
28/05/2025
বাসে বসে ছিল পাশের সিটে। একটু পরপর বলছে, ভাইয়া পল্লবী আর কতদূর।
বললাম, কই যাবা? বলল বোনের বাসায়। ছেলেটা কয়েকটা আম নিয়ে তার বোনকে দেখতে যাচ্ছে। ছেলেটার সাথে আমার বাসেই পরিচয়। গল্পে গল্পে খুব আপন লাগলো। সে তার মোবাইলে গ্রামের ছবি দেখালো। কী কী খেলা করত আরো ছোটবেলায় সে সব ছবি দেখালো। বর্তমানে থাকে সে যাত্রাবাড়ীতে মায়ের সাথে। মা এক ব্যাংকে খাবার দাবার সংক্রান্ত কাজ করে। বোন তিনটা গার্মেন্টে।
এক পর্যায়ে বাবার কথা উঠলো। মনটা তার খারাপ হলো। তার বাবা তাদেরকে ফেলে চলে গেছে অনেকদিন আগে। খবর নেয় না।
বলল, মা আমাকে খুব ভালোবাসে। ছেলেটার নাম সাব্বির। সাব্বির ক্লাস সেভেনে পড়ে। বললাম, তোমার কী স্বপ্ন। বলল, বড় হয়ে আমি ফুটবলার হবো।
বললাম, অন্যকিছু হও। বাংলাদেশে ফুটবলার হয়ে কী আর হবে। চোখমুখ কড়া করে বলল, যত কষ্ট হয় হোক। অন্য কোনো কিছুই হবো না। ফুটবলার হবোই হবো। অনেক বড় ফুটবলার। বললাম যদি ফেইল করো, হতে না পারো? বলল, আবার চেষ্টা করবো। একদিন না একদিন হবোই হবো।
কী জেদ আর বিশ্বাস তার, এতটুকুন ছেলে!
সে তার মোবাইলে এক জোড়া বুট জুতা দেখিয়ে বলল, জানেন এইটা আমার মা আমাকে কিনে দিয়েছে। আমার মাও চায় আমি অনেক বড় ফুটবলার হই।
বললাম, তাহলে পড়াশোনা বাদ দাও। বলল, না না। পড়াশোনা না করলে বড় হবো কী করে! ভালো খেলতে হলে পড়াশোনাও লাগবে ভাইয়া।
ছেলেটার কী হলো জানি না। জানালার দিকে তাকিয়ে রইলো। চোখ ছলছল।
বাবার কথা মনে পড়ে? বলল, খুব মনে হয়। কিন্তু আব্বা আমাদের খবর নেয় না।
ছেলেটার মা এখানে ওখানে কাজ করে ছেলেকে এমন মানুষের মতো মানুষ করছে খেয়ে না খেয়ে। আল্লাহ নিশ্চয় তাকে অনেক বড় করবেন।
কখনো কখনো অতি দু:খ মানুষকে প্রবল প্রত্যয়ী করে তোলে।
ছেলেটা বলল, মাঝখানে মাদ্রাসায় ভর্তি হইছিলাম। কিন্তু তখন আর পড়তে পারিনি। আব্বা চলে যাওয়ায় সব এলোমেলো হয়ে গেছিল। গ্রামে চলে গেছিলাম। এরপর আবার ঢাকায় আসলে এক লোক আমার মাকে কাজ জোগাড় করে দেন। আবার স্কুলে ভর্তি হই।
দোয়া কইরেন ভাইয়া।
ছেলেটা দেখলাম প্রায় বিদেশি প্লেয়ারের নাম জানে।
আল্লাহ যেন ভাইটির মনের আশা পূর্ণ করে 🤲❤️
Highlight Azizen