
16/08/2025
আমরা কতো স্বাভাবিকভাবেই না শ্বাস নিই, হাঁটাচলা করি, কথা বলি। পছন্দের খাবারগুলো উপভোগ করি, কোনো ব্যথা ছাড়াই রাতে শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ি।
এই সাধারণ কাজগুলো আমাদের কাছে এতটাই স্বাভাবিক যে, এগুলোকে আমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা এক একটি অমূল্য উপহার হিসেবে ভাবার ফুরসত পাই না।
কিন্তু একদিন হঠাৎ যখন সামান্য সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হই, কিংবা শরীরের কোথাও ব্যথা অনুভব করি, তখনই বুঝতে পারি—সুস্থতা কী বিশাল এক নিয়ামত ছিল।
আসলে, সুস্থ শরীর আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য শ্রেষ্ঠ উপহারগুলোর একটি। এটি এমন এক সম্পদ, যা দিয়ে দুনিয়ার অন্য কোনো সম্পদের তুলনা চলে না। অথচ, যে দুটি নিয়ামতের ব্যাপারে মানুষ সবচেয়ে বেশি উদাসীন, তার প্রথমটিই হলো সুস্থতা।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “দুটি নিয়ামত এমন আছে, যে ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষই ধোঁকায় পড়ে থাকে। তা হলো, সুস্থতা ও অবসর।” [১]
ইসলাম আমাদের শেখায় যে, এই শরীর কেবল আমাদের ভোগ-বিলাসের জন্য নয়। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে গচ্ছিত একটি আমানত। কিয়ামতের দিন আমাদের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কথা বলবে।
আমাদের চোখ, কান, হাত, পা—সবকিছুকে প্রশ্ন করা হবে, সেগুলোকে আমরা কোথায় এবং কীভাবে ব্যবহার করেছি। এই আমানতের সঠিক যত্ন নেওয়া, একে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বাঁচিয়ে রাখা এবং তাঁর ইবাদতের কাজে লাগানোই আমাদের দায়িত্ব।
ইসলাম শুধু আত্মিক উন্নতির কথাই বলে না, শারীরিক সুস্থতার জন্যও দিয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা। পরিমিত আহার ইসলামের অন্যতম একটি শিক্ষা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “...তোমরা খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।” [২]
আমাদের নবী (ﷺ) শিখিয়েছেন পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাবার, এক-তৃতীয়াংশ পানীয় এবং বাকি এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখতে। আজকের আধুনিক বিজ্ঞানও এই চৌদ্দশ’ বছর আগের নববী ফর্মুলাকে সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে।
একজন মুমিন কেন সুস্থ ও সবল থাকতে চাইবে? কেবল দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার জন্য নয়, বরং আল্লাহর ইবাদতকে আরও সুন্দরভাবে করার জন্য। একটি সুস্থ শরীর নিয়ে আপনি মনোযোগের সাথে সালাত আদায় করতে পারবেন, স্বাচ্ছন্দ্যে সিয়াম পালন করতে পারবেন, হজ্জের কষ্টসাধ্য ইবাদতগুলো সম্পন্ন করতে পারবেন এবং আল্লাহর সৃষ্টির সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারবেন।
একজন শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর কাছে দুর্বল মুমিনের চেয়ে অধিক প্রিয়। [৩]
তাই আসুন, আল্লাহর দেওয়া এই শ্রেষ্ঠ নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করি। আর শুকরিয়া আদায়ের সর্বোত্তম উপায় হলো, এই শরীরকে এমন কোনো কাজে ব্যবহার না করা, যা আল্লাহ অপছন্দ করেন এবং এর সঠিক যত্ন নেওয়া।
আজ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সুস্থ-সবল দেহটার দিকে তাকিয়ে আমরা কি একবারও মন থেকে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলেছি? এই অমূল্য নিয়ামতটির যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে কি আমরা আজ থেকে একটু সচেতন হব?
রেফারেন্স:
[১] সহীহ আল-বুখারী, হাদীস: ৬৪১২
[২] সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩১
[৩] সহীহ মুসলিম, হাদীস: ২৬৬৪
সুকুন পাবলিশিং
শব্দে আঁকা স্বপ্ন…