03/07/2025
“অ্যানিমাল ফার্ম”
এক রাতে মিস্টার জোন্সের ম্যানর ফার্মের সব পশু বড় খামারের গোলাঘরে জড়ো হয়। “ওল্ড মেজর” নামে এক বয়স্ক শূকর তাদের তার এক স্বপ্নের কথা শোনায়, একটি এমন পৃথিবীর স্বপ্ন, যেখানে সব পশু মানুষ প্রভুদের অত্যাচার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে বাঁচবে।
মিটিংয়ের কিছুদিন পরেই ওল্ড মেজর মারা যায়। কিন্তু তার “অ্যানিমালিজম” দর্শনে অনুপ্রাণিত হয়ে পশুরা বিদ্রোহের পরিকল্পনা করে। দুই শূকর, স্নোবল আর নেপোলিয়ন, এ উদ্যোগের প্রধান নেতা হয়ে ওঠে।
একদিন মিস্টার জোন্স পশুদের খাবার দিতে ভুলে যায়। সেটাই হয় বিদ্রোহের সূত্রপাত। ক্ষুধার্ত পশুরা একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়ে, জোন্স আর তার লোকদের খামার থেকে বের করে দেয়। এরপর তারা খামারের নাম বদলে “অ্যানিমাল ফার্ম” রাখে। খামারের দেয়ালে অ্যানিমালিজমের সাতটি আদেশ লেখা হয়:
১। যে মানুষ, তার সাথে কোনো পশু বন্ধুত্ব করবে না।
২। যে মানুষ, তার মতো কোনো পশু আচরণ করবে না।
৩। কোনো পশু অন্য পশুকে হত্যা করবে না।
৪। সব পশু সমান।
৫। কোনো পশু বিছানায় শুবে না।
৬। কোনো পশু মদ খাবে না।
৭। কোনো পশু পোশাক পরবে না।
প্রথমদিকে বিদ্রোহ খুব সফল হয়। পশুরা নিজেরা ফসল কাটে এবং প্রতি রবিবার নীতিমালা নিয়ে বৈঠক করে। শূকররা বুদ্ধিমান হওয়ায় খামারের পরিচালক হয়।
কিন্তু নেপোলিয়ন ক্রমেই ক্ষমতালোভী হয়ে ওঠে। সে গোপনে গরুর দুধ আর কিছু আপেল শূকরদের জন্য রেখে দেয়। স্কুইলার নামে এক শূকরকে দিয়ে সব পশুকে বোঝায়, শূকরদের সিদ্ধান্তই সঠিক ও ন্যায্য।
এরপর শীতে মিস্টার জোন্স আবার তার খামার পুনর্দখলের চেষ্টা করে। স্নোবলের কৌশলে পশুরা লড়াই করে জয়ী হয়। এ যুদ্ধ “কাউশেডের যুদ্ধ” নামে পরিচিত হয়।
শীতে স্নোবল খামারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য একটি উইন্ডমিল বানানোর পরিকল্পনা আঁকতে থাকে। এতে পশুরা কাজের সময় বাঁচাতে পারবে। কিন্তু নেপোলিয়ন বলে এটা খাবার উৎপাদনের ক্ষতি করবে।
যেদিন এ প্রস্তাবের উপর ভোট হওয়ার কথা, নেপোলিয়ন হিংস্র কুকুরদের ডেকে আনে। কুকুরগুলো স্নোবলকে তাড়িয়ে দেয়। এরপর নেপোলিয়ন ঘোষণা করে, আর কোনো বৈঠক হবে না। সে বলে উইন্ডমিল বানানো হবে এবং মিথ্যা প্রচার করে যে উইন্ডমিলের পরিকল্পনা তারই ছিল, স্নোবল নাকি সেটা চুরি করেছিল। এরপর থেকে সব দোষ স্নোবলের উপর চাপানো হয়।
পরের বছরটা প্রায় উইন্ডমিল বানাতেই কেটে যায়। বক্সার নামের অদ্ভুত শক্তিশালী ঘোড়া অক্লান্ত পরিশ্রম করে।
