তোমার কাছে সত্যের কোনো দাম নেই।"
এরনার চোখে এক ঝলক কিছু এল—হয়তো অপরাধবোধ, হয়তো অন্য কিছু। কিন্তু ও চুপ করে রইল। এরপর ধীরে ধীরে ফিরে গেল, রেখে গেল ইভকে একা অন্ধকারে।
এই টানাপোড়েনের মাঝেই, মিথ একদিন ইভকে একটা সিদ্ধান্তের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল।
– "তুমি জানো কত বড় ঝুঁকি নিচ্ছি আমরা," মিথ বলল। "এরনা আর ফিরে আসবে না। ওকে থামাতে হলে এখনই সময়। আমরা আমার চাচাকে থামাতে পারি, সব প্রকাশ করতে পারি। কিন্তু এর জন্য ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে।"
ইভের বুক ধড়ফড় করতে লাগল। ও জানে—এই পথ কঠিন। কিন্তু অন্য উপায় নেই। কি করবে? বোনকে বিশ্বাসঘাতক বলে চিহ্নিত করে লড়বে?
– "আমি যেকোনো কিছু করব," ইভ বলল, গলা শক্ত করে। "সত্যের জন্য। সাম্রাজ্যের জন্য।"
মিথ মাথা নাড়ল। চোখে একরকম অনুভূতি, যেটা বুঝে ওঠা মুশকিল।
– "তাহলে শুরু করি।"

[ কপি করা নিষিদ্ধ 🚫। কোনো ভুলক্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ]

 #টুইনসিস্টার  #ইভুসডাইরি  #পর্ব৪ #শেষেরশুরুপরের ক'টা দিন ইভের কাছে একেবারে ধোঁয়াটে মনে হলো। গিল্ডে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান...
06/05/2025

