10/10/2025
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় প্রায় দুই বছর ধরে চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনে রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে গাজার প্রতিটি ঘরবাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল, শরণার্থী শিবিরে লাশের স্তূপ জমেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)-এর তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৬২ হাজার ছাড়িয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্র হলো—এর মধ্যে অন্তত ১৮,৮৮৫ জন শিশু প্রাণ হারিয়েছে।
শিশুদের জন্য গাজা এখন মৃত্যুপুরী
জাতিসংঘের ভাষায়, গাজায় শিশুদের জন্য এখন আর কোনো নিরাপদ স্থান নেই। জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলো ঘরবাড়ি হারানো লাখো মানুষকে আশ্রয় দিচ্ছে, কিন্তু সেগুলোও ইসরায়েলি হামলার শিকার হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো আজ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য শিশু সেখানে প্রাণ হারাচ্ছে। এমনকি খাদ্যসাহায্যের লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায়ও শিশুদের মৃত্যু ঘটছে। মে মাস থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার মানুষ খাদ্য সহায়তার লাইনে প্রাণ হারিয়েছে।
মাসে গড়ে ৫৪০ শিশু নিহত
ইউনিসেফের তথ্য উদ্ধৃত করে ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, ইসরায়েল একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ভেঙে পুনরায় হামলা শুরু করার পর গত পাঁচ মাসে প্রতি মাসে গড়ে ৫৪০ জনের বেশি শিশু নিহত হয়েছে। এটি কেবল সংখ্যার হিসাব নয়—প্রতিটি সংখ্যার পেছনে আছে একটি পরিবার, একটি গল্প, একটি ছিন্নভিন্ন স্বপ্ন।
আমনা আল-মুফতির মর্মান্তিক মৃত্যু
আল জাজিরার হাতে আসা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে ১২ বছর বয়সী আমনা আল-মুফতির শেষ মুহূর্ত। পরিবারের জন্য পানি আনতে গিয়েছিল সে। কিন্তু ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারায়। ভিডিওতে তার বাবার আর্তনাদ ফুটে ওঠে—যা বিশ্বের কোটি মানুষের হৃদয় বিদীর্ণ করেছে।
হাসপাতালগুলোতে মানবিক সংকট
গাজার হাসপাতালগুলোতে এখন আর কোনো জায়গা নেই। ওষুধ নেই, বিদ্যুৎ নেই, নেই পর্যাপ্ত ডাক্তার। খান ইউনিসে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়কেন্দ্রে হামলায় অন্তত আটজন নিহত হয়েছে। দেইর আল-বালাহ এলাকায় একটি তাঁবুতে হামলায় আরও চারজন প্রাণ হারিয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন—এটি ইতিহাসের ভয়াবহতম মানবিক সংকট।
অবরোধ, ক্ষুধা আর মৃত্যু
গাজার ওপর ইসরায়েলের অবরোধের কারণে খাদ্যসামগ্রী ও চিকিৎসা সরঞ্জাম ঢুকতে পারছে না। মানুষ ক্ষুধায় দিন কাটাচ্ছে। জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে—শিশুদের জন্য খাবার ও পানির কোনো নিশ্চয়তা নেই। গাজার শিশুরা ক্ষুধা, রোগ আর যুদ্ধ—তিন দিক থেকে মৃত্যুপুরীতে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মহলের আহ্বান
জাতিসংঘ বলছে, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবে ইসরায়েল আরও হামলা জোরদার করছে। গাজার জেইতুন এলাকায় বিমান হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। পূর্ব গাজার তুফাহ এলাকাতেও গোলাগুলি চলছে। আন্তর্জাতিক মহল বারবার আহ্বান জানালেও হামলা বন্ধ হয়নি।
প্রশ্ন রয়ে যায়
বিশ্বের সবচেয়ে বড় শক্তিগুলো যখন ইসরায়েলকে সমর্থন দিচ্ছে, তখন গাজার নিরীহ শিশুদের পাশে দাঁড়াচ্ছে কারা? মানবতার ইতিহাসে এই হত্যাযজ্ঞ এক কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে।
আমরা যদি এখনই কথা না বলি, তবে ইতিহাস আমাদেরকেও ক্ষমা করবে না।
________________________________________
✦ দর্শকদের জন্য বার্তা
👉 গাজার শিশুদের পাশে দাঁড়াতে সচেতনতা ছড়িয়ে দিন।
👉 ভিডিওটি শেয়ার করুন যেন আরও মানুষ সত্য জানতে পারে।
👉 আপনার মতামত মন্তব্যে জানান—আপনি কি মনে করেন, অবিলম্বে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন?
________________________________________
📌 হ্যাশট্যাগ