এদিকে মিস্টার জোন্স খামার ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যায়। নেপোলিয়ন অ্যানিমালিজমের নীতি ভেঙে এক জন আইনজীবী ধরে এবং আশেপাশের খামারগুলোর সাথে ব্যবসা শুরু করে।
এক ঝড়ে অর্ধনির্মিত উইন্ডমিল ভেঙে যায়। নেপোলিয়ন সব দোষ স্নোবলের উপর দেয় এবং পশুদের নতুন করে কাজ শুরু করতে বলে।
নেপোলিয়নের ক্ষমতার লোভ ভয়াবহ রূপ নেয়। সে খামারের পশুদের “অপরাধ স্বীকার” করতে বাধ্য করে এবং নির্দোষ পশুদের কুকুর দিয়ে হত্যা করে।
শূকররা মানুষের মতো জোন্সের ঘরে গিয়ে বসবাস শুরু করে, বিছানায় ঘুমাতে থাকে। স্কুইলার তার যুক্তি দিয়ে সবকিছুর ব্যাখ্যা দেয়।
পশুরা দিন দিন কম খাবার পায়, কিন্তু শূকররা মোটা হতে থাকে।
শেষ পর্যন্ত উইন্ডমিল শেষ হয়। নেপোলিয়ন কাছের খামার মালিক ফ্রেডেরিককে কাঠ বিক্রি করে। ফ্রেডেরিক ভুয়া নোট দিয়ে প্রতারণা করে। এরপর ফ্রেডেরিক এবং তার লোকজন আক্রমণ করে, উইন্ডমিল উড়িয়ে দেয়, কিন্তু শেষে তারা পরাজিত হয়।
শূকররা আস্তে আস্তে সাতটি আদেশ ভেঙে ফেলে। যেমন, “কোনো পশু মদ্যপান করবে না” বদলে লেখা হয়: “কোনো পশু অতিরিক্ত মদ্যপান করবে না।”
বক্সার আবার নিজের শক্তি উজাড় করে নতুন উইন্ডমিল বানায়। কিন্তু শেষে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। নেপোলিয়ন তাকে চিকিৎসার কথা বলে বিক্রি করে দেয় এক কসাইখানায়। স্কুইলার সবাইকে বলে, বক্সার নাকি হাসপাতালে শান্তিতে মারা গেছে।
বছর কেটে যায়। নেপোলিয়ন অন্য খামার থেকে আরও জমি কিনে অ্যানিমাল ফার্ম বড় করে। সব পশুর (শূকর ছাড়া) জীবন হয় কঠিন আর শ্রমময়।
শেষে শূকররা দুই পায়ে হাঁটতে শুরু করে, মানুষের মতো কাপড় পড়ে, মানুষের মতো আচরণ করে। সাতটি আদেশ মুছে গিয়ে নতুন নীতি লেখা হয়:
"All Animals Are Equal / But Some Are More Equal Than Others."
“সব পশুই সমান, কিন্তু কেউ কেউ সমানের উর্ধ্বে।”
যারা বিপ্লব করে সমতা আনবে তাদের “বিশেষ সুবিধা” দিতেই হবে।
আমাদের দায়িত্ব বেশি, কাজ বেশি — তাই “বিশেষ সুবিধা” আমাদের দরকার।
শেষ দৃশ্যে দেখা যায়, শূকর এবং মানুষেরা জোন্সের ঘরে একসাথে মদ খাচ্ছে। বাইরে থেকে অন্য পশুরা জানালার ফাঁক দিয়ে দেখে, কে শূকর আর কে মানুষ, সেটা আর আলাদা করা যায় না।
[সংক্ষিপ্ত]
[“Animal Farm” জর্জ অরওয়েলের লেখা একটি কালজয়ী রূপক উপন্যাস। এটি সমাজের ক্ষমতা, শোষণ আর বিপ্লবের পরিণতির নির্মম সত্যকে তুলে ধরে। লেখক সরল ভাষায় জটিল রাজনৈতিক সত্য ব্যাখ্যা করেছেন। এই রূপক-গল্পটি পড়তে গিয়ে আপনার মনে হতে পারে, আরে এই গল্প তো আমি জানি, এটা তো আমাদেরই পরিচিত সেই কাহিনী, যেখানে সমতা আর ন্যায়ের স্বপ্ন ক্রমেই স্বৈরাচারি রূপ নেয়।]