#টুইনসিস্টার
#ইভুসডাইরি
#পর্ব৪

#শেষেরশুরু

পরের ক'টা দিন ইভের কাছে একেবারে ধোঁয়াটে মনে হলো। গিল্ডে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা নেওয়ার পর থেকেই তার জীবন যেন সম্পূর্ণ বদলে গেলো। সে জানত বিপদ আসবে, কিন্তু এত তাড়াতাড়ি সবকিছুতে জড়িয়ে যাবে, সেটা ভাবেনি। মিথ ঠিকই বলেছিল—গেমটা তো আসলেই এখন শুরু হয়েছে।
বাড়িতে এখনো সব আগের মতো ভান করে চলছিল ইভ। মা-বাবা কিছুই জানে না, এখনো ওরা অন্ধভাবে ইরনার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের বিশ্বাস, সাম্রাজ্যের ভবিষ্যৎ ইরনার হাতেই নিরাপদ—যাকে ছোটবেলা থেকে শাসন করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু ইভ এখন ভিন্ন রাস্তায় হাঁটছে। সে গোপনে তথ্য জোগাড় করছে, পরিবারের সবার গতিবিধি নজরে রাখছে, ইরনাকেও। এখন ইরনাকে দেখলে আর নিজের বোন মনে হয় না—ও একটা অপরিচিত মুখ, যে অনেক বড়ো শক্তির খেলার অংশ হয়ে গেছে।
গিল্ড এখন ইভের নতুন ঘরবাড়ি হয়ে গেছে। এই জায়গাটা রহস্যে ভরা, কিন্তু এখানে ও নিরাপদ বোধ করে, পরিকল্পনা করে। মিথ—যদিও এখনো রহস্যময়—তবু ইভের জীবনে একমাত্র নির্ভরযোগ্য মানুষ। ওদের জোট এখন আরও মজবুত। একসাথে মিলে ওরা সাম্রাজ্যের দুর্নীতির চিত্রটা স্পষ্ট করতে থাকল। যত খুঁজছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে কত ভয়ানক সবকিছু।
মিথের কাকা—যে সাম্রাজ্যের আসল ক্ষমতা ধরে রেখেছে—ছিল এক ছায়ার মতো। বাইরের দুনিয়ায় সে সম্রাটের বিশ্বস্ত উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিত, কিন্তু ভিতরে ভিতরে সে চায় সিংহাসন। আর তার জন্য সে কিছু করতেও রাজি।
"সম্রাট দুর্বল," এক সন্ধ্যায় মিথ বলল, যখন তারা রাজপ্রাসাদ থেকে চুরি করে আনা কিছু কাগজপত্র ঘাঁটছিল। "ও বুঝতেই পারছে না চারপাশে কী হচ্ছে, আর সেই সুযোগেই আমার কাকা এত বছর ধরে ওকে চালাচ্ছে।"
ইভ মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। "কিন্তু সম্রাট যদি সত্যিটা দেখতে না পারে, তাহলে রাজ্যকে রক্ষা করবে কে?"
মিথ চোখে চোখ রাখল, দৃঢ় কণ্ঠে বলল, "তুমি আর আমি। আমরা ওকে ফাঁস করে দেবো। ওর মতো মানুষদের হাতে সিংহাসন গেলে সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে। ইরনা বুঝতে পারছে না ওর কী খেলায় পড়েছে। ওকে ব্যবহার করা হচ্ছে।"
ইভ মাথা নাড়ল, একটা ভার যেন তার কাঁধে চেপে বসলো। সে এখন আর শুধুমাত্র সম্রাটের মেয়ে না। সে এখন এই যুদ্ধের এক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়।
ইভ যত মিথের কাছে আসছিল, ইরনার সাথে ততই দূরত্ব তৈরি হচ্ছিল। ইরনা সবসময় একটু দূরের ছিল, কিন্তু এখন সে একেবারে বদলে গেছে—একটা হুমকি হয়ে উঠেছে।
