02/12/2025
২০১৭ সালের কথা। সে বছর জানুয়ারিতে আমি কানাডায় আসি। ঠিক কোন মাস মনে নেই, তবে সেদিন ছিল রোজার ঈদ। তখন আমার দ্বিতীয় গর্ভধারণের তিন মাস চলছিল। এক বড় ভাইয়ের বাসায় ঈদের দাওয়াত ছিল। যেতে ইচ্ছে করছিল না, তবু গেলাম। শুনলাম, তারা খুব প্রাক্টিসিং পরিবার-দুই সন্তান হিফজ করছে, বাকিরা ছোট। এমন পরিবেশ থেকে অনেক কিছু শেখা যায়।
দাওয়াতে গিয়ে দেখি, ভাবি রান্না শেষ করে অন্যদের সঙ্গে গল্প করছেন। তখনও আসরের সময় শেষ হয়নি। হঠাৎ তিনি বললেন, 'আমি তো সুরা কাহাফ পড়তে ভুলে গেছি।' শুনেই বুঝলাম, প্রতি শুক্রবার সুরা কাহাফ পড়া তার নিয়মিত অভ্যাস। দ্রুত ওযু করে তিনি পড়তে বসলেন।
আমি অবাক হয়ে দেখলাম-তার মাত্র দেড় বছরের ছোট্ট মেয়েটি শান্ত হয়ে পাশে বসে রইল, কোনো বিরক্তি নেই! আমি ভাবলাম, কীভাবে তিনি চার সন্তানের মধ্যেও এত নিয়মিত এই আমলটি করেন? আমার বড় ছেলে ছিল খুব চঞ্চল, তাই কয়েকবার চেষ্টা করেও আমি প্রতি শুক্রবার সুরা কাহাফ পড়তে পারতাম না। কারণ, সুরা কাহাফ পড়তে যে ৪৫ মিনিট লাগে, সেই সময়টা সে শান্ত থাকতে পারত না, আমাকে ওর সঙ্গে খেলতে হতো। সেদিন মনে মনে আল্লাহর কাছে দুয়া করলাম, 'হে আল্লাহ, আমাকে একটি কন্যাসন্তান দান করুন, যে সুরা কাহাফ পড়ার সময় আমাকে বিরক্ত করবে না।'
সুবহানআল্লাহ! আল্লাহ আমার দুয়া কবুল করেছেন। আমাদের পৃথিবী আলোকিত করে মায়াভরা একটি কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। আলহামদুলিল্লাহ, ছয় বছর হয়ে গেল, আমার মেয়ে কখনো আমাকে সুরা কাহাফ পড়ার সময় বিরক্ত করেনি! সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, সেদিন আমি এই দুয়াটি মুখেও করিনি-শুধু মনে মনে চেয়েছিলাম, অথচ আল্লাহ তা কবুল করেছেন! কত মহান আল্লাহ, কত সুন্দর তাঁর পরিকল্পনা, এবং কত ভালোবাসা তাঁর আমাদের মতো গুনাহগারদের প্রতি! এমন কন্যাসন্তান প্রাপ্তিতে আমার কোনো কৃতিত্ব নেই-সবই আল্লাহর রহমত।
এরকম অসংখ্য দুয়া কবুলের গল্প আমার জীবনে আছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জুতার ফিতার প্রয়োজন হলেও আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। এই কথাটি শোনার পর থেকে দুয়ার প্রতি আমার ভালোবাসা অনেক বেড়ে যায়, এবং আমি নিয়মিত আল্লাহর কাছে ছোট-বড় সবকিছুর জন্য দুয়া করি।
(উল্লেখিত অংশটুকু সুকুন পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত 'দুয়া কবুলের আশ্চর্য গল্প' বই থেকে নেওয়া হয়েছে।)
সুকুন পাবলিশিং
শব্দে আঁকা স্বপ্ন…