25/07/2025
বুঝ হবার পর এই প্রহসনের রাষ্ট্রে যত ঘটনার যত মৃত্যু দেখলাম -
২০১০, নিমতলী ট্র্যাজেডি।
শুরুটা হয় আগুনে। পুরোনো বাড়ির গুদামে জমে থাকা কেমিক্যাল আর আশেপাশে ঘুমন্ত ১২৪ জন মানুষ। সব পুড়ে ছাই। ঘর, পরিবার, শরীর, জীবন, ভবিষ্যত।
তদন্ত রিপোর্টে বলা হলো - গাফিলতি ছিল।
আর আমরা বলেছি, অঘটন যা ঘটার সব ঘটে গেছে।
২০১২, তাজরীন গার্মেন্টস।
আগুন লাগলো। কেউ গেট দিয়ে বের হতে পারলো না। গেটে তালা থাকার কারণে বের হতে না পেরে চিৎকার করে মরেছে ভিতরে। আগুনে পুড়েছে ১১২টি তাজা প্রাণ।
আমরা বলেছি, এরপর যেন আর না হয়।
২০১৩, রানা প্লাজা।
বিল্ডিং সম্পর্কে সর্তকবাণী থাকার পরও ভবনের ভেতরে কাজ করানো হয় হাজার হাজার শ্রমিকদের। সকালবেলা আস্ত একটা ভবন চোখের সামনে গুঁড়িয়ে গেল। ১১৩৪ জন মানুষ চাপা পড়ে, থেঁতলে যায়। মানুষ স্বজনের লাশ চিনলো পোশাক দেখে।
ওই ঘটনার পর এখনও যারা বেঁচে আছে, তাদের অনেকের নিত্যদিনের সঙ্গী হুইলচেয়ার।
২০১৬, টঙ্গী ট্যাম্পাকো বিস্ফোরণ।
সকাল সকাল কারখানায় বিস্ফোরণ। অবৈধ গ্যাস সংযোগ, গুদামে দাহ্য পদার্থ।
৩৪ জন মানুষ পোড়া অবস্থায় বের হয়।
আর দোষীরা? সবাই ঠিকঠিকই আছে। আজও কারো কিছু হয়নি।
২০১৯, চকবাজার।
আবারও কেমিক্যাল। আবারও আগুন। আবারও পুরান ঢাকা। আবারও ৭৮টি মরদেহ।
নিমতলীর কথা ভুলে গেছি ততদিনে। কিন্তু আবারও আগুন লাগার তরে মনে পড়লো৷
আজও পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গুদাম তো সরেনি।
আমরাও আজও শিখিনি।
২০১৯, বনানী এফআর টাওয়ার।
রাতে ভবনের উপরের তলায় আগুন লাগে।
ফায়ার এক্সিট বন্ধ। সিড়ি নেই। নিরাপত্তার নামে প্রহসন।
দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি না আসতে পারাতে ভেতরে ধোঁয়াতেই ২৬টা তরতাজা প্রাণ ক্ষয়ে যায়।
২০২১, সেজান জুস ফ্যাক্টরি, নারায়ণগঞ্জ।
ভবনে আগুন। ভবন তালাবদ্ধ। গেটের বাহির থেকে তালা আটকানো।
ভেতরে ৫২ জন মানুষ পুড়ে ছাই। তাদের মধ্যে ছিল অনেক শিশু-কিশোরও।
আজও তদন্ত চলছে...
২০২২, উত্তরা।
প্রাইভেট কারের উপর ফ্লাইওভারের গার্ডার আছড়ে পড়ে স্পটেই দুটো বাচ্চা সহ পাঁচজন তরতাজা প্রাণ মহূর্তেই শেষ হয়ে যায়।
২০২৩, সীতাকুণ্ড বিএম কনটেইনার ডিপো।
ডিপোতে রাসায়নিক কন্টেইনার বিস্ফোরণ। এমন আগুন বাংলাদেশ কখনও দেখেনি।
পুড়ে গিয়ে মরেছে ৫০ জনের বেশি। আহত হয়েছে কয়েক শতাধিক।
আগুন এত পরিমাণ ভয়ানক ছিল যে কন্টেইনার উড়ে গিয়ে পড়েছে কয়েক কিলোমিটার দূরে।
সীতাকুণ্ডের মাটিতে এখনও সেই গন্ধ লেগে আছে।
২০২৩, বঙ্গবাজার, নিউ মার্কেট।
আবারও সেই আগুন। হাজারো দোকান পুড়লো৷ বিক্রেতারা পোড়া ছাইয়ের ভেতর দাঁড়িয়ে কাঁদলো।
রাষ্ট্রের তদন্ত কমিটির খতিয়ে দেখা আজও শেষ হয়নি।
২০২৪, বেইলি রোড।
রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েও মানুষ বেঁচে ফিরতে পারেনি। নিচে সিলিন্ডার থেকে আগুনের শুরু। মুহূর্তেই দাউদাউ করে আগুন বেড়ে উপরে উঠে গেল। সিঁড়ি বন্ধ। পানি নেই। ফায়ার এক্সিট নেই। ৪৬টা তরতাজা প্রাণ ভেতরে নিমিষেই পুড়ে শেষ হয়ে গেল।
রাজধানীর বুকে বোধহয় এমন করেই আগুন লেগে থাকবে৷
২০২৫।
এই বছরও সমান তালে চলছে আগুন, দুর্ঘটনা, মৃত্যু।
নির্মাণাধীন ভবন ধস। লঞ্চডুবি। ফায়ার এক্সিট নেই, লাইফ জ্যাকেট নেই।
আর সদ্য টাটকা মাইলস্টোনের ঘটনা।
রাষ্ট্রের বেখেয়ালে মানুষ মারা যাচ্ছে প্রতিদিন। রাষ্ট্র এসব দেখেও দেখে না।
বছর বছর এসব দুর্ঘটনায় আমরা হারাচ্ছি হাজারো মানুষ। হাজার হাজার স্বজন।
আদতে তারা কোনো অঘটনে মারা যায়নি। তারা মারা গেছে রাষ্ট্রের অপরিকল্পনা, দুর্নীতি, অবহেলা আর নিষ্ঠুর উদাসীনতায়।
এগুলোকে আমরা কীভাবে দুর্ঘটনা বলি? এগুলোকে গলা উঁচিয়ে বলা উচিত পরিকল্পিত "হত্যা।"
তো এরপরের পরিকল্পিত "হত্যা" কোথায় হচ্ছে?