এক রাতে, ইভ ছায়ার মধ্যে থেকে ইরনাকে নজরে রাখছিল, তখন এমন কিছু দেখল যা তার গা শিউরে উঠল—ইরনা মিথের কাকার সঙ্গে দেখা করছে! সে মানুষটা যিনি সিংহাসনের নেপথ্যে খেলছে, এখন ইরনাকেও হাতিয়ার বানিয়েছে।
ইভের মনে একরাশ কষ্ট হলো, কিন্তু সেই মুহূর্তে সে বুঝে গেল, এটাই সেই সময় যার জন্য সে অপেক্ষা করছিল। নিজের বোনকে ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। সাম্রাজ্যকে এই জাল থেকে মুক্ত করতে হবে, এবং সেটা করবে ইভ।
মিথের সাথে কাজ করতে করতে ইভ বুঝতে পারল—মিথও চাপে আছে। সে নিজের কাকার ছায়ায় বড় হয়েছে, সিংহাসনের জন্য লড়ছে, কিন্তু তার উদ্দেশ্য ক্ষমতা না—সে রাজ্যটাকে রক্ষা করতে চায়, তার জন্য।
ওদের সম্পর্কটা দিনে দিনে আরও গভীর হচ্ছিল। এক রাতে, গিল্ডের অন্ধকার ঘরে বসে মিথকে দেখে ইভ বুঝে গেল, সে আর আগের মতো রহস্যময় না। এখন ওর চোখে ক্লান্তি, দায়িত্ব, আর ভেতরের কষ্ট ফুটে উঠছে।
"তোমার একা করার দরকার নেই," ইভ আস্তে বলল, শান্ত কিন্তু দৃঢ় কণ্ঠে। "আমি আছি। একসাথেই করব।"
মিথ ওর দিকে তাকাল, চোখে একরকম আলোর ঝলক—ভরসা, নাকি কিছু আরও গভীর কিছু? "আমি কখনো একা ছিলাম না," মিথ বলল, নিচু গলায়। "কিন্তু তোমার মতো কাউকে পাশে পাব, ভাবিনি।"
ইভের বুক ধুকপুক করে উঠল। এটা কেবল রাজনৈতিক জোট না—এটা আরও কিছু, যা উপেক্ষা করা সম্ভব না।
এদিকে প্রাসাদে টানাপোড়েন আরও বাড়ছে। মিথের কাকা ইরনার ওপর নিজের দখল আরও শক্ত করছে, ওকে প্রলোভন দেখাচ্ছে ক্ষমতার। আর সম্রাট? সে এখনো নিজের অন্ধ বিশ্বাসে আটকে আছে।
ইভের অবস্থান দিনে দিনে আরও কঠিন হয়ে উঠছিল। তার বাবা-মা, যারা এখনো ইরনার প্রতি অনুগত, সন্দেহ করতে শুরু করেছিল। একদিন, তার বাবা মুখোমুখি হলো।
"ইভ, অনেক কথা শুনছি। তুমি কী কোনো ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়েছো? তোমার বোনের বিরুদ্ধে কিছু করছো?"
ইভর বুক ঢিপঢিপ করছিল, কিন্তু মুখে কিছুই ফুটতে দিল না। "আমি ইরনার বিরুদ্ধে কিছু করছি না," সে শান্তভাবে বলল। "আমি শুধু সাম্রাজ্যকে রক্ষা করার চেষ্টা করছি।"
তার বাবা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল, তারপর মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল, "তুমি খুব বিপজ্জনক খেলায় নেমেছো, ইভ। সাবধান হও।"
এই সতর্কবার্তা মাথায় নিয়ে, ইভ জানত—এখন আর পেছনে ফেরার উপায় নেই। সে তার পক্ষ বেছে নিয়েছে—মিথের পক্ষে। আর সত্যকে রক্ষা করার জন্য, সে শেষ পর্যন্ত লড়বে।
এখন, পরিবার, আস্থা, আর দায়িত্বের দাগগুলো ঘোলাটে হয়ে গেছে। কে বন্ধু, কে শত্রু—সব মিলেমিশে গেছে। আর এই ক্ষমতার খেলায়, দুর্বলতার কোনো জায়গা নেই।

