16/03/2025
ভাই বোনের মধ্যে হিংসা!
আচ্ছা, ভাই বোনের মধ্যে হিংসা! এটা তো খুবই কমন একটা ব্যাপার, প্রায় সব ফ্যামিলিতেই কম বেশি লেগেই থাকে। ছোটবেলায় তো মারামারি, চুলোচুলি লেগেই থাকত আমার আর আমার বোনের মধ্যে। এখন ভাবলে হাসি পায়, কিন্তু তখন যেন মনে হতো পৃথিবীটা একটাই আর সব কিছু ভাগাভাগি করে নিতে হচ্ছে! তো চলো, কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করি যেগুলো ভাই-বোনের এই হিংসা কমাতে কাজে লাগতে পারে:
১. তুলনা বন্ধ: এটা একদম প্রথম এবং প্রধান কাজ। "ওর রেজাল্ট তোর থেকে ভালো," "দেখো, ও কত লক্ষ্মী, আর তুই শুধু দুষ্টুমি করিস" - এই ধরনের কথাগুলো একদম বলা যাবে না। এতে হিতে বিপরীত হয়। মনে রাখবেন, প্রত্যেকটা শিশুই আলাদা, তাদের ভালো লাগা, খারাপ লাগা, ক্ষমতা সবকিছু আলাদা। তুলনা করলে তাদের মধ্যে হীনমন্যতা তৈরি হয়, এবং একে অপরের প্রতি রাগ জন্মায়।
২. সমান মনোযোগ: ভাই-বোনদের মধ্যে বয়সের পার্থক্য থাকলেও, চেষ্টা করুন দু'জনকেই সমান মনোযোগ দিতে। ছোটজনকে বেশি আদর করলে বড়জনের মনে হতে পারে তাকে আর কেউ ভালোবাসে না। আবার বড়জনের উপর বেশি দায়িত্ব দিলে ছোটজন ভাবতে পারে তাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। তাই ব্যালেন্স রাখাটা খুব জরুরি।
৩. তাদের কথা শুনুন: ভাই-বোনদের নিজেদের মধ্যে কী সমস্যা হচ্ছে, সেটা মন দিয়ে শুনুন। তাদের অভিযোগগুলো হালকাভাবে না নিয়ে গুরুত্ব দিন। অনেক সময় শুধু একটু শোনার অভাবেও অনেক ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়। তাদের নিজেদের মধ্যে কথা বলতে উৎসাহিত করুন, যাতে তারা নিজেরাই নিজেদের সমস্যা সমাধান করতে পারে।
৪. একসাথে কাজ: এমন কিছু কাজ দিন যেগুলো দু'জনকে একসাথে করতে হবে। যেমন, ঘর গোছানো, বাগান করা, বা একসাথে কোনো গেম খেলা। একসাথে কাজ করলে তাদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়বে, এবং একে অপরের প্রতি বিশ্বাস জন্মাবে।
৫. ব্যক্তিগত স্থান: প্রত্যেকের নিজস্ব একটা জায়গা থাকা দরকার। সেটা একটা ঘর হতে পারে, বা ঘরের একটা কোণ। যেখানে তারা নিজেদের মতো করে সময় কাটাতে পারবে, নিজেদের জিনিসপত্র রাখতে পারবে। অন্যের জিনিসে অনুমতি ছাড়া হাত দেওয়া একদম নিষেধ করে দিন।
৬. প্রশংসা করুন: ভাই-বোনদের ভালো কাজগুলোর প্রশংসা করুন। শুধু পড়াশোনায় ভালো হলেই নয়, তারা যদি একে অপরের প্রতি সহানুভূতি দেখায়, বা কোনো ভালো ব্যবহার করে, তাহলে অবশ্যই তাদের প্রশংসা করুন। এতে তারা উৎসাহিত হবে এবং ভালো কাজগুলো করার আগ্রহ বাড়বে।
৭. সময় দিন: ভাই-বোনদের সাথে গল্প করুন, তাদের সাথে খেলুন, তাদের পছন্দের খাবার তৈরি করে খাওয়ান। তাদের বুঝতে দিন যে আপনি তাদের ভালোবাসেন এবং তাদের জন্য সময় দিতে আপনি রাজি।
৮. ধৈর্য ধরুন: ভাই-বোনের হিংসা কমাতে সময় লাগে। একদিনে বা এক সপ্তাহে এটা ঠিক হয়ে যাবে না। আপনাকে ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখবেন, আপনার ভালোবাসা আর চেষ্টাই তাদের মধ্যেকার সম্পর্ককে সুন্দর করে তুলবে।
৯. পারিবারিক নিয়ম: কিছু সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম তৈরি করুন। যেমন, মারামারি করা যাবে না, গালি দেওয়া যাবে না, অন্যের জিনিসে অনুমতি ছাড়া হাত দেওয়া যাবে না। এবং এই নিয়মগুলো সবাইকে মেনে চলতে হবে।
১০. বিশেষজ্ঞের সাহায্য: যদি দেখেন পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, তাহলে একজন শিশু মনোবিদের সাহায্য নিতে পারেন। তারা হয়তো আরও ভালো করে বুঝিয়ে দিতে পারবেন কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়।
আর হ্যাঁ, সবথেকে জরুরি কথা, নিজেরাও ভাই-বোনদের সাথে ভালো ব্যবহার করুন। আপনার আচরণ দেখেই তারা শিখবে। যদি আপনি সবসময় ঝগড়া করেন বা রেগে থাকেন, তাহলে তারাও সেটাই শিখবে। তাই প্রথমে নিজেকে বদলান, দেখবেন আপনার সন্তানেরাও ভালো হয়ে যাচ্ছে।