14/09/2025
একটা বয়স পার হয়ে গেলে মনে হয় হুট করে বড় হয়ে গেছি। অনেক কিছু বুঝে ফেলেছি। এতো কিছু হয়তো না বুঝলেও চলতো। ইচ্ছা করে শৈশবের চোখ দিয়ে পৃথিবীটাকে দেখতে। আহ! কতোই না পবিত্র পৃথিবী! যে বয়সে বন্ধুর সাথে সকালে কাট্টি নিলে বিকেলে আঙুল মিলিয়ে মিল করিয়ে নেয়া যেতো। যে বয়সে ঠাস করে আছাড় খেলে একটু পরেই ব্যাথা ভুলে দৌড় দেয়া যেতো।
বয়স বেড়ে গেলে কেন যেন মানুষকে সহজে ক্ষমা করা যায় না। সহজে ক্ষমা চাওয়াও যায় না। একই কারণেই হয়তো শরীরে ব্যাথা পেলে সে ব্যাথা সারতে অনেক সময় লাগে।
একটা বয়স পার হয়ে গেলে আমরা বুঝতে শিখি আমাদের সব ইচ্ছা পূরণ হবার নয়। শুধু তাই না, আমাদের বেশীরভাগ ইচ্ছাই এ সমাজের নিকট, এমনকি আমাদের পরিবারের নিকটই খুব হাস্যকর। ঠিক যেমনটা আমাদের নিকট হাস্যকর শুধু অর্থ- সম্পদের চিন্তা করতে করতেই পুরোটা জীবন কাটিয়ে দেয়া।
একটা বয়স পার হয়ে গেলে মনে হয়, কেউ আর আমাদের বুঝতে চাইছে না। বুঝতে পারছে না। বন্ধু-বান্ধব না, ভাই-বোন না। এমনকি মা ও না। আমাদের মনের কষ্টগুলো মনেই রয়ে যায়। আমাদের ঠাণ্ডা লাগলে নাক দিয়ে অনবরত সর্দি পড়ে। শরীরের ব্যাথা সইতে না পারলে চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়ে। একইভাবে অন্তর দিয়েও সর্দি পড়ে, কষ্টের বৃষ্টি ঝড়ে। সেটা অবশ্য দেখা যায় না।
সবার দেখার কি প্রয়োজন আছে?
আবু ইসহাক আল-হারবি বলেন,
"আমি আমার জ্বরের ব্যাপারে আমার মা, বোন, স্ত্রী ও কন্যার নিকট কখনোই অভিযোগ করিনি। সত্যিকারের পুরুষ তো সে যে, নিজের সমস্যাগুলো নিজের কাছেই রাখে, নিজের বোঝা পরিবারের উপর চাপায় না।"
তিনি আরো বলেন,
"আমি ২৫ বছর ধরে মাইগ্রেনের ব্যাথায় কষ্ট পেয়েছি কিন্তু কাউকেই তা জানাইনি। ২০ বছর আগে আমার এক চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। এটার ব্যাপারেও আমি কাউকে জানাইনি।" [তাবাকাত আল হানাবিলাহ]
একটা বয়স পার হয়ে গেলে আমরা বুঝতে শিখি সবার সব কিছু জানার প্রয়োজন নেই। আমাদের মনের ব্যাথাগুলো। শরীরের কষ্টগুলো।
আবু ইসহাক এর কথাগুলো আমাদের নিকট হয়তো খুব উগ্র মনে হতে পারে। কিন্তু তাকে কি খুব বেশী দোষ দেয়া যায়? উনি তো ইয়াকুব (আ.) এর ঈমানের স্বাদ অনুভব করেছিলেন। যিনি হারিয়েছিলেন তার আদরের ছেলে ইউসুফ (আ.) কে। শোকে হয়ে গিয়েছিলেন অন্ধ। তারপরেও কাউকে তার জীবনের কষ্ট জানাতে চাননি। শুধু বলেছিলেন---
"আমি তো আমার দু:খ কষ্টগুলো আল্লাহর কাছেই জানিয়েছি।" (সূরা ইউসুফ:৮৬)
সবার সব কিছু জানার প্রয়োজনও নেই।
শুধু একজন ছাড়া।
লেখা: শিহাব আহমেদ তুহিন