[কপি করা নিষেধ 🚫]

 #টুইনসিস্টার  #ইভুসডাইরি  #পর্ব৩  #বিশ্বাসঘাতকতাইভের হাত শক্ত করে ধরা চিঠিটার ওপর। তার বুক ঢিপঢিপ করছে। মায়ের কথা মনে প...
06/05/2025

#টুইনসিস্টার
#ইভুসডাইরি
#পর্ব৩

#বিশ্বাসঘাতকতা

ইভের হাত শক্ত করে ধরা চিঠিটার ওপর। তার বুক ঢিপঢিপ করছে। মায়ের কথা মনে পড়তেই চোখ ঝাপসা হয়ে এল। চিঠির ওপরে রাজকীয় সিল—এটা মিথ্যা হবার কোনো উপায়ই নেই। এরনা শুধু তার যমজ বোন না, সে-ই আসল উত্তরাধিকারী।
তার মা স্বীকার করেছে—ইভে এতদিন ধরে এক বানানো গল্পে বড় হয়েছে।
এই সত্যি শুনে ওর মাথায় যেন বাজ পড়ল। এতদিনের জীবনটা, যা যা শিখেছে, সব একটা সাজানো নাটক ছিল। যাদের সে ভালোবাসতো, যাদের কাছে সে নিজেকে নিরাপদ ভাবতো, তারাই আসলে এক বড় ষড়যন্ত্রের অংশ। তার বাবা, যিনি সম্রাটের ডান হাত, সব জানতেন। কিন্তু বলেননি, কারণ সত্যি জানলে নাকি সিংহাসন দুর্বল হয়ে যেত।
আর শুধু মা-বাবাই না, এরনাও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। যমজ বোন হয়েও সে কখনো কাছের মানুষ ছিল না। বরং সবসময় দূরে ছিল, যেন অন্য জগতের কেউ। রাজ্য তাকিয়ে ছিল তার দিকেই। ছোট থেকেই তাকে তৈরি করা হয়েছিল শাসক হওয়ার জন্য। আর ইভে? সে যেন শুধু একটা ছায়া, যার কোনো মানেই নেই।
“তুই বুঝতে পারছিস তো, ইভে,” তার মা কাঁপা গলায় বললেন, “এরনা-ই একমাত্র চাবি সিংহাসনের জন্য। আর তুই... তুই এই রাজ্যের জন্য বিপদ। তোর থাকা মানেই আমাদের সব পরিকল্পনা ধ্বংস হয়ে যাওয়া।”
ইভের চোখে জল চলে এল। তার মা এতটা ঠান্ডা মাথায় এমন কথা কীভাবে বললো?
এই মুহূর্তে সে আর সেই প্রিয় কন্যা না। এখন সে শুধু একটা মোহর, যাকে বড় খেলায় চাল হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
কিন্তু ইভের ভেতরে যেটা সবচেয়ে জোরে বাজছিল, সেটা হলো—বিশ্বাসঘাতকতা। মা-বাবা রক্তের চেয়ে সিংহাসনের আনুগত্যকে বড় করেছে। ওরা এখন এরনার পাশেই থাকবে, যাই হোক না কেন।
ইভে একটা গভীর শ্বাস নিয়ে চিঠিটা পকেটে গুঁজে নিল। সে এটা আর হতে দেবে না। এবার না, কখনো না। সত্যিটা তাকে বের করতেই হবে, এবং তার জন্য সে লড়বে।
সে পেছন ফিরে সোজা দরজার দিকে এগিয়ে গেল। ঠান্ডা রাতের হাওয়া মুখে লাগতেই ওর চোখ দুটো আরও কঠিন হয়ে উঠল। তার গন্তব্য—গিল্ড। মিথ তাকে অপেক্ষা করছে। এখন একমাত্র ও-ই ইভেকে সাহায্য করতে পারে।
রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে শহরটা অনেক বেশি অন্ধকার আর ভীতিকর মনে হচ্ছিল। চারপাশের দালানগুলো যেন একেকটা ছায়ার মত তাকিয়ে আছে। কিন্তু ইভের ভিতরের জেদে কোনো কমতি ছিল না। তার দরকার উত্তর। আর সে আজকেই সেগুলো খুঁজে বের করবে।
গিল্ডে পৌঁছেই দেখল দরজাটা খোলা। কোনো বাধা ছাড়াই সে ভেতরে ঢুকে পড়ল। বারটেন্ডার চিনে ফেললেও আজ আর কিছু জিজ্ঞেস করল না। ইভে সোজা বারটা পাশ করে পেছনের দিকে গেল, যেখানে ভারী পর্দাগুলো বাতাসে দুলছিল।
পর্দার পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল মিথ—অন্ধকারে ছায়ার মত, কিন্তু চোখে এক অদ্ভুত শান্ত ভাব।
“তুমি ফিরে এসেছ,” মিথ বলল। এইবার ওর গলায় আগের মতো ঠান্ডা সুর নেই, বরং একটা সহানুভূতি যেন।
“আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি,” ইভে শক্ত গলায় বলল, রুমে ঢুকে পড়ল। ওর পকেটে চুক্তির কাগজটা ছিল—সত্যের প্রতিশ্রুতি।
“আমি সত্য চাই। সব কিছু। আর মিথ্যে না।”
মিথ হালকা হাসল। “ঠিক আছে,” বলল গভীর আর স্থির গলায়। “কিন্তু কিছু নিয়ম আগে মানতে হবে।”
এই সময়, লাক সামনে এল—সে-ই প্রথম ইভেকে গিল্ডের কথা বলেছিল। তার হাতে ছিল একটা মোটা স্ক্রল। গম্ভীর চোখে ইভের দিকে তাকাল।
“তুমি জানো নিয়ম, মিস ব্যাংকসার,” লাক বলল, একদম ঠান্ডা গলায়। “গিল্ড কখনো বিনা খরচায় সাহায্য করে না। তুমি সত্য চাও? তাহলে এরনা আর তোমার মা’কে নজরে রাখো। যেভাবে ভাবছো, ওরা আদতে সেরকম না। খেয়াল রাখো, আর আমাদের রিপোর্ট করো। তাহলেই সত্য পাবে।”
ইভে এক মুহূর্ত ভাবল। ও তো আগে থেকেই সব কিছু হারিয়েছে। আর কি-ই বা হারাবে?
“আর যদি না করি?” সে শান্তভাবে জিজ্ঞেস করল।
মিথের মুখ গম্ভীর হয়ে গেল, চোখে ঠান্ডা দৃষ্টি। “তাহলে সত্য চিরকাল চাপা পড়ে থাকবে। সিদ্ধান্ত তোমার।”
ইভের ওপর পুরো সিদ্ধান্তের বোঝা নেমে এল। ওর ভবিষ্যৎ, বোন, আর পুরো রাজ্য তার হাতে। পেছনে ফেরার উপায় নেই।
“আমি রাজি,” সে বলল, দৃঢ় গলায়।
মিথ মাথা ঝাঁকাল। “তাহলে স্বাগতম, এভে। খেলাটা এখন শুরু।”
ইভে এক ঝলক মিথের দিকে তাকাল। তার বুকের ভেতর ধুকপুক করছিল। এই মানুষটা, যে একসময় ছিল শুধুই একটা ছায়া, এখন সত্যের চাবি ধরে আছে।
তারা একসাথে কাজ করবে—সব দুর্নীতি ভেঙে দেবে, হারানো সত্য উদ্ধার করবে। আর হয়তো... কেবল হয়তো, তারা এরনাকে থামানোর উপায় বের করবে, যেন সে সাম্রাজ্যের শত্রুদের হাতের পুতুল না হয়ে পড়ে।

[ কপি করা নিষেধ 🚫। এটা আমার লেখা প্রথম বড় গল্প আশা করি ভালো লাগবে। ভুল ক্রুটি থাকলে অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ ]

 #টুইনসিস্টার  #ইভুসডাইরি  #পর্বঃ২চুক্তিইভ গিল্ড থেকে বেরিয়ে এলো, চুক্তির কাগজটা শক্ত করে ধরে রেখেছে। মাথার ভেতর একগাদা ...
05/05/2025

#টুইনসিস্টার
#ইভুসডাইরি
#পর্বঃ২

চুক্তি

ইভ গিল্ড থেকে বেরিয়ে এলো, চুক্তির কাগজটা শক্ত করে ধরে রেখেছে। মাথার ভেতর একগাদা চিন্তা—সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে। আসলেই কি ঠিক কাজটা করছে? পুরনো সব স্মৃতি—তার যমজ বোন আর্ণা, রহস্যময় গিল্ড, মা-বাবার অদ্ভুত আচরণ—সব যেন একসাথে এসে ভিড় করছে। ইভের মনে হচ্ছিল, ও একটা ভয়ংকর ফাঁদে পা দিতে চলেছে।

সে একটা গভীর শ্বাস নিলো আর বাড়ির দিকে রওনা দিলো। চারপাশটা অস্বাভাবিক শান্ত—যেন কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। মা-বাবাও চুপচাপ, না কোনো ঝামেলা, না কোনো প্রশ্ন। সে চুপচাপ বাড়িতে ঢুকে পড়লো, কেউ যেন খেয়ালই করল না।

রাতের খাবারের পর সে তার ঘরে চলে গেল, কাগজটা এখনো হাতে। বসে বসে ওটার দিকে তাকিয়ে থাকলো—সব লেখা ঝাপসা হয়ে আসছে। সে চায় না তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে, কিন্তু ভেতরের অস্থিরতা আর সামলানো যাচ্ছিল না। যদি এইটাই হয় সত্য জানার একমাত্র রাস্তা?

হঠাৎ দরজায় টোকা। মা দাঁড়িয়ে আছেন বাইরে, মুখে ক্লান্তির ছাপ, চোখদুটো ফ্যাকাসে।

– "ইভ," তিনি নরম গলায় বললেন, "তোর সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই।"

ইভের বুক ধক করে উঠল। "কি হয়েছে মা?"

মা একটু থেমে বললেন,
– "আর্ণা... ও চায় তুই এই বাড়ি থেকে চলে যা। ও... ও তোকে আর এখানে দেখতে চায় না। আমি... আমি জানি না কি করব।"

ইভের গলা শুকিয়ে গেল, "কেন? হঠাৎ এমন বলছে কেন?"

মা চোখ নামিয়ে ফেললেন।
– "ও বলেছে তুই বিপদ। সবকিছুর জন্য তুই দায়ী। বলেছে, যদি ওকে ছোটবেলায় না পাঠানো হতো, তাহলে জীবনটা অন্যরকম হতো।"

ইভের গা দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেল। মা, যিনি সবসময় তার পাশে ছিলেন, এখন এতটাই অসহায় লাগছিল।
– "মা, ওর কথা বিশ্বাস কোরো না। আমি জানি না আসলে কি হচ্ছে, কিন্তু আমি তো কিছু খারাপ করিনি। আমি শুধু সত্যটা জানতে চাই।"

মা এবার চোখে জল এনে বললেন,
– "জানি মা, তুই চেষ্টা করছিস। কিন্তু সত্য অনেক সময় খুব ভয়ংকর হয়। অনেক বছর ধরে আমরা সবকিছু চাপা দিয়ে রেখেছিলাম... আমি চাইনি তুই এভাবে জানিস।"

– "তাহলে বলো মা, এত বছর ধরে তোমরা কি লুকিয়ে রেখেছো আমার কাছ থেকে?" ইভের গলা কাঁপছিল।

মা একটা গভীর নিশ্বাস ফেললেন।
– "তোকেই তো বাঁচাতে চেয়েছিলাম। গিল্ড তখন একটা চয়েস দিয়েছিল: তোকে মরে যেতে দেওয়া, না হলে আর্ণাকে দিয়ে তোকে বাঁচানোর সুযোগ। আর আমরা তোকে বেছে নিই।"

এই কথা শুনে ইভ যেন ঘুরে দাঁড়াতেই পারল না।
– "মানে কি মা? আর্ণার তো বাঁচার কথাই ছিল না?"

– "হ্যাঁ মা। তোর জন্মের পর ডাক্তাররা বলেছিল তুই পাঁচ বছর বয়সও পার করতে পারবি না। তাই গিল্ডের কাছে যাই। তারা বলে, আর্ণাকে ওদের কাছে দিয়ে দিলে তোকে বাঁচাবে। বিনিময়ে আর্ণাকে ভুলে যেতে হবে। তোকেই ভালোবাসতে হবে, তোকে বড় করতে হবে, আর্ণার নামও যেন আর মুখে না আসে।"

ইভের মনে হচ্ছিল মাটিটা যেন ওর পায়ের নিচ থেকে সরে যাচ্ছে।

– "আর এখন ও ফিরে এসেছে..." ও ফিসফিস করে বলল।

মা মাথা নেড়ে বললেন,
– "হ্যাঁ, ফিরে এসেছে। আর এবার ও ওর জায়গাটা ফিরে চাইছে। থামবে না যতক্ষণ না ওটা পেয়ে যাচ্ছে।"

[গল্প কপি করা নিষেধ 🚫]

Address

Dhaka

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Evu's diary posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Evu's diary:

Share